তবে কি মুছে যাবে ছন্দার নাম !

15 Sep 2022, 03:35 PM কাভার স্টোরি শেয়ার:
তবে কি মুছে যাবে ছন্দার নাম !

গোলাম ফরিদা ছন্দা প্রায় দুইযুগ ধরে নিয়মিত অভিনয় করে আসছেন। মাঝে একটু পর্দায় কম দেখা গেলেও, এখন দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন এই অভিনেত্রী। দর্শকের কাছেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন তিনি। বিশেষ করে দীপ্ত টিভিতে প্রচারিত ‘মাশরাফি জুনিয়র’ নাটকে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি। জনপ্রিয়তা এতটাই যে নিজের নামটিও এখন প্রায় বিলপ্তির পথে। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...


সাধারণত একজন অভিনয়শিল্পী নিজের নামটি স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখতে কিংবা দর্শকের হৃদয়ে দীর্ঘদিন থাকতে, সবসময় চেষ্টা করেন। এদের মধ্যে অনেকে সফল হন, অনেকে আবার অজান্তেই হারিয়ে যান। অনেকে আবার নিজের নামের চেয়ে চরিত্রের নামেই বেশি পরিচিতি পেয়ে যান, যেমন ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে বাকের ভাই চরিত্রটি এখনো মানুষ মনে রেখেছেন। শহর অঞ্চলের মানুষ বাকের ভাইয়ের আসল নাম আসাদুজ্জামান নূর জানলেও গ্রামের মানুষের কাছে আসাদুজ্জামান নূর বাকের ভাই নামেই পরিচিত। একজন অভিনেতার সার্থকতা বোধহয় এখানেই।

এদিকে দীপ্ত টিভিতে প্রচারিত মাশরাফি জুনিয়র নাটকের ক্ষেত্রেও এমন ঘটছে বলে দাবি এই নাটকের বেশিরভাগ অভিনয়শিল্পীর। নিজের নামের চেয়ে সবাই চরিত্রের নামেই বেশি পরিচিতি পাচ্ছেন। যেমন গোলাম ফরিদা ছন্দা এই নাটকে রুনা চরিত্রে অভিনয় করছেন। দর্শকের মুখোমুখি হলেই তাকে শুনতে হচ্ছে আপনি রুনা না ? ছন্দা বলেন, একজন অভিনেত্রীর বড়ো প্রাপ্তি কিন্তু এটাই। যদিও অনেকে আমাকে নতুন করে রুনা নামেই চিনছেন এটা কিন্তু অনেক আনন্দের। এতে করে এ-ও জানা যাচ্ছে যে, নাটকটিকে দর্শক কতখানি ভালোবাসছেন।

একটু ভাবুন তো, আপনি যে নামে এতদিন পরিচিত ছিলেন, হঠাৎ করে সেই নামটি হারিয়ে পরিচিত হচ্ছেন অন্য নামে ! একটু খটকা লাগতেই পারে। তবে খারাপ কী, যখন বেশিরভাগ মানুষ আপনাকে এক নামে চিনবেন। পৃথিবীতে এই রকম ইতিহাস অনেক রয়েছে, যাদের আসল নাম অনেকেই জানেন না। নামের পরিবর্তন হয়ে গেছে তার কর্মের কারণে। এটাই একজন মানুষের বড়ো উপহার। গোলাম ফরিদা ছন্দার আসল নামটি হারিয়ে গেলেও মোটেও তিনি বিচলিত নন, বরং বিষয়টি তিনি এনজয় করেছেন।

মাশরাফি জুনিয়র নাটকটি ইতোমধ্যে ৫০০ পর্ব অতিক্রম করেছে, এই প্রসঙ্গে এই নাটকের অন্যতম অভিনেত্রী গোলাম ফরিদা ছন্দা বলেন, [যিনি রুনা চরিত্রে অভিনয় করছেন] যখন কাজটি শুরু করি, তখন ভাবতে পারিনি নাটকটি এই পর্যন্ত যাবে, কিন্তু নাটকটি যখন প্রচার শুরু হলো, দর্শক উপভোগ করে তাদের মন্তব্য জানাতে লাগলেন তখন বুঝতে পারলাম নাটকটি নিয়ে অনেক দূর যাওয়া যাবে। সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হচ্ছে এই নাটকে আমি রুনা চরিত্রে অভিনয় করছি, আমাকে অনেকে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমগুলোতে রুনা আপা বলে সম্বোধন করেছে এবং আমার কাছে জানতে চেয়েছেন আপনাকে যদি আমরা রুনা আপা নামে ডাকি, আপনি কী মাইন্ড করবেন ? এটাই হচ্ছে অভিনয়জীবনে আমার সার্থকতা। এই যে ৫০০ পর্বের পথচলা, এই অর্জন কিন্তু আমার একার নয়, পুরো টিমের। শুধু অভিনয়শিল্পীরা নয়, দীপ্ত টিভি কর্তৃপক্ষ, লাইন প্রডিউসার, পরিচালক, লেখক, ক্যামেরাম্যান, মেকাপম্যান, প্রোডাকশন থেকে শুরু করে, সবারই অবদান রয়েছে। এই অর্জনে আমি পুরো টিমকে অভিনন্দন জানাতে চাই।

