ভারতের সিনেমা পাড়া

03 Jan 2021, 02:41 PM বলিউড শেয়ার:
ভারতের সিনেমা পাড়া

বলিউড, টলিউড, কলিউড, টালিউড- এইসবই ভারতের এক একটি সিনেমা পাড়ার নাম। ভারতের সিনেমাশিল্প সম্পর্কে বলতে গেলে, বেশিরভাগ মানুষের মনে প্রথম যে নামটি উঠে আসে তা নিঃসন্দেহে ‘বলিউড’। তবে সিনেমা নিয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন এমন বোদ্ধা দর্শকগণের কাছে তামিল, তেলেগু বা বাংলা সিনেমাশিল্পের মতো আরো কয়েকটি ইন্ডাস্ট্রি পরিচিত থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। প্রতিবছর কেবল ভারতের বাজারে গড়ে প্রায় হাজারের বেশি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। এদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি সিনেমা মুক্তি দেওয়া ৬টি প্রভাবশালী চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত জানানোর জন্যই আজকের আলোচনা। তবে, শুধুমাত্র প্রতিবছর সিনেমা মুক্তির সংখ্যার বিচারেই নয় ; ভালো সিনেমার কথা বিবেচনা করলেও এ ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে সামনের দিকে রাখতে হবে- এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়।


বলিউড

কেবল ভারতে নয়, সারা পৃথিবীতেই সবচেয়ে বড় ; ব্যবসাসফল আর সর্বোচ্চ সিনেমা মুক্তির তালিকায় থাকা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিগুলোর মধ্যে মুম্বাই [প্রাক্তন বোম্বে] শহরে প্রতিষ্ঠিত ‘বলিউড’ অন্যতম। ১৯১৩ সালে মুক্তি পাওয়া দাদাসাহেব ফালকে-এর নির্মিত ভারতবর্ষের প্রথম সফল পূর্ণদৈর্ঘ্য নির্বাক চলচ্চিত্র ‘রাজা হরিশচন্দ্র’ দিয়ে যাত্রা শুরু করে আজকের বলিউড- শতবর্ষেরও বেশি পুরনো এ সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার অবকাশ নেই, শুধু বিগত বছর দুয়েকের হিসেবটা একটু মনে করিয়ে দিতে চাই। ২০১৯ সালে রিলিজ পাওয়া ১৭০টি সিনেমা থেকে এই ইন্ডাস্ট্রি আয় করে প্রায় চার হাজার কোটি ভারতীয় রুপি ; যেখানে তার আগের বছর ১৮০টি সিনেমা থেকে আয় আসে ৩,৩০০ কোটি রুপি।

তেলেগু সিনেমা

ভারতের তেলেঙ্গানা এবং অন্ধ্র প্রদেশের তেলেগুভাষী মানুষের জন্য নির্মিত বড়ো পর্দার বিনোদনের বৃহৎ অংশ সরবরাহ করে তেলেগু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ; যাকে অনেকেই আদর করে ‘টলিউড’ নামে ডাকেন। স¤প্রতি ভারতবর্ষ তথা সারাবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘বাহুবলী’ সিনেমাটি যেখানে নির্মিত হয়েছে- বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো ফিল্ম স্টুডিও হিসেবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের অধিকারী ‘রামোজি ফিল্ম সিটি’ ; তেলেগু সিনেমা শিল্পের প্রতিপত্তি আর বাজার সম্পর্কে একটা ধারণা দেয়। হায়দ্রাবাদ-সংলগ্ন ‘ফিল্ম নগর’ এলাকায় গড়ে ওঠা এই ইন্ডাস্ট্রির যাত্রা শুরু হয় ১৯২১ সালের নীরব চলচ্চিত্র ‘ভীষ্ম প্রতিজ্ঞা’ সিনেমাটি দিয়ে।


