ক্লোজআপ ওয়ানে এসেই আমি নোলক বাবু বনে যাই

19 Dec 2021, 02:46 PM সারেগারে শেয়ার:
ক্লোজআপ ওয়ানে এসেই আমি নোলক বাবু বনে যাই

এনটিভির গানের রিয়ালিটি শো ‘ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে রাতারাতি খ্যাতি পেয়ে যান নোলক বাবু। এরপর আবার হঠাৎ করেই অন্তরালে চলে যান প্রতিভাবান এই সংগীতশিল্পী। প্রায় একবছর পর আবার সবার সামনে চলে আসেন নোলক বাবু। তার চলে যাওয়া এবং ফিরে আসার গল্পসহ নানা কথা বলেছেন আনন্দভুবনের মুখোমুখি হয়ে। সেইসব কথার অংশ বিশেষ তুলে ধরা হলো আনন্দভুবনের পাঠকদের জন্য। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শহিদুল ইসলাম এমেল...



আনন্দভুবন : কেমন আছেন ?

নোলক বাবু : আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।

আনন্দভুবন : এই সময়ে আপনার ব্যস্ততা কী নিয়ে ? 

নোলক বাবু : এখন ব্যস্ত আছি রেকর্ডিং এবং মিউজিক ভিডিও-র কাজ নিয়ে। গত মাসে কক্সবাজারে পাঁচটি গানের মিউজিক ভিডিও করলাম। এখন গানের রেকর্ডিং নিয়ে প্রচণ্ড ব্যস্ত আছি। প্রতিমাসে আট-দশটি করে গান রেকর্ডিং হচ্ছে। করোনার কারণে গত প্রায় দু’বছর কোনো স্টেজ প্রোগ্রাম হয়নি। এখন করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিকের দিকে যাচ্ছে। সে-কারণে স্টেজ প্রোগ্রাম কিছু কিছু হচ্ছে। ডিসেম্বরে আমার দশ-বারটি শোয়ের বুকিং হয়ে আছে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে শোগুলো করছি।

আনন্দভুবন : ক্লোজআপ ওয়ানে আসার আগে কোনো সংগীত গুরুর কাছে গানের তালিম নিয়েছেন কি ?

নোলক বাবু : আমি আসলে ওভাবে কারো কাছে গানের তালিম নিই নাই। এলাকায় আমার একজন শুভাকাক্সক্ষী বড়ো ভাই আছেন, তার নাম জাকারুল ইসলাম খান টিপু উনি আমাকে জামালপুরের লোকাল প্রোগ্রামগুলোতে নিয়ে যেতেন। তাছাড়া শিল্পকলা একাডেমীর বিভিন্ন প্রোগ্রাম, পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতেন গান গাওয়ার জন্য। উনি ছেলেবেলা থেকেই গানের ব্যাপারে আমাকে উৎসাহ দিতেন এবং সবসময় বলতেন তুমি অনেক ভালো গান করো। একদিন তুমি বড়ো শিল্পী হতে পারবে।

আনন্দভুবন : ক্লোজআপ ওয়ানে যুক্ত হলেন কীভাবে ?

নোলক বাবু : ক্লোজআপ ওয়ানে যুক্ত হওয়ার একটা গল্প আছে আমার। ওখানে তো রেজিস্ট্রেশন করতে হয় কিন্তু আমি রেজিস্ট্রেশন করতে পারিনি। আমার এক বন্ধু আছে ওর নাম বাবু। ও নোলক বাবু নামে রেজিস্ট্রেশন করেছে। বাবু আমাকে একদিন বলল, আমি ক্লোজআপ ওয়ানে অংশ নিব না। তুই আমার রেজিস্ট্রেশন দিয়ে অংশগ্রহণ কর। তারপর ওর রেজিস্ট্রেশন দিয়েই আমি আবেদন করি। আমার আসল নাম ফরহাদ হোসেন। ক্লোজআপ ওয়ানে এসেই আমি নোলক বাবু বনে যাই।

আনন্দভুবন : এ পর্যন্ত কতগুলো অ্যালবাম বেরিয়েছে ?

