সবার জন্য ডিম

11 Oct 2021, 02:34 PM অভোগ শেয়ার:
সবার জন্য ডিম

আপনি কি জানেন, সারাপৃথিবীর প্রায় অর্ধেকেরও বেশি লোক প্রতিদিন সকালের নাশতায় অন্তত একটি ডিম খান। আপনারা যারা এই লেখাটি পড়ছেন তাদের অনেকেই হয়ত এই অর্ধেকের মধ্যেই আছেন। যারা নেই, তারাও অনেকেই দিনের কোনো একটি বেলার খাদ্য তালিকায় এই সুলভ ‘প্রোটিন বল’ গ্রহণ করেন। মোট কথা খুব শক্তপোক্ত নিরামিষাশী ছাড়া ডিম খান না এমন মানুষ পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ। এ বছরের ৮ অক্টোবর পালিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব ডিম দিবসের ২৫ তম আয়োজন...


ডিমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

যে ডিম নিয়ে এতকিছু, তার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে নতুন করে বলে দেওয়ার অবকাশ নেই। প্রাচীন কালের দাদি-নানি থেকে আজকের হাল আমলের আধুনিক গৃহিণী- সবাই কমবেশি ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য রাখেন। ১৩টি প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজের যোগানদাতা ডিম- কোলিন, আয়োডিন, ফসফরাস, সেলেনিয়াম, বায়োটিন, ফলিক অ্যাসিড, আয়রনের মতো আরো নানান পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। এছাড়া এটি অত্যন্ত উন্নত মানের আমিষের উৎস। এ সকল পুষ্টি উপকরণ শরীরের পেশি, হাড়, ত্বক, চোখ ও মস্তিস্কের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়। এছাড়াও ডিম হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শারীরিক শক্তি বৃদ্ধিতে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এর সঙ্গে যে-বিষয়টা অনেকেরই অজানা- শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে এই অল্প মূল্যের খাদ্য উপকরণটি খুবই প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখে।

জাতিসঙ্ঘের ‘ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অরগানাইজেশন’ [এফএও]-এর দেওয়া এক হিসাব অনুযায়ী, সুস্থ থাকার জন্য একজন মানুষের বছরে ১০৪টি ডিম খাওয়া প্রয়োজন। তবে দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশের মানুষ গড়ে বছরে ৫০ থেকে ৫৫টি ডিম খেয়ে থাকে বলে জানা যায়।

যদিও ডিম পুষ্টিগুণ সম্পন্ন, তবে তাই বলে একত্রে একাধিক ডিম খাওয়া নিরাপদ নয়। একাধিক ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্ত বয়স্করা সপ্তাহে ছয়টির বেশি ডিম খেলে তাদের হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বিশ্ব ডিম দিবসের সূচনা ও বাংলাদেশ

ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব ডিম দিবস। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত এ দিবসটি পালনের আয়োজন করে থাকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশন’ [আইইসি]। বিশ্বের প্রতিটি মানুষের কাছে ডিমকে একটি নিয়মিত আমিষজাতীয় খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয় করার লক্ষ্য নিয়ে আইইসি-এর যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে। বর্তমানে বিশ্বের ৮০টি দেশ এই সংস্থাটির সদস্য হিসেবে নিবন্ধিত আছে। জানলে হয়ত কিছুটা অবাকই হবেন, বাংলাদেশ ২০১৩ সালে এই সংস্থাটির সদস্য হিসেবে যোগদান করে। আইইসি’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন ‘বাংলাদেশ অ্যানিমেল এগ্রিকালচার সোসাইটি’ [বিএএএস]। সে বছরই, বিশ্ব ডিম দিবসের ১৮তম আয়োজন থেকে বাংলাদেশে প্রতিবছরই এ দিবসটি উদ্যাপিত হচ্ছে। ‘প্রতিদিনই ডিম খাই, রোগ-প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়াই’ প্রতিপাদ্যে গত বছরেও ৯ অক্টোবর পালিত হয়েছিল দিবসটি।


সবার জন্য ডিম : প্রকৃতি-প্রদত্ত পূর্ণাঙ্গ খাদ্য উপকরণ

‘এগস ফর অল : নেচাস’স পারফেক্ট প্যাকেজ’- এই প্রতিপাদ্যে চলতি বছরে সারাবিশ্বে একযোগে পালিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব ডিম দিবসের ২৫তম আয়োজন। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডিমের ব্যবহারকে আরো জনপ্রিয় করতে সংস্থাটি এবার গ্রহণ করেছে নানান অভিনব উদ্যোগ। সবার জন্য বিনামূল্যে ডাউনলোডযোগ্য ইন্ডাস্ট্রি টুল-কিট থেকে শুরু করে নির্মিত হয়েছে ২১টি ভাষায় ডিম দিবসের বিশেষ লোগো প্যাক। 


ডিম নিয়ে কিছু মজার তথ্য

বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডিম শুধুমাত্র খাওয়ার জন্য উৎপাদিত হয়। পৃথিবীতে যত ডিম খাওয়া হয় তার ৪০ শতাংশ চীনের মানুষ খান। ডিম ভাজিতে গিনেস বুকে রেকর্ড করেছেন হাওয়ার্ড হেমলার। তিনি ৩০ মিনিটে ৪২৭টি ডিম ভাজি করেন। একটি মুরগির ডিম উৎপাদন ক্ষমতা গড়ে ২৫০ থেকে ২৭০টি। তবে কোনো কোনো মুরগি ৩০০টির বেশি ডিম পাড়ে। ২০০৩ সালে গরম ডিম খাওয়ার বিশ্ব রেকর্ড গড়েন সোনিয়া থমাস। তিনি ৬ মিনিট ৪০ সেকেন্ডে ৬৫টি ডিম খেয়েছিলেন। মুরগির ডিম সাদা না লাল হবে তা মুরগির খাদ্যাভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। কাঁচা ডিমে ক্যালোরির পরিমাণ ৭০, কিন্তু রান্না করা ডিমে ক্যালোরির পরিমাণ ৭৭ থাকে। সবচেয়ে বেশি ডিম উৎপাদন করে চীন। প্রতি বছর ১৬০ বিলিয়ন ডিম উৎপাদন করে। মুরগি একমাত্র আদি গৃহপালিত প্রাণী। ইতিহাস বলে ১৪০০ বছর আগে চীনে মুরগি পালন করা হতো। ডিমে কোনো কার্বন কিংবা চিনি থাকে না। উট পাখির ডিম সবচেয়ে বড়ো। একটি ডিমের ওজন গড়ে ১.৫ কেজি। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটেনের একটি মুরগি সবচেয়ে ছোটো ডিম পেড়েছিল। 

 লেখা : ফাতেমা ইয়াসমিন