অনন্যা অর্থ অদ্বিতীয়া। নামের মধ্যেই একটি সাফল্যের সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে। যদিও অনন্যা অকপটে স্বীকার করলেন নামের প্রতি এখনো সুবিচার করতে পারেননি তিনি, তবে সকলের দোয়া ও ভালোবাসায় নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারবেন বলে আশাবাদী ২০১৯-এর মিসেস ইউনিভার্সের প্রথম রানারআপ অনন্যা সাহা, অনেকটা তৃপ্তির ঢেকুর না তুলেই কথাগুলো বলছিলেন তিনি। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...
অভিনয় করার স্বপ্নটা দেখেছিলেন অনেক আগেই। টেলিভিশনে যখন নাটক, সিনেমা কিংবা বিজ্ঞাপনচিত্র দেখতেন তখন অনন্যার খুব ইচ্ছে হতো অভিনয় করার। কিন্তু স্বপ্নের কথা কাউকে বলেননি। তবে নাচ শিখতেন ছোটো থাকতেই। অনন্যার মা শিখা রায়ও চাইতেন মেয়ে ভালো নাচ শিখুক, সেই চিন্তা থেকেই অনন্যাকে ভর্তি করে দেন নাচের স্কুলে। শুধু তাই নয়, নাচের ক্লাশে নিয়ে আসার কাজটি তিনিই নিয়মিত করতেন। স্কুল মিস করলেও নাচের ক্লাশ কখনো মিস করতেন না অনন্যা। নাচতেনও ভালো। বিটিভিতে প্রচারিত পদ্মকুঁড়িতে অংশগ্রহণ ছাড়াও স্কুল প্রতিযোগিতায় নেচে প্রশংসাও কুড়িয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে অনন্যা বলেন, আমি ছেলেবেলা থেকে নাচ শিখতাম। মা আমার নাচের জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। মিডিয়ার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ ছিল না। একটা পর্যায়ে এসে মনে হয়েছে আমার মিডিয়ায় কিছু একটা করা দরকার। এটার জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম দরকার। আমি যেহেতু ম্যারিড নিজেকে সবার কাছে তুলে ধরার জন্য মিডিয়ায় আসা। বিবাহিত মেয়েরা বেশিরভাগই গৃহিণী হয়ে যায়। অনেকে আবার বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছে। আমারও ইচ্ছে হলো ঘরে না বসে থেকে কিছু একটা করি। হঠাৎ একদিন দেখি মিসেস ইউনিভার্সের একটি বিজ্ঞাপন। সেটা দেখে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে রেজিস্ট্রেশন করি। আমার স্বামী, মা, শাশুড়ি ও অন্যান্য সদস্যরা অনেক সার্পোট করেছেন আমাকে। প্রতিযোগিতায় প্রথম রানারআপের মাধ্যমে আমার স্বপ্নের প্রথম ধাপটি পূরণ হয়।
সাধারণত সবাই বিয়ের আগেই মিডিয়ার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। কিন্তু অনন্যার বেলায় ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা। বিয়ের পর তিনি মিডিয়ায় এসেছেন, আর এখানে কাজ করার ব্যাপারে তাকে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট দিচ্ছেন তার স্বামী ও পরিবার। বিয়ের আগে মিডিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত না হওয়ার কারণ সম্পর্কে অনন্যা বলেন, সেইসময় ইচ্ছে থাকলেও উপায় ছিল না, মূলত পড়াশোনার ক্ষতি হবে ভেবে কাজ করা হয়ে ওঠেনি। এখন যেহেতু কলেজ জীবন শেষ করে ভার্সিটিতে পড়ছি, পড়াশোনার তেমন চাপ নেই, তাই এই সময়ে এসে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছি। সবার সহযোগিতা পেলে অবশ্যই ভালো কিছু করতে পারব।
মিসেস ইউনিভার্স হওয়ার পর অনন্যা একাধিক নাটকে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। এরমধ্যে দুটি নাটক রাহাত মাহমুদের পরিচালনায় প্রিয়তমা ও মর্নিংওয়াক নাটক দুটিতে অভিনয় করে নিজের জাত চিনিয়েছেন তিনি। প্রিয়তমা নাটকে সহশিল্পী ছিলেন সজল। মর্নিংওয়াক নাটকে সহশিল্পী ছিলেন ইরফান সাজ্জাদ।
