হাঁপানির কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা -ডা. আকলেছুর রহমান খান তুহিন

01 Mar 2022, 01:29 PM স্বাস্থ্যভুবন শেয়ার:
হাঁপানির কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা  -ডা. আকলেছুর রহমান খান তুহিন

হাঁপানি একটি শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। কার্যত এটি শ্বাসনালির অসুখ। এর ইংরেজি নাম অ্যাজমা যা এসেছে গ্রিক শব্দ Asthma থেকে। বাংলায় যার অর্থ হাঁপানি বা হাঁ-করে শ্বাস নেওয়া। হাঁপানি বলতে আমরা বুঝি শ্বাসপথে বায়ু চলাচলে বাধা সৃষ্টির জন্য শ্বাসকষ্ট। তাছাড়া হাঁপানি হলো ফুসফুসীয় শ্বাসনালির দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহজনিত রোগ। এই রোগটির ধরন হলো বিভিন্ন মাত্রায় ও বারবার লক্ষণ দেখা দেওয়া এবং পরবর্তীসময়ে চিকিৎসা না করলে খারাপ হতে থাকা। শ্বাসপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়ে সহজেই বা অল্পতেই ব্রঙ্কোস্পাজম বা শ্বাসনালি সরু হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থায় চলে যায়। ফলে দ্রুত হাঁপানি বেড়ে যায়।

হাঁপানি জিনগত এবং পরিবেশগত কারণেও হয় বলে ধারণা করা হয়। অনেকেই হাঁপানিকে ছোঁয়াচে রোগ বলে থাকেন। আসলে এটি ছোঁয়াচে রোগ নয়।


হাঁপানির কারণ

হাঁপানির কারণ এখনো পরিপূর্ণভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। বংশগত কারণ এবং পরিবেশগত কারণে হাঁপানি ক্রমশ বাড়ছে। তাছাড়া ঘরে জমে থাকা ধুলো, বিছানায় জমে থাকা মাইট, কার্পেট, পুরনো আসবাব, দূষণ, অ্যালার্জি, তামাকের ধোঁয়া ও রাসায়নিক উত্তেজক পদার্থ এগুলোকে হাঁপানি রোগের মূল কারণ হিসেবে ধরা হয়।

তাছাড়া ভাইরাসের সংক্রমণ, ঠান্ডা আবহাওয়া, প্রচণ্ড রাগ বা ভয়, কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ [অ্যাসপিরিন, পোপ্রানল, ডাইক্লোফেনাক ও এসিক্লোফেনাক জাতীয় ওষুধ] হাঁপানির সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে দেয়।


উপসর্গ ও লক্ষণ

হাঁপানির কমন লক্ষণগুলোর মধ্যে শ্বাস নেওয়ার সময় শো শো শব্দ হওয়া, অনেক সময় বাঁশির মতো শব্দ হওয়া, কাশি, বুকে চাপ অনুভব করা [বুকের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া], শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া এবং স্বল্প মাত্রায় শ্বাস নিতে পারা। এগুলো একদিনে একাধিকবার হতে পারে আবার একসপ্তাহে ধীরে ধীরে হতে পারে। উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর ফুসফুস থেকে কফ তৈরি হতে পারে যা সহজে বের হতে চায় না। হাঁপানির মাত্রা কমে গিয়ে আরোগ্য লাভের সময় থুতু বেরিয়ে আসতে পারে যেটা দেখতে সাদা জলের মতো হয়। এটা সাধারণত ইওসিনোফিলর [শ্বেত রক্ত কণিকা] কারণে হয়। হাঁপানির উপসর্গ সাধারণত রাতে এবং ভোরের দিকে বেশি হতে দেখা যায়। আবার কারো কারো পরিশ্রমসাধ্য কাজ যেমন ব্যায়াম, দৌড় ইত্যাদি করলে শরীর ঘেমে গিয়ে হাঁপানি বেড়ে যেতে পারে। কিছু কিছু হাঁপানি রোগী খুব কমই উপসর্গগুলোতে ভোগেন। আবার অনেকের ক্ষেত্রে ঘন ঘন এবং লাগাতার আক্রান্ত হতে দেখা যায়।


রোগ নির্ণয়

লক্ষণ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত ইতিহাস এবং পিএনটির [পালমোনারি ফাংশন টেস্ট] এবং স্পাইরোমেট্রির সাহায্যে হাঁপানি নির্ণয় করা সম্ভব।


চিকিৎসা

হাঁপানি উপশমের প্রথম ওষুধ হলো ইনহেলার। এটা দু’রকমের হয়। স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি। শ্বাসকষ্টের তাৎক্ষণিক উপশমের জন্য কয়েকরকম ওষুধ ইনহেলারের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়। যেমন- সালবুটামল, সালমেটেরোল এবং ফোরমোটেরোল ।

হাঁপানির আক্রমণ যেন না হয় তার জন্য ব্যবহার করা হয় স্টেরয়েড ইনহেলার। সাধারণত ফ্লুটিকাস্ন ও বুডিসোনাইড স্টেরয়েড ইনহেলার হিসেবে পাওয়া যায়। অ্যালোপ্যাথিতে হাঁপানির চিকিৎসায় স্টেরয়েড ইনহেলার অপরিহার্য।

উপশমকারী দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ ও প্রতিরোধকারী স্টেরয়েড একসঙ্গে একই ইনহেলার বর্তমানে বাজারে পাওয়া যায়। তবে দীর্ঘদিন ব্যবহারে এই সকল ওষুধের কিছু না কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়।

হাঁপানি প্রতিরোধক হিসেবে অন্য যে ওষুধ ব্যবহার করা হয় তার নাম মন্টিলুকাস্ট। এটি শ্বাসনালির প্রদাহ কমিয়ে হাঁপানি আক্রমণের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

তাছাড়া থিওফাইলিন ওষুধ ব্যবহার করা হয়। হাঁপানি আক্রান্ত রোগীর শ্বাসনালির মধ্যে মাংশপেশি সঙ্কুচিত হয়ে পড়লে সেটিকে শিথিল করে দেয় থিওফাইলিন। যার ফলে শ্বাসনালির ভেতরের প্রশস্থতা বৃদ্ধি পায়।

মুখে খাবার স্টেরয়েড, এটি ট্যাবলেট অথবা সিরাপ আকারে পাওয়া যায়। হাঁপানির তীব্র আক্রমণের সময় এটি কয়েকদিন ব্যবহার করতে হয়। 

লেখক : ডায়াবেটোলজিস্ট, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল