সিন্ধু সমান বিন্দু কণা

22 Mar 2022, 01:21 PM কাভার গার্ল শেয়ার:
সিন্ধু সমান বিন্দু কণা

বেশকিছু দর্শকপ্রিয় গানের সংগীতশিল্পী বিন্দু কণা দীর্ঘ সময় ধরে সংগীতভুবনে দ্বিপ জে¦লে চলেছেন। সংগীত নিয়ে রয়েছে তার সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে তিনি গড়ে তুলেছেন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও একটি ইউটিউভ চ্যানেল। কণার সঙ্গে আরো কথা হয় ক্যারিয়ার, সংসার, ভবিষৎ-সহ নানা বিষয় নিয়ে। লিখেছেন শেখ সেলিম...



‘বাউলিয়ানা’ প্রতিযোগিতার প্রথম আসরের দ্বিতীয় রানার্সআপ বিন্দু কণা। বর্তমান সময়ে স্টেজে সবচেয়ে ব্যস্ত গায়িকাদের একজন তিনি। মাঝে করোনার ভয়ানক থাবার কারণে অন্যান্য শিল্পীর মতো তিনিও ঘরবন্দি ছিলেন। তবে নিয়মিত চর্চা করেছেন গানের। এখন আবার সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ায় ব্যস্ততা বেড়েছে তার।

বর্তমান সময়ে আলোচিত কণ্ঠশিল্পীদের মধ্যে বিন্দু কণা একজন। দীর্ঘ বিশ্রামের পর আবার গানে নিয়মিত হয়েছেন তিনি। প্রতিদিনই কোনো-না-কোনো কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তিনি। এর মধ্যেই সময় দিচ্ছেন সংসারেও। গানকে যেমন ভালোবাসেন তেমনি সংসারকেও সমানতালে ভালোবাসেন তিনি। বিন্দু বলেন, সবার আগে সন্তান, পরে অন্যসব। সবার সহযোগিতার কারণে নিয়মিত কাজ করতে পারছি। বিশেষ করে পরিবার আমাকে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট দিচ্ছে। তা না হলে আমার পক্ষে সারামাস কাজ করা সম্ভব হতো না। আমি ধন্য ইবরার টিপুর মতো একজন স্বামী পেয়েছি। আমি মেয়ের কাছ থেকে দূরে থাকতে পারলেও মেয়ের বাবা অর্থাৎ টিপু কিন্তু মেয়ের কাছ থেকে দূরে থাকতে পারে না।

করোনার ঊর্ধ্বগতির সময়ে স্টেজ শো না করলেও সে-সময়ে তিনি ২৬টি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। গানগুলোর মিউজিক কম্বিনেশন করেছেন ইবরার টিপু। এর মধ্যে পাঁচটি গান রিলিজ হয়েছে। দুটি গান প্রকাশ পেয়েছে আরটিভি মিউজিক ইউটিউভ চ্যানেল থেকে। দুটি গানই বেশ দর্শকপ্রিয়তা পায়। এর মধ্যে ‘বড়োলোকের বেটি’ শিরোনামের গানটির মিউজিক করেছেন জেকে মজলিশ, ‘বুড়ি হলাম তোর কারণে’ শিরোনামের গানটি মিউজিক করেছেন ইবরার টিপু। দুটি গানে দর্শকের রেসপন্সে খুশি কণা। বাকি গানগুলো ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন ইউটিউভ চ্যানেলে প্রকাশ পাবে বলে কণা জানান। এই গানের মাধ্যমে কণার মৌলিক গানের সংখ্যা যেমন বাড়লো তেমনি দর্শকের কাছ থেকে প্রংশসাও পেলেন তিনি। তাছাড়াও এই বছরে আরো কিছু ব্যতিক্রমী পরিকল্পনা রয়েছে বিন্দু কণার। কণা এমন কিছু গান করতে চান, যে গান শ্রোতারা শুনেই যেন বুঝতে পারে এটা বিন্দু কণার গান।

