‘দিনে দিনে’ দিয়েই মানুষ আমাকে বেশি চেনে -শ্রাবণী সায়ন্তনী

22 Mar 2022, 02:04 PM সারেগারে শেয়ার:
‘দিনে দিনে’ দিয়েই মানুষ আমাকে বেশি চেনে -শ্রাবণী সায়ন্তনী

ফিজআপ চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ ২০১৭-এর ফাইনালিস্ট নতুন প্রজন্মের সম্ভাবনাময়ী কণ্ঠশিল্পী শ্রাবণী সায়ন্তনী। অসাধরণ গায়কি আর কণ্ঠশৈলীর জাদুতে একের পর এক নতুন নতুন গান গেয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই ভক্তশ্রোতাদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। তার ব্যস্ততা, পড়াশোনা এবং গান নিয়ে আনন্দভুবনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন শ্রাবণী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শহিদুল ইসলাম এমেল...


আনন্দভুবন : কেমন আছেন ?

শ্রাবণী সায়ন্তনী : এইতো ভালো আছি ভাইয়া।

আনন্দভুবন : সাম্প্রতিক সময়ে আপনার ব্যস্ততা কী নিয়ে ?

শ্রাবণী সায়ন্তনী : সাম্প্রতিক সময়ে ব্যস্ততা যাচ্ছে গান, স্টেজ শো, টিভি শো এগুলো নিয়ে। সেইসঙ্গে আমি [হয়ত-বা জেনে থাকবেন] ওপার বাংলার জনপ্রিয় একটি বিদ্যাপীঠ বিশ্বভারতী অর্থাৎ শান্তিনিকেতন বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছি। আমার ২২ তারিখ ফ্লাইট। ওখানে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রেডি করছি। এগুলো নিয়ে একটু ব্যস্ততা যাচ্ছে। আমি আসলে গান-বাজনার মধ্যে আছি। শান্তিনিকেতনেও ভর্তি হয়েছি হিন্দুস্থানি ক্লাসিক্যাল মিউজিক নিয়ে তো, গানের মধ্যেই আছি এবং আশা করি থাকব ভবিষ্যৎ পর্যন্ত।

আনন্দভুবন : সংগীতের শুরুটা হয়েছে কীভাবে ?

শ্রাবণী সায়ন্তনী : সংগীতের শুরুটা হয়েছে আমার একদম ছেলেবেলা থেকেই। আমার বয়স তখন আড়াই থেকে তিন বছর। বাবার কাছেই আমার গানের হাতেখড়ি। বাবার কাছেই আমি প্রথম সারগাম শিখি। তাছাড়া বিভিন্ন ওস্তাদের কাছেও শেখার সুযোগ হয়েছে। আমার বাড়ি রংপুরে। বেড়েও উঠেছি সেখানে। রংপুরের একজন জনপ্রিয় ওস্তাদ জিয়াউল হক লিপু স্যারের কাছে আমি দীর্ঘ ছয় বছর শিখেছি। তাছাড়া আমি ছেলেবেলা থেকেই জাতীয়পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি এবং বেশ কয়েকটি পদক এবং পুরস্কার পেয়েছি। তারপর আস্তে আস্তে রিয়্যালিটি শো’র দিকে যাই। ২০১৫-তে ক্ষুদেগানরাজে অংশগ্রহণ করি। এরপর ফিজআপ চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ ২০১৭-তে অংশগ্রহণ করে ফাইনালিস্ট হই। এভাবেই আমার জার্নিটা শুরু। সেরাকণ্ঠের পরে আবার নতুন একটি জায়গায় নিজেকে আবিষ্কার করলাম। এভাবে চলার পর আবার মৌলিক গানের ব্যাপার এলো। মৌলিক গান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। নিজের অনেকগুলো মৌলিক গান ইতোমধ্যে বের হয়েছে এবং প্রতিনিয়তই হচ্ছে।

আনন্দভুবন : এ পর্যন্ত কতগুলো মৌলিক গান করেছেন ?

শ্রাবণী সায়ন্তনী : ২৫টির মতো মৌলিক গান করেছি এ পর্যন্ত।

আনন্দভুবন : সংগীতের প্রতি আগ্রহী হলেন কীভাবে ? পরিবারের কেউ কি সংগীতের সঙ্গে জড়িত আছেন ?

শ্রাবণী সায়ন্তনী : ছেলেবেলায় আমার পাশের বাড়ির প্রতিবেশী এক বড়ো আপু গান করতেন। আমি ছেলেবেলা থেকেই হারমোনিয়ামের আওয়াজ খুব পছন্দ করতাম। আপু যখন সকালে রেওয়াজ করতেন তখন আমি ঘুম থেকে উঠেই সেখানে চলে যেতাম। হারামোনিয়মের আওয়াজ শুনলে আমি থাকতে পারতাম না। চলে যেতাম সেখানে। সেটা দেখে বাবা বুঝতে পারেন আমার গানের প্রতি খুব আগ্রহ। সেটা ভেবে বাবা আমাকে প্রথমে একটা খেলনা হারমোনিয়াম কিনে দেন। কিনে দেওয়ার পর বাবা দেখলেন যে, আমার খুব ঝোঁক এটার প্রতি [আমার তখন বয়স তিন বছর]। বাবাও মোটামুটি গান জানতেন। বাবা তখন আমাকে একটা আসল হারমোনিয়াম কিনে দেন এবং তিনিই আমাকে সারেগামাপা শেখাতে শুরু করেন। সেখান থেকেই আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে যাওয়া। এবং ওখান থেকেই গানের প্রতি ভালোবাসা।

আনন্দভুবন : কোন ধরনের গান গাইতে বেশি পছন্দ করেন ?

