গরীবের ডাক্তার

05 Jan 2021, 02:44 PM কাভার বয় শেয়ার:
গরীবের ডাক্তার

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা ডা. এজাজুল ইসলাম, যার আরেক পরিচয় তিনি একজন চিকিৎসক। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি তিনি গাজীপুরে নিজ চেম্বারে খুবই অল্প ভিজিট নিয়ে সাধারণ মানুষের চিকিৎসাও করছেন। এজন্য অনেকেই তাকে ‘গরীবের ডাক্তার’ নামে ডাকেন। তার পেশা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন আনন্দভুন-সম্পাদক ইকবাল খোরশেদের সঙ্গে। তার চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছেন শেখ সেলিম....


ইকবাল খোরশেদ : আনন্দভুবন-এর আমন্ত্রণে আসার জন্য আপনাকে বর্ষার শুভেচ্ছা...

ড. এজাজ : ধন্যবাদ আপনাকে ও আনন্দভুবন পরিবার আমাকে স্মরণ করার জন্য।

ইকবাল খোরশেদ : আপনি একজন দক্ষ অভিনেতার পাশাপাশি একজন দক্ষ চিকিৎসক। অভিনয় ও চিকিৎসা দুটো কীভাবে সমন্বয় করেন ?

ডা. এজাজ : অভিনয়ে সময়টা দেওয়ার ব্যাপারে নির্মাতাদের অবদান অনেক বেশি। যখন প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ স্যারের সঙ্গে কাজ করতাম, তখন তিনি সহপরিচালকদের বলে দিতেন, আমার সময়ের ব্যাপারে সচেতন থাকতে এবং স্যারও খুব সচেতন থাকতেন আমার চেম্বারের সময়ের ব্যাপারে। সহকারীদের বলে দিতেন, ডাক্তার এই সময়ে আসবেন, তার সিকোয়েন্সগুলো আগে আগে করবে, তারপর তাকে ছেড়ে দেবে। এই সুযোগটা তিনি আমাকে করে দিতেন। 

আমি শুটিং শেষ করে আমার চেম্বারে চলে আসতাম। এখনো ঠিক তাই। এখন যারা আমাকে নিয়ে কাজ করেন, যেমন মাসুদ সেজান, অনিমেষ আইচ, সঞ্জিত সরকার, কায়সার আহমেদ প্রমুখÑ এরা সবাই আগে আমার সময়টা জেনে নিয়ে আমার সিকোয়েন্স শেষ করে আমাকে ছেড়ে দেন। এইভাবে কাজগুলো করতে পারছি। যদি সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আমাকে কাজ করতে বলা হতো তা হলে হয়ত আমার কাজ করা হতো না। আবার আমিও এই সময়টা মেইনটেন করে কাজ করি। এইজন্য খুব বেশি কাজ করতেও পারি না। এক সময় সিনেমা থেকে প্রচুর কাজের সুযোগ আসত প্রতিটি ছবি সুপারহিট ছিল। অনেকে ফুল টাইম চাইতেন। যার কারণে সিনেমায় নিয়মিত হতে পারলাম না। নতুন যারা আমাকে নিয়ে কাজ করতে চান, সবাইকে বলিÑ ভাই, আমার চাকরি আগে, চাকরির বাইরের সময়টাতে আমি অভিনয়ে সময় দিই। যারা পারে তাদের সঙ্গে কাজ হয়। যারা পারে না তাদের সঙ্গে কাজ করতে পারি না।

ইকবাল খোরশেদ : অভিনয়ের জন্য কি আপনাকে সরকারি দপ্তর থেকে অনুমতি নিতে হয়েছে ?

ডা. এজাজ : হ্যাঁ, নিতে হয়েছে।

ইকবাল খোরশেদ : কীভাবে এই জগতে এলেন ?

