আমি শিল্পীই হতাম -মৌসুমী হোসেন

14 May 2023, 01:50 PM নিকটদেশ শেয়ার:
আমি  শিল্পীই হতাম  -মৌসুমী হোসেন

কবিতা কী এবং কেন- এসব প্রশ্নের অনেক উত্তর হয়ত সাহিত্যসমালোচকদের রচনায় পাওয়া যায়। আমরা শুধু জানি, শব্দের শিল্পিত গ্রন্থনই কবিতা। কবির ছন্দোবদ্ধ শব্দযোজনায় কাব্য-প্রতিমায় উদ্ভাসিত হয় ব্যক্তিমানুষের সুখ-দুঃখ, আশা-হতাশা, স্বপ্ন-আকাক্সক্ষাসহ দেশ-কাল-সমাজসত্য। তাই কবিতা অপার আনন্দ-বেদনার অমিয় আধার। কবিতার শরীরে সুর প্রয়োগ করে তাতে ভিন্ন মাত্রা যোগ করা যায়। বাংলাদেশে ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যে দু-চারজন শিল্পী কবিতার গান নিয়ে নিরলস কাজ করে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মৌসুমী হোসেন অন্যতম।

কবি রুদ্রশংকরের ‘বাঙ্গালির বঙ্গবন্ধু’, কবি শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরও বেঁধে বেঁধে থাকি’, বুদ্ধদেব বসুর ‘জোনাকি’, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘দাঁড়াও’, জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কবিতা ‘বনলতা সেন’, আসাদ চৌধুরীর ‘সত্য ফেরারী’-সহ পঞ্চাশের অধিক কবিতার সুরারোপ করে এবং নিজের কণ্ঠে গেয়ে সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন মৌসুমী হেসেন। তাঁর নির্বাচিত কবিতার কবির তালিকায় আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামও ; আরও আছেন সুবোধ সরকার, জয় গোস্বামী, নির্মলেন্দু গুণ, রুদ্র মহম্মদ শহিদুল্লাহ। গত দশ বছর ধরে মঞ্চে, আকাশবাণী কলকাতা, এফএম রেডিও, এমএপি রেডিও, কলকাতা দূরদর্শন, তারা টিভি, দেশবিদেশ টিভি, অনলাইন অনুষ্ঠানে বেশ সক্রিয় দেখে গেছে মৌসুমী হোসেনকে।

২০২০ থেকে এ পর্যন্ত ভারতের আশা অডিও, টাইম মিউজিক বাংলা-সহ শীর্ষস্থানীয় সংগীত কোম্পানিগুলো থেকে তাঁর দশটিরও বেশি গান প্রকাশ হয়েছে। সম্প্রতি আনন্দভুবনের সাথে এক সাক্ষ্ৎকারে মৌসুমী হোসেন বলেছেন তাঁর কবিতার গানের শিল্পী হয়ে ওঠার গল্প। তাঁরই চুম্বক অংশ পত্রস্থ করা হলো...

আনন্দভুবন : গান, বিশেষ করে কবিতার গানের প্রতি ঝোঁক তৈরি হলো কবে, কীভাবে?

মৌসুমী হোসেন : আমি ছোটোবেলা থেকে গান শিখেছি। পরে যখন স্কুলে শিক্ষকতায় যোগ দিই, তখন পাঠ্যপুস্তকের কিছু কবিতা বা ছড়ায় সুর দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের শোনাতাম। তাদের ভালো লাগত। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে কবিতার গান নিয়ে কাজ করতে শুরু করি।

আনন্দভুবন : যতদূর জানি আপনি ৫০টির ওপরে কবিতার গানের সুর করেছেন এবং গেয়েছেন ; রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করেÑ বাংলা ভাষার প্রধান কবিদের কবিতা রয়েছে তালিকায়, বিশেষ কোন বৈশিষ্ট্যের কারণে কবিতাগুলো নির্বাচন করেছেন?