নোলক বাবু : এ পর্যন্ত চৌদ্দ থেকে পনেরটি অ্যালবাম বেরিয়েছে আমার।

আনন্দভুবন : কতগুলো ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন ?

নোলক বাবু : প্লেব্যাক করেছি দশ-বারটির মতো ছবিতে।

আনন্দভুবন : সম্প্রতি এইচএম ভয়েস থেকে ‘প্রেমের কারিগর’ নামে একটি মিউজিক ভিডিও বের হয়েছে আপনার মাত্র চার দিনে ভিউ হয়েছে ৪৫ হাজার। সে সম্পর্কে কিছু বলুন ?

নোলক বাবু : হ্যাঁ, এইচএম ভয়েস থেকে ‘প্রেমের কারিগর’ নামে একটি মিউজিক ভিডিও বেরিয়েছে ৪-৫ দিন আগে। গানটা খুব ভালো যাচ্ছে ইনশাআল্লাহ। গানটি লিখেছেন শ্রদ্ধেয় শেখ নজরুল এবং সুর করেছেন ফিদেল নাইম। এইচএম ভয়েসের ব্যানারে গানটি বেরিয়েছে। এইচএম ভয়েস থেকে আমি আরো ৬টি গান করেছি। তার মধ্যে চারটি ইতোমধ্যে রিলিজ হয়েছে। ‘প্রেমের কারিগর’ আমার চার নম্বর গান। আশা করি সবার ভালো লাগবে।

আনন্দভুবন : ক্লোজআপ ওয়ান হওয়ার পর যে তারকাখ্যাতি পেয়েছিলেন সেটা কী ধরে রাখতে পেরেছেন, না কি ব্যর্থ হয়েছেন ?

নোলক বাবু : চেষ্টা করেছি ধরে রাখার জন্য। আসলে ক্লোজআপ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মাঝখানে আমি প্রায় একবছর দেশের বাইরে ছিলাম। তো একবছর দেশের বাইরে থাকার কারণে মিডিয়ায় আমার একটা গ্যাপ সৃষ্টি হয়েছিল। দেশে আসার পর আমি এখন নিয়মিত কাজ করছি। দেশে এসেছি সাত বছর হলো। এই সাত বছর যাবৎ আমি একটানা কাজ করে যাচ্ছি। আমি নিয়মিত বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের গানের অনুষ্ঠানগুলো করছি পাশাপাশি অডিও রেকর্ডিং করছি। এ পর্যন্ত আমি সাড়ে তিনশ’ মৌলিক গান করেছি। সবকিছু মিলিয়ে অবশ্যই ধরে রেখেছি বিধায় এখন পর্যন্ত টিকে আছি। আর টুকটাক ভুল তো মানুষের থাকেই। সেই ভুলগুলোর কারণেই শিখেছি।

আনন্দভুবন : দেশের বাইরে কোথায় ছিলেন ?

নোলক বাবু : আমি দেশের বাইরে ইংল্যান্ডে ছিলাম প্রায় একবছর। ওখানে আমি একটি কনসার্টে অংশগ্রহণ করতে যাই। কনসার্ট শেষ করে আমি দেশে আসি। তখন আমাদের দেশের পরিস্থিতি খুব একটা ভালো ছিল না। দেশে তখন বিএনপি, হেফাজত ইসলামের আন্দোলন চলছিল যার কারণে পাঁচ-ছয় মাস সে-রকমভাবে স্টেজ প্রোগ্রাম হয়নি। আমার ভিসার মেয়াদ ছিল তাই আমি আবার লন্ডনে চলে যাই। ওখানে গিয়ে আমি দুটো অ্যালবামের কাজ করি। দুটো অ্যালবামের সুর আমি নিজে করেছি। দুটো অ্যালবামের একটি বের হয়েছে জি সিরিজের ব্যানারে অন্যটি বের হয়েছে লেজার ভিশনের ব্যানারে। আর ওখানে আমি একবছরে পঞ্চাশ থেকে ষাটটি স্টেজ প্রোগ্রাম করেছি। অ্যালবাম দুটো করতেই আমার তিন-চার মাস সময় লেগে যায়। এক বছর কেমন করে চলে গেল আমি বুঝতেই পারিনি।