ডা. এজাজ : আমার মনে হয় যার মধ্যে সৃষ্টিকর্তা যেটা দিয়ে দেন, তিনি সেটাতেই মানানসই। একবার আমার অভিনয়ের জন্য চেম্বার অনিয়মিত হয়ে যাচ্ছিল, তো আমি স্যারকে জানালাম স্যার আমার মনে হয় অভিনয়টা আমি আর করতে পারব না। চাকরি ও চেম্বার দুটোতেই আমার সমস্যা হচ্ছে। তখন স্যার আমাকে বললেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলাম, সেখানে কাজ করার ফাঁকে আমি সাহিত্য নিয়ে অনেক কাজ করেছি, আল্লাহপাক আমাকে সেই যোগ্যতা দিয়েছেন, সৃষ্টিকর্তা যাকে যে যোগ্যতা দেন, সেটি কাজে লাগানো উচিত।

তখন তিনি অনেক দুঃখ করে বললেন, আমার মেয়ে শিলা ভালো একজন অভিনেত্রী হওয়ার পরও অভিনয় ছেড়ে দিয়েছে। এটা আমার জীবনে অনেক বড়ো কষ্ট। তুমি অভিনয় ছেড়ো না, আমরা তোমার সময়ের ব্যাপারে সচেতন থাকব, তুমি যখন যেভাবে সময় দেবে, আমরা সেভাবে তোমার কাজটা করব। এত মমতা পাওয়ার পর আর অভিনয় ছাড়া হলো না, এই মমতা নিয়ে এখনো কাজ করে যাচ্ছি।

