বাংলাদেশের হৈমন্তী

03 Jul 2022, 03:05 PM সারেগারে শেয়ার:
বাংলাদেশের হৈমন্তী

প্রোফাইল

নাম : হৈমন্তী রক্ষিত দাস

উচ্চতা : ৫ ফুট ২ ইঞ্চি

পড়াশোনা :  স্নাতকোত্তর

বাবা : মানস কুমার রক্ষিত

মা : শর্মিষ্ঠা রক্ষিত

স্বামী : অসীম দাস

ছেলেমেয়ে : দুই ছেলে, অনন্ত, আদিত্য

প্রিয় রং : লাল

প্রিয় ঋতু : শীতকাল

প্রিয় গান : ভাঙা মন, থাক তুমি পিঞ্জরে, চাঁদের বাড়ি

প্রিয় শিল্পী : রুনা লায়লা, লতা মুঙ্গেশকর

অবসর : বই পড়া, গান শোন, রান্না করা



বর্তমান প্রজন্মের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী হৈমন্তী রক্ষিত দাস। মাত্র সাত বছর বয়সে তার একক অডিও অ্যালবাম বের হয়। তিনি ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে নজরুলসংগীত গেয়ে নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন এবং একই বছর জাতীয় শিশু-কিশোর পুরস্কারে অংশ নিয়ে নজরুলসংগীত ও দেশের গানে প্রথম স্থান অর্জন করেন। তার একক অ্যালবাম সাতটি এবং অনেক মিক্সড অ্যালবাম বের হয়েছে। প্লেব্যাক করেছেন প্রায় শতাধিক ছবিতে। লোকে বলে তাকে বাংলাদেশের হৈমন্তী। হৈমন্তীর সংগীত জীবনের কাহিনি নিয়ে থাকছে এবারের সারেগারে আয়োজন। লিখেছেন শহিদুল ইসলাম এমেল...
সংগীত পরিবারে বেড়ে ওঠা হৈমন্তী রক্ষিত দাস ১৮ জুন চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মানস রক্ষিত দাস পেশায় প্রকৌশলী হলেও ভালো তবলা বাজাতেন। মা শর্মিষ্ঠা রক্ষিতও ভালো গান গাইতেন। হৈমন্তীর দাদি চিত্রা রক্ষিত ক্লাসিক্যাল সিঙ্গার ছিলেন। উনি শিক্ষকতা করতেন। ওই সময়ে সংগীতশিল্পী হিসেবে খুব জনপ্রিয় ছিলেন। সব মিলিয়ে উত্তরাধিকার সূত্রেই সংগীত হৈমন্তীর রক্তে মিশে আছে।হৈমন্তী যখন কথা বলতে শিখেছেন তখন থেকেই গান শিখতে শুরু করেন। ওই বয়সেই কোনো গানের অনুষ্ঠানে গেলে স্টেজে উঠে গান গাইতে ইচ্ছা হতো তার। হৈমন্তীর সংগীতের হাতেখড়ি বাণী কুমার চৌধুরীর কাছ থেকে। এরপর বাসুদেব ঘোষের কাছে আধুনিক গানের তালিম নেন। ওস্তাদ নীরোদ বরণ বড়ুয়ার কাছে ক্লাসিক্যাল গান শেখেন। পরবর্তীসময়ে আরো অনেকের কাছেই গানের তালিম নিয়েছেন তিনি। একদম ছেলেবেলায় ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে ‘নতুন কুঁড়ি’ প্রতিযোগিতায় ‘ক’ শাখায় নজরুলসংগীতে চ্যাম্পিয়ন হন। একই বছর জাতীয় শিশু-কিশোর পুরস্কারে অংশ নিয়ে নজরুলসংগীত ও দেশের গানের প্রথম স্থান অর্জন করেন। ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে ৭ বছর বয়সে তার প্রথম অ্যালবাম ‘ডাকপিয়ন’ প্রকাশ হয়। এরপর একে একে ৭টি একক অ্যালবাম প্রকাশ হয় তার। অ্যালবামগুলো হচ্ছে- ‘ডাকপিয়ন’, ‘মনে পড়ে তোমাকে’, ‘প্রেমের ছোঁয়া’, ‘স্মৃতির ক্যানভাস’, ‘ফিরে দেখা’, ‘প্রথম প্রেম’ এবং ‘দেয়াল কাহিনি’। অসংখ্য মিক্সড অ্যালবাম রয়েছে তার। ইমন সাহার হাত ধরে ‘সাজঘর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্লেব্যাক শুরু করেন তিনি। এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন।
বর্তমানে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের শো এবং স্টেজ শো নিয়ে ব্যস্ততা যাচ্ছে তার। এরই মধ্যে দুটো গান রিলিজ হয়েছে। একটা জি সিরিজের ব্যানারে ডুয়েট গান রোজার ঈদের পর এবং আরেকটা জুনের ২০ তারিখে অনুপম মিউজিক থেকে সলো গানের মিউজিক ভিডিও। এছাড়া বেশ কিছু মিউজিক ভিডিও করা আছে। গেল দুই বছর কোভিড পরিস্থিতির কারণে আটকে ছিল। সেগুলো এখন হৈমন্তীর নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল এবং বিভিন্ন কোম্পানি আস্তে আস্তে রিলিজ করছে।