তামিল সিনেমা

ভারতের তামিলনাডু প্রদেশের চেন্নাই শহরের কোদামবাক্কাম-সংলগ্ন এলাকায় গড়ে ওঠা তামিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ‘কলিউড’ নামে বিশেষভাবে পরিচিত। মূলত তামিল ভাষায় সিনেমা নির্মাণকারী এই ইন্ডাস্ট্রি থেকে ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমার সংখ্যা ১৯৮টি। গড় হিসেবে ভারতের বক্স অফিস থেকে প্রাপ্ত আয়ের প্রায় ২০ শতাংশ আসে এখান থেকেই। নির্বাক সিনেমা ‘কিচাকা ভাদাম’ এ ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সিনেমা হিসেবে বিবেচিত, যা নির্মিত হয় ১৯১৮ সালে।


বাংলা চলচ্চিত্র শিল্প

ভারতের অন্যতম প্রাচীন শহর পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরের অদূরে টালিগঞ্জ এলাকায় গড়ে উঠেছে বাংলাভাষী বিশাল জনগোষ্ঠীর সিনেমা বাজার টালিউড বা বেঙ্গলি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। ১৯৩১ সালে মুক্তি পাওয়া প্রথম সবাক বাংলা সিনেমা ‘জামাই ষষ্ঠী’ মুক্তির পরের বছর টালিউড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা এই ইন্ডাস্ট্রিটি এক সময়ে ভারতের সিনেমা বাজারে আজকের বলিউডের চেয়ে বেশি জনপ্রিয় ছিল। তবে এ যাত্রার শুরুটা হয়েছিল ১৯১৯ সালে হীরালাল সেন-এর নির্বাক চলচ্চিত্র ‘বিল্বমঙ্গল’-এর মাধ্যমে। ১৯৫৫ সালে মুক্তি পাওয়া সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত সিনেমা ‘পথের পাঁচালী’ প্রথম ভারতীয় সিনেমা হিসেবে নবম কান চলচ্চিত্র উৎসবে জায়গা করে নেয় ; যা সে-সময়ে গোটা বিশ্ববাসীর কাছে ভারতীয় সিনেমা শিল্পের একটি বিশেষ অবস্থান তৈরি করে। প্রতিবছর এ-ইন্ডাস্ট্রি থেকে গড়ে ৭০ থেকে ১০০টি সিনেমা মুক্তি পায়।


উড়িষ্যা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি

১৯৭৪ সালে উড়িষ্যা স্থানীয় সরকার সিনেমা নির্মাণকে একটি স্বতন্ত্র শিল্প হিসেবে ঘোষণা করলেও উড়িষ্যা ভাষার প্রথম সবাক সিনেমা ‘সীতা বিবাহ’ মুক্তি পায় ১৯৩৬ সালে। উড়িষ্যা প্রদেশের কটক এলাকায় গড়ে ওঠা এই শোবিজ ইন্ডাস্ট্রিটিকে ‘ওলিউড’ নামেও ডাকা হয়।


মারাঠি সিনেমা

মারাঠি সিনেমা শিল্পকে ভারতের সিনেমা শিল্পের পথিকৃৎ হিসেবে আখ্যায়িত করা হলে কিছুমাত্র ভুল বলা হবে না। বলা বাহুল্য, মহারাষ্ট্র প্রদেশের মুম্বাই শহরে মারাঠি সিনেমা শিল্পের হাত ধরে গড়ে ওঠা অবকাঠামোর ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তীসময়ে বিকাশ লাভ করে ভারতের সর্ববৃহৎ সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি বলিউড। তবে বর্তমান সময়ে হিন্দি ভাষার সিনেমার তুলনায় মারাঠি সিনেমা অনেক কমে গেলেও, একটা স্বতন্ত্র ভাষা ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে মারাঠি সিনেমা শিল্প ভারতের বড়ো পর্দার বিনোদনের বাজারে আজও রাজত্ব করে চলেছে। শুরুটা হয়েছিল ১৯১২ সালে দাদাসাহেব টর্নি পরিচালিত ‘শ্রী পুন্দলিক’ মুক্তির মধ্য দিয়ে- যাকে ভারতের সর্বপ্রথম কাহিনিচিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পরবর্তীবছরে মুক্তি পাওয়া ‘রাজা হরিশচন্দ্র’ ভারতের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটিও নির্মিত হয়েছিল মারাঠি কলাকুশলীর হাত ধরেই। 

লেখা : ফাতেমা ইয়াসমিন