ইকবাল খোরশেদ : অভিনয়ের শুরুটা জানতে চাই-

ডা. এজাজ : ছেলেবেলা থেকে অভিনয়ের প্রতি নেশা ছিল। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালীন বড়ো একটি কাজ করি, কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের উদ্যোগে। আমার বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়। কুড়িগ্রামে বাবা সরকারি চাকরি করতেন। বাবার চাকরি সূত্রে সেখানে থাকা। অভিনয়ের প্রতি দুর্বলতা আরো আগে থেকে। স্কুলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অডিশনের মাধ্যমে নাট্যকর্মী নির্বাচন করত। সেখানে আমি ভালোই করি। তাজনীরুর রহমান তার লেখা প্রথম নাটকে অভিনয় করি। নাটকের নাম ‘কলির যুগ’। প্রতিবছরই স্কুলে নাটক হতো, আমি অভিনয় করতাম। রংপুরে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর রেডিওতে কাজ করার চেষ্টা করলাম। এইচএসসির পড়াশোনায় থাকার কারণে সময় দিতে পারিনি। এরপর মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পর রেডিওতে অডিশন দিলাম সংবাদ পাঠক হিসেবে। অভিনয়ের পাশাপাশি সংবাদ পাঠক হওয়ার ইচ্ছে জাগে। অডিশন দিলাম এবং টিকে গেলাম। রংপুরের স্থানীয় সংবাদ পড়েছি কয়েক বছর। তারপর দিলাম নাটকে অডিশন, এখানে টিকে গেলাম। তারপর রেডিও নাটক শুরু করলাম। মনে মনে স্বপ্ন ছিল মেডিকেল পাশ করার পর আমার পোস্টিং ঢাকায় হোক। উদ্দেশ্য টিভি নাটকে কাজ করা। এও জানতাম পুরোদমে নাটকে সময় দিলে আবার ডাক্তার হতে পারব না। দুটো সমন্বয় করেই কাজ করতে হবে। মেডিকেল পাশ করার পর বেকার ছিলাম। ১৯৮৫ সালে ঢাকায় এসে আহসান ক্লিনিকে যোগ দিলাম। সেখান থেকে সরকারি চাকরি হলো গাজীপুরে, গাজীপুরে গিয়ে থিয়েটার শুরু করলাম। ‘ভাওয়াল থিয়েটার’। মঞ্চনাটক করি আর পড়াশোনাও করি পরবর্তী ডিগ্রির জন্য। সেইসঙ্গে টেলিভিশনে যোগাযোগ করি। কারণ, মিডিয়ার কেউ ঢাকায় আমার পরিচিত ছিল না। একজন আমাকে বিটিভিতে যেতে বললেন, আমি গেলাম। রিসিপশনে গিয়ে আমার কথা তুলে ধরলাম। তারা এপ্লিকেশন করে বাই পোস্টে পাঠাতে বললেন, আমি তাই করলাম। বাই পোস্টে আমাকে অডিশনের জন্য ডাকা হলো, তখন নওয়াজীশ আলী খান, আব্দুল্লাহ আল মামুন, আতিকুল হক চৌধুরী ছিলেন। অডিশন দিয়ে বুঝলাম আমার হয়ে যাবে। এরপর চিঠি এল আমি উত্তীর্ণ হয়েছি। ১৯৯৮ সালে তালিকাভুক্ত হওয়ার চিঠি এলো। কিন্তু কেউ আর অভিনয়ের জন্য ডাকে না। অনেক প্রযোজকদের সঙ্গে দেখা করি, তারা সরাসরি বললেন, আপনি ডাক্তার হবেন, অভিনেতা হবেন না, অযথা সময় নষ্ট করবেন কেন ? আমাকে পাত্তাই দিলেন না। দু-য়েক জন দয়া করে ছোটো-খাটো দু-য়েকটা রোল দিলেন, তাতে আমি তৃপ্ত নই। এভাবে পাঁচ বছর যাওয়ার পর মনে হলো, আমি মফস্বল মঞ্চে কাজ করেছি, আমার বোধহয় ঢাকায় অভিনয় করার যোগ্যতা নেই। যেহেতু পড়াশোনা করতাম পিজি হাসপাতালে পরীক্ষা দিলাম, প্রথমবার পরীক্ষা দিয়েই আমি টিকে গেলাম। পড়াশোনা চলছে, একটা ডিগ্রি হয়ে গেল, পাশ করার পর প্রফেসর ডাক্তার করিম স্যারের কাছে গেলাম সার্টিফিকেট ওঠানোর জন্য। তখন জানতে পারলাম উনি হুমায়ূন আহমেদ স্যারের বন্ধু। একজন বলল, স্যার তো হুমায়ূন আহমেদ স্যারের অফিসে গেছেন। একটা