পপসংগীতে আস্থা

16 Aug 2022, 12:04 PM নিকটদেশ শেয়ার:
পপসংগীতে আস্থা

গত শতকের নয়ের দশকে ভারতে দারুণ জনপ্রিয় ছিল পপসংগীত। পপ মিউজিক, পপশিল্পীদের তখন দারুণ জনপ্রিয়তা। সিনেমায় প্লেব্যাক করা শিল্পীদের মতোই পপশিল্পীরা মর্যাদা পেতেন। কিন্তু দিন দিন নানা কারণে দাপট কমতে থাকে পপসংগীতের। একে একে পর্দার আড়ালে যেতে থাকেন নামিদামি পপ তরকারা। কিন্তু বর্তমানে আবারো সরব হয়ে উঠেছে পপ দুনিয়া। অনেক সিনেমায়ও পপসংগীত হরহামেশাই ঢুকে যাচ্ছে। এই পপসংগীতের পুনরুত্থানের জন্য যেসব পপসংগীত শিল্পীরা অবদান রাখছেন তাদের মধ্যে অন্যতম আস্থা গিল। এ সময়ের জনপ্রিয় পপতারকা। এবারের নিকটদেশ আয়োজন আস্থা গিলকে নিয়ে...
বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় পপতারকাদের তালিকা করলে সেখানে আস্থা গিলের নাম আসবেই। মেধাবী এই গায়িকা শুধু গান গাওয়াতেই নিজেকে বেঁধে রাখেননি। পপসংগীতের প্রতি ভালোবাসা থেকেই তিনি গান লেখার প্রতিও বিশেষ মনোযোগ দেন। বেশ ভালো কিছু পাঞ্জাবি পপ গান রয়েছে যা তার লেখা।আস্থা গিলের জন্ম ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুলাই দিল্লিতে এক পাঞ্জাবি শিখ পরিবারে। বাবা জেসপাল মণি একজন সংগীত পরিচালক। আর সীমা গিল একজন গৃহিণী। আস্থার প্রেমা গিল নামে তার এক ছোটো বোন রয়েছে। বাবা যেহেতু সংগীত পরিচালক, তাই পরিবারেই সবসময় গানের আমেজ বিরাজ করত। গানটা আর আলাদা করে শেখার কিছু ছিল না। বাবা জেসপালের কাছেই মূলত সংগীতের হাতেখড়ি। বাসায় সবসময় একটা সংগীতের আবহাওয়া থাকলেও আস্থা অবশ্য প্রথম দিকে চাননি গান নিয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে। সাংবাদিকতায় পড়াশোনা শেষ করে দিল্লির একটি বেশ নামকরা বিজ্ঞাপন এজেন্সিতে চাকরি শুরু করেন। মোটা মাইনের বেতনও পেতেন। সবই ঠিক ছিল কিন্তু রক্তে গান সুরের মোহ সে কি আর অন্য কিছুতে সুখ খুঁজে পাবে! তাছাড়া গৎবাঁধা জীবনে একেবারেই হাঁপিয়ে উঠেছিলেন তিনি। জীবনকে কিছুটা ছুটি দিতেই আশ্রয় নিলেন গানে। পাঞ্জাবের মানুষ সবসময়ই পপসংগীতে পারদর্শী। আর আস্থার তো ছেলেবেলা থেকেই সখ। তো শুরু করলেন গান গাওয়া।
সংগীত নিয়ে বাবাকে অনেক সংগ্রাম করতে দেখেছেন। গান দিয়ে জীবন চালানোটা যে বেশ কঠিন তা তিনি জানতেন। তারপরও মনের সুখের জন্য তিনি গানকেই বেছে নিয়েছেন। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে ‘ফুগলি’ সিনেমাতে তিনি প্রথম গান করেন। ধূপ চিক গানটি গেয়ে তিনি বেশ প্রশংসিত হন। এই সিনেমাতে তাকে প্রথম সুযোগ করে দেন রাফতার যিনি পাঞ্জাবের বেশ জনপ্রিয় একজন র‌্যাপার। আস্থার কলেজের কোনো অনুষ্ঠানে বিচারক হয়ে এসেছিলেন তিনি। আস্থার গান শুনে বেশ ভালো লেগেছিল তার। তাই ফুগলি সিনেমায় তাকে প্লেব্যাকের আমন্ত্রণ জানান। আস্থা বেশ খুশিই হয়েছিলেন। কারণ তার গান নিয়ে নিজেই খুব আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না ততদিন। তবে জীবন যেহেতু অনিশ্চিত তাই রিস্কটা নিয়েই নিয়েছিলেন। আস্থার ভাষ্যমতে রিস্ক নেওয়াটাই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে সুন্দরের পথে। যেকোনো শিল্পীই চান তার গান সকলে পছন্দ করুক। সে জনপ্রিয়তা পাক, সফলতা আসুক। আমিও তা চেয়েছি।

