মুহিনের গানগুলি

29 May 2022, 02:25 PM সারেগারে শেয়ার:
মুহিনের গানগুলি

বর্তমান প্রজন্মের অন্যতম সংগীতশিল্পী ক্লোজআপ ওয়ান তারকা মুহিন খান। মুহিন খানের সংগীতের শুরু তিন বছর বয়স থেকে। ছেলেবেলায় গানের হাতেখড়ি ছোটো চাচার কাছে। পেশাগতভাবে মুহিনের সংগীতজীবনের শুরু রাজশাহীতে নিজেদের ব্যান্ডদল ‘ওয়েভস’-এর মাধ্যমে। অসাধারণ গায়কি আর কণ্ঠশৈলীর জাদুতে একের পর এক নতুন নতুন গান গেয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই ভক্তশ্রোতাদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। সংগীতশিল্পী মুহিন খানকে নিয়ে বিস্তারিত থাকছে এবারের আনন্দভুবনের সারেগারে আয়োজনে। লিখেছেন শহিদুল ইসলাম এমেল...


বর্তমান প্রজন্মের অন্যতম সংগীতশিল্পী মুহিন খান পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানায় নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার সরকারি চাকরির সুবাধে বেড়ে উঠেছেন রাজশাহীতে। সংগীতজীবনের শুরুও হয়েছে রাজশাহীতেই। ওস্তাদ নূর হামীম রিজভী বীর প্রতীক এবং আব্দুল আজিজ বাচ্চুর কাছে দীর্ঘদিন গান শিখেছেন [দু’জনেই প্রয়াত]। তিনি বলেন, শেখার কোনো শেষ নেই। আমি এখনো শিখছি। নিয়মিত গানের চর্চা করছি।

রাজশাহীতে গান শিখতে শিখতে একসময় গানের মেঘা রিয়েলিটি শো ক্লোজআপ ওয়ানে অংশগ্রহণ করেন মুহিন খান। ক্লোজআপ ওয়ান ২০০৬-এ দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন তিনি।

মুহিন খান বর্তমানে ব্যস্ত আছেন সামনের ঈদের বেশ কিছু গান নিয়ে। পাশাপাশি বিভিন্ন চ্যানেলে গানের অনুষ্ঠান এবং দেশ-বিদেশের স্টেজ প্রোগ্রাম নিয়ে। ঈদ উপলক্ষে মুহিন খানের ছয়টি গান মুক্তি পাবে তার নিজের চ্যানেল এবং বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে। ছয়টি গানের মধ্যে দুটো লিখেছেন জামাল হোসেন, দুটো শামীমুর রহমান, একটি অনুরূপ আইচ এবং একটি মুহিন খানের নিজের লেখা। এছাড়া ময়ূরাক্ষী সিনেমার ‘বেঈমান পাখি’ শিরোনামে একটি গান মুক্তি পাচ্ছে ঈদের আগেই।

মুহিন খানের বড়ো ফুপু এবং ছোটো চাচা গান করতেন। মুহিন খানের দাদা ছিলেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। পুলিশের চাকরি করতেন। তিনি শিল্পী এবং গানের শিক্ষক ছিলেন। মুহিন খান তার দাদির কাছে গল্প শুনেছেনÑ তার দাদা ভালো গান করতেন, বাঁশি বাজাতেন, গান শেখাতেন। মুহিন খান বলেন, অনেকেই দাদার ছাত্র ছিলেন। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি, আব্দুল জব্বার, সুজাতা আজিমসহ অনেকেই আমার দাদার ছাত্র ছিলেন। আমি দাদাকে দেখিনি, তবে গল্প শুনেছি অনেক।