আনন্দভুবন : এই যে আপনি একবছর দেশের বাইরে ছিলেন, তাতে কি আপনার ক্যারিয়ারের কোনো ক্ষতি হেেছ বলে আপনি মনে করেন ?

নোলক বাবু : হ্যাঁ, অবশ্যই ক্যারিয়ারের ক্ষতি হয়েছে। আসলে আমি তখন বুঝতে পারিনি। ক্ষতি হয়েছে এ কারণে, আমি তো দেশের শিল্পী। বিদেশের শিল্পী না। বিদেশে হয়ত আমি বিভিন্ন প্রোগ্রাম করেছি সেটা তো দেশের মানুষ দেখেনি। যার কারণে অনেকেই মনে করেছেন আমি হারিয়ে গিয়েছি। গান-বাজনা ছেড়ে দিয়েছি। এরকম একটা ধারণা তখন অনেক শ্রোতার মধ্যে সৃষ্টি হয়েছিল। হওয়াটাই স্বাভাবিক। তারপর আমি দেশে এসে সেই ধারণা পাল্টে দিয়েছি আমার কাজের মাধ্যমে এবং মিডিয়ার মাধ্যমে। তারপরও একটা প্রভাব কিন্তু থেকেই যায়। একবছর যদি আমাকে কেউ টেলিভিশনে না দেখে, পত্র-পত্রিকায় না দেখে তাহলে সঙ্গত কারণেই সবাই ভেবে নেবে নোলক বাবু বুঝি আর গান করে না। এই জিনিসটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছে। এটা আমি তখন বুঝতে পরিনি। বুঝতে পারলে এত লম্বা সময় আমি বিদেশে থাকতাম না।

আনন্দভুবন : তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন সেই ক্ষতিটা এখন কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছেন ?

নোলক বাবু : ইনশাআল্লাহ। অবশ্যই কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।

আনন্দভুবন : সংগীতজীবনের একটি বিশেষ স্মৃতির কথা বলুন-

নোলক বাবু : সংগীতজীবনে আমার বিশেষ স্মৃতি হচ্ছে- আমি যখন ক্লোজআপ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন হলাম। চ্যাম্পিয়ন হিসেবে যখন আমার নাম ঘোষণা করা হয় তখন আমি স্টেজে কান্না করে দিয়েছিলাম। আমি যতদূর জানি আমার সঙ্গে সেদিন সারাদেশের মানুষ কেঁদেছিল। ওই মুহূর্ত আমার কাছে বিশেষ স্মৃতি হয়ে আছে।

আনন্দভুবন : সংগীত নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী ?

নোলক বাবু : আমি যেহেতু গানের মানুষ তাই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও গান ঘিরেই। আমি সারাজীবন ভালো ভালো গান গেয়ে যেতে চাই। দেশের মানুষ আমাকে বড়ো আশা নিয়ে শিল্পী বানিয়েছে। তাদের আশা পূরণ করতে চাই। ভবিষ্যতে ইচ্ছে আছে আমি নিজেই গানের কম্পোজিশন করব। ইতোমধ্যে আমি নিজে সুর করছি। প্রায় চল্লিশ-পঞ্চাশটি গানে সুর করেছি। এর মধ্যে কিছু গান প্রকাশও হয়েছে। খুব শিগগিরই আমি একটি স্টুডিও করব।

আনন্দভুবন : আনন্দভুবনকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

নোলক বাবু : আপনাকেও ধন্যবাদ, ধন্যবাদ আনন্দভুবনকে। আমার জন্য দোয়া করবেন।