জ্যাক স্প্যারোর ফিরে আসা

20 Jun 2022, 02:30 PM হলিউড শেয়ার:
জ্যাক স্প্যারোর ফিরে আসা

জ্যাক স্প্যারো, ব্যস ; এটুুকুই যথেষ্ট। আর কোনো পরিচয়ের দরকার নেই। সিনেমাপ্রিয় দর্শকেরা বুঝে গেছেন কাকে নিয়ে কথা বলা হবে। হলিউডের রুপালি পর্দার এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের গল্প হবে আজ। তিনি আমাদের অতি পরিচিত জনি ডেপ। আসল নাম ছাড়াও তিনি ভক্তদের কাছে ‘ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো’ হিসেবেই বহুল পরিচিত। এছাড়াও তার আরো একটি নাম রয়েছে, সেটা হচ্ছে মি. স্টেঞ্চ। কিছুদিন ধরে মিডিয়া তার ও তার স্ত্রীর মধ্যেকার মামলা সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে বেশ সরব ছিলেন ! অবশেষে মামলায় জিতেছেন জনি। খুব শিগ্গিরই ফিরে আসবেন পর্দায়। আমাদের হলিউড আয়োজন এই রহস্যপূর্ণ, অসাধারণ প্রতিভাবান তারকাকে নিয়ে...

