‘ধরিত্রী শ্রেষ্ঠা’ শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা -ড. কবিরুল বাশার

19 Oct 2021, 03:00 PM অন্যান্য শেয়ার:
‘ধরিত্রী শ্রেষ্ঠা’ শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা -ড. কবিরুল বাশার

পরিবেশ সংরক্ষণ ও কার্বন নিঃসরণ কমানোর ওপর বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দানকারী রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে অন্যতম প্রধান বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশকে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার সব পরিকল্পনা শেখ হাসিনা ডেল্টা প্ল্যান-২১০০-এ নিয়েছেন। পরিবেশ বিষয়ক কর্ম-পরিকল্পনা ও কর্মসূচির জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রসংশিত হয়েছেন। পরিবেশগত ভারসাম্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলস্বরূপ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। জলবায়ুর ক্ষতি প্রশমন এবং অভিযোজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে অ্যাডাপটেশন লিডার হিসেবে আবিভর্‚ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ও সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও এ অর্জনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছেন।

বস্তুত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় তখন দেশে বিদেশে প্রাকৃতিক পরিবেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচ্য বিষয় ছিল না। ওই বাস্তবতায় দেখা যায়, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিবেশের বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে সচেতন ছিলেন এবং পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের বিধ্বস্ত অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ও অগ্রগতি এবং মানুষের জীবন রক্ষা ও তাদের জীবনমানের অব্যাহত উন্নতির জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা ও উন্নয়নের দিকেও নজর দেওয়ার বিষয়টি তিনি অনুধাবন করেছিলেন।

প্রকৃতি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বন্যপ্রাণীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের অত্যাচার-আক্রমণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বন্যপ্রাণীর পারিপার্শ্বিকতা ক্রমশ প্রতিক‚ল হচ্ছে। তাই ১৯৭৩-এর ১৭ই মার্চ বন্যপ্রাণীর সুরক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বন্যপ্রাণী [সংরক্ষণ] আদেশ ১৯৭৩ জারি করা হয়। পরবর্তীসময়ে এই আদেশটি দুই দফা সংশোধন করে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী [সংরক্ষণ] আইন ১৯৭৪ [সংশোধিত] প্রণয়ন করা হয়। বঙ্গবন্ধু বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের লক্ষ্যে যে পথ দেখিয়েছিলেন সেই পথ সঠিকভাবে অনুসরণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। পরিবেশ দূষণরোধে বর্তমান সরকার বিশ্বব্যাংকের সাথে সৃজনশীল, পরিবেশবান্ধব টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহারের লক্ষ্যে সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ শিরোনামের প্রকল্পের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক [এসডিএসএন] দারিদ্র্য দূরীকরণ, পৃথিবীর সুরক্ষা এবং সবার জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের সঠিক পথে অগ্রসরের জন্য সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।

ইউনেস্কো ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-কে ‘শান্তিবৃক্ষ’ সম্মাননা প্রদান করে। ‘শান্তিবৃক্ষ’ সম্মাননা তুলে দেওয়ার সময় ইউনেস্কোর প্রধান ইরিনা সেকোভা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন সাহসী নারী। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয়ের মারাত্মক ঝুঁকি হ্রাসে বাংলাদেশ তার অবস্থান থেকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আর এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশ সুরক্ষায় সবধরনের উদ্যোগ ও কার্যক্রম গ্রহণ করছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পরিবেশের ব্যাপারে কোনো ধরনের ছাড় দিতে নারাজ। বন, নদী-খাল দখলসহ পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন যেকোনো শক্তির বিরুদ্ধে তিনি তার কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করেছেন সবসময়। বঙ্গবন্ধু কন্যা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন যে, ধরিত্রী সবুজ থাকলে মানুষের মন-প্রাণ সবুজ থাকবে-আর মানুষের মন সবুজ থাকলে তার জীবনীশক্তি, কর্মপন্থা ও উদ্যম বহুগুণে বেড়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা আদায়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে জোরালো দাবি তুলে ধরতে সচেষ্ট থেকেছেন এবং থাকছেন সবসময়। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে এ বিষয়ে বিশ্বের জনমত তৈরি করেছেন এবং বিশ্ব সভায় পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে বাংলাদেশের ক্ষতির বাস্তবসম্মত চিত্র তুলে ধরেছেন, যা বিশ্বে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।

