শুদ্ধসংগীতের সঙ্গে থাকতে চাই -ঝিলিক

25 Jan 2022, 03:09 PM সারেগারে শেয়ার:
শুদ্ধসংগীতের সঙ্গে থাকতে চাই  -ঝিলিক

চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ ২০০৮ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকেই সংগীতশিল্পী হিসেবে পেশাগতভাবে যাত্রা শুরু করেন জানিতা আহমেদ ঝিলিক। গান গেয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শ্রোতাপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। ঝিলিকের গানের হাতেখড়ি তার বাবার কাছেই। ক্লাসিকাল, নজরুলসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত, আধুনিক, ফোক সব ধরনের গানেই সমান দখল ঝিলিকের। অসাধারণ গায়কি আর কণ্ঠশৈলীর জাদুতে খুব সহজেই জায়গা করে নিয়েছেন ভক্ত-শ্রোতাদের হৃদয়ে। ঝিলিকের সংগীতজীবনের কাহিনি নিয়ে বিস্তারিত থাকছে এবারের সারেগারে আয়োজনে। লিখেছেন শহিদুল ইসলাম এমেল...

আনন্দভুবন : কেমন আছেন ?

ঝিলিক : এইতো ভালো আছি। সব ভালো চলছে। কনসার্ট নিয়ে ব্যস্ত আছি। কনসার্ট করতে পারছি বলে বেশি ভালো লাগছে।

আনন্দভুবন : বর্তমান সময়ে আপনার ব্যস্ততা কী নিয়ে ?

ঝিলিক : এখন সব শিল্পীরই কনসার্টের মৌসুম। তাই বর্তমান সময়ে ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে কনসার্ট নিয়ে খুব ব্যস্ত আছি। অনেক দিন বন্ধ থাকার পর এখন আবার জায়গাটা ওপেন হয়েছে। আমরা শিল্পীরাও এখন কনসার্ট নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি।

আনন্দভুবন : সংগীতের শুরুটা হয়েছে কীভাবে ?

ঝিলিক : একদম ছেলেবেলা থেকেই। যেহেতু আমার বাবা আব্দুল জলিল একজন সংগীতশিল্পী। যার কারণে সংগীত পরিবেশে বড়ো হয়েছি। আর আমার বয়স যখন পাঁচ-ছয় বছর তখন থেকেই আমি প্রোপারলি গান শিখতে শুরু করেছি।


আনন্দভুবন : শুরুতে আপনি কার কাছে গানের তালিম নিয়েছেন ?

ঝিলিক : শুরুতে আমার বাবার কাছে গানের তালিম নিই। বাবাই আমার ওস্তাদ, প্রথম হাতেখড়ি ওনার কাছেই। তারপর আমি শিখি ওস্তাদ বাসন্তী গোমেজ এবং মনিন্দ্রনাথ রায়ের কাছে। আর এখনো আমি বাসায় বাবার কাছেই শিখছি। আমি ছেলেবেলা থেকেই অনেক কমপিটিশন করে বড়ো হয়েছি। ধরুন, নতুন কুঁড়ি থেকে শুরু করে ওই সময় যেগুলো হতো আরকি। যেমন, আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা জাতীয় পর্যায়ে এরকম বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতাম। গানের মধ্যেই একদম ছোটোকাল থেকে ডুবে থেকেছি বলতে পারেন।

আনন্দভুবন : চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গল্পটা জানতে চাই।

ঝিলিক : চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠে অংশগ্রহণের প্রধান কারণ হচ্ছে রুনা লায়লা এবং সাবিনা ইয়াসমীন মেম। এই দুইজন শিল্পীকে একেবারে সামনাসামনি দেখবো বলে। দুইজন একসঙ্গে বসবে। দুইজনকে একসঙ্গে দেখবো এটা আমার জন্য বড়ো একটা পাওয়া। সেটা চিন্তা করেই সেরাকণ্ঠে নাম দেওয়া। তাছাড়া আমার বাবারও আগ্রহ ছিল। আসলে অনেক দূর যাওয়ার জন্য শুধু নাম দিইনি, ওনাদের দেখারও প্রবল ইচ্ছা ছিল আমার। আমার সেই ইচ্ছা পূরণ হয় তিন-চারটা ধাপ পার হওয়ার পর। আমি ঢাকা থেকে অংশগ্রহণ করি। টপ ফিফটি হওয়ার পর আমরা তাদের সামনে গান গাওয়ার সুযোগ পাই। এরপর দেখলাম যে, আমার পারফর্মেন্স ভালোই হচ্ছিল এবং তারাও আমাকে খুব ভালোভাবে গ্রহণ করছেন। তারপর আমি একসময় টপ সিক্সে চলে যাই। টপ সিক্সে আসার পর আমার কাছে মনে হয়েছে যে, একটু সিরিয়াস হলে হয়ত-বা কিছু করা যেতে পারে। তারপর এভাবেই আসলে চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ ২০০৮-এর চ্যাম্পিয়ন হওয়া।

