‘প্রতিশোধের আগুন’ সিনেমা দিয়ে বড়োপর্দায় যাত্রা শুরু হয় মডেল ও অভিনেত্রী মৌ খানের। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করেন নবাগত এই অভিনয়শিল্পী। প্রথম ছবির সাফল্যের পর নির্মাতারা তাকে নিয়ে কাজের আগ্রহ দেখান এবং মৌ-ও বেশকিছু ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হন। একাধিক ছবির কাজও সম্পন্ন হয়ে মুক্তির প্রহর গুনছে। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...
মৌ অভিনীত প্রথম ছবি ‘প্রতিশোধের আগুন’ যখন মুক্তি পায় তার কিছুদিনের মধ্যেই সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও হানা দেয় ভয়াল ঘাতক করোনা। প্রথম ছবিতে যখন বাজিমাত করলেন, নির্মাতারাও খুশি হলেন নবাগত এই অভিনয়শিল্পী-কে পেয়ে। কাজ করার আগ্রহও দেখালেন তারা। পরপর বেশ কয়েকটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধও হলেন। শুটিংও শুরু করেন। এর মধ্যে হানা দেয় করোনা নামক ভয়ানক ঘাতক ব্যাধি। শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারাবিশ্ব কেঁপে ওঠে এই অচেনা ঘাতকের নির্মম আঘাতে। বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বন্ধ রাখতে হয় সিনেমা প্রদর্শন ও শুটিং।
করোনার প্রাদুর্ভাব কমে এলে আবার শুরু করেন শুটিং। বর্তমানে ব্যস্ত রয়েছেন একাধিক ছবির শুটিং নিয়ে। শুটিংয়ের পাশাপাশি নতুন আরো বেশ কয়েকটা ছবি নিয়ে কথা হচ্ছে বলেও জানান মৌ।
সম্প্রতি কাজ করছেন মনতাজুর রহমান আকবর পলিচালিত ও মনোয়ার হোসেন ডিপজল প্রযোজিত ‘যেমন জামাই তেমন বউ’, ‘অমানুষ হলো মানুষ’ এবং ‘বাংলার হারকিউলিস’ ছবিতে। তিনটি ছবিতেই মৌ খানের বিপরীতে অভিনয় করেছেন মনোয়ার হোসেন ডিপজল।
মুক্তি প্রতীক্ষিত ছবিগুলো হচ্ছে : সুজন বড়–য়ার বান্ধব, সফিক হাসানের বাহাদুরি, শাহীন সুমন পরিচালিত মাফিয়া। মাফিয়া শিরোনামে একটি ওটিটি প্লাটফর্মে কাজ করেছিলেন মৌ। এবার পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি হচ্ছে মাফিয়া। সবমিলিয়ে বর্তমানে মৌ খান অভিনীত আটটি ছবি রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়।
আট ছবির চরিত্র প্রসঙ্গে মৌ খান বলেন, একেকটি ছবির চরিত্র একেক রকম। প্রতিটি ছবির গল্প ভিন্ন হওয়ায় আমি নিজেকে ভাঙ্গতে পেরেছি। অনেক অভিজ্ঞতাও হয়েছে কাজগুলো করে।
মনের মত চরিত্রে কাজ করতে পেরেছেন কি না জানতে চাইলে মৌ বলেন- প্রতিটি কাজই সন্তানের মতো। গল্পগুলোও ভালো ছিল, তারপরও ক্ষুধার শেষ নেই। তৃষ্ণা থাকবেই। যেসব ছবিতে কাজ করার জায়গা থাকবে সেইসব ছবিতে কাজ করতে চাই।
প্রথম ছবিতে কেমন সাড়া পেয়েছিলেন ? মৌ খান বলেন বেশ সাড়া পেয়েছিলাম। এখনো সাড়া পাচ্ছি। সিনেমাটি মুক্তির পর আমি যখন প্রথম সিনেমা হলে যাই, দর্শকের আগ্রহ দেখে এই অঙ্গনে কাজের প্রতি আমার ভালোবাসা আরো বেড়ে যায়। দর্শক ছাড়াও আমার আত্মীয়-সজন, বন্ধু-বান্ধবেরা অনেক উৎসাহ দিয়েছেন। এই ছবিটির পরই শুরু করি শাহীন সুমন পরিচালিত মাফিয়া ছবির কাজ।
মৌ খান মিডিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ঘটে একটি ফ্যাশন হাউজের পোশাকের মডেল হয়ে। অনেকটা শখের বসেই কাজটি করেন তিনি। ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার পর থেকেই মিডিয়ার মানুষেরা ইনবক্সে নাটক, সিনেমার অফার দিতে থাকেন। এরমধ্যে সুজন বড়–য়া মৌ খানের পরিবারের পূর্ব পরিচিত থাকায় তিনি প্রথম মৌকে তার ছবিতে অভিনয়ের কথা বললেন। মৌ পরিবারকে বিষয়টি জানালে প্রথমদিকে তারা রাজি ছিলেন না। তবে মৌ’র মা মেয়ের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে কিছু শর্ত দিয়ে বললেন, যদি পড়াশোনা ঠিক রেখে কাজ করতে পারো। মায়ের মুখে হ্যাঁ-সুচক কথা শুনতে পেয়ে মৌ তো আকাশের চাঁদটাই হাতে পেয়ে গেলেন! এরপর নেমে গেলেন অভিযানে জয় করলেন চাঁদ। চাঁদমাখা হাসি দিয়ে জয় করলেন দর্শক।
সুজন বড়–য়ার ছবির কাজ করতে গিয়ে সুযোগ আসে আরো একাধিক ছবির। নতুন কোনো ছবিতে কাজ করবেন কি করবেন না দ্বিধাদ্ব›েদ্ব পড়ে গেলেন। এইদিকে গল্পও পছন্দ হয়েছে। ভাবলেন একটি যখন করেছেন তাহলে আরো একটি ছবিতে কাজ করি। এইভাবেই চুক্তিবদ্ধ হন ‘বাহাদুরি’ ছবিতে। এরই মধ্যে অন্যান্য নির্মাতারাও তাকে নিয়ে কাজ করার আগ্রহ দেখালেন। এতদিনে এই অঙ্গনের প্রতি একটা ভালোবাসা তৈরি হয়ে গেছে। তাই অভিনয়কে পেশা হিসেবেই নিলেন মৌ ।
ছবিতে অভিনয়ের জন্য যে-ক’টি উপাদান প্রয়োজন, তার মধ্যে নাচ অন্যতম। মৌ ক্ল্যাসিক্যাল নাচ রপ্ত করেছেন সেই ছেলেবেলায়ই। তাই অভিনয় করতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি নবাগত এই নায়িকার। এখনো নাচ শিখছেন, সেই সঙ্গে ফাইটিংও।
২০১৯ খ্রিস্টাব্দে মৌ অভিনীত প্রথম ছবি প্রতিশোধের আগুন মুক্তি পাওয়ার পরপরই কয়েকটি ছবিতে কাজ করেন, এর মধ্যে হানা দেয় করোনা। বন্ধ হয়ে যায় শুটিং ও সিনেমা হল। যার ফলে কাজ থেকে দীর্ঘদিন বাইরে থাকতে হয় এই নবাগতকে। এই প্রসঙ্গে মৌ খান বলেন, দুয়েকটি ছবির কাজ প্রায় শেষের দিকে ছিল, কিছু ছবির কাজ অর্ধেক করেছিলাম, করোনার কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। তাই নতুন ছবি আর মুক্তি পায়নি।
যেহেতু এখনো দর্শক হলমুখী হচ্ছেন না যার ফলে ছবিগুলো মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। তবে খুব শিগ্গিরই ছবিগুলো মুক্তি পাবে বলে আমি আশা করি। মৌ খান এই পর্যন্ত অভিনয় করেছেন ডিপজল, আনিসুর রহমান মিলন, জায়েদ খান, জয় চৌধুরী প্রমুখের সঙ্গে।
নতুন হিসেবে সহকর্মীদের কেমন সহযোগিতা পেয়েছেন এ বিষয়ে মৌ খান বলেন, নতুন হিসেবে আমি অনেক সাপোর্ট পেয়েছি সিনিয়রদের কাছ থেকে। শুরুর দিকে বুঝতাম না কীভাবে শুরু করব, একটু নার্ভাস ছিলাম, যথেষ্ট সাপোর্ট পেয়েছি।
অভিনয় ছাড়া আর কী করতে চান জানতে চাইলে মৌ বলেন, এখন অভিনয়ই আমার ধ্যান-জ্ঞান। অভিনয়ের পেছনে আমি সবটুকু সময় দিতে চাই। ভালো একজন অভিনয়শিল্পী হতে চাই।
মৌ শুধু সিনেমায়ই অভিনয় করেন না, অন্যের অভিনীত ছবিও দেখেন। যখনই সময় পান চলে যান সিনেমা হলে কিংবা বাসায় থাকলেও সিনেমা দেখেন তিনি।
বিশেষ করে সিনিয়র শিল্পীদের কাজ একটু বেশি দেখেন। সবশেষ হলে গিয়ে ‘স্পাইডারম্যান’ ছবিটি দেখেছেন তিনি। দেশি-বিদেশি সব ধরনের সিনেমাই দেখেন তিনি। বই পড়েন মাঝে মাঝে। রোমান্টিক গল্পের বই তার পছন্দের। প্রিয় লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ভালো লেগেছে জহির রায়হানের ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’ উপন্যাসটি।
মৌ খানের দৃষ্টিতে ভালোবাসা হচ্ছে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে নিয়ে ভালো থাকা। ফেব্রুয়ারি কষ্টের মাস, এই মাসেই ভাষার জন্যে প্রাণ দিয়েছেন অনেকে। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষাদিবস। এই দিনে আমি শহীদ মিনারে গিয়ে শহীদদের
শ্রদ্ধা জানাই। একুশে নিয়ে তেমন একটা ছবি নেই বললেই চলে, যদি আমি এই ধরনের কোনো ছবিতে কাজ করতে পারি, নিজেকে ভাগ্যবান মনে করব।