কখন ব্যায়াম করবেন

21 Sep 2021, 12:17 PM অভোগ শেয়ার:
কখন ব্যায়াম করবেন

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল এই কথাটি আমরা সকলেই জানি। শরীর ভালো তো মন ভালো। তবে এই স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য আমরা আসলে কতটুকু চেষ্টা করি! সুস্থ থাকতে আমাদের প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার আর নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের পাশাপাশি প্রয়োজন নিয়মিত ব্যায়াম করা। প্রতিনিয়ত অপরিমিত খাবার খেয়ে শরীরে যে মেদ জমিয়েছেন তা কমানোর জন্য শরীরচর্চা করা জরুরি। তবে ব্যায়াম করারও রয়েছে কিছু নিয়মকানুন, সেইসব বিষয় নিয়েই আমাদের এবারের অঁভোগ আয়োজন। গ্রন্থনা করেছেন ফাতেমা ইয়াসমিন...

ব্যায়াম মানে শারীরিক কিছু ক্রিয়াকর্ম, যা আমাদের মানসিক সক্ষমতাকে স্বাভাবিক কিংবা কখনো কখনো বাড়াতে সহায়তা করে। সাধারণত মানবপেশির কর্মক্ষমতা বাড়াতে, শারীরিক ক্রিয়াকর্ম স্বাভাবিক রাখতে, দেহের ওজন ঠিক রাখতে এবং অতিরিক্ত ওজন কমাতে ব্যায়ামের জুড়ি মেলা ভার। 

ব্যায়াম মানেই ৫ মাইল হাঁটা কিংবা দীর্ঘসময় জিমে সময় কাটানো নয়। প্রতিদিন নিয়ম করে ৩০-৪০ মিনিট হাঁটাও ব্যায়ামের অংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে সপ্তাহে ১৫০ মিনিট দ্রুত হাঁটার বা ৭৫ মিনিট দৌড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। তাই প্রতিদিন সম্ভব না হলেও সপ্তাহে ৫-৬ দিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। 

কোন বয়সে কেমন ব্যায়াম

বয়সের তারতম্য এবং শারীরিক সুস্থতার ওপর ব্যায়ামের পরিমাণ নির্ভর করে। বয়সভেদে ব্যায়ামের ধরন বদলে গেলেও প্রয়োজনীয়তা কমে যায় না মোটেই। আদর্শ ওজন বজায় রাখতে, বিভিন্ন রোগের আক্রমণ ও জটিলতা থেকে দূরে থাকতে, এমনকি গর্ভাবস্থায়ও [চিকিৎসকের পরামর্শমতো] ব্যায়াম করতে হয় নানা রকম জটিলতা এড়াতে। 

শৈশবে শরীরের ওজন ঠিক রাখতে, শক্ত হাড় গঠনে, ঘুম ঠিক রাখতে ও আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে ব্যায়াম। শিশুদের দিনে অন্তত এক ঘণ্টা ব্যায়ামে কাটানো উচিত। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রিকেট, ফুটবল, বাস্কেটবলের মতো বিভিন্ন ধরনের দলগত খেলা ; সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, কারাতে ইত্যাদি শারীরিক অনুশীলনের মাধ্যমে ব্যায়ামের প্রয়োজন মিটে যায়।

খেলাধুলা, সাঁতার কাটা, সাইক্লিং, দৌড়ঝাপ থেকে শুরু করে প্রায় সবরকমের শরীরচর্চায় ব্যস্ত থাকতে পারেন তরুণেরা। এ ক্ষেত্রে জিমের প্রশিক্ষকের কাছ থেকেও পরামর্শ নিতে পারেন। একই বয়সের হলেও শারীরিক উচ্চতা, ওজনের তারতম্যের কারণে একেকজনের ক্ষেত্রে ব্যায়ামের ধরন একেক রকম হতে পারে।

সকাল-সন্ধ্যা অফিস আর পারিবারিক জীবনের ব্যস্ততায় থাকেন যারা, তাদের হয়ত নিয়মমাফিক ব্যায়াম করা হয়ে ওঠে না। তবু চেষ্টা করে যাওয়া উচিত। বেশিরভাগ লোকে অফিসে চেয়ার-টেবিলে বসে কাজ করেন। তাদের ওই কাজের সময়েই কিছুটা শরীরচর্চা করা উচিত। এক রুম থেকে আরেক রুমে হেঁটে যাওয়া। লিফট এড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করা, ফোনে কথা বলার সময় বসে না থেকে দাঁড়িয়ে বা একটু হেঁটে হেঁটে কথা বলা এসবও শরীরচর্চার মধ্যেই পড়ে। ঠায় বসে থাকার চেয়ে একটু শরীরচর্চা তো হলো !

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রকমের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দেখা দিতে শুরু করে। নিয়মিত কিছু অনুশীলন সেই প্রতিবন্ধকতা কমিয়ে অনেকটাই সুস্থ জীবনযাপন করতে সাহায্য করে। তবে এই বয়সে কিছুটা ভারসাম্য বজায় রেখেই ভালো থাকা যায়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি খুবই প্রয়োজন। বিভিন্ন ধরনের রোগ নিয়ন্ত্রণে, যেমন, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ওজনাধিক্য, হাড়ের রোগ, ব্যাকপেইন, কোলেস্টেরল লেভেল কমাতে, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে, মাংসপেশিকে শক্তিশালী করতে, অস্টিওপোরসিসের ঝুঁকি কমাতে শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী হাঁটা, কিছুটা ফ্রিহ্যান্ড, কার্ডিও টাইপ ব্যায়াম, এরোবিক্স ও ইয়োগা খুবই উপকারী।