সুযোগ চলে এলো আমার কাছে, সার্টিফিকেটের উদ্দেশ্যে চলে গেলাম হুমায়ূন আহমেদ স্যারের অফিসে। তিনি আমার স্বপ্নের মানুষ। একবার তার সহকারী এক পরিচালকের সঙ্গে আমি সাক্ষাৎ করে আমার মনের কথা জানাই, ভাই আমি বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী, আমি অভিনয় করতে চাই, আমার কথা শুনে এমনভাবে তাকালেন মনে হলো আমি বিশাল অপরাধ করে ফেলেছি। আমি কিছু না বলে বের হয়ে এলাম। তারপরে আমি করিম স্যারের কাছে গেলাম, বললাম, স্যার আমি সার্টিফিকেট তুলব, আপনার স্বাক্ষর লাগবে, তিনি স্বাক্ষর করে দিলেন। ভাগ্য প্রসন্ন, হুমায়ূন স্যার আমাকে বললেন, তুমি করিমের ছাত্র নাকি। হূমায়ূন স্যারকে যখন দেখলাম তখন আমার স্যারের দিকে খেয়ালই নাই। কীসের সার্টিফিকেট নেওয়া এগুলো আমার খেয়ালই নাই। আমি স্যারের দিকে তাকিয়েই আছি। স্যার বললেন কোথায় থাক, আমি বললাম গাজীপুরে। স্যার জানালেন আমি তো প্রায় গাজীপুরে শুটিং করতে যাই। তুমি যেহেতু করিমের ছাত্র, আমাকে একটা হেল্প করতে হবে। শুনে তো আমি অবাক ! আকাশের চাঁদ বোধ হয় আমার হাতে এসে পৌঁছেছে। তখন মোবাইল ফোন ছিল না, আমি আমার চেম্বারের টিঅ্যান্ডটি নম্বর দিলাম। স্যার আমাকে ফোন করলেন এক সপ্তাহ পরে। স্যার আমাকে বললেন, ডাক্তার সাহেব আমরা গাজীপুরে শুটিং করতে যাব। আমাদের ৩০-৪০ জন মানুষের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। আমি অভিযানে নেমে গেলাম, কোথায় ৫০ জন মানুষ থাকবে। পেয়ে গেলাম খামার বাড়ি হোতাপাড়ায়। সাজ্জাদ সাহেব ছিলেন ওটার মালিক। তিনি থাকেন এলিফ্যান্ট রোডে, আমি সেখানেই চলে গেলাম। আমি সব কিছু খুলে বলার পর উনি জানালেন, এখানে তো আমরা কাউকে থাকতে দিই না। অনুরোধের পর অনুমতি দিলেন থাকার। স্যার পুরো টিম নিয়ে এলেন, আমার আয়োজন দেখে মুগ্ধ হলেন। স্যার তখনো জানেন না আমি অভিনয় করব, স্যার ভাবছেন তার বন্ধুর ছাত্রকে বলেছেন, সেজন্য তিনি কাজটি করেছেন। শুটিং দেখছি। কিন্তু স্যারকে আমার মনের কথা বলতে পারছি না। ওনার সহকারী পরিচালক মিনহাজকে বললাম, ভাই আমি কিন্তু রেডিওতে নাটক করতাম, সংবাদ পাঠ করতাম, বিটিভির তালিকাভুক্ত। তিনি রাতে স্যারকে বললেন আমার সবকিছু। রাতে শোনার পর রাতেই স্যার আমাকে ডাকলেন, জানতে চাইলেন মিনহাজ যেটা বলল, সেটা সত্যিই কি না, আমি জি বললাম। কাজ করেছি, কিন্তু ওইভাবে কেউ সুযোগ দেয়নি। স্যার যে নাটকের শুটিং করছেন, সেটার স্ক্রিপ্টের কাজ আগেই শেষ করেছেন। এর মধ্যে স্যার আমার জন্য একটি চরিত্র তৈরি করলেন। চরিত্রটি স্বাস্থ্য সহকর্মী, নাটকের নাম ‘সবুজ সাথী’। রাতেই স্যার জানালেন কাল তোমার শুটিং, স্যারের নাটকে অভিনয় করব ব্যাপারটা আমার কাছে স্বপ্নের মতোই ছিল। স্যার আমাকে স্ক্রিপ্ট দেননি, তিনি একটা একটা ডায়ালগ বলেন, আমি শুনে শুনে বললাম। শুটিং শেষ। পরের দিন সকালে নাস্তার টেবিলে সবার সামনে স্যার বললেন, আমাদের ডাক্তার তো অনেক ভালো অভিনয় করে। এই শুরু হলো স্যারের সঙ্গে কাজ। স্যারের খুব স্নেহ ও আস্থাভাজন আমি ছিলাম, এটা আমার বিশ্বাস। স্যার আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তার ভালোবাসা, কর্ম তাকে আজীবন বাঁচিয়ে রাখবে।