বিন্দু কণা সাধারণত ফোক গানই বেশি করেন। তবে নতুন বছর থেকে ফোক গানের পাশাপাশি অন্য ধাঁচের গানও করেছেন তিনি। করবেনই না বা কেন, তার কণ্ঠে সব ধরনের গানই মানানসই। ফোক থেকে অন্য ধাঁচের গান করা প্রসঙ্গে বিন্দু বলেন, একেক সময় একেকটা ট্রেন্ড আসে, কখনো কেউ মেলোডি ফোক পছন্দ করেন, কেউ রোমান্টিক মেলোডি গান পছন্দ করেন, কেউ আধুনিক গান পছন্দ করেন। আমি ফোকশিল্পী হিসেবে শ্রোতাদের কাছে বেশি পরিচিত।

এখনকার শ্রোতাদের টেষ্ট কোথাও স্থির নয়, সব ধরনের গানই ভালো লাগে তাদের। আমি ঘুরে ঘুরে সব ধরনের গান গাওয়ার চেষ্টা করছি। এর মধ্যে ফোকের সংখ্যা বেশি।

বিন্দুর দীর্ঘ ক্যারিয়ারের ঝুড়িতে জমা পড়েছে আটটি মৌলিক গান। তবে বিন্দুর ভক্তদের জন্য সুখবর হচ্ছে এই বছরই আরো কয়েকটি গান করবেন তিনি। অর্থাৎ মৌলিক গানে এবার বেশি জোর দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে বিন্দু বলেন, আমার ক্যারিয়ারে মৌলিক গান কম থাকার কারণ হচ্ছে, যখন আমি গান গাইব তখন আমি প্রেগন্যান্ট ছিলাম। তখন আমার ধ্যান-জ্ঞান আমার বেবিকে নিয়ে ছিল। একটি মৌলিক গানের জন্য প্রচুর সময় লাগে। প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। এখন আমি একটু ফ্রি। কারণ, মেয়ে একটু বড়ো হয়েছে। এখন আমি না থাকলেও অন্য কেউ ওর দেখাশোনা করতে পারে। পরিবারের সকলেই আমাকে সেই সাপোর্ট দেয়। মেয়েও বোঝে, মা-বাবা এখন কাজ করবে, তাকে ডিস্টার্ব না করি। এখন আমি গান নিয়ে বসতে পারছি। এখন সময় হয়েছে মৌলিক গান গাওয়ার। সবাই আমাকে নিয়ে চিন্তাও করছেন।

বিন্দুর আজকের এই অবস্থানে আসতে পরিবারের পাশাপাশি সকলের সহযোগিতা পেয়েছেন। বিশেষ করে স্বামীর সহযোগিতা তাকে আরো অনুপ্রাণিত করে এই অঙ্গনে। স্বামী প্রসঙ্গে বিন্দু কণা বলেন, ইবরার টিপু আমার জীবনে আশীর্বাদস্বরূপ। তিনি একজন ইন্ডাস্ট্রি। তার জীবনসঙ্গী হিসেবে আমাকে চ্যুজ করছে এজন্য নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করি। গানের ক্ষেত্রে সে সমুদ্র। সেই সমুদ্রের ফেনাও আমি না, স্বামী হিসেবে তাকে আমি কি উপাধি দেব, সেটা বলতে পারবো না। একজন ছেলে সংসার চায়, আমরা দুজনই গান নিয়ে ব্যস্ত থাকি, সংসার যেটাকে বলা হয়, সেভাবে আমাদের সংসার করা হয়ে ওঠে না। টিপুর অবজেকশন নেই আমার কাজ নিয়ে, বরং আরো উৎসাহ দেন। তার জীবনে একটাই চাওয়া, শুধু দেশে নয় সারাবিশে^র এক নম্বর শিল্পী হিসেবে দেখতে চায় আমাকে।