পরিবেশ পরিচর্যা, সংরক্ষণ ও সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দেশের স্বার্থ সর্বোচ্চ বিবেচনায় রেখে তিনি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে যার যার জায়গা থেকে কাজ করে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। পরিবেশ বাঁচলে জীব ও মানুষ বাঁচবে- আর মানুষ বেঁচে থাকলে দেশও স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির আলোকে পরিবেশকে বাদ দিয়ে উন্নয়ন চিন্তাও করা যায় না। অর্থাৎ পরিবেশ ও মানুষ একটি আরেকটির পরিপূরক।

দেশরত্ন শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম হলো পরিবেশ সুরক্ষা। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় গৃহীত উদ্যোগের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসঙ্ঘের ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার প্রাপ্তি বিশ্ব দরবারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এনে দিয়েছে অনন্য স্বীকৃতি- তাকে নিয়ে গেছে অন্য এক উচ্চতায় যেখানে তার তুলনা তিনি নিজেই। একই বছর বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘পলিসি লিডারশিপ’ ক্যাটাগরিতে জাতিসঙ্ঘের পরিবেশ বিষয়ক এই সর্বোচ্চ পুরস্কারের জন্য বেছে নেওয়া হয়। প্রতিবেশগতভাবে ‘নাজুক অবস্থায় থাকা’ বাংলাদেশে জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের গৃহীত সুদূরপ্রসারী নানা পদক্ষেপ, জলবায়ু ও পরিবেশ উন্নয়ন এবং জলবায়ুগত পরিবর্তনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তাকে এই ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। এই সম্মাননা প্রাপ্তির পর বিশ্বে তাকে গণ্য করা হয়েছে বিশ্ব পরিবেশের বন্ধু হিসেবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ যে জলবায়ু সংক্রান্ত কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয় তা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম এমন সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আর বাংলাদেশই প্রথম দেশ যে তার নিজস্ব তহবিলে বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড করেছে। ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২৪০০ কোটি টাকা জলবায়ু পরিবর্তন খাতে বরাদ্দ রাখার ঘোষণা ও তার সফল বাস্তবায়ন দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, বনাঞ্চল আর বন্যপ্রাণিসম্পদ রক্ষার লক্ষ্যে ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়নে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। পরিবেশের সার্বিক উন্নয়নে ‘ধরিত্রী শ্রেষ্ঠা’ শেখ হাসিনা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কঠোরভাবে মনিটরিং-এর ব্যবস্থাও করেছেন। এর ফলে দেশের পরিবেশের চিত্র পাল্টেছে। জানা যায়, ২০১৪-১৫ সালে দেশের বনাঞ্চল ১৭.০৮ শতাংশে উন্নীত হয়। উল্লেখ্য, ২০০৫-০৬ খ্রিষ্টব্দে বনাঞ্চলের পরিমাণ ছিল ৭ থেকে ৮ শতাংশ।

শেখ হাসিনার আরো একটি যুগোপযোগী উদ্যোগ হলো সামাজিক বনায়ন। এর মাধ্যমে দেশের গ্রাম ও শহরে গাছ লাগানো এবং সেগুলো বড়ো করে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে বছরে একটি ফলজ, একটি বনজ ও একটি ঔষধি গাছ লাগানোর জন্যে তার উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন দেশবাসী যা বর্তমানে দেশের মানুষের মধ্যে সামাজিক আচারে পরিণত হয়েছে। আর এই উদ্যোগ আজ পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও অনুসৃত হচ্ছে।

২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ‘ধরিত্রী শ্রেষ্ঠা’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫ তম জন্মদিন উদযাপিত হয়। তাঁর জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাই। পরিবেশ উন্নয়নের সাথে সাথে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে তাঁর সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। 

লেখক : অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়