গোলাপি কন্যা শ্রাবণী সায়ন্তনী

15 May 2023, 12:38 PM সারেগারে শেয়ার:
গোলাপি কন্যা শ্রাবণী সায়ন্তনী

ফিজআপ চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ ২০১৭-এর ফাইনালিস্ট নতুন প্রজন্মের সম্ভাবনাময়ী কণ্ঠশিল্পী শ্রাবণী সায়ন্তনী। অসাধরণ গায়কি আর কণ্ঠশৈলীর যাদুতে একের পর এক নতুন নতুন গান গেয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই অসংখ্য ভক্তশ্রোতাদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। সম্প্রতি সোনা বন্ধু, দুষ্টু নাগরসহ বেশ কয়েকটি ডুয়েট গান প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া মৌলিক এবং সিনেমার গান নিয়েও ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। তার নতুন গান নিয়ে ব্যস্ততা, পড়াশোনাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন আনন্দভুবনের সঙ্গে। লিখেছেন শহিদুল ইসলাম এমেল...

শ্রাবণী সায়ন্তণী সাম্প্রতিক সময়ে তার নতুন গান নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এছাড়া স্টেজ শো, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের শো নিয়েও ব্যস্ততা যাচ্ছে তার। সেইসঙ্গে ওপার বাংলার জনপ্রিয় একটি বিদ্যাপীঠ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, শান্তিনিকেতন-এ ভর্তি হয়েছেন ভারতীয় ক্লাসিক্যাল মিউজিক নিয়ে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছেন। সবমিলিয়ে বলা যায় পড়াশোনা আর গান-বাজনার মধ্যেই আছেন তিনি।

শ্রাবণীর সংগীতের শুরু একদম ছেলেবেলা থেকেই। তখন তার বয়স ছিল আড়াই থেকে তিন বছর। বাবার কাছেই তার গানের হাতেখড়ি। বাবার কাছ থেকেই প্রথম সারগাম শেখেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ওস্তাদের কাছেও শেখার সুযোগ হয়েছে তার। শ্রাবণীর বাড়ি রংপুরে। বেড়ে উঠেছেন রংপুরেই। রংপুরের একজন জনপ্রিয় ওস্তাদ জিয়াউল হক লিপু’র কাছে দীর্ঘ ছয় বছর গান শিখেছেন। ছেলেবেলা থেকেই জাতীয়পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন ও বেশ কয়েকটি পদক এবং পুরস্কার পেয়েছেন নতুন প্রজন্মের এই সংগীতশিল্পী। শ্রাবণী সায়ন্তনী ফিজআপ চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ ২০১৭-তে অংশগ্রহণ করে ফাইনালিস্ট হন। ওখান থেকেই তার জার্নিটা শুরু। সেরাকণ্ঠের পর নতুন একটি জায়গায় তিনি নিজেকে আবিষ্কার করেন। এরপর একসময় মৌলিক গান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নিজের বেশকিছু মৌলিক গান ইতোমধ্যে বের হয়েছে এবং প্রতিনিয়তই হচ্ছে।

স¤প্রতি প্রকাশিত হয়েছে শ্রাবণী সায়ন্তনীর চারটি নতুন গান। এগুলো হচ্ছে- ‘সোনা বউ’, ‘দুষ্টু নাগর’, ‘গোলাপি কন্যা’, ‘বন্ধু আইয়ো তুমি রাইতে’। এই গানগুলো মূলত ডুয়েট গান। শ্রাবণী সায়ন্তনীর সাথে দ্বৈতকণ্ঠ দিয়েছেন সংগীতশিল্পী গামছা পলাশ। গানগুলো প্রকাশিত হয়েছে তরঙ্গ মিউজিক সেন্টারের ব্যানারে। শ্রাবণীর সদ্য প্রকাশিত গানগুলো দর্শক শ্রোতারা খুব ভালোভাবেই নিচ্ছেন।

গানগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘চারটি গান চার ধরনের। আমি সব ধরনের গান গাওয়ার চেষ্টা করি। গানগুলো গেয়ে আমার খুব ভালো লেগেছে। আমি চেষ্টা করেছি আমার সবটুকু দিয়ে। সেইসঙ্গে ‘সোনা বউ’ গানটির মিউজিক ভিডিওতে আমি এবং গামছা পলাশ ভাই অভিনয় করার চেষ্টা করেছি। আমাদের গানটি ইতোমধ্যেই দর্শক খুবই পছন্দ করছে। সামনে আরো বেশ কিছু গান আসছে। আশা করি সেগুলোও সবার ভালো লাগবে।’

‘সোনা বউ’ গানটির কথা লিখেছেন রাসেল কবির, সুর করেছেন গামছা পলাশ, সংগীত আয়োজনে এইচ আর লিটন। ‘দুষ্টু নাগর’ গানটির কথা লিখেছেন রাসেল কবির, সুর করেছেন ফারদিন খান, সংগীত আয়োজনে এইচ আর লিটন। ‘গোলাপি কন্যা’ গানটি লিখেছেন এবং সুর করেছেন প্লাবন কোরেশী। মিউজিক করেছেন ঋষিকেশ রকি। ‘বন্ধু আইয়ো তুমি রাইতে’ গানটিও লিখেছেন এবং সুর করেছেন প্লাবন কোরেশী। মিউজিক করেছেন ঋষিকেশ রকি। সেই সঙ্গে শ্রাবণী সায়ন্তনীর নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলেও বেশ কয়েকটি গান রিলিজ হয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি সিনেমার গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।

এ পর্যন্ত ৩০টিরও বেশি মৌলিক গান গেয়েছেন শ্রাবণী। সংগীতের প্রতি কীভাবে আগ্রহী হলেন জানতে চাইলে বলেন, ‘ছেলেবেলায় আমার পাশের বাড়ির প্রতিবেশী বড়ো আপু গান করতেন। আমি ছেলেবেলা থেকেই হারমোনিয়ামের আওয়াজ খুব পছন্দ করতাম। আপু যখন সকালে রেওয়াজ করতেন তখন আমি ঘুম থেকে উঠেই সেখানে চলে যেতাম। হারামোনিয়ামের আওয়াজ শুনলে আমি থাকতে পারতাম না। চলে যেতাম সেখানে। সেটা দেখে বাবা বুঝতে পারেন আমার গানের প্রতি খুব আগ্রহ। সেটা ভেবে বাবা আমাকে প্রথমে একটা খেলনা হারমোনিয়াম কিনে দেন। কিছুদিন পর বাবা দেখলেন, আমার খুব ঝোঁক এটার প্রতি [আমার তখন বয়স তিন বছর]। বাবাও মোটামুটি গান জানতেন। বাবা তখন আমাকে একটা আসল হারমোনিয়াম কিনে দেন এবং তিনিই আমাকে সারেগামাপা শেখাতে শুরু করেন। সেখান থেকেই আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে যাওয়া এবং ওখান থেকেই গানের প্রতি আমার ভালোবাসা।’

শ্রাবণী মূলত সব ধরনের গান গাইতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তিনি নিজেকে সব দিকে মুভ অন করতে চান। তবে সবচেয়ে বেশি গাইতে ভালো লাগে নজরুলগীতি আর আধুনিক গান। মেলোডিয়াস গান গাইতেও বেশ পছন্দ করেন।

শ্রাবণী সায়ন্তনীর প্রিয় শিল্পীর তালিকা অনেক বড়ো। তার মধ্যে দেশে সাবিনা ইয়াসমীন, রুনা লায়লা, সামিনা চৌধুরী এবং কুমার বিশ্বজিৎ। দেশের বাইরে লতা মুঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, সাধনা সারগামসহ আরো অনেকেই।

সংগীত নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, ‘সংগীত নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বলতে যেহেতু এখন আমি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, শান্তিনিকেতনে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছি সংগীত নিয়ে সেহেতু ভবিষ্যতে সংগীতের সঙ্গেই থাকব। সংগীত নিয়ে অনেক কিছু শিখতে চাই এবং অনেক দূর যেতে চাই।’