‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’
পয়লা বৈশাখ বাঙালি জাতির ঐতিহ্যবাহী নিজস্ব একটি দিন। এই দিনে জাতির মঙ্গল কামনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ আয়োজন করে মঙ্গল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রায় চারুকলা অনুষদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন স্তরের ও বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকে। মঙ্গল শোভাযাত্রায় বিভিন্ন ধরনের প্রতীকী শিল্পকর্ম বহন করা হয়। এছাড়াও বাংলা সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে এমন নানা প্রতীকী উপকরণ, বিভিন্ন রঙের মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি নিয়ে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে।
প্রতিবছর ভোরে বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে ঢাকার রমনা পার্কে ছায়ানট আয়োজন করে সংগীতানুষ্ঠানের। একে ঘিরে আয়োজিত অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা সাধারণ মানুষকে নিবিড়ভাবে আকৃষ্ট করে এবং নাগরিক জীবনে সর্বজনীন পয়লা বৈশাখ উদযাপনে নতুন মাত্রা যোগ করে।
শান্তির বিজয় ও অপশক্তির অবসান কামনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিট্যুটের উদ্যোগে ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম আনন্দ শোভাযাত্রার প্রবর্তন হয়। ওই বছরই ঢাকাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় আনন্দ শোভাযাত্রা।
সেই থেকে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিট্যুটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীগণ এই আনন্দ শোভাযাত্রা বের করার উদ্যোগ প্রতিবছর অব্যাহত রাখে।
চৈত্রের শেষ দিক থেকেই চারুকলা অঙ্গনে চলে প্রতীকী উপকরণ তৈরির কাজ। কেউ জলরঙে ছবি আঁকেন, কেউ সরায় ফুটিয়ে তোলেন বাহারি দৃশ্য, আবার কেউ ব্যস্ত থাকেন মুখোশ তৈরিতে। দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা শিল্পকর্ম বিক্রির কাজও করেন কেউ কেউ। মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রতিবছরের মতো এবারও থাকছে মুখোশ, পেঁচা, বানর, সরাচিত্র, খেলনা, পুতুল, হরিণ, মা ও শিশু, হাতপাখা, শখের হাড়িসহ বিভিন্ন জীবজন্তুর লোকজ অবকাঠামো।
বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশের মঙ্গল শোভাযাত্রা জাতিসংঘের সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান লাভ করে।
এদিকে আগামীকাল বাংলা নতুন বছর ১৪৩০ খ্রিষ্টাব্দকে বরণ করে নিতে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ। বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি প্রতিপাদ্য নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা চারুকলা অনুষদ থেকে সকল ৯ টায় বের হওয়ার কথা রয়েছে। মঙ্গল শোভাযাত্রা শাহবাগ মোড় হয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে।
-শহিদুল ইসলাম এমেল