জনি ডেপের জন্ম ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ৯ জুন, উত্তর আমেরিকার কেনটাকি প্রদেশে। তার পুরো নাম জন ক্রিস্টোফার ডেপ দ্বিতীয়। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার ছোটো। তার বাবা জন ক্রিস্টোফার ডেপ একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এবং মা স্যু পালমার ছিলেন একজন ওয়েট্রেস। ছেলেবেলায় বাবার চাকরির সুবাদে অনেকবার জায়গা বদলাতে হয়েছে তার, সে সুবাদে নানা জায়গার মানুষ ও তাদের নানা আচার অনুষ্ঠানের সান্নিধ্যে এসেছেন জনি। যেকোনো মানুষকে সহজেই নকল করতে পারতেন তিনি। তাছাড়া ছেলেবেলায় নাকি মুখ দিয়ে নানারকমের শব্দ করতে পারতেন ! তাই মা-বাবা মনে করতেন তার টরেট সিনড্রম আছে।
১২ বছর বয়সে মার উপহার দেওয়া গিটার জনি ডেপকে গানের প্রতি আগ্রহী করে তোলে। কিন্তু মা-বাবার সম্পর্কের টানাপোড়েন জনিকে অনেক হতাশাগ্রস্ত করে তোলে। নানাধরনের নেশা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে তিনি জড়িয়ে পড়েন। নিজ ঘরের দরজা বন্ধ করে গিটার বাজিয়ে সময় কাটাতেন তিনি। তার ১৫ বছর বয়সে মা-বাবার মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়। পরে তার মা রবার্ট পামারকে বিয়ে করেন, যাকে জনি বেশ পছন্দ করতেন এবং তাকে তার অনেক কাজের অনুপ্রেরণা মনে করেন।
ষোল বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দিয়ে তিনি ‘দ্য কিডস’ ব্যান্ডে যোগ দেন। যদিও দুই সপ্তাহ পর আবার তিনি স্কুলে ফিরে গিয়েছিলেন। তবে স্কুলের প্রিন্সিপাল তাকে পুনরায় ভর্তি করে নেননি, বরং তাকে তার স্বপ্ন পূরণের জন্য উৎসাহ দেন। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে বিশ বছর বয়সে জনি ডেপ তার ব্যান্ডের বেস প্লেয়ারের পঁচিশ বছর বয়সী বোন লরি এলিসনকে বিয়ে করেন। লরি মূলত ছিলেন একজন মেকআপ আর্টিস্ট। আঞ্চলিক সাফল্যের পর সে বছরই অ্যালবাম রেকর্ডের লক্ষ্যে তিনি ব্যান্ড-মেম্বারদের নিয়ে লস এঞ্জেলেসের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। এই দলটি কিছু রেকর্ডিং-এর অফারও পান, কিন্তু কোনো কারণবশত দলটি ভেঙে যায়।
জনিকে অভিনয়ে নিয়ে আসার জন্যে ধন্যবাদ প্রাপ্য নিকোলাস কেইজের। কারণ, লস অ্যাঞ্জেলেসে আসার পরের বছর লরি তার প্রাক্তন প্রেমিক নিকোলাসের সঙ্গে জনির পরিচয় করিয়ে দেন। জনির প্রতিভা দেখে নিকোলাস তাকে অভিনয়ে আসার পরামর্শ দেন এবং হলিউডের এক এজেন্টের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। নিকোলাসের উপকারের কথা জনি কখনো ভোলেননি। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে একবার যখন নিকোলাস আর্থিক সমস্যায় পড়েন, তখন জনি তাকে সার্বিক সহযোগিতা করেন।
১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে ‘এ নাইটমেয়ার অব এল্ম স্ট্রিটে’ দারুণ অভিনয় করেন জনি ডেপ। তবে তার পরিচিতি বৃদ্ধি পায় ‘২১ জাম্প স্ট্রিট’ টেলিভিশন ড্রামার মাধ্যমে। ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে টিভিতে দেখানো ‘২১ জাম্প স্ট্রিটে’ টমি হ্যানসন চরিত্রে জেফ ইয়াগের পরিবর্তে জনি ডেপকে নেওয়া হয়। এই সিরিজ শেষ হওয়ার পর তিনি আরো কিছু টিন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। পরে ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে ‘এডওয়ার্র্ড সিজরহ্যান্ডস’ চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হন। প্রায় তিন বছর একটি টেলিভিশন সিরিজের অভিনয়ের মাধ্যমে একমুখী পরিচিতির ওপর বিরক্তি ধরে গেলে, এই চরিত্রে অভিনয় করার পর জনি ঠিক করেন তিনি প্রতিবার ভিন্ন ভিন্ন ধারার চরিত্রে অভিনয় করবেন। জনির এই জেদের কারণে আমরা পেয়েছি হলিউড পর্দায় দারুণ কিছু চরিত্র। উদ্ভট সব চরিত্রে অদ্ভুত সুন্দর অভিনয় করে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি দর্শকদের মনে।
প্রতিটি চলচ্চিত্রেই তার অভিনয় বেশ প্রশংসনীয় ও জনপ্রিয়তা পায়। তিনি ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ানে’ ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো চরিত্রটি এত চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যে, তার পরিবর্তে এই চরিত্রে অন্য কাউকে কল্পনা করাই অসম্ভব। এই চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমেই তার পরিচিতি সারাবিশে^ই কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে।
তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলোÑ দ্য পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান সিরিজ, এডওয়ার্ড সিজরহ্যান্ডস, ফাইন্ডিং নেভারল্যান্ড, পাবলিক এনিমিস, ব্ল্যাক ম্যাস, ট্রানসেন্ডেন্স, সুইনি টড : দ্য ডিমন বার্বার অব ফ্লিট স্ট্রিট, স্লিপি হলো, দ্য নাইন্থ গেইট, ডার্ক শ্যাডো দ্য লোন রেঞ্জার, এলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড, চার্লি অ্যান্ড দ্য চকোলেট ফ্যাক্টরি, ট্যাংগো, দ্য টুরিস্ট, দ্য রাম ডায়েরি, সিক্রেট উইন্ডো, ডনি ব্রাস্কো এবং হোয়াটস ইটিং গিলবার্ট গ্রেপ ইত্যাদি।
জনপ্রিয়তার তুলনায় তার পুরস্কারের ঝুলি খুব হালকাই বলা যায়। তার বেশ কিছু চরিত্র সমালোচকদের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হওয়ার পরেও তিনি কখনো অস্কার জিততে পারেননি। ‘সুয়েনি টড : দ্য ডিমন বার্বার অব ফ্লিট স্ট্রিট’ সিনেমাতে মূল চরিত্রে অভিনয় করে তিনি জিতেছেন গোল্ডেন গ্লোভ। স্ক্রিন অ্যাক্টর্স গিল্ড পুরস্কার জিতেছেন ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান : দ্য কার্স অব দ্য ব্ল্যাক পার্ল’ চলচ্চিত্রের ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো চরিত্রের জন্য।
১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে তার ব্যান্ড ভেঙে যাওয়ার পর স্ত্রী লরির সঙ্গেও তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এর কিছুদিন পর জেনিফার গ্রে’র সঙ্গে তার বাগদান হয়। তবে সেটা বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি। এছাড়াও শেরলিন ফেন, উইনোনা রাইডার, তাজানা প্যাটিটজ কেট মস এবং অভিনেত্রী-গায়িকা ভ্যানিসা প্যারডিসের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। জনি এবং ভ্যানিসার সম্পর্কটি দীর্ঘদিন স্থায়ী ছিল। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে, লিলি রোজ ডেপ এবং তৃতীয় জ্যাক জন ক্রিস্টোফার ডেপ। ভ্যানিসার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে জনি অ্যাম্বার হার্ডকে বিয়ে করেন। অ্যাম্বার হার্ডের সঙ্গে তার পরিচয় হয় ‘দ্য রাম ডায়েরি’র সেটে। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট মাসে এই দম্পতির ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। সম্প্রতি প্রাক্তন স্ত্রী অ্যাম্বার হার্ডের করা মানহানির মামলায় জিতেছেন তারকা জনি ডেপ। মামলার রায়ের পর আনন্দিত ডেপ জুরিদের বলেন, ‘আমি আমার জীবন ফিরে পেয়েছি’।
এখন দেখার বিষয়, এত কাদা ছোড়াছোড়ির পর জনির ক্যারিয়ারে কোনো কাদা লাগল কি না। ধকল কাটিয়ে হলিউডের রুপালি পর্দায় আবারো দাপিয়ে বেড়াবে জ্যাক স্প্যারো এই প্রত্যাশা সকলের।

লেখা : ফাতেমা ইয়াসমিন