আনন্দভুবন : ২০০৮ থেকে ২০২১ এই তের বছরের সংগীতজীবনে আপনার সফলতা এবং ব্যর্থতার কথা কিছু বলুন-

ঝিলিক : আমি ব্যর্থতাকে কখনোই কাউন্ট করি না। কারণ, আমি নিজে সবকিছুতে সেটিসফাইড থাকি তাছাড়া আমার চাহিদা খুবই কম। আমি অল্পতেই খুব খুশি থাকি। আমার মনে হয় অল্পতে খুশি থাকা মানুষেরা সবসময় সুখি থাকে। সেইখানে সফলতাই সবসময় কাউন্ট করি। আমি প্রতিদিন এটা চিন্তা করেই খুশি থাকি যে, দুইজন অনন্যসাধারণ শিল্পী তাদের হাত দিয়ে আমার মাথায় যে মুকুট পরিয়েছেন, এটাই আমার কাছে খুব বড়ো একটা ব্যাপার। এটা আমাকে বেশি ইন্সপায়ার করেছে। আর অ্যাওয়ার্ড, পুরস্কার এগুলো তো আসলে উৎসাহের একটা ব্যাপার। কিন্তু এটাই আমার কাছে বড়ো অর্জন এবং ওটাই আমার টার্নিং পয়েন্ট।

আনন্দভুবন : সংগীতজীবনের বিশেষ কোনো স্মৃতি জানতে পারি কি ?

ঝিলিক : নিশ্চয়ই। আমার সংগীতজীবন যেহেতু একযুগ পার হয়ে গেছে তাই অনেক স্মৃতিই আছেÑ তার মধ্যে থেকে বেছে কোনোটা বলা কঠিন। তারপরও বলবো যে, সেরাকণ্ঠের গোল্ডেন বেইজড আমার কাছে অনেক স্মৃতিবহুল। গোল্ডেন বেইজড রাউন্ডে এসে আমি যে গানগুলো গেয়েছি তার জন্য যে কমেন্টগুলো পেয়েছি ওগুলো খুবই স্মৃতিময় হয়ে আছে।

আনন্দভুবন : আপনার প্রিয় শিল্পী ?

ঝিলিক : প্রিয় শিল্পীর তালিকা বেশ লম্বা। কারণ হচ্ছে, আমি বিশ্বাস করি, একেকজন শিল্পীর একেক রকম বৈশিষ্ট্য। কারো সঙ্গে কারো তুলনা হয় না। সেভাবে বলতে গেলে অনেক লম্বা লিস্ট হবে। দেশে রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমীন ম্যামতো আছেনই সঙ্গে কনকচাঁপা ম্যাডামের গান দারুণ ভালো লাগে। সুবির নন্দী স্যার চলে গেছেন। ওনার কাছে আমার শেখারও সুযোগ হয়েছিল। ওনার গানও আমার বেশ ভালো লাগে। ওনার গান শুনেই বড়ো হয়েছি। আর নতুন প্রজন্মের সবার গান ভালো লাগে।

আনন্দভুবন : অবসরে কী করেন ?

ঝিলিক : অবসরে আমি আড্ডা দিতে পছন্দ করি এবং সেই আড্ডাটা আমার পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে। এর বাইরে আমি আড্ডা দিতে পছন্দ করি না। বেড়াতে বলতে আমি যেহেতু গান গাই, তাই গানের সুবাদে বাংলাদেশে প্রায় সব জায়গায় যাওয়ার সুযোগ হয়েছে এবং আমি দেশের প্রায় সব জায়গায়ই ঘুরেছি। তাছাড়া আমার সমুদ্র দারুণ পছন্দ। তাই কক্সবাজার বেড়াতে ভালো লাগে আবার সিলেটও ভালো লাগে। মোটামুটি সব জায়গায়ই আমার ঘুরতে ভালো লাগে।

আনন্দভুবন : সংগীত নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী ?

ঝিলিক : ওভাবে পরিকল্পনা করে আমি কোনো কাজ করি না। কালকে কী কাজ করবো সেটা আমি আজকে ডিসাইড করি। আমার কাছে মনে হয় পরিকল্পনা করে কাজ করা খুব কঠিন। কারণ, কখন কি বদলে যায় আমরা তা জানি না। আমি জাস্ট একটা জিনিস মাথায় রাখিÑ ভালো কাজ করতে চাই, শুদ্ধসংগীতের সঙ্গে থাকতে চাই। আর এমন কিছু করতে চাই- জানি না সেটা আদৌ সম্ভব হবে কি না। কারণ, সবার জীবনে সবকিছু হয় না। এটলিস্ট আমার নামটা যেন মানুষ মনে রাখে এমন কিছু করতে চাই।