মুহিন খানের দীর্ঘ পনের বছরের ক্যারিয়ারে সফলতার হারই বেশি। ব্যর্থতা খুবই কম। গত দেড় বছরে দুইশতাধিক গান রেকর্ড করেছেন রঙ্গন মিউজি থেকে। পদ্মপুরাণ ছবি দিয়ে তার কাজ শুরু। ইতোমধ্যে সাতটি নতুন ছবিতে সাইন করেছেন। সাতটি ছবিতে মিউজিক ডিরেকশনের কাজ এবং গান করছেন তিনি। এপার বাংলা ওপার বাংলা মিলে প্রায় দেড়শত শিল্পী মুহিন খানের সুরে এবং সংগীত আয়োজনে গান রেকর্ড করে রঙ্গন মিউজিকে জমা দিয়েছেন। গানগুলো মিউজিক ভিডিও এবং ভিজুয়াল হচ্ছে।

মুহিন খান বলেন, সফলতা ব্যর্থতার জন্য আমি কাজ করি না। আমি আমার নিজের জন্য কাজ করি। যেটা আমার প্রয়োজন সেই কাজটাই আমি করি। দর্শক-শ্রোতারা যেভাবে চায় আমি তাদের জন্য সেভাবেই কাজ করি।

ক্লোজআপ ওয়ান ২০০৬-এর দ্বিতীয় আসরে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন মুহিন খান। তখনকার অনুভূতি কেমন ছিল জানতে চাইলে বলেন, দেখুন কার না ইচ্ছে থাকে প্রথম হওয়ার, আমারও ছিল। তখন বয়স কম ছিল তাই মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে সেটা নিয়ে ভেঙে পড়িনি এবং খারাপ লাগেনি। ক্লোজআপ ওয়ান ২০০৬-এর ব্যাচটা এমন ছিল যে, সবার সঙ্গেই একটা আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। আসলে কে কততম স্থান অর্জন করল সেটা নিয়ে আমাদের তেমন মাথা ব্যথা ছিল না। আমাদের লক্ষ্য ছিল কে কত ভালো গাইতে পারি।

মুহিন খানের কাছে মার্কিং বিষয়টা অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে পারফর্মেন্স ভালো করবে সে ভালো অবস্থানে থাকবে আর যে খারাপ করবে সে স্বাভাবিকভাবেই খারাপ অবস্থানে থাকবে। দিন আসলে মানুষের একরকম যায় না। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় দিয়ে জীবনমান যাচাই করা যায় না। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হলে ভবিষ্যতে কাজ করার একটা রাস্তা তৈরি হয় এই আর কি।

জামাল হোসেনের গীতি কবিতায় কুমার শানু, সৈয়দ আব্দুল হাদী আর কুমার বিশ্বজিতের মতো সংগীতজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে মুহিন খানের। মুহিন বলেন, এই গুণী শিল্পীদের নিয়ে ভালো কাজ করার চেষ্টা করেছি। বাকিটা আল্লাহ ভরসা। সংগীত জগতটা অনেক বড়ো। সেখানে আমি তো একটা বিশাল সমুদ্রের বিন্দু বালুকণা হওয়ার চেষ্টা করছি আর কিছু নয়।

ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবেন না মুহিন খান। কালকে কী হবে সেটাও জানেন না। তবে ভবিষ্যতের জন্য গান গেয়ে চলেছেন নিয়মিত। মুহিন বাংলা গানকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে চান। প্রতিনিয়ত সেই চেষ্টা করে চলেছেন।

মুহিন খানের এপর্যন্ত পাঁচটি একক অ্যালবাম বের হয়েছে। মিক্সড অ্যালবাম বেরিয়েছে পনেরটি। চল্লিশটির অধিক ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন। মুহিন খানের গাওয়া প্রিয় তিনটি গানÑ কলিজায় লাগেরে, ভালোবাসি ভালোবাসি, পদ্মপুরাণ। প্রিয় শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী এবং সুবীর নন্দী। অবসরে গান শোনেন, বই পড়েন। প্রিয় খাবার গোরুর মাংস, ভুনা খিচুড়ি। মুহিন খান ভ্রমণপিপাসু একজন মানুষ। ঘুরেছেন প্রায় ডজনখানেক দেশ। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। স্ত্রী শামস নিগার স্বর্ণা। এই দম্পতির এক ছেলে, নাম কিংশুক খান মিশর।