সংখ্যায় আমি বিশ্বাসী নই -লাবণী

20 Dec 2020, 03:50 PM সারেগারে শেয়ার:
সংখ্যায় আমি বিশ্বাসী নই -লাবণী

সংগীত পরিবারে বেড়ে ওঠা। বড়োবোন প্লেব্যাক জগতের প্রথিতযশা কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ রহমান স্বীকৃতি’র পথ অনুসরণ করে তিনিও আজ প্রতিষ্ঠিত। তবে প্লে ব্যাকে থিতু না-হয়ে ফোক আর নজরুলসংগীতের ওপর সমানে গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিশেষ করে দেশের বাইরে কনসার্টগুলোতে বরাবরই তিনি ফোক দিয়ে মাতিয়েছেন। বলছি মমতাজ রহমান লাবণীর কথা, ইতোমধ্যে তিন শতাধিক মৌলিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। সংগীত ও সংগীত নিয়ে এ প্রজন্মের গুণী এই কণ্ঠশিল্পীর ভাবনা নিয়ে ‘আনন্দভুবন’র আড্ডায় প্রকাশ পেয়েছে লাবণীর একান্ত ভাবনাগুলো।

হালজামানার তুলনায় প্রচারে সহজেই গা ভাসান না, কিন্তু কেন ? জবাবে লাবণী বলেন, “ওটা আমাকে দিয়ে কখনোই হবে না। কেন হবে না সেটা বলব না, শুধু বলব, হবে না। যখন কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ি তখনই হয়নি এখন তো আমি সংসারী। একজন মাও। তাই নিজেকে একটু আড়ালেই রাখতে চাই।”

তাই বলে প্রচারের আলো থেকে দূরে থাকলে কি চলবে ? স্মিত হেসে, “তা কেন হবে এই তো চলে এলাম আড্ডা দিতে। যদি এখান থেকে কিছু প্রচার আসে তো মন্দ কি। সেটা তো আর চেয়েচিন্তে হবে না। আপনাদের নিঃশর্ত ভালোবাসা থাকলেই হবে। ওতে আর যাই থাকুক, দোষের কিছু তো নেই।”

বড়োবোন স্বীকৃতিকে দেখেই কি গানের জগতে আসা ? লাবণী, “ঠিক তা নয়। একটু পেছনের কথা বলতে হয়। আমার নানার বাড়ির দিক থেকে আমরা সাংস্কৃতিক আবহে বড়ো হয়েছি। আমার মামারা, মা-খালারা গাইতেন তাদের পথে ধরেই চলেছি আমরা সব ভাইবোন। যেহেতু আমি সবার ছোটো বড়োরা গাইতেন, আমি শুনতাম। কখনো তাদের মতো করে গাইবার চেষ্টাও করতাম। এভাবে চলে আসা। যেহেতু আপনারাই বলেন, গলাটা মন্দ নয় তাই গানেই থিতু হওয়া এই যা।”

বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে লাবণী বলেন, “গত বছর কৃষ্ণকলি টেলিফিল্মের জন্য একটি টাইটেল সং করেছি। এরপর কিছুদিন আগে বাণিজ্যিক ছবির সাড়া জাগানো নির্মাতা মনতাজুর রহমান আকবরের ‘আয়না’ ছবির আইটেম সংয়ে কণ্ঠ দিয়েছি। কিছুদিন আগে একটা ইউটিউব চ্যানেল খুলেছি সেখানে প্রকাশ পেয়েছে আমার গাওয়া ‘তুই ছাড়া আর কি আছে জীবনে’ শীর্ষক একটা ফোক গান। এটির সুর ও গীত রচনা করেছেন গোপাল দাস। আর সংগীতায়োজন করেছেন অমিত চ্যাটার্জি। রূপঙ্কর বাগচীর সঙ্গে ‘ছু্ইঁ ছুঁই’ শীর্ষক গানটি বেশ সাড়া ফেলেছে। এটির গীত রচনা করেছেন কাজী শাহীন। সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন রবিন ইসলাম। এছাড়া মৌলিক কিছু আধুনিক ও ফোক ধাঁচের গানের সংগীতায়োজন চলছে। এ গানগুলো লিখেছেন ফারুক খান। সুর করেছেন বড়োবোন শাহনাজ রহমান স্বীকৃতি।”

বড়োবোনের সুরে গাওয়ার অনুভ‚তি প্রসঙ্গে লাবণী জানান, “খুব ভালো অনুভব করছি। ছোটোবেলায় তার অনেক গান শুনে শুনে মুখস্থ করেছি। সেই আপার সুরে গাইবো এ আমি স্বপ্নেও ভাবিনি কখনো। এটা দারুণ অভিজ্ঞতা এবং আনন্দের। আপা হচ্ছেন সত্যিকারের গানের মানুষ, চমৎকার সুর করেছেন। আমি একটু খুঁতখুঁতে স্বভাবের, সে কারণে সুরটা আমার ধাঁচেরই করেছেন।”

“সেই পাঁচ বছর বয়স থেকেই স্টেজ পারফর্ম করি। তাই কখনো আড়ষ্ট হইনি কোথাও। জেলা, অঞ্চল বিভাগীয় পর্যায়ে পারফর্ম করে পেয়েছি প্রচুর পুরস্কার। সব বোনেরাই তো গানের সঙ্গে যুক্ত। তাই নওগাঁর বাড়িতে পুরস্কারে ঘর বোঝাই।”

