গদ্য কবিতার নাম হারিকেন -মো. এহসানুল বারী

19 Dec 2021, 02:13 PM অন্যান্য শেয়ার:
গদ্য কবিতার নাম হারিকেন -মো. এহসানুল বারী

সালটি ১৯৫৫। আমাদের বাড়িতে সব ঘরের জন্য হারিকেন।

১০ বৎসর পর আমি অনেক বড়ো হলাম। কেন যেন বাসার অনেক কাজ আমি করতাম।

আর একটু বড়ো হলাম। সব কাজ আমি করি, শখের বসে। আনন্দের সাথে গোরুকে খাবার দিতাম। ঘাস, খড় কিনে আনতাম। কেটে কেটে গোরুকে দিতাম। খুব আনন্দ পেতাম।

হারিকেন পরিষ্কার করা যেন আমারই কাজ। ৪টি হারিকেন। নাম তার বায়েজিদ। চিমনি বাদুর মার্কা। বাদুর মার্কা চিমনি ছাড়া চলবেই না। তাও সাদা হতে হবে। আমিই কিনে আনতাম। সলতে ভরাতাম। কাঁচি দিয়ে কেটে সমান করতাম। চিমনি সাবান দিয়ে ধুয়ে শুকাতাম। কখনো কখনো ছাই দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করতাম। কখনো মুখের ভাপ দিয়ে পরিষ্কার করতাম। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত এভাবেই হারিকেন দিয়ে চললাম। চোখে যাতে না লাগে, এজন্য পোস্ট কার্ড দিতাম চিমনিতে

অনেক সময় মিছেমিছি বলতাম, ‘কেরোসিন শেষ। হারিকেন নিভে যাচ্ছে।’ মা বলতেন, ‘যাও সবাই ঘুমিয়ে পড়।’ দৌড়ে বিছানায় যেতাম। ১৯৬৫ সালে বাসায় বিদ্যুৎ এলো। লাল আলো। ’৬৫-এর যুদ্ধের সময় ব্ল্যাক আউট হতো। আমরা ভাইবোন মিলে ঘরের ভ্যান্টেলেটরে কাগজ লাগিয়ে দিতাম। যাতে বাইরে আলো না যায়। আলো দেখা গেলে জরিমানা হবে। ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের এক আত্মীয় তাছিজুল, আমাদের বাসায় থাকতেন। টেলিগ্রাফ অফিসে চাকরি করতেন। তিনিও নীল রঙের একটি বায়েজিদ হারিকেন কিনেছিলেন। তিনি হারিকেনটার খুব যত্ন করতেন। 

যুদ্ধের শুরুর মুহূর্তে আমরা শহর ছেড়ে পালাচ্ছি। তাছিজুলও আমাদের সাথে। গোরুর গাড়ি চলছে- তাম্বুলপুর। সঙ্গে হারিকেন হাতে তাছিজুল। ১১ দিনে বাড়ি পৌঁছেছিলাম। তাছিজুল হারিকেন ছাড়েনি।

ঢাকায় এলাম ১৯৭৯ সালে। তখনও হারিকেন। লোড শেডিং। অন্ধকার। নিউমার্কেটে গেলাম। চার্জার লাইট কিনব বলে। সিলেটের দোকানী বললেন চার্জার দিয়ে করবেন কী ? লণ্ঠন লইয়া যান। লণ্ঠন কিনলাম। হারিকেন-এর ডাকনাম ছিল লণ্ঠন।

এক সময় লোড শেডিং ভয়ঙ্কর অবস্থা ধারণ করল। বাজারে কেরোসিন নেই। প্রতিবেশী মাহফুজ ভাইয়ের সঙ্গে বিকালে হারিকেন নিয়ে রায়ের বাজারে গেলাম। গিয়ে দেখলাম, কেরোসিনের জন্য বিশাল লাইন। প্রায় ২ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ২টি হারিকেনের কেরোসিন কিনে বাসায় ফিরলাম।

এখন আর হারিকেন নেই। বিদ্যুৎ-এর অভাব নেই। কালেভদ্রে লোড শেডিং হয়। IPS চলে। কিন্তু হারিকেন নেই। একটা হারিকেন কিনতে চাই। কয়েকদিন আগে জুয়েলকে বলেছি। বায়েজিদ হারিকেন কিনতে। নাতিদের দেখাব। ছাদে টানিয়ে রাখব। বারবিকিউ করব। হারিকেন নাতিরা দেখবে। অনেক খোঁজাখুজির পর কল্যাণপুরের একটি দোকানে হারিকেন মিলল...