অনন্যা এখন অনার্সে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। এখন পরীক্ষা চলায় পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন, আপাতত খুব একটা কাজ করছেন না, তবে গ্যাপে গ্যাপে ভালো কাজ পেলে করবেন বলে জানান তিনি।
বড়োপর্দায় কাজ করা প্রসঙ্গে অনন্যা বলেন, সবারই স্বপ্ন থাকে বড়োপর্দায় কাজ করার, আমিও এর বাইরে নই। আমি এখনো অভিনয় শিখছি, আরেকটু অভিজ্ঞতা হোক, তারপর বড়োপর্দা নিয়ে চিন্তা করব।
বিজ্ঞাপনচিত্র প্রসঙ্গে বলেন, বেশকিছু সুযোগ এসেছে তবে ভালো লাগেনি, তাই করা হয়নি। তবে ভালো কাজ হলে অবশ্যই করব।
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম প্রসঙ্গে বলেন, এখন তো এটারই জোয়ার বইছে, তবে সব ওটিটি বা ওয়েব সিরিজে কাজ করতে চাই না, যেসব সিরিজগুলোতে গল্প রয়েছে, সেইসব সিরিজ করতে চাই।
বিয়ের পর কেন মনে হলো এখানে কাজ করা উচিত ? এই প্রসঙ্গে অনন্যা বলেন, বিভিন্ন সেক্টরে এখন নারীরা কাজ করছে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ নারীই স্বামীর পরিচয়ে পরিচিত। কিন্তু আমি চাই, আমি আমার পরিচয়ে বড়ো হতে। পৃথিবীতে এলাম, একপর্যায় চলে গেলাম, এটা কেমন দেখায়, আমারও সমাজে কিছু দেয়ার রয়েছে, সেই চিন্তা থেকে মনে হলো আমি যেহেতু নাচ জানি তাহলে মিডিয়ায় কিছু একটা করি। সেই চিন্তা থেকেই মিডিয়াতে আসা।
অনন্যা মনে করেন, আত্মবিশ্বাস মানবজীবনে বড়ো ভূমিকা রাখে। যদিও বরাবরই নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রয়েছে অনন্যার, তারপরও প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আত্মবিশ্বাসের পাল্লাটা আরো ভারি হয়েছে। এই প্রসঙ্গে অনন্যা বলেন গুণীজনদের মুখে প্রশংসারবাণী শুনে এই অঙ্গনের প্রতি আরো ভালোবাসা বেড়ে গেছে। কী সেই প্রশংসা ? অনন্যা বলেন, মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় যারা বিচারক ছিলেন, তারা আমাকে সবসময় উৎসাহ দিতেন, বলতেন তোমার উচ্চতা ভালো, দেখতে সুন্দর, অভিনয়ও ভালো। এখানে যদি তুমি লেগে থাকো তাহলে অনেক দূর যেতে পারবে। গুণীজনদের প্রশংসারবাণী হৃদয়ে ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছেন অনন্যা।
অভিনয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও সিনিয়রদের অভিনয় দেখে অভিনয়টা রপ্ত করেছেন অনন্যা। এদের মধ্যে যাদের অভিনয় ভালো লাগে তারা হলেন সুবর্ণা মোস্তাফা, আফসানা মিমি, শমী কায়সার, আসাদুজ্জামান নূর, তারিন, মেহজাবীন, তানজিন তিশা, আরফান নিশো প্রমুখ।
নাচ নিয়ে ক্যারিয়ার শুরু হলেও এখন আর আগের মতো করা হয় না। তবে মাঝে মাঝে নাচের চর্চা করেন।
আগামীদিনের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে অনন্যা বলেন যেহেতু এখনো আমি পড়াশোনা করছি। লেখাপড়া সম্পন্ন করব এবং ভালো একজন অভিনয়শিল্পী হতে চাই।
ছেলেবেলায় পূজা উদ্যাপন প্রসঙ্গে অনন্যা বলেন, সেই সময় অনেক আনন্দ করতাম। বড়ো হওয়ার পর সেই আনন্দটা আর আসে না। ছেলেবেলায় পূজায় দুটি পোশাক কেনা হতো। সেই সময় কেনার মধ্যে যে আনন্দটা পেতাম এখন পূজায় অনেক পোশাক পাওয়ার পরেও সেই আনন্দটা আর পাই না। হয়ত-বা আমি বড়ো হয়ে গিয়েছি। এবারের পূজার পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বলেন, সব কাজ বাদ দিয়ে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাব। পূজা ম-পগুলোতে একসঙ্গে ঘুরতে বের হব।
ছবি : জাকির হোসেন
রূপসজ্জা : আকলিমা খান
লোকেশন : চাষাঢ়া. নারায়ণগঞ্জ