শ্রাবণী সায়ন্তনী : বেসিক্যালি সব ধরনের গান গাইতে পছন্দ করি। আমি নিজেকে সব দিকে মুভ অন করতে চাই। তবে সবচেয়ে বেশি গাইতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করি নজরুলসংগীত আর আধুনিক গান। মেলোডিয়াস গান গাইতেও আমি পছন্দ করি।

আনন্দভুবন : ফিজআপ চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ ২০১৭-এর ফাইনালিস্ট ঘোষণার পর আপনার অনুভূতি কেমন ছিল ?

শ্রাবণী সায়ন্তনী : তখনকার অনুভূতি অবশ্যই ভালো ছিল। তখন থেকেই আমার একটা চিন্তা ছিল, আমাকে আরো ভালো করতে হবে। এটাই শেষ নয়, এখান থেকে শুরু। আমাকে এর থেকে নিজেকে আরো ভাঙতে হবে, নিজেকে গড়তে হবে, নিজের অবস্থান আরো শক্ত করে ধরে রাখতে হবে। আমার তখন থেকেই একটা চ্যালেঞ্জ ছিল আমি এখন যা গাইছি তার থেকে আরো ভালো গাইতে হবে। তখন থেকেই আমার চেষ্টা ছিল এবং এখন পর্যন্ত আছে।

আনন্দভুবন : সংগীতজীবনের একটি বিশেষ স্মৃতির কথা বলুন

শ্রাবণী সায়ন্তনী : সংগীতজীবনে বিশেষ স্মৃতি অনেক। তার মধ্যে আমি যখন সেরাকণ্ঠে ছিলাম তখন আমি ক্যাম্পে এসে মাথায় পাগড়ি এবং সেরওয়ানি টাইপের পোশাক পরে ‘দিনে দিনে’ শিরোনাম একটি গান গেয়েছিলাম। ওই গান গাওয়ার পর যারা বিচারক ছিলেন তারা আমাকে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানিয়েছিলেন এবং অনেক বেশি ভোট পেয়েছিলাম। তখন শ্রদ্ধেয় বারী সিদ্দিকী স্যার বেঁচে ছিলেন। তিনি খুব প্রশংসা করেছিলেন আমার গানের। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল ওনার সামনে গানটি গাওয়ার। দুঃখের বিষয় তার একসপ্তাহ পর তিনি মারা যান। সেদিক থেকে অবশ্যই আমি ভাগ্যবতী বলতে পারেন। ‘দিনে দিনে’ গানটি চ্যানেল আই-এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হওয়ার পর অল্প সময়ের মধ্যেই মিলিয়নের ওপর ভিউ হয়ে যায়। ‘দিনে দিনে’ দিয়েই মানুষ আমাকে বেশি চেনে। গানটি গাওয়ার পর সেরাকণ্ঠের শ্রদ্ধেয় বিচারকবৃন্দও আমাকে ‘দিনে দিনে’ বলে ডাকতেন। এই ব্যাপারটা আমার খুবই ভালো লাগত।

আনন্দভুবন : আপনার প্রিয় তিনটি গানের কথা বলুন ?

শ্রাবণী সায়ন্তনী : আমার প্রিয় তিনটি গান হলো- বৈশাখ এলোরে, চান্দের আলো, ভুল ঠিকানা। এবছর আরো দু’টি গান এসেছে, এ গান দুটিও বিশেষ করে আমার প্রিয়। এই গান দুটোর নামও আমি বলতে চাচ্ছি। গান দুটো হলোÑ তারে আমি ভালোবাসি এবং তারে দুঃখ দিলে।

আনন্দভুবন : আপনার প্রিয় শিল্পী ?

শ্রাবণী সায়ন্তনী : প্রিয় শিল্পী অনেক, তার মধ্যে দেশে সাবিনা ইয়াসমীন, রুনা লায়লা, সামিনা চৌধুরী এবং কুমার বিশ্বজিত স্যার। দেশের বাইরে যদি বলতে যাই তাহলেÑ লতাজি, আশাজি, সাধনা সারগামসহ অনেকেই আছে।

আনন্দভুবন : সংগীত নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী ?

শ্রাবণী সায়ন্তনী : সংগীত নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বলতে যেহেতু এখন আমি শান্তিনিকেতনে অনার্সে ভর্তি হয়েছি সংগীত নিয়ে। তাই ভবিষ্যতে সংগীতের সঙ্গেই থাকার চেষ্টা করব এবং সংগীতের সঙ্গেই থাকব। সংগীত নিয়ে অনেক কিছু শিখতে চাই এবং অনেক দূর যেতে চাই।

আনন্দভুবন : আনন্দভুবনকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

শ্রাবণী সায়ন্তনী : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। ধন্যবাদ আনন্দভুবনকে।