পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন

15 Mar 2023, 06:05 AM মুক্তিযুদ্ধ শেয়ার:
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন

১৫ই মার্চ একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। জনগণ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে। স্বাধীনতার দাবিতে রাজপথ জনগণের দখলে। সামরিক বাহিনীর সদস্যরা তা পর্যবেক্ষণ করছে। এ ছাড়া তাদের আর কিছুই করার নেই। বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা উড়ছে বিভিন্ন ভবনের শীর্ষে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বাঙালি হত্যার প্রতিবাদে একই সাথে উড়ছে কালো পতাকাও।

আগের দিনের ছড়ানো গুজব সত্য প্রমাণ করে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৫ই মার্চ বিকেলে করাচি থেকে ঢাকায় আসেন। বিমানবন্দরে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে পূব-পাকিস্তানের সামরিক হভর্নর লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান তাকে স্বাগত জানান। কোনো সাংবাদিক বা বাঙালিকে বিমানবন্দরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

পাকিস্তান পিপলস পার্টির [পিপিপি] জুলফিকার আলী ভুট্টো আকস্মিকভাবে আওয়ামী লীগ ও পিপলস পার্টির সমন্বয়ে কেন্দ্রে একটি কোয়ালিশন সরকারের দাবি জানান।

এই দিনও দেশজুড়ে পূর্ণ কর্মবিরতি চলে। দেশরক্ষা বিভাগের বেসামরিক কর্মচারীরা সামরিক নির্দেশ উপেক্ষা করে কর্মস্থলে যোগ দেওয়া থেকে বিরতম থাকে। বরং তারা সাসরিক আদেশ প্রত্যাহার ও বাংলাদেশের স্বাধিকারের দাবিতে নাখালপাড়ায় একটি সভা করেন। সভাশেষে রাজপথে বের করেন বিক্ষোভ মিছিল।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ সংবাদপত্রে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, বঙ্গবন্ধুর অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে জনগণ অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছে। ১৪ই মার্চ যেসব নির্দেশ জারি করা হয়েছে, তিনি তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করে তা মেনে চলার অনুরোধ জানান।

রাতে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত চেকপোস্ট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। বাংলা থেকে অর্থ ও সম্পদ পাচার বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত চেকপোস্টের কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ায় প্রত্যাহার করা হয়। তবে কোনোক্রমেই যেন সম্পদ পাচার হতে না পারে, সেদিকে লক্ষ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

দেশজুড়ে সরকারি খেতাব বর্জন করতে শুরু করেন বিশিষ্টজনেরা। দৈনিক পাকিস্তান-এর সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন তার দুই খেতাব ‘সিতারা-এ-খিদমত’ ও ‘সিতারা-এ-ইমতিয়াজ’ বর্জন করেন। নাট্যকার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীও পরিত্যাগ করেন তার ‘সিতারা-এ-ইমতিয়াজ’ খেতাব। নাটোর থেকে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য ডাক্তার শেখ মোবারক হোসেন তার ‘তমঘা-এ-কায়েদে আজম খেতাব বর্জন করেন।

এদিন বায়তুল মোকাররমের এক জনসভায় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা বাংলাদেশ রক্ষার লক্ষ্যে অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তারা বলেন, বাংলার জনগণ একমাত্র বঙ্গবন্ধুর নির্দেশই মেনে চলবে। বাংলাদেশে সামরিক বিধি জারি করার ক্ষমতা পাকিস্তানি জান্তার নেই। 

-শ্যামল কায়া