বিস্মকর এক পাখি মুনিয়া। ছোট্ট সুন্দর পাখিটি খানিকটা লাজুক প্রকৃতির। আকারে বোধ হয় চড়–ই পাখির সমানই হবে। মুনিয়া বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বাস করে। মুনিয়ারা সাধারণত দল বেঁধে, কখনো-বা জোড়াবেঁধে চলে। নদীর ধারে কাশবনে, ফসলের ক্ষেতে, খোলা মাঠের ঘাসবনে মুনিয়াদের দেখা মেলে। মাটিতে হাঁটতে কষ্ট হয় মুনিয়াদের। তাই তারা লাফিয়ে লাফিয়ে চলে। গাছের ডালে বসে জোড়ায় জোড়ায় গায়ের সঙ্গে গা মিলিয়ে রাত কাটায়। অনেক প্রজাতির মুনিয়া আছে। তবে আমাদের দেশে সাধারণত পাঁচ প্রজাতির মুনিয়ার সাক্ষাৎ মেলে। এর মধ্যে ধলাকোমর মুনিয়া, লাল মুনিয়া, কালো মাথা মুনিয়া বেশি দেখা যায়।
মুনিয়া পাখিরা মাঝারি ঝোপ, বনের ভেতরের পরিষ্কার জায়গা, তৃণভূমি ও ক্ষুদ্র ঝোপে বিচরণ করে। এরা দলবেঁধে চলতে পছন্দ করে। সচরাচর প্রতিটি ঝাঁকে ১০ থেকে ১৫টি পাখি থাকে। মাটিতে লাফিয়ে লাফিয়ে ঘাসের মধ্যে এরা খাবার খুঁজে বেড়ায়। এদের প্রধান খাবার হচ্ছে ধান, কাউন ও শস্যবীজ। তবে, ঘাসবীজ, বাঁশবীজ, বিভিন্ন শাক, লতাপাতা, পোকামাকড়ও খায় এরা। মুনিয়ারা সচরাচর করুণ কণ্ঠে ট্রি-ট্রি-ট্রি, প্রিট বা ব্রিট এমন ধ্বনি করে ডাকে।
মুনিয়ারা কাঁটা ঝোপ, কাশবন অথবা নল খাগড়ার বনে বাসা বাঁধে। শুকনো খড় লতাপাতা বাসা তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে। নতুন সংসারে পাঁচ থেকে ছয়টি ডিম দেয়। ডিমের রং ধবধবে সাদা হয়। ১২ থেকে ১৬ দিনে ডিম ফুটে ছানা বেরিয়ে আসে। মা-বাবা পালাক্রমে ছানাদের খাদ্যেও জোগান আর পাহারা দেয়া। মা মুনিয়া ছানাদের ছয় থেকে সাত দিন বুকে আগলে রাখে। ১৫ থেকে ১৯ দিন বয়সের মাথায় মা-বাবার পাশাপাশি ছানা মুনিয়ারাও উড়ে বেড়ায়।
পুরুষ এবং স্ত্রী মুনিয়া পাখি চেনার উপায় হচ্ছে এদের শরীরের রং। সাধারণত পুরুষ পাখির গায়ের রং স্ত্রী পাখির চাইতে তুলনামূলকভাবে বেশি উজ্জ্বল হয়। অপর দিকে স্ত্রী পাখির গায়ের রং তুলনামূলকভাব কম উজ্জ্বল থাকে। গলার ঘুরানো দাগ পুরুষ মুনিয়া চেনার আরেকটি সহজ উপায়। গলার এই দাগটি গাঢ় রঙের হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক পরিবেশে মুনিয়ারা সাত থেকে আট বছর বেঁচে থাকে। তবে খাঁচায় বন্দি করলে এদের গড় আয়ু বড়োজোর চার বছর। ¡
লেখা : শ্যামল কায়া