কী খাবেন কেন খাবেন

23 Mar 2022, 01:15 PM অভোগ শেয়ার:
কী খাবেন  কেন খাবেন

কথায় আছে খাওয়ার জন্যই দুনিয়া ! মানে আমরা যে এত পরিশ্রম করি দুনিয়াতে তার মূলে রয়েছে ক্ষুধা। ক্ষুধা নিবারণের জন্যই এত কাজকর্ম। তবে এটাও আমরা জানি, শুধু খেলেই হবে না, নিয়ম মেনে বুঝেশুনে না খেলে এই খাওয়াই কিন্তু আপনার দুনিয়া থেকে বিদায়ের কারণ হতে পারে। খেতে হবে বুঝে-শুনে, নিয়ম মেনে, বয়স ভেদে। সব বয়সে একইরকম খাবার তো খাওয়াও যায় না। আবার তা স্বাস্থ্যের জন্য ভালোও নয়। কোন বয়সে কী খাবেন, কতটুকুু খেলে সুস্থ থাকবেন এসব নিয়েই এবারের অঁভোগ আয়োজন...


মানুষের জীবনে অনেকগুলো স্তর থাকে যেমন- শিশুকাল, কৈশোর, তরুণ্য ও বৃদ্ধ বয়স। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে রুচির যেমন পরিবর্তন হয়, তেমনি পরিবর্তন হতে হয় খাবার-দাবারেরও। যদি সঠিক বয়সে সঠিক পরিমাণে সুষম খাবার খাওয়া হয়, তাহলে রোগ প্রতিরোধ করা যেমন সহজ, তেমনি দীর্ঘ সময় কর্মক্ষম থাকাও সম্ভব।

আমরা জানি, জন্মের পর ছয় মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধই শিশুর চাহিদা পূরণ করতে পারে। ছয় মাস বয়সের পর থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুকে অন্যান্য সহজপাচ্য খাবার দিতে হয়। তা না হলে শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এর কারণ, ছয় মাস পর থেকে শিশুর যতটুকু দুধ মায়ের কাছ থেকে পাওয়া দরকার, ততটুকু সে পায় না। অর্থাৎ এ সময় শুধু মায়ের দুধে তার পেট ভরে না। আবার শিশুর দৈহিক বৃদ্ধির জন্য যে-সব খাদ্য উপাদান থাকা উচিত, তা সব দুধের মধ্যে নেই। যেমন ভিটামিন সি ও লোহা দুধে এত কম আছে যে, তা দিয়ে শিশুর চাহিদা পূরণ হয় না।

এক থেকে পাঁচ-ছয় বছরের শিশুরা ছোটাছুটি ও দুষ্টুমির জন্য খুব একটা খেতে পারে না বা খেতে চায় না। অর্থাৎ তারা কম খেতে পছন্দ করে। এ সময় তাদের প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি দিতে হবে। অধিক আঁশ ও অধিক ভুসিযুক্ত খাবার তাদের না দেওয়াই ভালো। এ বয়সে দেখা যায়, অনেকে দুধ খেতে পছন্দ করে না। এ কারণে তাদের সরাসরি দুধ না দিয়ে, দুধের তৈরি খাবার যেমন পুডিং, পায়েশ, দুধ-সেমাই, স্যুপ- এসব খাবার দেওয়া ভালো। অন্যদিকে দেখা যায়, কিছু শিশু দুধ বেশি পছন্দ করে। এ কারণে সে আবার অন্যান্য খাবার খেতে চায় না। এ-ক্ষেত্রে দুধের পরিমাণ কমিয়ে প্রোটিনযুক্ত অন্যান্য খাবার দিতে হবে। বাচ্চাদের নিজের হাতে খেতে উৎসাহ দিতে হবে। এই বয়সে প্রোটিন, ভিটামিন ‘সি’ ও ‘এ’ খুবই দরকার।

এর পরে যখন তারা স্কুলে যায়, তখন তাদের মধ্যে খাবার পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টি বেশ জোরালোভাবে দেখা দেয়। স্কুল বয়সী শিশুদের এ সময় বাইরের খাবারের প্রতি আগ্রহ দেখা যায়। খুব বেশি বাইরের খাবার খেলে কিছু সমস্যা দেখা যায়। যেমন ওজন বেশি, সঠিক পুষ্টির অভাব, ঘরে তৈরি খাবারে অনীহা, কৃমির প্রকোপ ইত্যাদি। সুতরাং বাইরের খাবার প্রতিদিন না খেতে দিয়ে মাঝেমধ্যে দেওয়া যেতে পারে। বাইরের খাবার এড়ানোর ভালো উপায় বাসায় শিশুর পছন্দের খাবারকে প্রাধান্য দেওয়া। যে ধরনের খাবার সে প্রত্যাশা করে তার সঙ্গে মিল রেখে খাবার তৈরি করলে নিশ্চয়ই ঘরের খাবারই সে বেশি পছন্দ করবে।

