অ্যাপেনডিসাইটিসের লক্ষণ ও চিকিৎসা

21 Sep 2021, 12:23 PM স্বাস্থ্যভুবন শেয়ার:
অ্যাপেনডিসাইটিসের লক্ষণ ও চিকিৎসা

আমরা অনেক সময় অ্যাপেনডিসাইটিসের ব্যথাকে গ্যাসের ব্যথা মনে করে ভুল করে থাকি। আসলে সব ব্যথাই কিন্তু গ্যাসের ব্যথা নয়। অনেক সময় মারাত্মক কিছু রোগের আলামত হিসেবেও আমাদের শরীরে ব্যথা দেখা দেয়। অ্যাপেন্ডিক্সের ব্যথাকে অনেকে সময় গ্যাসের ব্যথা মনে করে অনেকেই ডাক্তারের কাছে যেতে দেরি করে ফেলেন। এই দেরি করার কারণে ঘটতে          পারে অনেক বড়ো ধরনের বিপদ...

সাধারণত বৃহদান্ত্র এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের সংযোগস্থলে বৃহদান্ত্রের সঙ্গে যুক্ত একটি ছোটো থলির মতো অঙ্গটিকে অ্যাপেন্ডিক্স বলা হয়। মূলত অ্যাপেন্ডিক্স আমাদের শরীরের একটি অকেজো অঙ্গ। বিশ্বের প্রায় ৫ শতাংশ মানুষের প্রাণ যায় অ্যাপেন্ডিক্সের সময়মতো চিকিৎসা না করার কারণে। অ্যাপেন্ডিক্সের এই সমস্যাটিই অ্যাপেনডিসাইটিস নামে পরিচিত। 

অ্যাপেনডিসাইটিসের লক্ষণ ও উপসর্গ : শরীরের অবাঞ্চিত অ্যাপেন্ডিক্স হলে তলপেটের ডান দিকে ব্যথা শুরু হবে। নাভির চারদিক থেকে ব্যথাটা ক্রমশ তল পেটের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় তলপেট ফুলে ওঠে। তবে শুরুর দিকে ব্যথা কম হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই ব্যথা বাড়তে থাকে। খাবার খেলেই ব্যথা বাড়তে থাকে। এ সময় জ্বর আসার সম্ভাবনা থাকে। তবে সবার ক্ষেত্রে জ্বর নাও আসতে পারে। শরীরের তাপমাত্রাও ওঠানামা করে। খেতে ইচ্ছা করে না। হজমে সমস্যা হয়। এমনকি বমিও হতে পারে। কিছুক্ষেত্রে রোগীর পেট খারাপও হতে পারে। হাঁটাচলা করলে, বসা থেকে ওঠার সময় অথবা সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় এবং হাচি-কাশি দেওয়ার সময়ও ব্যথা হতে পারে। ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। অ্যাপেন্ডিক্স কোনো কারণে ফেটে গেলে সারা পেটজুড়ে মারাত্মক ব্যথা অনুভূত হয় এবং পেট ফুলে ওঠে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা : প্রস্রাব ও রক্ত পরীক্ষা করলে রোগ নির্ণয় করা সহজ হয়। ব্যথার জন্য রক্তে শ্বেতকণিকার সংখ্যা বেড়ে যায়। পুরুষদের অ্যাপেনডিসাইটিস রোগ নির্ণয় করা সহজ কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে একটু জটিল। কিশোরী-যুবতী অথবা মধ্যবয়সী মেয়েদের ডানদিকের ওভারি বা ডিম্বাধারে প্রদাহ এবং ডিম্ববাহী নলের প্রদাহের জন্য একইরকম উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাই মেয়েদের অ্যাপেনডিসাইটিস রোগ নির্ণয়ের সময় আলট্রাসনোগ্রাম করা দরকার হতে পারে।

চিকিৎসা : অ্যাপেনডিসাইটিসের একমাত্র চিকিৎসা অপারেশন করে অ্যাপেনডিক্স কেটে ফেলা। অপারেশনের সময় অবস্থাগত পরিবর্তনের কারণে সার্জনকে গলদঘর্ম হতে হয় সামান্য এই অপারেশন করতে। তাছাড়া সব অ্যাপেন্ডিসাইটিসই যে অপারেশন করতে হয়, তা নয়। অ্যাপেনডিক্সের ব্যথা হওয়ার পর তা যদি কমে থাকে, সে ক্ষেত্রে ধারণা করা হয়, খুব সম্ভবত আপনার অ্যাপেন্ডিক্সের চার পাশে একটা মাস তৈরি হয়ে গেছে, এবং সেটা এই মুহূর্তে অপারেশনের জন্য ভালো নয়। এ অবস্থাকে বলে অ্যাপেনডিকুলার। আবার অনেকেই বলে থাকেন অ্যাপেনডিসাইটিস হলেই অপারেশন করাতে হবে, অপারেশন না করালে অ্যাপেনডিক্স ফেটে যেতে পারে এবং রোগী মারা যেতে পারে। অ্যাপেনডিসাইটিস বিভিন্ন রকম হতে পারে। কারো অ্যাকুইট অ্যাপেনডিসাইটিস হতে পারে আবার কারো দেখা যায় বারবার ব্যথা হয়, সেটিকে রিকারেন্ট অ্যাপেনডিসাইটিস বলা হয়। কারো যদি অ্যাপেনডিসাইটিস হয় এবং তার যদি শারীরিক অবস্থা ভালো থাকে, ডায়াবেটিস না থাকে, যদি গর্ভবতী না হন কিংবা শারীরিক দুর্বলতা না থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে ওষুধের মাধ্যমেও অ্যাপেনডিসাইটিস নিরাময় সম্ভব। অ্যাপেনডিসাইটিসের ক্ষেত্রে যথাসময়ে অপারেশন না করালে অ্যাপেনডিকুলার অ্যাবসাস বা অ্যাপেনডিকুলার লাম্ব হতে পারে কিংবা ব্রাস্ট অ্যাপেনডিস্ক হতে পারে। সে জন্য অ্যাপেনডিসাইটিসের ধরন অনুযাযী দ্রুত অপারেশন করে রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব। সঠিক সময়ে অপারেশন না করলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। বর্তমানে অ্যাপেনডিক্সের অপারেশন খুবই সহজভাবে করা সম্ভব। ল্যাপারোস্কপিক অপারেশনের মাধ্যমে মাত্র কয়েকটি ছিদ্র করেই সেটি করা সম্ভব। এতে সুবিধা হচ্ছে রোগীর অ্যাপেনডিসাইটিস আছে কি না, সেটিও শতভাগ নিশ্চিত হয়ে ল্যাপারোস্কপিকের মাধ্যমে অপারেশন করে রোগীকে সহজেই সুস্থ করে তোলা যায়।