বই এল যেভাবে

01 Mar 2022, 02:50 PM অভোগ শেয়ার:
বই এল যেভাবে

মানব সভ্যতার উন্মেষের সময় থেকে আজকের অবস্থানে এসে পৌঁছানোর যে সুদীর্ঘ যাত্রা- তার পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বই। আরেকটু সহজ করে বলতে গেলে, এক প্রজন্মের অর্জিত জ্ঞানের ওপর দাঁড়িয়ে পরবর্তীপ্রজন্মের মানুষ সেই জ্ঞানের ধারাটাকেই আরো সমৃদ্ধ করে তুলে দিয়েছেন, তার পরবর্তীপ্রজন্মের মানুষের কাছে। এই যে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিরাজমান জ্ঞানের পরিবহণ প্রক্রিয়ার সুফল আমরা আজকে ভোগ করতে পারছি- এটা বই ছাড়া কী করে সম্ভব হতো ? এটা কল্পনা করাই দুঃসাধ্য। আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বছর আগের প্রজন্মে, আমাদের পূর্বপুরুষদের মনে এমন একটা দুঃসাধ্য চিন্তা ভর করেছিল বলেই রক্ষা...! নইলে আজকের দিনে এসে মানুষের ইতিহাস হয়ত অন্যভাবেও লেখা হতে পারত। কিংবা যদি বই-ই না থাকত তাহলে লেখা হতো কোথায়, আর সেটা আমাদের হাতেই বা কীভাবে এসে পৌঁছাতো ? এমন সব আজগুবি ভাবনা না ভেবে, চলুন ঢুকে পড়া যাক মূল আলোচনায়...


খুব সহজ করে বললে, বই হচ্ছে একটি লিখিত দলিল। তাই বই নিয়ে ভাবার আগে, প্রাচীন মানুষকে কোনো চিহ্ন বা ছবি এঁকে মনের ভাবটি স্পষ্ট করার বিদ্যা আয়ত্ত করতে হয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, খ্রিষ্টপূর্ব ৩৪০০ থেকে ৩১০০ অব্দের মধ্যে সুমেরীয় সভ্যতায় প্রথম লেখার দক্ষতা বিকাশ লাভ করে। কোনো কোনো ইতিহাসবিদ এ দক্ষতার সঙ্গে প্রাচীন গুহাচিত্রের সম্পর্ক খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন। লিখতে শেখার সঙ্গে সঙ্গেই প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ল এমন একটি মাধ্যম, যেখানে লেখাটিকে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দে প্রাচীন সুমেরীয়দের তৈরি কাদামাটি দিয়ে নির্মিত একরকমের ফলক পাওয়া যায়, যেগুলোকে বইয়ের পূর্বসূরি হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এ ধরনের ফলকগুলোকে কিউনিফর্ম ট্যাবলেট বলা হতো। পুরো মেসোপটেমিয়া-জুড়ে এমন প্রায় ২০ হাজারের বেশি ট্যাবলেট পাওয়া গেছে, যেগুলোর অধিকাংশ নির্মিত হয়েছে খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম শতকে।

হায়ারোগ্লিফিক খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দের কাছাকাছি সময়েই প্রাচীন মিসরীয়রা উদ্ভাবন করে প্যাপিরাস গাছের বাকলে লেখার প্রযুক্তি। কলম হিসেবে তারা ব্যবহার করত সরু করে কাটা গাছের ডাল বা পাখির পালক। এ পদ্ধতিতে শুরুতে আলাদা আলাদা কয়েকটি প্যাপিরাস রোলে লিখে, তারপর সেটাকে জোড়া দিয়ে রোল করে পেঁচিয়ে রাখা হতো ; যা আধুনিক ইতিহাসবিদদের কাছে ‘ইজিপশিয়ান স্ক্রল’ নামে পরিচিত। একেকটি স্ক্রল আসলে একেকটি আলাদা বই, যেগুলো সাধারণত ১০-১৫ মিটার লম্বা হতো। তৃতীয় রামোসের আমলে লিখিত ৪০ মিটার লম্বা একটি স্ক্রল পাওয়া যায়। মিসরীয় সভ্যতার বিখ্যাত মেনুস্ক্রিপ্ট -এর আবিষ্কারেরও পূর্বে এই ধরনের লিখন পদ্ধতিটি হাইরেটিক নামে পরিচিতি লাভ করে। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় দশকে মধ্য ইউরোপে ‘পার্চমেন্ট’ নামে আরেক ধরনের লেখার উপকরণ জনপ্রিয়তা পায় ; যা তৈরি করা হতো বিভিন্ন গবাদিপশুর চামড়া থেকে। এছাড়াও এ সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে বাঁশের কঞ্চিতে, হেম্প বা সিল্কের কাপড়ে এমনকি কাঠের ট্যাবলেটের ওপর মোম গলিয়ে তার ওপর দাগ কেটে লেখার কৌশল উদ্ভাবনের চেষ্টা করেছে অনেকেই।

