নির্মলেন্দু গুণের ভালোবাসার কবিতা

09 Feb 2023, 02:24 PM অন্যান্য শেয়ার:
নির্মলেন্দু গুণের ভালোবাসার কবিতা

যুদ্ধ

যুদ্ধ মানেই শত্রু শত্রু খেলা, 

যুদ্ধ মানেই

আমার প্রতি তোমার অবহেলা।


ওটা কিছু নয়

এইবার হাত দাও, টের পাচ্ছো আমার অস্তিত্ব ? পাচ্ছো না ?

একটু দাঁড়াও, আমি তৈরি হয়ে নিই।

এইবার হাত দাও, টের পাচ্ছো আমার অস্তিত্ব ? পাচ্ছো না ?

তোমার জন্মান্ধ চোখে শুধু ভুল অন্ধকার। ওটা নয়, ওটা চুল।

এই হলো আমার আঙুল, এইবার স্পর্শ করো,- না, না, না,

- ওটা নয়, ওটা কণ্ঠনালী, গরলবিশ্বাসী এক শিল্পীর

মাটির ভাস্কর্য, ওটা অগ্নি নয়, অই আমি,- আমার যৌবন।


সুখের সামান্য নিচে কেটে ফেলা যন্ত্রণার কবন্ধ-প্রেমিক,

ওখানে কী খোঁজ তুমি ? ওটা কিছু নয়, ওটা দুঃখ ;

রমণীর ভালোবাসা না-পাওয়ার চিহ্ন বুকে নিয়ে ওটা নদী,

নীল হয়ে জমে আছে ঘাসে,- এর ঠিক ডানপাশে, অইখানে

হাত দাও, হ্যাঁ, ওটা বুক, অইখানে হাত রাখো, ওটাই হৃদয়।


অইখানে থাকে প্রেম, থাকে স্মৃতি, থাকে সুখ, প্রেমের সিম্ফনি ;

অই বুকে প্রেম ছিল, স্মৃতি ছিল, সব ছিল, তুমিই থাকো নি।


তবুও তোমাকে চাই

আমারো আছে বুকের মধ্যে এক্ষুনি চাই ধ্বনি,

যখনই আমি তোমাকে ভাবি, তক্ষুনি তা শুনি।

যখনই চাই সহজলভ্য নারীর কাছে যেতে,

একখানি মুখ ঝলসে ওঠে, তোমাকে চাই পেতে।

সময় বসে ভেংচি কাটে,-এক্ষুনি নয় সব,

আমিও বুঝি, তোমাকে পাওয়া একটু অসম্ভব।


উল্টোরথ

শুধু চোখে নয়, হাত দিয়ে হাত,

মুখ দিয়ে মুখ, বুক দিয়ে বুক ;

ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট খোলো, এইভাবে

খুলে খুলে তোমাকে দেখাও।

শুধু চোখে নয়, নখ দিয়ে নখ,

চুল দিয়ে চুল, আঙুলে আঙুল ;

হাঁটু দিয়ে হাঁটু, ঊরু দিয়ে ঊরু,

আর এটা দিয়ে ওটাকে ঠেকাও।


শুধু চোখে নয়, চোখে চোখে চোখ,

বাহু দিয়ে বাহু, নাভি দিয়ে নাভি ;

চাবি দিয়ে তালা খোলা দেখিয়াছি,

তালা দিয়ে খোলো দেখি চাবি ?


ভালোবাসা ছাড়া

ভালোবাসা ছাড়া কবে ফুল ফুটেছে গাছে ?

আমি ভালোবাসি নি এমন নারী কোথায় আছে ?


আমার ভালোবাসা ছাড়া গায় না কোনো পাখি,

আমার ভালোবাসা ছাড়া বয় না কোনো নদী।

আকাশের ওই চাঁদকে আমি ভালো না বাসি যদি

অভিমানে মেঘের নিচে থাকে সে মুখ ঢাকি।


আমার ভালোবাসা ছাড়া, বলো, কোথায় কবে,

মেতেছিল এই পৃথিবী আনন্দ-উৎসবে ?


আমার ভালোবাসা ছাড়া জন্মেছে কোন্ শিশু ?

আমার ভালোবাসা ছাড়া ভেঙেছে কোন্ কারা ?



যাত্রা-ভঙ্গ

হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে,

মন বাড়িয়ে ছুঁই,

দুইকে আমি এক করি না ;

এককে করি দুই।

হেমের মাঝে শুই না যবে

প্রেমের মাঝে শুই।

তুই কেমন করে যাবি ?

পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া,

আমাকেই তুই পাবি।


তবুও তুই বলিস যদি যাই,

দেখবি তোর সমুখে পথ নাই।

তখন আমি একটু ছোঁব

হাত বাড়িয়ে জড়াব তোর

বিদায় দুটি পায়ে,

তুই উঠবি আমার নায়ে

আমার বৈতরণী নায়ে।


নায়ের মাঝে বসব বটে,

না-এর মাঝে শোব ;

হাত দিয়ে তো ছোঁব না মুখ

দুঃখ দিয়ে ছোঁব।

তুই কেমন করে যাবি ?


আবার একটা ফুঁ দিয়ে দাও

আবার একটা ফুঁ দিয়ে দাও,

মাথার চুল মেঘের মতো উড়–ক।

আবার একটা ফুঁ দিয়ে দাও,

স্বপ্নগুলো ছায়ার মতো ঘুরুক।


আবার একটা ফুঁ দিয়ে দাও,

অটোমেটিক ঘড়ির মতো

চলতে থাকি একা।


আবার একটা ফুঁ দিয়ে দাও,

অন্ধকারের সলতে হয়ে

জ্বলতে থাকি একা।


আবার একটা ফুঁ দিয়ে দাও,

ফুসফুসে পাই হাওয়া।



আকাশ সিরিজ

শুধু একবার তোমাকে ছোঁব,

ঐ আনন্দে কেটে যাবে সহস্র জীবন।


শুধু একবার তোমাকে ছোঁব,

অহংকারে মুছে যাবে সকল দীনতা।


শুধু একবার তোমাকে ছোঁব,

স্পর্শসুখে লেখা হবে অজস্র কবিতা।


শুধু একবার তোমাকে ছোঁব,

শুধু একবার পেতে চাই অমৃত আস্বাদ।


শুধু একবার তোমাকে ছোঁব,

অমরত্ব বন্দি হবে হাতের মুঠোয়।


শুধু একবার তোমাকে ছোঁব,

তারপর হবো ইতিহাস।




আমার সংসার

সংসার মানে সোনার কাঁকনে জীবনের রঙ লাগা,

সংসার মানে রক্তে-মাংসে সারারাত্তির জাগা।


সংসার মানে অপেক্ষমাণ এক জোড়া চোখে দাবি,

সংসার মানে সাজানো ভুবন, আঁচলের খোঁটে চাবি।


সংসার মানে অনাগত শিশু পুতুলে সাজানো ঘর,

সংসার মানে মনোহর নেশা, ঈশানে-বিষাণে ঝড়।


সংসার মানে ব্যর্থ-বাসনা, বেদনার জলাভ‚মি,

সংসার মানে সংসার ভাঙা, সংসার মানে তুমি।



নির্মলেন্দু গুণের প্রেমের কবিতা বই থেকে সংকলিত