গান দিয়ে আমি আমার নিজের পরিচয় তৈরি করতে চাই -অংকন

01 Mar 2022, 01:16 PM সারেগারে শেয়ার:
গান দিয়ে আমি আমার নিজের পরিচয় তৈরি করতে চাই -অংকন

‘বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলা ২০০৯’-এ গ্ৰুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে গোল্ড মেডেল এবং ‘আড়ং ডেইরি চ্যানেল আই বাংলার গান ২০১৫’-তে দ্বিতীয় রানারআপের স্থান অর্জন করেন অনন্যা ইয়াসমিন অংকন। অংশগ্রহণ করেছিলেন ভারতের গানের রিয়্যালিটি শো সারেগামাপাতেও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারেননি বলে কষ্ট পেয়েছিলেন খুব কিন্তু বসে থাকেননি। চল্লিশটিরও বেশি মৌলিক গান রয়েছে তার। গায়কি আর কণ্ঠশৈলীর জাদুতে অল্প সময়ের মধ্যেই জায়গা করে নিয়েছেন অসংখ্য ভক্ত-শ্রোতার হৃদয়ে। আনন্দভুবনের সাথে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন অংকন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শহিদুল ইসলাম এমেল...

আনন্দভুবন : কেমন আছেন।

অংকন : আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।

আনন্দভুবন :  সাম্প্রতিক সময়ে আপনার ব্যস্ততা কী নিয়ে ?

অংকন : এখন বেশি ব্যস্ত নিজের মৌলিক গানগুলোর অডিও রেকর্ডিং এবং মিউজিক ভিডিও’র শুটিং-এর কাজ নিয়ে তাছাড়া ফোক গানের বিভিন্ন প্রজেক্টের কাজ নিয়েও ব্যস্ত আছি। ২০১৯-এর ডিসেম্বরের শেষের দিকে আমার ‘চেংরা বন্ধুয়া’ শিরোনামের গানটি হিট হয়। আরটিভি মিউজিক ইউটিউব চ্যানেলে ‘চেংরা বন্ধুয়া’ গানটি আড়াই কোটির ওপরে ভিউ হয়। গানটি ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।  সম্প্রতি ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ভোমরা’ শিরোনামে একটি গান বেরিয়েছে সেটিরও খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি। আরো কিছু প্রজেক্টের জন্য কাজ চলছে সেগুলো সামনে রিলিজ হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের শো, দেশে এবং দেশের বাইরে স্টেজ শো নিয়ে দারুণ ব্যস্ত আছি।

আনন্দভুবন : সংগীতের শুরুটা হয়েছে কীভাবে ?

অংকন : সংগীতের শুরুটা হয়েছে আমার একদম ছেলেবেলা থেকে আব্বুর কাছে। আব্বুর কাছেই আমার গানের হাতেখড়ি এবং আব্বুই আমার গানের ওস্তাদ। ছেলেবেলায় আসলে খেলতে খেলতেই আমার গান শেখা বলতে গেলে। গানের পরিবেশেই সবসময় থাকতাম। হারমোনিয়াম যখন বাজাতে জানতাম না তখন বসে বসে গান শুনতাম, গান শিখতাম, গলা মেলাতাম- এভাবেই ছেলেবেলা থেকেই আমার গানের শুরু।

আনন্দভুবন : সংগীতের প্রতি আগ্রহী হলেন কীভাবে। পরিবারের কেউ কি সংগীতের সঙ্গে জড়িত আছেন ?

অংকন : পরিবারের সবাই মানে আব্বু, আম্মু, ছোটোভাই সবাই সংগীতশিল্পী। আমি যখন বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই আব্বু-আম্মুর গান শুনে শুনেই গানের প্রতি আগ্রহী হয়েছি।

আনন্দভুবন : ‘আড়ং ডেইরি চ্যানেল আই বাংলার গান ২০১৫’-তে ২য় রানারআপ হয়েছিলেন। সে-সময়ের অনুভূতির কথা জানতে চাই।

অংকন : তখনকার অনুভূতির কথা বলতে গেলে বলতে হবে- তখন আমার মনে হয়েছিল আমি ঠিক যেভাবে স্বপ্নটা দেখেছিলাম সেটা মনে হয় পূরণ হতে চলেছে। আসলে আমি একটা রিয়্যালিটি শো’র মাধ্যমে আমার ক্যারিয়ার শুরু করতে চেয়েছিলাম। ওই শো’র মাধ্যমে আমার স্বপ্নটা পূরণ হয়ে গিয়েছিল। আমি জানতাম রিয়্যালিটি শো’র মাধ্যমে যদি আমার একটা প্লাটফর্ম তৈরি হয় তাহলে আমার যাত্রা বহুগুণে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। আমার একটা প্লাটফর্ম তৈরি হলে- আমার জন্য, আমার ক্যারিয়ারের জন্য মোট কথা আমার স্বপ্ন পূরণের জন্য আরো বেশি সহায়ক হবে। ‘আড়ং ডেইরি চ্যানেল আই বাংলার গান’-এর মাধ্যমে আমার স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে।

