হাওয়ায় ভাসছেন নাজিফা

16 Aug 2022, 11:58 AM কাভার গার্ল শেয়ার:
হাওয়ায় ভাসছেন নাজিফা

মুক্তির আগেই আলোচনায় আসেন লাক্স-সুন্দরী নাজিফা তুষি অভিনীত ‘হাওয়া’ ছবিটি। বিশেষ করে ছবির ট্রেলার ও পোস্টার প্রকাশের পর দেশজুড়েই হাওয়ায় ভাসতে থাকে ‘হাওয়া’ ছবির সংবাদ। দর্শকও অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে ছবিটি দেখার জন্য। সিনেমার ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটি রীতিমতো ভাইরালও হয়ে যায়। ছবিতে প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেন চঞ্চল চৌধুরী ও নাজিফা তুষি। দুজনেই প্রশংসিত হয়েছেন। হাওয়া ছবি ও নাজিফা তুষিকে নিয়ে লিখেছেন শেখ সেলিম...

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে ২৯ জুলাই দেশের ২৪টি সিনেমা হলে মুক্তি পায় ‘হাওয়া’ ছবিটি। মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত ‘হাওয়া’ ছবিটি অবশ্য মুক্তির আগেই ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়। যার ফলে মুক্তির পর থেকেই অধিকাংশ প্রেক্ষাগৃহে হাউজফুল যায় ছবিটি। অগ্রিম টিকিট বুকিংও শেষ হয়ে যায়। সব মিলিয়ে দেশের সিনেমার ইতিহাসে নতুন এক রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে ‘হাওয়া’ ছবিটি। হয়ত এমনই এক ছবির জন্যে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করছিলেন তুষি।তুষির ক্যারিয়ার শুরু হয় ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় প্রথম রানারআপ এর মধ্যে দিয়ে। প্রতিযোগিতায় আসার বড়ো একটি কারণ বড়ো কোনো প্ল্যাটফর্মে কাজ করা। স্বপ্ন দেখতেন, বড়োপর্দায় কাজ করবেন তিনি। সেই স্বপ্ন নিয়েই এগিয়ে চলেছেন তুষি। লাক্স-সুন্দরী হওয়ার পর রেদওয়ান রনি পরিচালিত ‘আইসক্রিম’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তার।
সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কাজ করবেন সেই স্বপ্নটি শুরু হয় ছেলেবেলা থেকেই। বিশেষ করে অভিনয়ের প্রতি বেশ ঝোঁক ছিল তার। ‘বিশ্বসুন্দরী’ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানটি সবসময় খুব আগ্রহ নিয়ে দেখতেন তুষি। লাক্স-সুন্দরী প্রতিযোগিতাও ছেলেবেলা থেকেই দেখে আসছিলেন, অপেক্ষা করছিলেন অষ্টাদশী পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত। সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন নাজিফা তুষি। প্রতিযোগিতার পরপরই সুযোগ আসে বেশকিছু কাজের। কিন্তু নাজিফার স্বপ্ন ছিল বড়োপর্দা। তাই সুযোগ খোঁজছিলেন ভালো একটি প্ল্যাটফর্মে কাজ করার। এরই মধ্যে বেছে বেছে কাজ করেছেন নাটক, বিজ্ঞাপনচিত্রের পাশাপাশি উপস্থাপনায় বেশ প্রশংসা কুড়ান তিনি।
‘আইসক্রিম’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়েই বড়োপর্দায় কাজ শুরু করেন নাজিফা। প্রথম সিনেমা প্রসঙ্গে নাজিফা বলেন, “আইসক্রিম’ চলচ্চিত্র ছিল আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। দর্শকদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাই, এরপর আরো চলচ্চিত্রের প্রস্তাব পাই কিন্তু আমি মানসম্পন্ন এবং একটু ভিন্নধর্মী চলচ্চিত্রে কাজ করতে চেয়েছি বলে সেসব প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি।”
নাজিফার উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞাপনচিত্রগুলো হলো বাংলালিংক, ইগলু আইসক্রিম, প্রাণ নুডলস, কালারস কোলা। এছাড়া নাজিফার অভিনীত ‘না’ গানের থ্রিলারধর্মী মিউজিক ভিডিওটি বেশ প্রশংসিত হয়। সিএমভি’র প্রযোজায় নির্মিত এই গানটির কণ্ঠশিল্পী ছিলেন রনি, সুরকার-গীতিকার সেতু চৌধুরী এবং নির্মাতা মোস্তফা শিমুল।
পরিবারের সমর্থন কেমন পান জানতে চাইলে নাজিফা বলেন, আমার পরিবার সংস্কৃতিমনা। আমার বাবা-মা’র কাছ থেকেও খুব সহযোগিতা পাই। যার কারণে কোনো সমস্যা হয় না।
