গরমে শিশুর যত্ন

01 Mar 2022, 01:06 PM শিশুভুবন শেয়ার:
গরমে শিশুর যত্ন

প্রকৃতিতে বসন্ত আসার সঙ্গে সঙ্গে গরম পড়তে শুরু করেছে। গ্রীষ্মকাল আসন্ন। গ্রীষ্মে আরও বেশি গরম পড়বে। অতিরিক্ত গরম সবার জন্যই কষ্টকর। শিশুদের বেলায় কষ্ট আরও বেশি। শিশুরা অনেক বেশি স্পর্শকাতর বলে তারা অতিরিক্ত গরম আবহাওয়ায় সহজে খাপ খাওয়াতে পারে না। তাই বাবা-মায়ের উচিত সব সময় তাদের যত্নের বিষয়ে সচেতন থাকা। গরমে শিশুর যত্ন নেবেন কেমন করে তা জেনে নিন... 


জলবসন্ত হতে পারে

এ সময়টায় শিশুদের জলবসন্ত হয়ে থাকে। এটা সাধারণত ১-৫ বছরের শিশুদের বেশি হয়। তবে চিকেন পক্সের টিকা নেয়া থাকলে রোগটি হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। শরীরে জলবসন্তের গোটা দেখা দিলে শিশুর বিশেষ যত্ন নিতে হবে। তাকে নরম হালকা সুতি কাপড় পরাতে হবে। তরল বা নরম-জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে। বেশি করে পানি পান করাতে হবে। এর সঙ্গে অবশ্যই মায়ের দুধ পান করাতে হবে।


ত্বকে র‌্যাশ বা ঘামাচি হতে পারে

গরমকালে শিশুদের ত্বকে র‌্যাশ হতে পারে। সাধারণত ঘামাচি বা চামড়ার ওপরে লাল দানার মতো ফুসকুড়ি হয়ে থাকে। শিশুকে অবশ্যই পরিষ্কার রাখতে হবে। নিয়মিত গোসল ও পরিষ্কার জামা পরাতে হবে। ফুসকুড়ির জায়গাগুলোতে বেবি পাউডার লাগাতে পারেন। এতে চুলকানি কিছুটা কমে যাবে।


বেশিক্ষণ ডায়াপার না পরিয়ে রাখাই ভালো

প্রতিবার কাপড় বদলানোর সময় শিশুকে নরম ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে পাউডার লাগিয়ে দিতে হবে। অনেক সময় ডায়াপায়ের কারণেও শিশুর কোমল ত্বকে র‌্যাশ হতে পারে। তাই খেয়াল রাখতে হবে, ভেজা ডায়াপার যেন শিশুর গায়ে বেশিক্ষণ না থাকে। ডায়াপার নষ্ট হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তা খুলে নতুন ডায়াপার পরিয়ে দিতে হবে। তবে গরমের সময় বেশিক্ষণ ডায়াপার না পরিয়ে রাখাই ভালো। অনেক সময় র‌্যাশ বেশি হয়ে গেলে ঘা হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।


গরমে পেট খারাপ হতে পারে

গরমকালে শিশুর পেট খারাপ হওয়া একটি সাধারণ ঘটনা। শিশুর পেট খারাপ হলে তাকে ঘন ঘন স্যালাইন পান করাতে হবে। সেইসঙ্গে পানি অথবা ডাবের পানি পান করাতে হবে। একইসঙ্গে তাকে তরল খাবারও দিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত শিশুর পায়খানা স্বাভাবিক না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এ নিয়ম মেনে চলতে হবে।


পানি শূন্যতা যেন না হয় 

খেয়াল রাখতে হবে শিশুর যেন পানিশূন্যতা না হয় এবং তার প্রসাবের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে। এছাড়া শিশুর পায়খানার সঙ্গে যদি রক্ত যায় তবে অবহেলা না করে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। ছয় মাস বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এ-সময় কোনো অবস্থাতেই মায়ের দুধ বন্ধ করা যাবে না। সেইসঙ্গে পানি ও অন্যান্য খাবারও দিতে হবে।


গরমেও ঠান্ডা লাগতে পারে

গরমে শিশুদের ঠান্ডার সমস্যা হতেও দেখা যায়। গরমে অতিরিক্ত ঘামের কারণে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তাই শিশু ঘেমে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তার শরীর মুছে দিয়ে কাপড় বদলে দিতে হবে। গরমে শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। পরিষ্কার রাখতে হবে শরীর ও পরিবেশ। এ সময় ঠান্ডা লেগে শিশুর মামস হতে পারে। মামস অনেক সময় অল্পদিনে সেরে যায়। কিন্তু বেশিদিন গড়ালে শিশুকে এমএমআর ইঞ্জাকশন দেয়া হয়। এছাড়া বিশেষজ্ঞের পরমার্শমতো ব্যবস্থা নিতে হবে।


চুলের দিকে নজর দিতে হবে 

গরমে শিশুর চুলের দিকেও নজর দিতে হবে। গরমে চুলের গোড়া ঘেমে যায়, সঙ্গে ধুলাবালির আক্রমণ তো রয়েছেই। তাই রোগপ্রতিরোধে প্রথমেই শিশুদের চুলের প্রতি বিশেষ যত্ন নিন। অনেক সময় অতিরিক্ত গরমে চুলের ত্বকে খুশকি বা ঘামাচি বের হয়। তাই গরমের শুরুতেই শিশুর চুল ছেঁটে ছোট করে দিতে হবে। এতে চুলের গোড়া ঘেমে গেলেও তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। একবছর বা তার কম বয়সে শিশুদের গরমের সময় মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া ভালো। আর চুল যদি লম্বা রাখতেই হয় তাহলে এর প্রতি আরো একটু যত্নশীল হতে হবে। গোসল করার পর চুল ভালোভাবে মুছে দিন। বড়ো ফাঁকওয়ালা চিরুনি দিয়ে চুল ঠিকভাবে আঁচড়ে দিন। এরপর চুল শুকিয়ে গেলে তা ভালোভাবে বেঁধে দিন। শিশুর চুলে তাদের উপযোগী ও ভালোমানের শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। তাদের জন্য আলাদা চিরুনি ব্যবহার করা উচিত। সপ্তায় দু-দিন শিশুর চুলে শ্যাম্পু করা ভালো। 


আরও কিছু টিপস

* গরমে শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে এবং ধুলোবালি থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখতে হবে

* শিশুকে অবশ্যই সুতি কাপড়ের জামা ও প্যান্ট পরাতে হবে

* বাইরে বের হলে শিশুর জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি সবসময় সঙ্গে রাখতে হবে

* করনাকালে বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরাতে হবে এবং কিছুক্ষণ পরপর সেনিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে দিতে হবে

* ঘেমে গেলে ঘাম মুছে দিতে হবে। ঘাম শরীরে শুকিয়ে গেলে শিশুর ঠান্ডা লাগতে পারে

* যতটা সম্ভব শিশুকে নরম খাবার খাওয়ানো ভালো

* ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে, যেন র‌্যাশ জাতীয় সমস্যা না হয়

* প্রচুর পানি পান করাতে হবে, যেন প্রসাবের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে 

* সদ্যজাত শিশুদের সবসময় ঢেকে রাখতে হবে, যেন শরীর উষ্ণ থাকে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন ঘেমে না যায়।

* গরমের সময় মশা, মাছি, পিঁপড়া ইত্যাদি পোকামাকড়ের প্রকোপ দেখা যায়। এগুলো শিশুর অসুস্থতার কারণ হতে পারে। সবসময় ঘর পোকামাকড় মুক্ত রাখতে হবে