আনন্দভুবন : সারেগামাপাতে টিকে থাকতে না পারার কষ্টের কথা বলুন।

অংকন : সারেগামাপা থেকে যখন এলিমেনেট হয়ে গেলাম তখন আমি আসলে  প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছিলাম। আমার থেকে বেশি কষ্ট পেয়েছিল আব্বু। এমন অবস্থা হয়েছিল যে, আব্বু দু’তিনদিন খাবারই খাননি। আমি কষ্ট পেয়েছিলাম ঠিকই তবে ওখান থেকে যে সবার দোয়া এবং পরামর্শগুলো পেয়েছিলাম সেটা পরবর্তীসময়ে আমার ক্যারিয়ারের জন্য অনেক কাজে লেগেছে। বাদ হওয়ার পরে কোনো প্রতিযোগীকে এত কথা সাধারণত বলে না বিচারকেরা। কিন্তু আমাকে যে কথাগুলো বলেছিলেন সেগুলো পরবর্তীসময়ে আমার ক্ষেত্রে সত্যি হয়েছে। সারেগামাপার বিচারকগণ আমাকে বলেছিলেন তুমি ফোক গান নিয়ে কাজ কর। তুমি রিয়্যালিটি শো’র চিন্তা বাদ দিয়ে দাও। তুমি ফোক গান ভালো গাইছ- যাও বাংলাদেশে গিয়ে ফোক গান গাও। ফোক গান নিয়ে তুমি তোমার ক্যারিয়ার তৈরি কর। তারপর আমি বাংলাদেশে এসে দেখলাম যে, আড়ং ডেইরি চ্যানেল আই শুধুই ফোক গানের রিয়্যালিটি শো। তাই সময় নষ্ট না করে আমি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি। তারপর থেকেই আমার ফোক গানের ক্যারিয়ার শুরু। তাছাড়া আমি ছেলেবেলা থেকেই আব্বুর সঙ্গে গিয়ে বিভিন্ন শো’তে অংশ নিতাম। সারেগামাপাতেও খুব আশা নিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু প্লাটফর্মটা আমার জন্য হয়ত ছিল না।

আনন্দভুবন : সংগীতজীবনের একটি বিশেষ স্মৃতির কথা বলুন ?

অংকন : আমি যখন শিশুশিল্পী ছিলাম তখন জাতীয় পর্যায়ে ‘বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলা ২০০৯’-তে অংশগ্রহণ করি। তারপর চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সেই অনুষ্ঠানে আমি যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে গোল্ড মেডেল পাই সেই সময়ের স্মৃতিটা আমার কাছে খুবই মেমোরেবল। আমি কখনো আশা করিনি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হব। আমাকে যখন  গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন এবং গোল্ড মেডেলের জন্য আমার নাম ঘোষণা করল তখন খুবই ইন্সপায়ার হয়েছিলাম। ওইটা ছিল আমার লাইফে বড়ো এচিভমেন্ট। ওই এচিভমেন্টটাই আমাকে আরো বেশি উৎসাহী করে তোলে সংগীতের প্রতি। তখন থেকেই একটি চিন্তা আমার মাথায় ঢোকে আমাকে আরো ভালো করে গান শিখতে হবে এবং ভালো গান গাইতে হবে।

আনন্দভুবন : সম্প্রতি পলাশের সঙ্গে [গামছা পলাশ] চমৎকার জুটি হয়েছেন আপনারা। সে সম্পর্কে কিছু বলুন ?

অংকন : পলাশ ভাইয়ার সঙ্গে আমার বাড়ির পাশে বেতের আড়া দেবর-ভাবির গানটি এত জনপ্রিয়তা পাবে কল্পনাতেও ছিল না। গানটি দেখার জন্য মাঝে মাঝে আমি যখন ইউটিউবে ঢুকি তখন শ্রোতাদের কমেন্ট দেখে বুঝতে পারি আমাদের জুটি কতটা জনপ্রিয়। আমাদের জুটিকে দর্শক পছন্দ করেছে। এটা ভেবে ভালো লাগে যে, অনেকদিন পর লোকগানের কোনো জুটি আবার ফিরে এলো। আশরাফ ইদাস, মমতাজ বেগম একসময় খুবই জনপ্রিয় জুটি ছিলেন। ইউটিউবে একসময় ওনারা অনেক গান গেয়েছেন। এখন আমরা ওনাদের গানগুলো দেখি। অনেকদিন পর লোকগানের কোনো জুটি এলো এবং বর্তমান সময়ে আমরা সেটার প্রতিনিধিত্ব করছি এবং দর্শক আমাদের খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেছে এটাই বড়ো পাওয়া।

আনন্দভুবন : সংগীত নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ?

অংকন : সংগীত নিয়ে ভবিষ্যৎ করিকল্পনা বলতে আমি সংগীতের যে ট্র্যাকে আছি অর্থাৎ ফোক গান- আমার ভালো ভালো কিছু গান করার ইচ্ছা এবং সেই গানগুলো যেন মানসম্মত হয়, মানুষ ভালো বলে, পছন্দ করে, মনে রাখে এরকম কিছু গান করা জরুরি। গান দিয়ে আমি নিজের পরিচয় তৈরি করতে চাই এবং সেটা হবে নিজের একটা আলাদা পরিচয়। সেটা এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই যেন আমার গান দিয়ে মানুষ আমাকে মনে রাখে। অংকন নামে একজন শিল্পী আছে, যার এগুলো গান এবং গানগুলো তাদের খুব প্রিয় এরকম কিছু। মোটকথা নিজের এমন কিছু গান থাকবে যে গানগুলো শুনে মানুষ আমাকে চিনবে।

আনন্দভুবন : আনন্দভুবনকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

অংকন : আপনাকেও ধন্যবাদ, ধন্যবাদ আনন্দভুবনকে।