নাকের নথ নিলামে তুললেন চিরকুটের সুমী

12 Oct 2021, 12:41 PM সারেগারে শেয়ার:
নাকের নথ নিলামে তুললেন চিরকুটের সুমী

খুলনার মেয়ে শারমিন সুলতানা সুমি ঢাকায় এসে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে এবং ২০০২ সালে গঠন করেন চিরকুট ব্যান্ড। চিরকুট ব্যান্ডের প্রধান ভোকালিস্টের পাশাপাশি দলের অধিকাংশ গান সুমির লেখা এবং সুরারোপ করা। টেলিভিশন, আয়নাবাজিসহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। অসাধারণ গায়কি আর কণ্ঠশৈলীর জাদুতে খুব সহজেই জায়গা করে নিয়েছেন অসংখ্য ভক্ত-শ্রোতার হৃদয়ে। শারমিন সুলতানা সুমির সংগীত জীবনের কাহিনি নিয়ে বিস্তারিত থাকছে এবারের সারেগারে আয়োজনে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শহিদুল ইসলাম এমেল ... 

আনন্দভুবন : কেমন আছেন ?

শারমিন সুলতানা সুমি : আমার কাছে তো মনে হয় বেঁচে আছি। এটাই আল্লাহর বড়ো নেয়ামত।

আনন্দভুবন : আপনার সাম্প্রতিক ব্যস্ততা কী নিয়ে ?

শারমিন সুলতানা সুমি : বর্তমানে ব্যস্ততা আমার অফিস, নতুন গান বানানো নিয়ে। তারপর আমি দেশের বাইরে পর্তুগালে যাচ্ছি পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো মিউজিক মিটিংয়ে যোগ দেওয়ার জন্য। ওখানে বাংলাদেশ থেকে অফিসিয়ালি ইনভাইট পেয়েছি। ওটা নিয়ে একটু প্রস্তুতি, দৌড়ঝাপ করতে হচ্ছে এই আর কি।

 

আনন্দভুবন : গানের প্রতি কীভাবে আগ্রহী হলেন, পরিবারের কেউ কি সংগীতের সঙ্গে জড়িত আছেন ?

শারমিন সুলতানা সুমি : হ্যাঁ, আমার পরিবারের অনেকেই সংগীতের সঙ্গে জড়িত। আমার আব্বা-আম্মা, মামা-খালা, কাজিনরা সংগীতের সঙ্গে জড়িত। তাদের দেখেই আসলে সংগীতের প্রতি আগ্রহ জাগে।

আনন্দভুবন : সংগীতের শুরু কীভাবে হয়েছে ?

শারমিন সুলতানা সুমি : সংগীতের শুরুটা হয়েছে আমার পরিবার থেকে। আমি তখন খুলনায় থাকতাম। আমাদের বাসায় গান-বাজনার পরিবেশ থাকত সবসময়। আর বাসায় প্রায় সময়েই আত্মীয়স্বজনেরা আসত, ভাই-বোনের বন্ধু-বান্ধবরা আসত। ওরা এলেই গানবাজনা শুরু হতো। মোট কথা বাসায় সবসময় গ্যাদারিং হতো আসলে ওখান থেকেই আমার সংগীতের শুরু। ২০০২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ব্যান্ডদল চিরকুট গঠন করি। তারপর একে একে অনেকেই আসে, অনেকেই চলে যায় এই করতে করতে আজ এই পর্যন্ত।

আনন্দভুবন : ব্যান্ডের নাম ‘চিরকুট’ দিলেন কেন ?

শারমিন সুলতানা সুমি : ‘চিরকুট’ মানে তো ওই যে ছোট্ট কাগজে মেসেজ দিই আমরা, তাই না ? আমাদের গানগুলোই হচ্ছে মানুষের জন্য মেসেজ। এজন্যই ‘চিরকুট’ নাম দিয়েছি। এখানে একটা কথা বলি, ‘চিরকুট’র আমি একা কেউ না। আমার প্রথম পরিচয় আমি ‘চিরকুট’র সুমি। আমিসহ এখানে আরো আছে পাভেল আরিন [ড্রামস], ইমন চৌধুরী [গিটার, বাঞ্জো, মান্ডোলিন], দিদার হাসান [বেজ], জাহিদ হাসান নিরব [কিবোর্ড, হারমোনিয়াম] এদের সবার পরিশ্রমের ফসল আজকের ‘চিরকুট’ ব্যান্ড।

আনন্দভুবন : আপনার একক অ্যালবাম কয়টা বেরিয়েছে ?