‘ফুগলি’ সিনেমার পর খুব একটা পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। তার হিট গানের মধ্যে আভি তো পার্টি শুরু হুয়ি হ্যা, হ্যাপিহ্যাপি, কামারিয়া, প্রপার পাটোলা, নাগিন ও ডিজেওলা বাবু। পাঞ্জাবের জনপ্রিয় র‌্যাপার বাদশাহর সঙ্গে ‘ডিজেওলা বাবু’ গানটি তার দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এই গানটির সফলতার পর আস্থা বলেছিলেন, আমি তো এমনি এমনি গান করি মনের আনন্দে কিন্তু হঠাৎ করেই মনে হচ্ছে কোথায় পৌঁছে গেছি। এখন দায়িত্ব এসে পড়েছে। শ্রোতাদের ভালো গান উপহার দেওয়াটাই একজন শিল্পীর সার্থকতা।আস্থা ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে পরিচালক রোহিত শেঠীর টিভি গেম শো খাতরোকি খিলাড়ি সিজন ১১-তে অংশগ্রহণ করেন এবং ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তাও পান তার সাহসী মনোভাবের জন্য।

আস্থা ব্যক্তিগত জীবনে বেশ প্রাণখোলা একজন মানুষ। ঘুরে বেড়াতে খুবই পছন্দ করেন। ফ্যাশনের বিষয়ে খুবই সতর্ক তিনি, মিডিয়ায় তার ফ্যাশন, তার জামা-কাপড় চর্চিত একটি বিষয়। আস্থা পপসংগীতে র‌্যাপার বাদশা ও রাফতারকে দারুণ পছন্দ করেন। তাছাড়া হালের গায়িকা নেহা কাক্কর রয়েছে তার পছন্দের তালিকায়। আগের শিল্পীদের মধ্যে কিশোর কুমার, লতা মুঙ্গেশকরকে তিনি দারুণ শ্রদ্ধা করেন ও ভালোবাসেন।গানের পাশাপাশি নাচেও দারুণ দক্ষতা রয়েছে আস্থার। নিজের মিউজিক ভিডিওগুলোতে নাচের প্রতিভা ইতোমধ্যে তিনি দেখিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি র‌্যাপার ধালির সঙ্গে নতুন একটি গানের ডুয়েট করতে যাচ্ছেন। বালমা নামের এই গানটিতে তারা নিজেদের সর্বোচ্চই দিয়েছেন। নয়ের দশকের পপ গানের মতো পপসংগীত আবারো জনপ্রিয় হোক এই বিশ্বাসেই কাজ করছেন তারা। পপসংগীতে সুদিন আবার ফিরে আসুক। ভারতের সংগীতজগত আরো সমৃদ্ধ হোক। এই চাওয়াই আস্থার এখন। শুভ কামনা রইল আস্থা গিলের জন্য। তার প্রতি সকলেরই আস্থা রয়েছে।


লেখা : ফাতেমা ইয়াসমিন