বিশ্ব ইতিহাসে চৈনিক সভ্যতার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের মধ্যে গান পাউডার আর কাগজ অন্যতম। খ্রিষ্টাব্দের প্রথম শতকেই তারা কাগজের আবিষ্কারের মাধ্যমে আধুনিক মুদ্রণশিল্পে একটি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছিল। মূলত এরপর থেকেই লেখার উপকরণ হিসেবে বিচ্ছিন্ন প্রযুক্তিগুলোর ব্যবহার ধীরে ধীরে কমে যেতে শুরু করল। এর কয়েক শতক পর, ৬১৮ থেকে ৯০৭ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যেই চীনে কাদামাটি বা কাঠের বাক্স ব্যবহার করে মুদ্রণের প্রচলন শুরু হয়ে যায়। এ পদ্ধতিতে প্রথম কাঠ বা কাদামাটি দিয়ে একটি বাক্স বানানো হতো, যেখানে যে লেখা বা ছবিটি মুদ্রণ করা হবে সেটি ফুটিয়ে তোলা হতো। এরপর সে বাক্সটিতে কালি লাগিয়ে সেটি দিয়ে কাগজের ওপর ছাপ দেওয়া হতো। এর ফলে কাগজ বা কাপড়ের ওপর বক্সের ছাপ তৈরি হতো। এর প্রযুক্তির ফলে অনেক কম সময়েও পরিশ্রমে একই লেখার অনেকগুলো কপি ছাপানো সম্ভব হলো। চীনে ট্যাং শাসনামলে ৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বের প্রথম মুদ্রিত বই ‘ডায়মন্ড সূত্রা’ প্রকাশিত হয়, যা পরবর্তীসময়ে মুদ্রণ শিল্পের আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে এক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়। একই রকমের প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোরিয়ায় ১৩৭৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বই ‘জিকজি’, যেখানে কাঠ কিংবা সিরামিক  বক্সের বদলে ব্রোঞ্জের বক্স ব্যবহার করা হয়েছিল।

এভাবেই কেটে গেল পরের কয়েকটা বছর। ১৪৫৫ খ্রিষ্টাব্দে জোহানেস গুটেনবার্গ নামে একজন জার্মান স্বর্ণকারের হাত ধরে চীনা মুদ্রণ প্রযুক্তি একটা নতুন মাত্রা পেল। এ বছরই ল্যাটিন ভাষায় ‘গুটেনবার্গ বাইবেল’ নামে একটি বই ছাপানো হলো, যেটাকে আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র ব্যবহার করে প্রকাশিত প্রথম বইয়ের মর্যাদায় ভূষিত করা হলো। ব্যস, এভাবেই সারাবিশ্বে ধীরে ধীরে শুরু হয়ে গেল বাণিজ্যিকভাবে বই উৎপাদনের প্রক্রিয়া। এর পরের ইতিহাসটুকুু তো আর নতুন করে বলার কিছু নেই। সেদিনের সেই ছাপার অক্ষরের প্রথম বই থেকে আজকের ই-বুক, কেবল প্রযুক্তির উৎকর্ষের প্রমাণ।


বিশ্বের বিখ্যাত সব বইমেলা

বাংলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় বাঙালির প্রাণের একুশে বইমেলা। বইপ্রেমী, লেখক, প্রকাশক-সহ নানা পেশার মানুষ সারাবছর অপেক্ষা করে এই বইমেলার জন্য, বাঙালির প্রাণের মেলা এই একুশে বইমেলা। আমাদের এই বইমেলার মতো মেলা কিন্তু আরো অনেক দেশেই হয়, তা হয়ত অনেকেরই জানা নেই। এবারের অঁ ভোগ আয়োজনে আমরা জানবো বিশ্বের বিখ্যাত সব বইমেলা সম্পর্কে ...

কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা

আমাদের প্রতিবেশী দেশ দিয়েই শুরু করা যাক। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড নামের একটি সংস্থার আয়োজনে এই বইমেলার প্রথম আয়োজন হয়েছিল। বই কেনার আগ্রহের কথা বিবেচনা করে বইপ্রেমীদের জন্যই শুরু হয়েছিল এই মেলা। সাধারণত জানুয়ারি মাসের শেষ বুধবার এই মেলা শুরু হয়। আগে অবশ্য ওই সংস্থা ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আয়োজনে ১৯৯২-এর আগ পর্যন্ত পৃথক পৃথক বইমেলা হতো। পরে দুই মেলাকে এক করে একটি মেলার আয়োজন করা হয়।