অন্যদিকে বিন্দু কণা যখন ইন্ডাস্ট্রিতে আসেন তার স্বপ্ন ছিল ইবরার টিপুকে নিয়ে একটি অ্যালবাম করবেন। যেকোনো কারণে সেটা আর করা হয়ে ওঠেনি। তবে সেই স্বপ্নের মানুষটির হাত দিয়ে একের পর এক গানগুলো আসছে।

বিয়ের আগে তাকে সেভাবে চিনতেন না বিন্দু কণা। গান করার তেমন স্বপ্নও ছিল না, বাউলিয়ানা প্রতিযোগিতায় আসার পর জানতে পারলেন ইবরার টিপু সম্পর্কে। বাউলিয়ানা থেকে যখন ইবরার টিপুর সঙ্গে যোগাযোগ হয়, তখন প্রথম আবিষ্কার করেন ইবরার টিপুকে। তার সততা, ব্যবহার মুগ্ধ করে বিন্দুকে। বাউলিয়ানায় এসেই তাকে নিয়ে গবেষণা করলেন বিন্দু।

একজন মানুষ এত ভালো হয় কীভাবে, নিজের কাছে নিজে প্রশ্ন করলেন। এরপর তার স্টাইল ফলো করতেন বিন্দু। একপর্যায়ে তার জীবনবৃত্তান্ত সম্পর্কে জানতে পারলেন। তার প্রতি আরো সম্মান বেড়ে যায় বিন্দুর। এরপর তার গানের কম্পোজিশন দেখে আরো আকৃষ্ট করে বিন্দুকে। বিন্দু বলেন, আমাকে প্রথম যে গানটি কম্পোজিশন করে দিলেন, তখন ইউটিউবে এত দর্শক ছিল না। সে সময়ে সেই গানটি ৬ মিলিয়ন দর্শক উপভোগ করে। এভাবে কখন তার প্রতি ভালোবাসা শুরু হলো বলতেই পারবো না।

বিন্দু কণা আরো বলেন, ইবরার টিপু তার ২৬ বছরের ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমার জন্য গান তৈরি করেন। অবশ্যই সেই গানটি হবে সবচেয়ে সেরা গান, হয়ও। তার গুণের কথা বলে শেষ করতে পারব না। শুধু এটা বলব, আল্লাহ আমাকে খুব মূল্যবান সম্পদ গিফট করেছেন। আমি যেন তা আজীবন বহন করতে পারি।

ইবরার টিপুর সুর, মিউজিক কম্পোজিশন গান সবই ভালো লাগে বিন্দু কণার। বিন্দু কণা বলেন, টিপুর জীবনযাপন খুবই সাধারণ কিন্তু ও যখন পিয়ানোর সামনে বসে তখন মনে হয় ওর মধ্যে নতুন গ্রহের কিছু একটা ভর করছে। হুট করে কিছু একটা তৈরি করে ফেলেন। সেই সময় তাকে শুধু আমার স্বামী মনে হয় না, মনে হয় দেশের সম্পদ।

২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে লোকগান নিয়ে আয়োজিত মাছরাঙা টেলিভিশনের রিয়েলিটি শো ‘বাউলিয়ানা’য় দ্বিতীয় রানারআপ হন বিন্দু কণা। সেই থেকে পরিচিতি পান মিডিয়ায়। তবে, বিন্দু এখন আলোচিত স্টেজ শোর জন্য। বর্তমানে বিন্দু এতই ব্যস্ত যে একদিনে একাধিক শোর অফারও আসে তার কাছে। অল্প সময়ের ক্যারিয়ারে প্রায় সব জেলায় এরই মধ্যে গান করেছেন তিনি। সবমিলিয়ে বলা যায় সিন্ধু সমান বিন্ধু কণা।

ছবি : জাকির হোসেন . রূপসজ্জা : মো. রশিদ . স্থান : ইয়েলো ক্যাফে