ইকবাল খোরশেদ : অভিনেতা হিসেবে আপনি খুবই জনপ্রিয়, সাধারণ রোগীরা আপনাকে কীভাবে দেখেন ? 

ডা. এজাজ : গাজীপুরে যখন চেম্বার তৈরি করলাম, রোগীরা ধীরে ধীরে আমার কাছে আসতে শুরু করলেন, আস্থা তৈরি হয়। ডাক্তার হিসেবে আমার যে পরিচিতি, রোগীদের বিশ্বাস এটা কিন্তু ভালো ডাক্তার হিসেবে, অভিনেতা হিসেবে নয়। অনেকেই ভাবে, তিনি নাটক করেন খুবই পরিচিত, এজন্য বোধ হয় রোগী বেশি হয়। এটা একদম ভুল ধারণা। রোগীরা আমার কাছে আসে সুচিকিৎসা পাওয়ার জন্য। আমি মমতা দিয়ে রোগী দেখি, প্রয়োজনে রেফার করি, যে রোগী যার কাছে পাঠানো উচিত তার কাছে পাঠাই।

ইকবাল খোরশেদ : রোগীরা আপনার অভিনয় নিয়ে প্রশ্ন করে ?

ডা. এজাজ : কেউ কেউ করতে চায়, তাদের আমি থামিয়ে দিই- এই প্রশ্নটা এখন না বলাই ভালো। চিকিৎসা করছি রোগ সংক্রান্ত কথাটাই বলুন। 

ইকবাল খোরশেদ : অভিনয় জীবনে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে থাকে, একজন অভিনয়শিল্পীর জীবনে। আপনি নিশ্চয়ই এর বাইরের না ? আপনার কিছু স্মৃতি শুনতে চাই-

ডা. এজাজ : অভিনয়ে মধুর স্মৃতি অনেক রয়েছে। একবার ছোট এক বাচ্চাকে নিয়ে মা এসেছে। বাচ্চার অনেক জ্বর। মাকে সন্তান কেঁদে কেঁদে বলছে, মা আমি ডা. এজাজুলকে দেখব, সন্তানের কথা শুনে মা বলছে, তুই ডাক্তারকে কেমনে দেখবি, তুই কি ডাক্তার ? সে তো রোগী দেখে। সন্তান কাঁদতে থাকে, মা এসে আমাকে বলল, আপনাকে দেখার জন্য বোধহয় জ্বর আসছে। বাচ্চাকে যখন আমি দেখছি, সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, তার গায়ে অনেক জ্বর। এগুলো আমি উপভোগ করি। 

ইকবাল খোরশেদ : আপনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউক্লিয়ার বিভাগে আছেন, এখানে কি অবস্থা ?

ডা. এজাজ : ঢাকা মেডিকেলে এই বিভাগটি একেবারে নতুন করে দাঁড় করাবার চেষ্টা করছি আমি। আমি আশা করি, এটাকে সুন্দর একটি জায়গায় নিয়ে যেতে পারব।  

ইকবাল খোরশেদ : দেশে আপনার রোগী দেখা ফি নিয়ে অনেকেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করে, আপনাকে গরীবের ডাক্তার খেতাব দিয়েছে। আপনি ২০০-৩০০ টাকা ফি নেন, যেখানে অন্য একজন ডাক্তার ১০০০-১৫০০ টাকা ফি নিয়ে থাকেন, এই অল্প ফি নেওয়ার চেতনাটা সম্পর্কে জানতে চাই-

ডাক এজাজ : এটাকে অনেকে অনেকভাবে নেয়, আমি মন থেকেই অল্প ফি নিই। আমার মনে হয়, এই টাকাটা সবাই দিতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করে। অনেকে আবার মনে করে এত বড়ো ডাক্তার ৩০০ টাকা ফি নেয়, তখন সে কষ্ট পায় মাত্র ৩০০ টাকা ডাক্তারের কাছে এলাম। প্রথমে আমি ২০ টাকা ফি নিতাম ১৯৯০ সালে। তখন আমি এমবিবিএস ডাক্তার, রোগী ধীরে ধীরে বাড়ছে, তখন এমবিবিএস-এর ফি ৪০ টাকা, একদিন একজন রোগী বাইরে আলোচনা করছে তার ফি কত, ২০ টাকা শুনে বলছে সে কি এমবিবিএস নাকি ? ২০ টাকা নেওয়ার কারণে মানুষ আমাকে সন্দেহ করছে, তাই ৪০ টাকা ফি করলাম, একটু পর রাগ কমে গেলে, আবার ৩০ টাকায় ফিরে এলাম। এরপর যখন প্রমোশন পেয়ে গেলাম চেম্বারের সবাই বলে ৩০০ টাকা স্যার কেমনে নেন, একটু বাড়ান, এরপর ৪০০ টাকা করলাম, কিন্তু মনের দিক দিয়ে শান্তি পাচ্ছিলাম না, তাই আগের ৩০০ টাকাই বহাল রাখলাম দুই দিনের মধ্যে। এদেশে অনেক মহান চিকিৎসক আছেন, সর্বোচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন তারাও ৩০০ টাকা ফি নেন।

ইকবাল খোরশেদ : অভিনয়ের পাশাপাশি আপনি নাটকের নির্দেশনাও দিচ্ছেন, এ সম্পর্কে জানতে চাই ?

