রুবাইয়াৎ অদিতি, বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় একজন সংবাদ উপস্থাপক। তার সাবলীল উপস্থাপন, স্পষ্ট উচ্চারণ, দীপ্ত কণ্ঠস্বর সবকিছুই তার খবর উপস্থাপনাকে বেশ আকর্ষণীয় করে তোলে। অত্যন্ত মেধাবী ও প্রতিভাবান এই নারী মিডিয়ার বিভিন্ন শাখায় জড়িত আছেন দীর্ঘদিন ধরেই। এবার তিনি হাজির হয়েছেন আনন্দভুবন কাভার গার্ল হিসেবে। নিজের ব্যক্তিগত জীবন, কাজ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি খোলাখুলি কথা বলেছেন আনন্দভুবনের সঙ্গে। লিখেছেন ফাতেমা ইয়াসমিন...
কথায় আছে, নদী পারের নারীরা বেশ সাহসী। অদিতি আরো যোগ করলেন, সাহসী আর জেদিও বটে। হ্যাঁ, আমি বেশ জেদি। একবার যদি চিন্তা করি বা সিদ্ধান্ত নিই যে কাজটা করব তো সেটা আমি সফলভাবেই শেষ করি। অদিতি কিন্তু ঠিকই বলেছেন, এই বয়সেই বেশ একজন সফল নারী হিসেবে তিনি পরিচিত। আমরা বরং একটুু পেছন থেকেই শুরু করি। বলা হয়ে থাকে মানুষের পুরো জীবনটাই নাকি তার শৈশবের প্রতিফলন। তো কেমন ছিল অদিতির শৈশবের দিনগুলো। বলতে গেলে বেশ সবুজ একটা শৈশব ছিল আমার। ময়মনসিংহ সদরেই জন্ম। ব্রহ্মপুত্র নদীর পাড়ে বন্ধুবান্ধব নিয়ে ছোটাছুটি করেই কেটেছে পুরো শৈশব। ডানপিটে তো ছিলামই। কিন্তু মা বলে বেশ লক্ষীও ছিলাম।
অদিতির পুরো নাম রুবাইয়াৎ অস্মিতা অদিতি। যার অর্থ ‘আমার কবিতার পৃথিবী’। নামটি রেখেছেন বাবা ফরিদ আহমেদ দুলাল। একজন কবি তার কন্যাকে উৎসর্গ করেছেন তার পুরো কবিতার জগৎ, মেয়ের প্রতি এর চেয়ে ভালোভাবে ভালোবাসার প্রকাশ আর কী হতে পারে ! অদিতির বাবা বেশ পরিচিত একজন কবি। মা কুমকুম সরকার ময়মনসিংহের একজন সু-পরিচিত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও জনপ্রিয় শিক্ষিকা। স্বাধীনতার পরবর্তীসময়ে তিনি জড়িত ছিলেন সাংবাদিকতার সঙ্গে। বোঝাই যাচ্ছে অদিতি বেশ শিক্ষিত ও সাংস্কৃতিক মনোভাবাপন্ন পরিবারের সদস্য। শুধু তাই নয়, অদিতির নানা ও দাদার পরিবারও বেশ প্রভাবশালী ও শিক্ষিত পরিবার।
স্বাভাবিকভাবেই পরিবারে সবসময়ই পড়াশোনা ও সাহিত্যচর্চার পরিবেশ ছিল। অদিতি বেড়েও উঠেছেন সেভাবে। ছেলেবেলা থেকেই নাচ, গান, অভিনয়, আবৃত্তি, বিতর্ক সবকিছুতেই পারদর্শী ছিলেন। নাচ ও বিতর্কে জাতীয় পর্যায়ে অনেক পুরস্কারও পেয়েছেন। পড়াশোনায়ও বেশ তুখোড় তিনি। ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে কলেজের গÐি পার হয়ে তিনি ভার্সিটিতে ভর্তি হন প্রিয় বিষয় ইংরেজি সাহিত্যে। এখানে ছোট্ট একটা গল্প আছে। গল্পটি ছোটো হলেও আজকের অদিতি তৈরিতে এর বেশ ভ‚মিকা রয়েছে। এসময় পাবলিক এক ভার্সিটিতে চান্সও পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সাবজেক্ট মনের মতো ছিল না। অদিতি চাইলেন প্রিয় বিষয় নিয়ে প্রাইভেটেই পড়বেন। বাদ সাধলেন বাবা। সরকারি চাকরিজীবী বাবা বললেন, প্রাইভেটে পড়তে চাইলে নিজের খরচেই পড়তে হবে। অদিতি মেনে নিলেন শর্ত। জেদ করলেন নিজেই নিজের সব ব্যবস্থা করবেন। সেই থেকেই তিনি চাকরিতে যোগ দিলেন। নিজের প্রতিভার ওপর ভরসা করেই ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে যোগ দিলেন এটিএন বাংলায়, অনুষ্ঠান উপস্থাপক হিসেবে। একটি লাইফস্টাইল অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হিসেবে কাজ করেছেন প্রায় একবছর। এরপর যোগ দেন রেডিও টুডেতে আর জে হিসেবে। আর জে হিসেবেও বেশ সুনাম অর্জন করেন সেখানে। ছেলেবেলা থেকেই ভ্রমণ করতে দারুণ পছন্দ করেন তিনি। তাই জিএমজি এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রু হিসেবে কাজের অফারটা তিনি লুফে নেন। ঘুরেছেন দেশ বিদেশে। সেটা ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। সেটা অবশ্য বছরখানিকের মধ্যেই ছেড়ে দিতে হয় পড়াশোনার জন্য। এরপর আবারো টিভিতে ফেরা। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে যোগ দেন মাছরাঙ্গা টিভিতে প্রোগ্রাম অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে। সঙ্গে একটি প্রোগ্রামের উপস্থাপক হিসেবে কাজ করেছেন। মাছরাঙ্গাতে কাজ করেছেন দীর্ঘ ৫ বছর। এর মধ্যে প্রমোশন পেয়ে প্রমো ডিপার্টমেন্টে হেড ইনচার্জ হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর আবারো রেডিওতে ফিরে আসেন। রেডিও ঢাকা এফএম-এ শিফট প্রডিউসার হিসেবে যোগ দিয়েছেন ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে। বর্তমানে আছেন জনপ্রিয় সংবাদ চ্যানেল ৭১ টিভিতে নিউজ প্রডিউসার হিসেবে। সঙ্গে করছেন নিউজ প্রেজেন্টারের কাজও। নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবেই তিনি এখন বেশ জনপ্রিয়।
এর বাইরেও নিয়মিত করছেন মডেলিং। টিভিসি, ওভিসিতে কাজ করছেন বেছে বেছে। সাতকাহন নামে এক দেশীয় পোশাক ব্র্যান্ডের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবেও কাজ করছেন। আর বিভিন্ন করপোরেট শো-তে উপস্থাপক হিসেবে নিয়মিত কাজ করছেন।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী অদিতির এই অল্প বয়সেই অনেক কাজের অভিজ্ঞতা। এত শাখায় বিচরণ তো কোন কাজটা ভালো লাগে বেশি। জানালেন সব কাজই তিনি বেশ মন দিয়েই করেন। উপভোগও করেন। তবে উপস্থাপনাতেই বেশ প্রাণবন্ত থাকেন তিনি। মডেলিং-এ সামনে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। ভালো কোনো নাটকের অফার পেলে তাতেও আপত্তি নেই।
ব্যক্তিজীবনে এককথার মানুষ তিনি। সাহসী মানুষ হিসেবে পরিচিত। তিনি মনে করেন যেকোনো মেয়েরই জীবনের যুদ্ধ বেশ কঠিন। তবে দিন কিন্তু পাল্টেছে। নিজের দায়িত্ব নিজে নেওয়াই সবচেয়ে বড়ো স্বাধীনতা। কে কী বলল, কী করল সেদিকে দৃষ্টি না দেওয়াই ভালো। দিন শেষে নিজের কাছেই সকলকে ফিরতে হয়। তাই নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টাই সবচেয়ে জরুরি। সেইসঙ্গে বন্ধুদের জন্য অন্তঃপ্রাণ তিনি। অদিতি মনে করেন, মানুষ যাদের সঙ্গে মেশে তারা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আশেপাশে যারা থাকে তাদের একটা প্রভাব থাকে প্রতিজন মানুষের কাজে। তাই বন্ধু নির্বাচনে তিনি বেশ সতর্ক। ভালো মনের মানুষ যারা তাদেরই তিনি বন্ধু হিসেবে কাছে টানেন। আর পছন্দ করেন ঘুরতে। ভ্রমণ তার নেশার মতো। ঘুরেছেন দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে। আর প্রায় ৭-৮টি দেশে। সদাহাস্যোজ্জ্বল অদিতি টিভিপাড়ায় বেশ পরিচিত মুখ। তিনি তার মেধা, যোগ্যতা ও প্রতিভা দিয়ে দেশের মিডিয়া অঙ্গনে আরো পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা অর্জন করবেন। সে আশা তার ভক্তদের। শুভেচ্ছা রইলো রুবাইয়াৎ অদিতির জন্য।
মডেল : অদিতি . পোশাক : ভাসাভি
গয়না : সাতকাহন . রূপসজ্জা : সাজবাতি মেকওভার
ছবি : জাকির হোসেন