প্রতি বছর বইমেলার নির্দিষ্ট একটি থিম থাকে। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় ‘গেস্ট অব অনার’ হিসেবে মনোনীত হয়েছিল কলকাতার বইমেলা। কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা হলো এশিয়ার সবচেয়ে বড় বইমেলা। প্রায় ২৫ লক্ষ লোকের সমাগম হয় এখানে প্রতিবছর।

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা

বাণিজ্যিক দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো বইমেলা হলো ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা। আর দর্শনার্থীর আগমনের দিক থেকে ইউরোপে এর অবস্থান দ্বিতীয়। জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে প্রতিবছর অক্টোবরে এই মেলার আয়োজন করা হয়।

মূলত সারাবিশ্ব থেকে এই মেলায় মানুষ আসে আন্তর্জাতিক প্রকাশনা স্বত্ব ও লাইসেন্সিং ফি নিয়ে দর কষাকষি করতে। ১০০টির বেশি দেশ থেকে অন্তত ৭০০০ সংস্থা অংশ নেয় এই মেলায়। প্রকাশনা সংক্রান্ত চুক্তি বাণিজ্যের জন্য এই বইমেলাকে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বইমেলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফ্রাঙ্কফুর্টের বইমেলার ইতিহাস বেশ পুরনো, প্রায় ৫০০ বছরেরও বেশি। ফ্রাঙ্কফুর্টের কাছেই মেইনজে যখন জোহানেস গুটেনবার্র্গ ছাপাখানার প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি সাধন করেন, তখন স্থানীয় বই বিক্রেতাদের আয়োজনে প্রথমবারের মতো বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। ছাপানো বইয়ের যুগ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত শুধু পান্ডুলিপি বিক্রি হতো মেলায়। ১৭ শতকের শেষ পর্যন্ত এটি ছিল ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বইমেলা।

১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রতি বছর এই বইমেলা চলাকালীন ‘পিস প্রাইজ অব দ্য জার্মান বুক ট্রেড’ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এই মেলায় সবচেয়ে অদ্ভুত নামের বইটিকেও পুরস্কার দেওয়া হয়।

গুয়াডালাজারা আন্তর্জাতিক বইমেলা

গুয়াডালাজারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হয় এই বইমেলা। মেক্সিকোর জালসিকোতে এটি আরম্ভ হয় প্রতিবছর নভেম্বরের শেষ শনিবার এবং চলে একটানা ৯ দিন। স্প্যানিশ ভাষাভাষীদের জন্য সবচেয়ে প্রখ্যাত এই বইমেলা। এই বইমেলাটি এর স্প্যানিশ নামের আদ্যাক্ষরগুলোর সমন্বয়ে পরিচিত ‘এফআইএল’ নামেও। ৪০ হাজার বর্গমাইল জায়গা নিয়ে হয় এই মেলা, প্রায় দুই হাজার প্রকাশনা সংস্থা অংশ নেয় এই মেলায়। মেলায় প্রায় ৭ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়।


লন্ডন বুক ফেয়ার

ইউরোপের বইপ্রেমীদের অন্যতম বৃহৎ মিলনমেলা ঘটে লন্ডন বুক ফেয়ারে। ইউরোপিয়ান প্রকাশক, বিক্রেতা, এজেন্টদের তীর্থস্থান হিসেবে খ্যাত এই লন্ডন বুক ফেয়ার। লিওনেল লেভেনযাল নামক একজন প্রকাশকের উদ্যোগে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে এক হোটেলের বেজমেনেন্ট এই বইমেলার গোড়াপত্তন হয়। প্রকাশকদের বইগুলো লাইব্রেরির মালিকদের কাছে সহজে প্রদর্শনের উদ্দেশ্যেই মূলত এই বইমেলার আয়োজন হয়েছিল। প্রথমবারের আয়োজন বেশ সফল হওয়ায় পরের বছর নভেম্বরে আবারো প্রদর্শনীর আয়োজন হয়। এভাবেই প্রতিবছর এ মেলার ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এ মেলা চলত লিম্পিয়া এক্সিবিশন সেন্টারে। এই বইমেলায় প্রায় ১০০ দেশ থেকে প্রকাশক, বিক্রেতা, এজেন্ট, লাইব্রেরিয়ান ও সাপ্লায়ার অংশগ্রহণ করেন। টেলিভিশন, সিনেমা ও অডিও রেকর্ডের প্রতিষ্ঠানের নিকট বইয়ের স্বত্ব বিক্রিসহ প্রকাশনা শিল্পের যাবতীয় বাণিজ্যিক কাজ সম্পাদিত হয় এই মেলায়।

