সুরে-তালে-লয়ে গান গেয়ে যেতে চাই -হিমাদ্রিতা পর্না

14 Aug 2022, 02:30 PM সারেগারে শেয়ার:
সুরে-তালে-লয়ে গান গেয়ে যেতে চাই  -হিমাদ্রিতা পর্না

বর্তমান প্রজন্মের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী হিমাদ্রিতা পর্না। কিছুদিন আগে ‘মায়ায় বেঁধেছ’ নামে একটি মিউজিক ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে তার। মিউজিক ভিডিওটিতে কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি চিত্রনায়ক ইমনের সঙ্গে মডেল হয়েছেন তিনি। এছাড়া অনন্য মামুনের চলচ্চিত্র ‘রেডিও’-তে প্লেব্যাক করেছেন। হিমাদ্রিতা পর্নার সংগীতজীবনের কাহিনি নিয়ে থাকছে এবারের সারেগারে আয়োজন। লিখেছেন শহিদুল ইসলাম এমেল...

সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠা হিমাদ্রিতা পর্নার গানের সঙ্গে পথচলা একদম ছেলেবেলা থেকেই। পর্নার গানের শুরু এতটাই অল্প বয়সে হয়েছে যে, শুরুর কথা এখন মনে করতে পারেন না। শুধু এতটুকু মনে করতে পারেন, একদম ছেলেবেলায় তার জন্মদিনে দুটো ছড়া গান গেয়েছিলেন নিজে হারমোনিয়াম বাজিয়ে। সে হিসেবে অনেক কম বয়স থেকেই তিনি গান গাইতে শুরু করেন। পর্নার বাবা-দাদা সবাই গান করতেন। তবলা বাজাতেন। তার ঘুম ভাঙত গানের রেওয়াজ শুনে। তখন থেকেই গানের প্রতি তার আগ্রহ জন্মে। তারপর আস্তে আস্তে অনিল কুমার সাহার কাছে ক্লাসিক্যাল শেখেন। এখনো শিখছেন। সৈয়দ আব্দুল হাদীর কাছে আধুনিক এবং রবীন্দ্রসংগীতের তালিম নেন। পর্নার গানের হাতেখড়ি তার বাবার কাছে।

পর্না বর্তমানে বাংলাদেশ বেতারে অডিও রেকর্ডিং, বিটিভিসহ বিভিন্ন চ্যানেলের গানের রেকর্ডিং এবং স্টেজ শো নিয়ে ব্যস্ত আছেন। তিনি বলেন, যেটা না বললেই নয়, কিছুদিন আগে আমার একটা মৌলিক গান বের হয়েছে। গানটির সুর ও সংগীত আয়োজন করেছেন কলকাতার দোলন মৈনাক। কথা লিখেছেন বাংলাদেশের জাহিদ আকবর। গানটির মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক ইমন আর আমি। গানটির প্রিমিয়ার হয়েছে একটি পাঁচ তারকা হোটেলে। প্রিমিয়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন, চিত্রনায়ক নিরব, ইমন-সহ আরো অনেকে।

সম্প্রতি হিমাদ্রিতা পর্না অনন্য মামুনের ‘রেডিও’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেছেন। ‘প্রাণের প্রদীপ’ গানটি লিখেছেন আরিফ ইকবাল। সুর ও সংগীত আয়োজন করেছেন ইমন সাহা। চলচ্চিত্রটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের ওপর নির্মিত হয়েছে। চলচ্চিত্রটি এখনো রিলিজ হয়নি। আগস্টের ১৫ তারিখ রিলিজ হওয়ার কথা আছে। এতে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক রিয়াজ, জাকিয়া বারী মম, নাদের চৌধুরী, প্রাণ রায়সহ আরো অনেকে। চলচ্চিত্রটির অন্য একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ। এর সুর ও সংগীত করেছেন ইমন সাহা। পর্না বলেন, রেডিও চলচ্চিত্রটি আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, চলচ্চিত্রটি একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নিয়ে তৈরি। আর এটাতে আমার প্রথম প্লেব্যাক অভিষেক হলো। প্রত্যেক শিল্পীরই একটা চাহিদা থাকে, স্বপ্ন থাকে চলচ্চিত্রে গান করার। আমার ভাগ্যটা মনে হয় ভালো, যার কারণে আমি এটা করতে পেরেছি। এটা রোমান্টিক বা বাণিজ্যিক কোনো চলচ্চিত্র নয়। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের ওপর নির্মিত চলচ্চিত্রে কণ্ঠ দিতে পেরে আমি আনন্দিত বোধ করছি। এটা আমার কাছে বড়ো পাওয়া। এটির প্রিমিয়ার হয়েছে আমেরিকার লাসভেগাসে সম্ভবত জুলাইয়ের ২ তারিখে ভারত-বাংলাদেশ ৪২তম বঙ্গ সম্মেলনে। এই সম্মেলনটি প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় আমেরিকায়। এর আগে ৭ মার্চ বিএফডিসিতে প্রিমিয়ার হয় ছবিটির। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন। অনুষ্ঠানে নিপুণ সায়মন সাদিকসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