“পেশা হিসেবে গান বেছে নেওয়ার পেছনে স্বীকৃতি আপার অবদান অনেক। যখন দেখলাম স্বীকৃতি আপু খুব কাজ করছে, তখন আপুই বললেন, ‘তোর কণ্ঠটাও কিন্তু দারুণ, তুই চাইলেই গানটা চালিয়ে যেতে পারিস।’ এরপর আর দ্বিতীয়বার ভাবিনি। সত্যি তাই হয়েছে, গান গেয়ে ভালোই আছি।”

কিন্তু আপনার সমসাময়িকেরা কিন্তু হরহামেশাই প্রচারের কাটতিতে নিজেদের ভিউ বাড়িয়ে যাচ্ছেন। স্বভাবসুলভ হাসিতে ছোটো উত্তর লাবণীর, “ভাইয়া গান আমার কাছে প্রার্থনার, গান শোনাতে চাই দেখাতে নয়, এ নিয়ে বাড়তি চাপ নিতে চাই না।’ তবে হ্যাঁ এক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মী ভাইদের ভ‚মিকা থাকা চাই। তারা চাইলে গান ভাইরালমুখী না হয়ে শ্রোতামুখী হতে পারে তখন হয়ত আমাকে আর এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে না।” যোগ করেন লাবণী।

সমসাময়িকদের তুলনায় গানের সংখ্যাও কিন্তু কমÑ “অস্বীকার করছি না, তবে আমার প্রচুর মৌলিক গান রয়েছে। এর বাইরে শুদ্ধ গানের চর্চার জন্য রবীন্দ্র-নজরুল-লালনসহ বাংলাদেশের ফোক গান গেয়ে যাচ্ছি। এখানে সংখ্যায় আমি বিশ^াসী নই, শুদ্ধতায় শ্রোতাদের মুগ্ধ করতে চাই। তবে হ্যাঁ, বয়সের তুলনায় গানে একটু যে পিছিয়ে নেই তাও কিন্তু বলছি না। এর পেছনের কারণও আমার মা। যেহেতু বাবা গত হয়েছেন অনেক আগেই, তাই মায়ের ভাবনা ছিল ইন্টারমিডিয়েট শেষ করেই বিয়ে থা দিয়ে মুক্ত হবেন। তার যুক্তি ছিল, ‘পড়াশোনা শেষ করে সংসারী হবে এরপর শ^শুরবাড়ির মানুষ যদি চায়, তবে তুমি গান গাইবে।’ মায়ের কথার অবাধ্য হইনি আমরা কেউ-ই। সেদিকে নজর দিতে গিয়ে পেশাদার হয়ে উঠতে সময় লাগল। তবে বিয়েটা কিন্তু ইন্টারমিডিয়েট নয়, মাস্টার্স শেষ করেই করেছি। বিয়ের পর রেজাল্ট হয়েছে।”

শ^শুরবাড়ি থেকে গানের জন্য সাপোর্ট পাচ্ছেন ? ‘অবশ্যই’। একবাক্যে জানালেন লাবণী। বললেন, “আমি খুব লাকি। খুব সহযোগিতা করছেন সবাই। তাছাড়া দেশ বা দেশের বাইরে যখন শোয়ের আয়োজন চলে তখন ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয়, সংসার তখন বর মশাই সামাল দেন।”

“ ‘সুলতান’ ছবির টাইটেল সংয়ে প্রথম প্লে ব্যাক করি। শ্রদ্ধেয় আলাউদ্দিন আলী আমাকে সুযোগ করে দিয়েছিলেন। এরপর অনেক গানের টাইটেল আইটেম সং গেয়েছি। তবে আমি নির্দিষ্ট ছকে বন্দি হতে চাইনি কখনো কণ্ঠে যদি বৈচিত্র্য থাকে, আত্মবিশ^াস থাকে তবে সব জায়গাতেই গানের সুযোগ থাকা উচিত।” যোগ করেন লাবণী।

আড্ডার শেষে ব্যক্তি লাবণীর পছন্দ নিয়ে প্রশ্ন করতেই এক নিঃশ^াসে বলে দেন- “সাবিনা ইয়াসমীন, রুনা লায়লা তার খুব প্রিয়। তবে, বড়োবোন স্বীকৃতির গান আমাকে আনন্দ দেয়, অনুপ্রেরণা জোগায়।”

“ফেরদৌসী রহমানের গাওয়া ‘গান হয়ে এলে, মন যেন বলে’, সাবিনা আপার ‘এই মন তোমাকে দিলাম...’ তন্ময় হয়ে শুনি।”

প্রিয় রং যেকোনো ডিপ রংই তার প্রিয় তবে মেরুনের প্রতি একটু দুর্বলতা বেশি।

প্রিয় চলচ্চিত্র বলতে “ছোটোবেলায় পরিবারের সঙ্গে নওগাঁ সিনেমা হলে দেখা ‘ছুুটির ঘণ্টা’। এখনও দেখলে চোখের কোণে পানি চলে আসে।” 

মাছে-ভাতে বাঙালি লাবণীর প্রিয় ব্যক্তিত্ব বাবা-মা। হ

লেখা : আহমেদ তেপান্তর