হৈমন্তী সাধারণত লতা মুঙ্গেশকর এবং রুনা লায়লার গান বেশি গেয়ে থাকেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের গান গাইতে আমার ভালো লাগে। আমার মনে হয় শ্রোতারা আমার কাছ থেকে উনাদের গানগুলো শুনতে বেশি পছন্দ করে। তাছাড়া একজন শিল্পীর গায়কির প্রভাব অন্য শিল্পীর ওপর পড়তে পারে। আমি ছেলেবেলা থেকেই উনাদের গান খুব বেশি শুনেছি এবং গেয়েছি। যার কারণে হয়তবা উনাদের গানগুলো আমি যখন গাই শ্রোতাদের ভালো লাগে। শ্রোতাদের ভালো লাগার কারণেই আমারও ভালো লাগে গাইতে।
হৈমন্তীর একটা স্বপ্ন ছিল রুনা লায়লার সঙ্গে দেখা করা এবং উনার মতো একজন শিল্পী হবেন একদিন। উনার কাছাকাছি, উনার সান্নিধ্যে গিয়ে প্রিয় শিল্পীর কাছ থেকে কিছু শিখবেন। দুই-তিন বছর আগে সেই আশা পূরণ হয়েছে। রুনা লায়লার সুরে একটি মৌলিক গান গাওয়ার মাধ্যমে। এটা ধ্রুব মিউজিকের ব্যানারে ২০২০ খ্রিস্টাব্দে রিলিজ হয়। তিনি মনে করেন এটা স্বপ্ন পূরণের একটা জায়গা। স্বপ্নের থেকেও বেশি কিছু পেয়েছেন তিনি।
হৈমন্তী মূলত আধুনিক গানের শিল্পী। হাসন রাজার ‘নেশা লাগিল রে’ ফোক গানটি হৈমন্তীর কণ্ঠে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সে সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা আসলে পরীক্ষামূলক একটা কাজ ছিল। আমার শুরুটা ছিল নজরুলসংগীত আর ক্লাসিক্যাল দিয়ে। তবে আধুনিক গানটা বেশি প্রেফার করতাম। আমার কণ্ঠে আধুনিক গানই বেশি ভালো লাগত। যার কারণে আধুনিক গান গাইতাম। আমার আরেকটা স্বপ্ন ছিল সিনেমায় গান করার। যার কারণে আধুনিক গানই বেশি গাওয়া হতো। আমাকে নিয়ে সেমিক্লাসিক্যাল গান এবং আধুনিক গান নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা হয়েছে কিন্তু আমি যে ফোক গাইতে পারি বা কীরকম গাইতে পারি এটা নিয়ে আসলে কোনো এক্সপেরিমেন্ট হয়নি। আমারও সেই সুযোগ হয়নি। আরটিভিতে ফোক স্টেশন যখন হলো তখন আরটিভির সিইও মি. আশিক রহমান আমাকে বললেন, হৈমন্তী তুমি তো অনেক ভালো গাও। আমার কেন জানি মনে হয় ফোক গানও তুমি ভালো করবে। আমাদের ফোক স্টেশনে তুমি গান করে দেখ শ্রোতারা পছন্দ করবে তোমার গান। তখনই আসলে হুট করে আমার ৬টি গান আরটিভি ফোক স্টেশনের জন্য করা। আমি বুঝিনি ‘নেশা লাগিল রে’ গানটা এত রিচ করবে। শ্রোতারা এত বেশি পছন্দ করবে। এরপর বেশ কিছু ফোক গান গেয়েছিলাম বিভিন্ন চ্যানেলের জন্য। দেখা যাচ্ছে আধুনিক এবং সেমিক্লাসিক্যালের পাশাপাশি ফোক গানের জন্যও মানুষ আগ্রহ দেখাচ্ছে আমাকে নিয়ে। মাঝখানে কিছুদিন করা হয়নি। এবার উনারা আবারো আরেকটা সিজনের জন্য আমাকে বলেছেন কিছু ফোক গান করতে।
'নেশা লাগিল রে’ একটি প্রচলিত ফেমাস ফোক গান। আমার মনে হয় এত প্রাণের একটা গান যে কেউ গাইলেই সবাই পছন্দ করবে। আমার ক্ষেত্রে পার্থক্যটা ছিল আমি আধুনিক গানের শিল্পী। ফোকটা যখন গাইলাম তখন কিন্তু আমি ফোক স্টাইলে গাইনি। আমি ওটাকে ডিফারেন্ট করে আমার মতো গেয়েছি আমার স্টাইলে।
সংগীত নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা করেননি তিনি। পরিকল্পনা ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমি কোনো পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি না। আমার একটাই পরিকল্পনা শুধু ভালো কাজ করে যাব। আমার কাজই হলো গান গাওয়া। এই জায়গায় অনেস্ট থেকে আমি কাজ করে যাব। মানুষ যতদিন চাইবে আমি ততদিন গান গাইব। এখন পরিকল্পনা ধরুন মানুষের একেক দিন চিন্তাধারা একেক রকম হয়। আমি আজকে বলতে পারবো না কালকে কী করবো। কারণ সিচুয়েশনটা ডিপেন্ট করে টাইমের ওপর। এজন্য আসলে কোনো পরিকল্পনা করিনি। ভালো গান গাওয়া, ভালো কিছু করা। অডিয়েন্সের ভালো লাগা যে জায়গাটায় আমি আছি সেটা ধরে রাখাটাই আমার মূল উদ্দেশ্য।