ব্যায়ামের সময় নির্ধারণ বেশ জরুরি

ঘুম থেকে ওঠার পর ফ্রেশ হয়ে নাশতা করে কয়েক ঘণ্টা পর ব্যায়াম করুন। কখনোই খালি পেটে ব্যায়াম করা যাবে না। সময়ের অভাব থাকলে ঘুম থেকে ওঠার আধা ঘণ্টা পর হালকা জগিং বা হাঁটতে পারেন। তবে সকালে ভারি কোনো ব্যায়াম না করাই ভালো, রাতে দীর্ঘক্ষণ ঘুমিয়ে থাকার ফলে সকালে শরীর প্রায় নির্জীব নিশ্চল থাকে। তাই এ সময়ে পেশি টানটান করা ভারি ব্যায়াম থেকে বিরত থাকা ভালো। না হয় হিতে বিপরীত হতে পারে। দুপুরবেলা বা বেশি গরমে ব্যায়াম করলে সহজেই শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই এ সময়ে ব্যায়াম না করাই ভালো।

ব্যায়াম করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হচ্ছে বিকাল। যাদের ভারি ব্যায়ামের পরিকল্পনা রয়েছে, তারা দিনের বেলার যেকোনো একটি সময় বেছে নিন। তবে দুপুরের খাবার গ্রহণের কমপক্ষে দুই ঘণ্টা পরে ব্যায়াম শুরু করতে পারেন।

ব্যায়াম করার পর শরীরের তাপমাত্রা, রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। এর ফলে শরীর অধিক কর্মক্ষম থাকে এবং ক্লান্তভাব কেটে যায়। তাই ঘুমাতে যাওয়ার ঠিক আগেই ব্যায়াম করা উচিত নয়। ঘুমাতে যাওয়ার আগে কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে ব্যায়াম করুন।


স্থান নির্বাচন 

খোলা জায়গায় ব্যায়াম করা সবচেয়ে ভালো। প্রকৃতির নির্মল পরিবেশে সবুজের মধ্যে ব্যায়ামের মাধ্যমে অনেক রোগের উপসর্গ কমে যায়। সে ক্ষেত্রে আপনার কাছের কোনো জিম বা স্রেফ ঘরকেই বানিয়ে ফেলতে পারেন আপনার ব্যায়ামাগার। ভালো ফল পেতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ব্যায়াম করা যেতে পারে। তবে ১৮ বছরের কম বয়সীদের ভারি ব্যায়াম না করাই ভালো। কারণ, এই সময়ে শক্ত ব্যায়ামে জড়িয়ে গেলে তার জিনগত স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।


ব্যায়ামের সময় খাওয়া দাওয়ায়ও দিতে হবে নজর

শারীরিক ব্যায়ামের কমপক্ষে ২ ঘণ্টা আগে ভারি খাবার খেয়ে নিতে হবে এবং খাবার খাওয়ার পরই যেমন ব্যায়াম করা যাবে না, ঠিক তেমনি ব্যায়াম শেষ করেই ভারি খাবার খাওয়া যাবে না।

জিমে বা ব্যায়ামে যাওয়ার একঘণ্টা আগে কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবার খেতে হবে। ব্যায়ামের আগে ফল খেতে পারেন। ব্যায়ামের আগে আপেল, কলা সঙ্গে টোস্ট এগুলোও খেতে পারেন। এই খাবারগুলো হজম হতে কম সময় লাগে এবং ব্যায়ামের আগে শরীরে শক্তি জোগাবে।

তবে খেয়াল রাখতে হবে, কোনোভাবেই খালি পেটে ব্যায়াম করা যাবে না। ব্যায়ামের ফলে যে চাপ পড়বে, সেটি শরীরের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। ফলে হাইপোগেসিমিয়া হয়ে শরীর অবসন্ন হয়ে যেতে পারে। তাই কখনোই খালি পেটে ব্যায়াম করতে যাবেন না।

ব্যায়াম চলাকালে বিভিন্ন ডেটক্স ওয়াটার খেতে পারেন দেহ থেকে টক্সিক পদার্থ বের করে দিতে। খেতে পারেন কাঠবাদাম, ওয়ালনাট [আখরোট], খেজুর, ডাবের পানি তাৎক্ষণিক শক্তি পেতে।

ব্যায়ামের পরপর দেহের শক্তির জন্য ৫০-৬০ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন পড়ে। দুধ, ডিম, ডাল, মাংস প্রোটিনের চাহিদা মেটাবে। প্রোটিনের পাশাপাশি আঁশজাতীয় খাবার এবং সবুজ শাকসবজি খান।

ওজন কমাতে অনেকেই ব্যায়াম শুরু করে ভাত বা কার্বোহাইড্রেট খাবারগুলো বন্ধ করে দেয়। এটা কোনোভাবেই উচিত নয়। এতে শরীরের স্ট্যামিনা ও মেটাবলিজম কমে যায় এবং শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয়। তাই পরিমিত সুষম খাবার অবশ্যই খেতে হবে। খাবারের মেনু থেকে যতটা সম্ভব ডুবো তেলে ভাজা খাবার, মিষ্টি, কোমল পানীয়, ফাস্টফুড ইত্যাদি খাবার বাদ দিতে হবে। কারণ, এসব খাবার খেলে আপনার ব্যায়াম করা বৃথা হয়ে পড়বে। প্রয়োজনে ডায়েট পরিকল্পনার জন্য পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।