দেশের সংগীত অঙ্গন নানা ধরনের সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর থেকে উত্তরণের পথ কী ? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে এব্যাপারে আমি এতটা দক্ষ নই। তারপরও যদি বলতে হয় তাহলে আমি বলব, আমাদের কাছেই আমাদের উত্তরণের পথ আছে। আমি খুবই ক্ষুদ্র একজন মানুষ হিসেবে এতটুকু বলতে পারি, আমাদেরই আমাদের উঠাতে হবে। কাজের ক্ষেত্রে নিজেরা যদি নিজের পথে এগিয়ে যাই, নিজেদের পথে যদি আমরা নিজেদের মতো করে প্র্যাকটিস করি বা নিজেদের মতো করে যদি শুধুমাত্র গানকে ভালোবেসে গানই করে যাই তাহলেই সেটা উত্তরণের পথ হবে। ছোট্ট করে একটা উদাহরণ দিই, ধরুন দেশে এখন করোনাকাল। এই সময়ে আমরা যদি নিয়ম না মানি, যদি মাস্ক না পরি তাহলে কিন্তু আমাদের করোনা হবেই। তাই আমাদের ভয় না পেয়ে সচেতন হতে হবে। এক্ষেত্রেও তাই। আমরা নিজেরা যদি ঠিক হই বা নিজেদের পথে শুধুমাত্র নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি তাহলে হয়ত এর থেকে উত্তরণের পথ নিজেরাই পাব।

বর্তমানে প্রচুর মিউজিক ভিডিও তৈরি হচ্ছে। এটা গানের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ- গুরুত্বপূর্ণ বলতে একেক জনের একেক কথা হতে পারে বা পছন্দ হতে পারে। বিষয়টা এরকম যে, আগে মানুষ শুধু গান শুনত। এখন যুগ পাল্টে গেছে। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন আমরা গানের ভিডিও দেখতে পাচ্ছি। আমি যদি পজেটিভলি বলি তাহলে বলবো, ভালো, অবশ্যই ভালো হচ্ছে?। যেগুলো ভালো হচ্ছে সেগুলো অবশ্যই দেখা উচিত।

চিত্রনায়ক ইমনের সঙ্গে মিউজিক ভিডিওতে কাজের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে বলেন, কাজের অভিজ্ঞতা খুবই ভালো ছিল। আসলে যারা আমাদের থেকে অনেক অভিজ্ঞ শিল্পী তাদের কাছ থেকে যখন প্রশংসা পাওয়া হয় তখন সেই অভিজ্ঞতার কথা বলার মতো কোনো ভাষা থাকে না। ইমন ভাইয়ার সঙ্গে এটাই আমার প্রথম কাজ এবং প্রথম পরিচয়। গানটা যখন প্রথম পাঠানো হয় উনি গানটা শুনেই রাজি হয়েছিলেন কাজ করতে। গান শুনে আমাকে বলল, গানটা খুব ভালো হয়েছে। তুমি খুব ভালো গেয়েছ। আমি যতক্ষণ গানের শুটিংয়ে ছিলাম উনি আমাকে খুবই উৎসাহ দিয়েছেন। আমি যখন মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করছিলাম সেই সময়ে অবাক হয়ে আমাকে দেখছিলেন আর বারবার জিজ্ঞাসা করছিলেন, তুমি কি নাচ জানো, তুমি নাচ করো কোথাও ? তুমি নাচের মুদ্রাগুলো এত সুন্দর করে কোথায় শিখেছ ? কাজ শেষে ইমন ভাইয়া বললেন, তোমাকে ইমরানের সঙ্গে আমার ছবিতে গান করাবো। এই বিষয়গুলো আসলে খুবই উৎসাহ জোগায় গানের প্রতি আরো বেশি এগিয়ে যেতে।

হিমাদ্রিতা পর্না রবীন্দ্রসংগীত এবং আধুনিক গান খুবই ভালোবাসেন এবং গাইতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। পর্না প্রথমে রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন। রবীন্দ্রসংগীত নিয়েই তার পথচলা। তারপর নিজেকে তৈরি করেন আধুনিকে। অবশ্য সব ধরনের গানই গেয়ে থাকেন তিনি। তবে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন আধুনিক এবং রবীন্দ্রসংগীত গাইতে।

সিনেমায় অফার পেলে করবেন কি না জানতে চাইলে বলেন, সিনেমায় অফার তো বহুবারই পেয়েছি। আসলে আমি গান ছাড়া কেন জানি না অন্য কিছু ভাবতে পারি না। সবকিছু মিলিয়ে আমার আসলে ইচ্ছেটা এক জায়গায় থেমে থাকে সেটা হচ্ছে গান। আমি আপাতত গান নিয়েই এগোতে চাই। তারপরও যদি আমার ভালো লাগে, ভালো স্ক্রিপ্ট পাই, স্ক্রিপ্ট পছন্দ হয়, মনে হয় যে আমি এখন করব। আমি যখন মনে করব হ্যাঁ আমি এখন তৈরি, তখন হয়ত আমি করতে পারি। সত্যি কথা বলতে এখনো আমি মনে করি না যে হিরোইন হতে গেলে যা যা প্রয়োজন সেটা আমার মধ্যে আছে। এখন আপাতত আমি শিল্পী হয়েই থাকতে চাই। দর্শকদের কাছে একজন ভালো গানের শিল্পী হয়ে বেঁচে থাকতে চাই। সুরে-তালে-লয়ে গান গেয়ে যেতে চাই। একজন ভালো শিল্পী হতে চাই।