বুয়েন্স আয়ার্স আন্তর্জাতিক বইমেলা

পৃথিবীর বৃহত্তম বইমেলার একটি বুয়েন্স আয়ার্স আন্তর্জাতিক বইমেলা। আর্জেন্টাইন সোসাইটি অব রাইটার্স-এর প্রতিষ্ঠিত ফান্দাসিও এল লিব্রো নামক একটি অলাভজনক সংস্থা এই বইমেলার আয়োজন করে থাকে। লেখক, প্রকাশক, সম্পাদক, অনুবাদক, বিক্রেতা এবং প্রকাশনার সাথে জড়িতদের অংশগ্রহণে কনফারেন্স ও সভা উন্মুক্ত থাকে সবার জন্য।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বুয়েন্স আয়ার্স ৩৫টির মতো বাইমেলার আয়োজন করা হয়েছিল। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দ আর্জেন্টাইন সোসাইটি অব রাইটার্স আর্জেন্টিনার সম্পাদনা সংস্থাগুলোর সাথে আলোচনা করে বইমেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের মার্চে প্রথমবারের মতো বুয়েন্স আয়ার্স আন্তর্জাতিক বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। সাড়ে সাত হাজার বর্গমিটার জায়গা নিয়ে প্রথমবারের মতো এই আন্তর্জাতিক মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। ৫০জন লেখক এবং ৭টি দেশ এই মেলায় অংশ নেয়। প্রথম বইমেলায় প্রায় দেড় লাখ মানুষ সমবেত হয়েছিল। বর্তমানে এই মেলায় প্রায় ৫০টি দেশ অংশ নেয়। দর্শনার্থী হয় ১২ লাখের বেশি। প্রায় ৪৫ হাজার বর্গমিটার এলাকা নিয়ে হয় এই মেলা।

কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলা

আরব বিশ্বের প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম বইমেলা হলো কায়রো আন্তর্জাতিক বইমেলা। মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই এই মেলার আয়োজন করে ‘জেনারেল ইজিপশিয়ান বুক অরগানাইজেশন’। আরবীয় প্রকাশনার জগতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন হিসেবে বিবেচনা করা হয় এই বইমেলাটিকে।

১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হয় কায়রো বইমেলা। মিশরের সরকারি প্রকাশক ও বিক্রেতাদের সংস্থা জেনারেল ইজিপশিয়ান বুক অরগানাইজেশন এই মেলার আয়োজন করে। কায়রো শহর প্রতিষ্ঠার ১০০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই মেলার আয়োজন করা হয়। প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের মিলনমেলায় মুখরিত হয় এই মেলা। পৃথিবীতে আরবি ভাষায় রচিত বইগুলোর গড়ে পাঁচটির মধ্যে তিনটিই প্রকাশ করে কায়রো-ভিত্তিক প্রকাশনা সংস্থাগুলো। তাই আরব বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বড়ো বইমেলা এটি। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চলে এই মেলা। প্রতিবছর জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে মিশরের কায়রোতে অনুষ্ঠিত হয় কায়রোর বইমেলা।

মস্কো আন্তর্জাতিক বইমেলা

প্রতিবছর ৩ থেকে ৭ তারিখের মধ্যে মস্কো এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় মস্কো ইন্টারন্যাশনাল বুক ফেয়ার বা মস্কো আন্তর্জাতিক বইমেলা। এই বইমেলার প্রধান আকর্ষণ থাকে নানা ধরনের ওয়ার্কশপ, গোলটেবিল বৈঠক, লেখকদের আবৃত্তি। অতিথিদের অটোগ্রাফ সংগ্রহের আলাদা ব্যবস্থা থাকে এবং লেখকদের সঙ্গে সরাসরি আলাপচারিতার সুযোগও থাকে। এখানে। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে ১ সেপ্টেম্বর প্রথম শুরু হয় এই বইমেলা। রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশগুলোর নামকরা প্রকাশনী সংস্থা এখানে অংশগ্রহণ করে। এই মেলায় শিশুদের জন্য ‘লেটস রিডস’ নামে একটি কর্নার করা হয়।

বলোগনা চিলড্রেন বুক ফেয়ার

এটি মূলত শিশুদের জন্য বইমেলা। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে মার্চ এবং এপ্রিলের চার দিন এই মেলা ইতালির বলোগনায় অনুষ্ঠিত হয়। ১৫০০ প্রকাশক এই মেলায় অংশগ্রহণ করে থাকে। শিশু সাহিত্য, শিশু চলচ্চিত্র এবং অ্যানিমেশন নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের জন্য এই বইমেলা এক তীর্থস্থান বলা যেতে পারে। প্রতিবছর ৭০ থেকে ৮০টি দেশের প্রতিনিধিরা এই মেলায় অংশ নিয়ে থাকে। এই মেলা চলাকালীন কিছু প্রধান অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা করা হয়। সেগুলোর মধ্যে বিয়ানুয়াল হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসন অ্যাওয়ার্ডস এবং দ্য লিন্ড গ্রিন মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড অন্যতম।