রুনা চরিত্রটি জনপ্রিয়তা পাওয়ার কারণ হিসেবে ছন্দা বলেন, আমি যখন একটি চরিত্রে অভিনয় করি, তখন চেষ্টা করি সেই চরিত্রে মিশে যেতে। যখন দর্শক আমাকে রুনা চরিত্রে দেখেন, তখন আমি রুনার চরিত্রটাকেই প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে থাকি। যার কারণে চরিত্রটা দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। তার মানে রুনাকে লেখক যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, নির্মাতা যেভাবে চেয়েছেন, আমার মনে হয় সেভাবে আমি চরিত্রটিতে প্রবেশ করতে পেরেছি। যার ফলে দর্শক আমি ছন্দা এটা ভুলে গিয়ে রুনা চরিত্রটিকে গ্রহণ করতে চেয়েছে।

গোলাম ফরিদা ছন্দা দীর্ঘদিন ধরে তার অভিনয় দিয়ে দর্শককে বিমোহিত করে চলেছেন। যদিও ইদানীং চরিত্রের গুরুত্ব বুঝে কাজ করছেন। গড়পড়তা কিংবা অনুরোধের কাজ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। বর্তমানে ব্যস্ত রয়েছেন একাধিক ধারাবাহিক নাটক নিয়ে। এরমধ্যে বেশিরভাগ সময় দিতে হয় দীপ্ত টিভিতে প্রচারিত দর্শকপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘মাশরাফি জুনিয়র’ নাটকে। কারণ নাটকটি প্রতিদিনই প্রচার হয়। অন্যান্য ধারাবাহিকের মধ্যে রয়েছে সালাউদ্দিন লাভলুর ‘সন্ডা পান্ডা’ ও এস এম সালাউদ্দিনের নির্দেশনায় ‘কাজল রেখা’।

খÐ নাটকের চেয়ে ধারাবাহিক নাটকেই বেশি দেখা যায় ছন্দাকেÑ এই প্রসঙ্গে ছন্দা বলেন, খÐ নাটকের চেয়ে ধারাবাহিক নাটকে কাজ করতে বেশি ভালো লাগে। ধারাবাহিকে দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করার সুবাদে অন্যরকম ভালোবাসা গড়ে ওঠে সবার সঙ্গে।

ছোটোপর্দার পাশাপাশি বড়োপর্দায়ও কাজ করে বেশ প্রশংসা কুড়ান ছন্দা। তবে সংখ্যা নিতান্তই কম, এই প্রসঙ্গে ছন্দা বলেন, সত্যি বলতে ধারাবাহিক নাটকে কাজ করার পর সময় হয়ে ওঠে না। তারপরও বড়োপর্দার প্রতি একটা ভালোবাসা রয়েছে। সেই ভালোবাসা থেকেই মুশফিকুর রহমান গুলজারের ‘টুঙ্গিপাড়ার দুঃসাহসী খোকা’ সিনেমায় কাজ করেছি। কাজ করেছি ‘কোনো এক কালে’ নামের আরো একটি সিনেমায়। এ-দু’টি সিনেমায় কাজ করতে গিয়ে খুবই ভালো লেগেছে। এই দু’টি সিনেমায় নতুন এক ছন্দার দেখা মিলবে। এছাড়াও খুব শিগ্গিরই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে আমার অভিনীত ‘নকশী কাঁথার জমিন’ সিনেমাটি।


যেভাবে ছন্দার যাত্রা শুরু

গোলাম ফরিদা ছন্দা শৈশব থেকেই সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি দুর্বল ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন মঞ্চের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে তিনি ‘বর্ণচোর’, ‘ম্যাকবেথ’, ‘ইডিপাস’, ‘ডলস হাউস’সহ বেশ কিছু দর্শকনন্দিত মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন।

১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ‘এভাবেই গল্প শুরু’ শিরোনামের নাটকের মধ্য দিয়ে তার টিভিপর্দায় যাত্রা শুরু। এরপর তিনি ‘কাজল কালো দিন’, ‘একজন আয়নাল লস্কর’, ‘মা’, ‘স্ত্রীর পত্র’সহ বেশকিছু দর্শকপ্রিয় টিভিনাটকে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ নরেশ ভূঁইয়ার ‘নোঙ্গরখানা’, সকাল আহমেদের ‘কাঠগড়া’, মোস্তফা কামাল রাজের ‘সার্কেল’, হাসান শিকদারের ‘পয়মন্ত’, সতীর্থ রহমানের ‘মন যে কারো কথা শোনে না’, অরুণ চৌধুরীর ‘কাহিনি’, আল হাজেনের ‘দুই টাকার বাহাদুরি’, ‘নূরজাহান’ ও মামুনুর রশিদের নতুন একটি ধারাবাহিক।