ডা. এজাজ : ‘স্বাস্থ্য মামা’ শিরোনামে নাটকের মধ্য দিয়ে নির্মাতা ও নাট্যকার হিসেবে আমার যাত্রা শুরু হয়েছে। নাটকটি আরটিভিতে প্রতি শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় প্রচার হয়। চ্যানেলের পাশাপাশি আমার নাটকটি ইউটিউব চ্যানেলেও যায়। ইউটিউব চ্যানেলের নাম ড. এজাজ [উৎ. ঊঔঅঔ]

ইকবাল খোরশেদ : আপনার বেশিরভাগ নাটকেই মানুষকে হাসাতে দেখা যায়-

ডা. এজাজা : ছেলেবেলা থেকেই কেন যেন এই ধরনের মজার অভিনয় করার প্রতি ঝোঁক ছিল। হুমায়ূন স্যার কিন্তু প্রথমে আমাকে সিরিয়াস চরিত্র দিয়েছিলেন। স্যারের যে নাটকে প্রথম কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছি, ‘অদেখা ভুবন’ সেখানেও সিরিয়াস চরিত্র, স্যারের প্রথম ছবি ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ সিরিয়াস চরিত্র। একবার সালেহ ভাইকে জানালাম, ভাই আমি মঞ্চে উঠলে দর্শক আগে পাঁচ মিনিট হাসত, যার কারণে অভিনয় করতাম, পাঁচ মিনিট পর সালেহ ভাই বলল, তাই কী ? এটা আবার সালেহ ভাই হুমায়ূন স্যারকে বলে দিলেন। স্যার আমাকে বললেন, কি ডাক্তার তুমি নাকি কমেডি খুব ভালো করো, তুমি এই ধরনের চরিত্র করবা, ডাক্তারি পেশায় সমস্যা হবে না। আমি বললাম স্যার, আপনি যেটা ভালো মনে করেন সেটা করেন। স্যার আমার কথা শুনে খুশি হলেন। তারপর স্যার আমাকে কমেডি চরিত্র দিলেন। এরপর থেকেই তো করেই যাচ্ছি।

ইকবাল খোরশেদ : দুই সেক্টরে আপনার ভবিষ্যৎ ভাবনা কী ?

ডা. এজাজ : ভবিষ্যৎ হচ্ছে আমার সংসার, আমার ডাক্তারি এবং অভিনয়। দায়িত্বশীলভাবে আমি আমার পেশার কাজ চালিয়ে যেতে চাই। অভিনয় করব, নাটক লিখব, নির্মাণও করব। সন্তান, স্ত্রী নিয়ে আল্লাহ যেন সুখে শান্তিতে রাখেন, ব্যস।

ইকবাল খোরশেদ : সংসার নিয়ে বলুন-

ডা. এজাজ : বউ আমার সন্তানদের আদর্শ মা। সন্তানদের বলি তোমাদের ভাগ্য যে এরকম একজন মা পেয়েছ। আমার দুই মেয়ে দুই ছেলে। বড়ো মেয়ে ডাক্তারি পাশ করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ট্রেনিং করছে। ছোট মেয়েও ডাক্তার, ইনটার্র্নি করছে, বড়ো ছেলেও ডাক্তারি পড়ছে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে, ফাইনাল ইয়ারে। ছোট ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুষ্টি বিভাগে পড়ছে। সন্তানেরা নিজেদের মতো পড়াশোনা করছে।

ইকবাল খোরশেদ : অভিনয় নিয়ে পরিবারের মন্তব্য কী ?

ডা. এজাজ : তারা আমাকে খুব ভালো অভিনেতা মনে করে না, মোটামুটি অভিনেতা মনে করে। তারা খুব ভালো দর্শক। ভালো কাজের প্রশংসা করে, খারাপ কাজের সমালোচনা করে। 

ছবি : জাকির হোসেন