শারমিন সুলতানা সুমি : আমার একক অ্যালবাম বেরিয়েছে তিনটি। আর আমি আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন সংগীত ফেস্টিভ্যাল আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নরওয়ে, শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া, ইন্ডিয়া, এইসব দেশে অনেকবার কাজ করেছি। আন্তর্জাতিক প্রডিউসারদের সঙ্গে গান বানিয়েছি কোলাবরেশন করেছি। কোলাবরেশন মানে একসঙ্গে অন্য ব্যান্ড ধরুন, নরওয়ের ব্যান্ড এবং আমার বাংলা ও ইংরেজি গান। আবার বলা যায় আমেরিকার ব্যান্ড ওরা স্প্যানিস ভাষায় গাচ্ছিল আর আমরা বাংলায় গাচ্ছি। এভাবে দশ-এগার বছর যাবৎ কন্টিনিওয়াসলি কাজ করে যাচ্ছি। তারপর দেশের নতুন নতুন গানের পাশাপাশি সিনেমাতেও গান করছি। এই করোনার ভেতরেও সাতটি গান করেছি। 

আনন্দভুবন : কতগুলো ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন ?

শারমিন সুলতানা সুমি : আমি এ পর্যন্ত পাঁচ-ছয়টি সিনেমায় প্লেব্যাক করেছি।

আনন্দভুবন : সংগীতজীবনে বিশেষ কোনো স্মৃতি আছে কি ?

শারমিন সুলতানা সুমি : সংগীতজীবনে অনেক স্মৃতি আছে, সেখান থেকে একটি স্মৃতির কথা বলছি আমেরিকায় আমরা একটি ফেস্টিভ্যালে অংশ নিয়েছিলাম সেটার ওপেন করেছিল আমেরিকার তখনকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং ওনার স্ত্রী মিশেল ওবামা। তো আমরা যেদিন পারফর্ম করেছিলাম ওনারা সেদিন ছিলেন না কিন্তু যারা অফিসিয়ালি ছিলেন তারা দাঁড়িয়ে আমাদের হাত তালি দিয়েছিল। ওইদিন আমরা একমাত্র ব্যান্ড ছিলাম যাদের তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানিয়েছিল। ওইদিন খুব ভালো লেগেছিল। তারপর আন্তর্জাতিক সব মাধ্যমে আমাদের নিয়ে লেখা হয়েছিল।

আনন্দভুবন : সংগীত নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী ?

শারমিন সুলতানা সুমি : সংগীত নিয়ে ভবিষ্যৎ না, আমি আজকের পরিকল্পনার কথা বলতে পারি। ভবিষ্যৎ খুব কঠিন। আগেই বলেছি, আমি এ-মাসের শেষের দিকে পর্তুগাল যাচ্ছি সংগীতের সবচেয়ে বড়ো সম্মেলন ওম্যাক্স-এ যোগ দেওয়ার জন্য। ওখানে সংগীত নিয়ে কাজ করে এমন ৯০টি দেশ অংশ নেবে সেই সম্মেলনে। আফিসিয়ালি আমন্ত্রিত হয়ে বাংলাদেশ থেকে আমি যাচ্ছি এবার। আমার প্ল্যান আছে বাংলাদেশের সংগীত নিয়ে আলোচনা করব। আন্তর্জাতিকভাবে যেহেতু কাজ করার সুযোগ হয়েছে, তাই আরো বেশি নতুন নতুন বাংলা গান নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে। 

আনন্দভুবন : ২০০২ থেকে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ এই দীর্ঘ সময়ের ক্যারিয়ারে আপনি কতটুকু সফল হয়েছেন। ব্যর্থতাই বা কতটুকু ?

শারমিন সুলতানা সুমি : দর্শক-শ্রোতাদের যে প্রচুর ভালোবাসা পাই আমি বলব, এটাই একজন শিল্পীর সবচেয়ে বড়ো সাফল্য। আর ব্যর্থতা বলতে আমার কাছে মনে হয় আমি এখনো যে কাজটি মনের মতো করতে পারিনি।

আনন্দভুবন : মহামারি করোনায় আপনারা অসহায় মানুষদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছেন। সে সম্পর্কে কিছু বলুন

শারমিন সুলতানা সুমি : মহামারির শুরুতেই আমরা গান নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। বিভিন্ন সময়ে শিশুদের নিয়ে গান করেছি। করোনায় সারাদেশের মানুষ যেন দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে না পড়ে সেজন্য তাদের আনন্দে রাখার জন্য গান করেছি। ওই সময় ইউএনডিপির সঙ্গে কাজ করেছি। আর সবচেয়ে বড়ো যে কাজটি করেছিলাম সেটা হচ্ছে আমি নাকে যে নথ পরি, গান গাওয়ার সময়, সেটা, একটা মেনডলিন আর একটা ড্রামস আমরা নিলামে তুলেছিলাম বিক্রি করার জন্য। আমরা তখন দশ লাখ টাকায় বিক্রি করি সেগুলো। সেই দশ লাখ টাকা অসহায় গরীর মিউজিশিয়ানদের এবং গরীব মানুষদের সাহায্য করেছিলাম। 

আনন্দভুবন : আপনার গাওয়া সবচেয়ে জনপ্রিয় তিনটি গানের কথা বলুন

শারমিন সুলতানা সুমি : আমার গাওয়া তিনটি জনপ্রিয় গান হচ্ছে আহারে জীবন, জাদু শহর, মরে যাব।

আনন্দভুবন : আনন্দভুবনকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

শারমিন সুলতানা সুমি : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।