তুষি স্বপ্ন দেখেন একদিন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের চলচ্চিত্রশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবেন সেই স্বপ্ন নিয়েই এগিয়ে চলছেন নাজিফা তুষি।
‘আইসক্রিম’ ছবিতে তুষিকে যেমন দেখা গিয়েছে, হাওয়া ছবিতে তাকে আরো বেশি পরিণত, প্রাণবন্ত আর উচ্ছল মনে হয়েছে। আগামীদিনে হয়ত আরো পরিণত দেখা যাবে এই মেধাবী অভিনেত্রীকে। আনন্দভুবন থেকে শুভকামনা রইল নাজিফা তুষি ও পুরো ইউনিটের জন্য।
সাফল্যের পেছনে থাকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের দীর্ঘ স্মৃতি। আজকের এই সাফল্যের জন্য তাকে সময় দিতে হয়েছে আটটি বছর। এই আট বছরে নিজেকে তৈরি করে যেভাবে উপস্থাপন করলেন তুষি। যা মানুষ মনে রাখবে দীর্ঘদিন।
সাফল্যের পেছনে অনেক তর্ক-বিতর্কও জন্ম নেয় অনেক সময়। এই যেমন তুচ্ছ এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরেন অনেকে। ‘হাওয়া’ ছবি নিয়ে যখন প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন তিনি, ঠিক সেই সময়ে একটি কথাকে নেগেটিভভাবে তুলে ধরেন অনেকে। ‘হাওয়া’ ছবির দর্শকদের প্রতিক্রিয়া জানতে হাওয়া টিম একটি প্রেক্ষাগৃহে যায়। এই সময় গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন নাজিফা তুষি। পাশে থাকা ‘পরাণ’ ও ‘দিন-দ্য ডে’ সিনেমার পোস্টার সরিয়ে ফেলার জন্যে বলেন তিনি। কেবল নিজের সিনেমা ‘হাওয়া’র পোস্টারের সামনে দাঁড়িয়েই তিনি কথা বলবেন বলে জানান। একদিক দিয়ে বিচার করলে তিনি কোনো ভুল করেননি, কারণ তিনি যে ছবি নিয়ে কথা বলবেন, সেই পোস্টারের থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিষয়টি নেটিজেনদের একাংশ বিষয়টিকে আড়চোখে দেখছেন। তাদের অনেকে তুষির সমালোচনা করে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপপেজে ওই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে দেয়।
‘হাওয়া’ ছবিটির টিকিট পেতে রীতিমতো য্দ্ধু করতে হচ্ছে দর্শকদের, যা সাম্প্রতিক অতীতে কোনো বাংলা সিনেমার ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্সে, ব্লকবাস্টার সিনেমাস, লায়ন সিনেমাস, সিরাজগঞ্জের রুটস সিনেক্লাবসহ দেশের সবক’টি মাল্টিপ্লেক্সেই আগাম টিকিট বিক্রির হিড়িক পড়েছে।
স্টার সিনেপ্লেক্সের সিঁড়িতে বসেই ‘হাওয়া’ উপভোগ করতে দেখা গেছে ছবির গুলতি চরিত্রে অভিনয় করা নাজিফা তুষিকে। তিনি বলেন, ‘মুক্তির আগের দিন নিজের জন্য পাঁচটি টিকিট সংগ্রহ করতে চেয়েছিলাম। শুনি, আগেই সোল্ড আউট। নিজেই হলের মধ্যে সিঁড়িতে বসে দেখেছি।’ চঞ্চল, নাজিফা ছাড়াও ছবির বেশ কয়েকজন শিল্পী টিকিট না পাওয়ার কথা জানান।
দর্শকের চাহিদায় ‘হাওয়া’র শো বাড়াতে হয়েছে মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে। স্টার সিনেপ্লেক্সের পাঁচটি শাখায় ২৬টি শো দিয়ে শুক্রবার মুক্তি পায় ছবিটি। কিন্তু মুক্তির প্রথম দিনই দর্শকের চাপে দুটি শো বাড়াতে হয়েছে। শনিবারও বেড়েছে একটি শো।
যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমাসের ‘হাওয়া’র নয়টি শো ছিল। কিন্তু মুক্তির আগের দিন সন্ধ্যায় দর্শকের চাপ বেড়ে যায়। এজন্য আরো পাঁচটি শো বাড়াতে হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুড়িগঙ্গার ওপারে লায়ন সিনেমাসে ‘হাওয়া’র নির্ধারিত শো থেকে তিনটি বাড়িয়ে ১১টি করা হয়।
তুষির জন্যে আনন্দের সংবাদ হচ্ছে, দেশ ছাড়িয়ে এবার দেশের বাইরের দর্শকও ভাসতে পারবেন এই ‘হাওয়া’য়। চারটি দেশে মুক্তি পেতে যাচ্ছে ছবিটি।
‘হাওয়া’ ছবিটি দেশের বাইরে মুক্তি পাচ্ছে ১৩ আগস্ট। ওইদিন অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে ছবিটি মুক্তি পাবে। এরপর ২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার দর্শকদের জন্য সেখানে মুক্তি দেওয়া হবে।



অভিনয়ই ছুঁয়ে যায় সামিরা খান মাহিকে