মৌসুমী হোসেন : আমি মূলত সমাজ সচেতনতার কবিতা অবলম্বনে গান করতে পছন্দ করি, তবে প্রেমের কবিতাও বেশ কিছু করেছি। তবে কবিতার গানের ক্ষেত্রে সাধারণত গীতিধর্মী কবিতা চয়ন করতে হয়।

আনন্দভুবন : গানের জন্য কবিতা নির্বাচন করেন কীভাবেÑ কারো কাছে কবিতাটির কথা শুনে, আবৃত্তি শুনে, নাকি অনেক কবিতা পড়ে তারপর কোনো কোনো কবিতা নির্বাচন করেনÑ

মৌসুমী হোসেন : গানের জন্য কবিতা নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আমাকে বহু কবির বিভিন্ন ধরনের কবিতা পড়তে হয়। তারপর সুর দেওয়ার উপযুক্ত মনে হলে কবিতাটি নিজের মতো করে আত্মস্থ করি।

আনন্দভুবন : কবিতার গান করতে উৎসাহী হলেন কেন ? কোনো বিশেষ ধরনের কবিতা নির্বাচন করেন কি ? কোন শ্রেণির মানুষ আপনার শ্রোতা ? এর মধ্যদিয়ে আপনি কি বিশেষ কোনো বাণী বা দর্শনের প্রচার করতে চান ?

মৌসুমী হোসেন : ওই যে বললাম, কবিতার গান গাওয়ার ক্ষেত্রে আমার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে আমি প্রাথমিকভাবে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। আমার বাবা মা খুবই সংস্কৃতিমনস্ক। আমার বর নিজে একজন কবি, সেও আমাকে অনুপ্রাণিত করে।

কবিতা অবলম্বনে গান করার ক্ষেত্রে সব সময় আমার একটা নিজস্ব চিন্তা ভাবনা কাজ করে। এতে করে যেমন নতুনভাবে কবির কবিতাকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, তেমনই এক সামাজিক দায়বদ্ধতাও শিল্পী হিসেবে পাশাপাশি থাকে। কবিতা তো সকলের জন্য নয়, তাই আমার গানের শ্রোতাদেরও একটু সচেতন হতে হয়। আমি আমার মতো করে চেষ্টা করে যাচ্ছি কবিতাকে আরও জনপ্রিয় করার। বাকিটুকু সময়ের হাতে ছেড়ে দিলাম।

আনন্দভুবন : কবিতার গানের পাশাপাশি আপনি আবৃত্তিও করেনÑ গান ও আবৃত্তির কবিতা কি আলাদা, না কি একই কবিতাসমূহ গান ও আবৃত্তি দুটোই করেন ?

মৌসুমী হোসেন : এক সময় কবিতা আবৃত্তি করতাম, এখন আর করি না। ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয়েছে আমি গানের মাধ্যমে নির্বাচিত কবিতাকে অনেক বেশি প্রাণবন্ত করতে সক্ষম।

আনন্দভুবন : যদি একই কবিতা হয় তাহলে আবৃত্তি করার সময় সুরের প্রভাব থেমে মুক্ত থাকেন কী করে ?

মৌসুমী হোসেন : যদিও আমি বর্তমানে আবৃত্তি করি না, তবুও আমার ধারণা গানের উপযোগী একই কবিতা আবৃত্তি করার সময় সুরের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা যায়। যেমন জয় গোস্বামীর বিখ্যাত কবিতা ‘মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয়’ যখন বাচিক শিল্পীরা আবৃত্তি করেন, তখন সাধারণত সুরের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে পরিবেশন করেন।

আনন্দভুবন : শিল্পী না হলে কী হতেন ?

মৌসুমী হোসেন : শিল্প ভাবনা ছাড়া অনেক কিছু সম্ভব নয়। তাই আমি শিল্পীই হতাম। অন্য কিছু ভাবতে পারছি না।

মৌসুমীসমগ্র

পুরো নাম : মৌসুমী হোসেন

বাবার নাম : মোশরাফ হোসেন

মাতার নাম : সুফিয়া হোসেন

ভাই-বোন : মহুয়া হোসেন (বোন)

স্পাউজ : রুদ্রশংকর

লেখাপড়া : বি.এসসি, বি.এড

প্রিয় কবিতা : বহু কবিতা প্রিয় [একটা নাম নেওয়া সম্ভব নয়]

প্রিয় গান : আমাদের একটা জীবন

প্রিয় রং : লাল

প্রিয় ফুল : বেল

প্রিয় খাবার : নানা রকম পিঠে

প্রিয় বই : পথের পাঁচালী

প্রিয় সিনেমা : পথের পাঁচালী

অবসরে : নানা বিষয়ে ভাবতে ভাল্ েলাগে।

দেশভ্রমণ : নতুন দেশ, নতুন সমাজ, নতুন মানুষ দেখার টানে দেশ ভ্রমণ ভালো লাগে।


সাক্ষাৎকার : শ্যামল কায়া