১২ থেকে ১৮ বা ১৯ বছর বয়সে ক্যালোরি ও প্রোটিনের চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময় ক্ষুধা বাড়ে এবং শর্করা খাবারের প্রতি ঝোঁক বাড়ে। প্রোটিন তেমন খেতে চায় না। ফলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। এ সময় হাড় ও মাংসপেশীর বৃদ্ধির জন্য ক্যালসিয়াম ও লৌহ প্রয়োজন। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের এ সময় আয়রনের প্রয়োজন বেড়ে যায়। এ জন্য তাদের খাবারে থাকতে হবে ডিম, কলিজা, মাংস, সব রকমের সবজি ও শাক, বিশেষ করে কচুশাক। প্রতিদিন ডাল ও টক ফল খেতে পারলে ভালো হয়। এ সময় বিপাকক্রিয়ার গতি বেড়ে যায়, ফলে আয়োডিনযুক্ত খাবার খেতে হয়। এদিকে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের বি-ভিটামিন বেশি প্রয়োজন তাদের শক্তি ও শারীরিক বৃদ্ধির জন্য।

২০-২৯ বছর এই বয়সটা হলো পড়াশোনা, চাকরি-বাকরি, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি, বিয়েশাদি ও নতুন জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার। এ সময় প্রয়োজন হয় প্রচুর পুষ্টির। প্রতিবেলায় যেন ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও আয়রন-জাতীয় খাবার থাকে তা খেয়াল রাখতে হবে। অনেকে মনে করেন, টিনএজ বয়সে ফাস্টফুড খেলে ক্ষতি হয় না। এই ধারণা একেবারেই ভুল। ফাস্টফুড খেলে ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যায় এবং ঘরে তৈরি পুষ্টিকর খাবারের প্রতি অনীহা দেখা দেয়। ফলে দেহে পুষ্টির অভাব দেখা দিতে পারে।

২০ থেকে ২৯ বছর এই বয়সকে বলা হয় যৌবন। টিনএজ বয়সে যেসব খাবারের প্রতি আসক্তি থাকে, এই পর্যায়ে সেগুলো পুরোপুরি বাদ দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। যেমন চিপস, চকলেট কিংবা আইসক্রিম। তবে এই খাবারগুলো পরিমাণে অল্প খেতে হবে।

এই বয়সে শর্করা ও মিষ্টি-জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। মিল্ক চকলেটের বদলে ডার্ক চকলেট, মিষ্টি দইয়ের বদলে টকদই, সাদা পাউরুটি না খেয়ে লাল পাউরুটি, বাদাম, মুরগির মাংস, ফলিক অ্যাসিড এবং ওমেগা ৩ জাতীয় খাবারের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।

৩০ থেকে ৩৯ বছর বয়সে শারীরিক অনেক পরিবর্তন আসে। তাই এই সময় দরকার সঠিক ডায়েট চার্ট অনুসরণ করা। বিশেষ করে হাড় সুস্থ রাখতে খুবই সচেতন থাকা দরকার। প্রোটিন-জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। ডিম, মুরগি, ডাল, বাদাম, শস্যদানা এই খাবারগুলো প্রোটিনের ভালো উৎস। এছাড়া ফ্যাট ছাড়া দুধ ও টকদই খেতে হবে নিয়মিত।

৪০ থেকে ৪৯ বছর রক্তচাপ এবং বিপাক প্রক্রিয়া ঠিক রাখার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে আঁশজাতীয় খাবার। ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখার জন্য ব্রকলি, শস্যদানা ও শাক-সবজি খেতে হবে। জাঙ্ক ফুড একেবারেই বাদ দিতে হবে। কখনো খেতে ইচ্ছা করলে বাসায় বানানো ভেজিটেবল বার্গার খাওয়া যেতে পারে। কেনার চেয়ে বাসায় বানানো স্যান্ডউইচ, দই, মাখন বেশি উপকারি। প্রতিবেলার খাবারে পর্যাপ্ত প্রোটিন থাকতে হবে।

৫০ থেকে ৫৯ বছর এই বয়সে বিপাক প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে যায়। ফলে যে খাবারগুলো সহজে হজম হয় সেগুলো খেতে হবে। মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। ফ্যাটবিহীন দুধ ও টকদই খেতে পারেন। দুধের সঙ্গে মধু মেশানো যেতে পারে।

এসময় চেহারায় বয়সের ছাপ পড়তে পারে। বয়সের ছাপ এড়ানোর জন্য ব্রকলি, স্ট্রবেরি, বাদাম, শাক-সবজি খেতে হবে। এই বয়সে আপেল খুবই উপকারি। আপেল খেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং দেহে আঁশের চাহিদা পূরণ হয়।


৬০ বছরের পর

জীবনের পড়ন্ত বেলায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে রোগবালাই দেখা দেয়। তাই এসময় আরো সচেতনতা দরকার। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে ৫ ধরনের শাকসবজি ও ২ ধরনের ফল। আয়রনজাতীয় খাবার খেতে হবে। তবে যে খাবারগুলো আপনার হজমে সমস্যা করবে না সেগুলো খেতে হবে। রান্না করা খাবারে লবণের পরিমাণ কমাতে হবে। দিনে ২ থেকে ৩ লিটার পানি খেতে হবে। জাঙ্ক ফুড ও মিষ্টিজাতীয় খাবার পুরোপুরি বাদ দিতে হবে।

সুস্থ থাকতে হলে খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে পুষ্টিকর খাবার। পর্যাপ্ত ঘুম ও ব্যায়ামও সুস্থ থাকার অন্যতম অনুষঙ্গ। 

গ্রন্থনা : ফাতেমা ইয়াসমিন