আপনার শিশুকে ফ্রিজে রাখা বা বাসি খাবার খাওয়াবেন না

21 Sep 2021, 11:59 AM শিশুভুবন শেয়ার:
আপনার শিশুকে ফ্রিজে রাখা বা বাসি  খাবার খাওয়াবেন না

শিশুর বয়স ছয় মাস হলেই তার খাবারের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। সচেতন হতে হবে তার খাবার নিয়ে। ছয় মাস বয়েসেও শিশুর প্রধান খাবার মায়ের বুকের দুধ। ছয় মাস বয়সী শিশুর খাবারের ব্যাপারে কর্মজীবী মায়েদের বেশি সচেতন হতে হবে।

এ-সময় থেকে শিশুকে বুকের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবারও দিতে হবে। তবে এ-সময় শিশুর খাবার কেমন হবে তা জানা নেই অনেক মায়েরই। আবার হঠাৎ করে শিশুরা অন্য খাবার খেতেও চায় না। তাই ধীরে ধীরে অভ্যাস করাতে হবে।

মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুকে অন্য খাবারে অভ্যস্ত করার এই অবস্থা চিকিৎসাবিজ্ঞানে ‘ওয়েনিং’ নামে পরিচিত। এ-সময় মা এবং পরিবারের সবাইকে যথেষ্ট ধৈর্য ধরতে হবে। ৬ থেকে ৯ মাসের মধ্যে শিশুর জিহ্বায় ‘টেস্ট বাড’ নামে বিশেষ ধরনের মাংসপেশি তৈরি হয়, যার মাধ্যমে শিশু দুধ ছাড়া অন্যান্য খাবারের স্বাদ বুঝতে পারে। তাই খেয়াল রাখতে হবে এই সময়ে শিশুর খাবার যেন সুস্বাদু হয়। তবে এমন আশা করা ঠিক নয়, খাবার মজা হলেই শিশু পুরোটা খেয়ে ফেলবে। আবার শিশুকে কখনো জোর করেও খাওয়ানো উচিত নয়।

একেক শিশুর চাহিদা ও পছন্দ একেক রকমের হয়। পরপর দুই দিন কোনো খাবার না খেলে তৃতীয় দিন পুনরায় সেই খাবার না দিয়ে অন্য খাবার দেওয়া উচিত। একসপ্তাহ পরে আবার সেই খাবারটি খাওয়ানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। 

ছয় মাসের পর থেকে শিশুর প্রথম খাবার অবশ্যই শর্করা দিয়ে শুরু করা উচিত। যেমন, নরম ভাত, সুজি, আলু সিদ্ধ, হজমে সমস্যা না হলে ধীরে ধীরে সিদ্ধ সবজি বা ফল খেতে দেওয়া ভালো। যেমন আপেল, গাজর, আঙুর, পাকা কলা, পাকা পেঁপে, সিদ্ধ মিষ্টি কুমড়া, গাজর, ইত্যাদি।

শিশুকে প্রতিদিন নতুন রান্না করা খাবার খাওয়াতে হবে। ফ্রিজে রাখা বা বাসি খাবার খাওয়াবেন না। শিশুর খাবার খাওয়ানোর বাটি, চামচ ও যিনি খাওয়াবেন তাঁর হাত অবশ্যই পরিষ্কার থাকতে হবে। ছয় থেকে নয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে অন্য খাবার দিনে তিনবার খাওয়াতে হবে। শিশুকে নতুন খাবার দেওয়ার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, শরীরের কোথাও র‌্যাশ উঠেছে কি না কিংবা বমি বা ঢেকুরের পরিমাণ বেশি হচ্ছে কি না।

কোনো খাবার খাওয়ানোর পর খেয়াল করতে হবে যে, শিশুর কান্নার পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে গেছে কি না বা পেট ফুলে গেছে কি না অথবা প্রস্রাব-পায়খানায় পরিবর্তন অনুভব করলে সেই খাবার বন্ধ করতে হবে। অবস্থা বেগতিক মনে হলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

শিশু আরেকটু বড়ো হলে অর্থাৎ শিশুর বয়স নয় মাস হলে, নয় থেকে ১২ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাতবার পর্যন্ত খাবার দিতে হবে। এ সময় সবজির খিচুড়ি খাওয়নো খুব উপকারী। সবজি, চাল, ডাল, মুরগি বা মাছের ছোট্ট টুকরা, বা মুরগির কলিজা, সয়াবিন তেল সমস্যা না হলে, সব মিশিয়ে খিচুড়ি তৈরি করে খেতে দিতে পারেন। মুরগির মাংস বা কলিজা ও মাছ অবশ্যই আলাদা সিদ্ধ করে খিচুড়িতে চূর্ণ [smash] করে মিশিয়ে দিতে হবে। সবজির মধ্যে আলু, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, গাজর, মূলা, শালগম, পেঁপে খাওয়ানো যেতে পারে। হজমশক্তি ঠিক থাকলে সামান্য ধনেপাতা বা শাক দিয়ে দেখতে পারেন। নতুন খাবারের পদের পরিমাণ অল্প হতে হবে। ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়াতে হবে। যে শিশুরা মায়ের দুধের বদর্লে গরুর দুধ বা অন্য কোনো দুধ বেশি খায়, তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয় বেশি। এমন অবস্থায় সবজি খিচুড়ি ও পানি খাওয়ানোর পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। আর বুকের দুধ খাওয়ানোর পরও যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য বেশি হয়, সে-সব শিশুর মায়েদের পর্যাপ্ত পানি ও শাকসবজি খাওয়াতে হবে।

শিশুকে মধু, ডিমের কুযসুমও খাওয়ানো যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত গরমে মধু নিয়মিত না দেওয়ানোই ভালো। মধু দিতে হবে পরিমাণে খুবই কম। মাসে হয়ত দুই দিন। তাও আধা চা-চামচ পরিমাণে। ধীরে ধীরে দিতে হবে ডিমের কুসুম।

শিশুকে বাইরের খাবার না খাওয়নোই উত্তম। শিশুকে জোর করে খাওয়ানোর বদলে তাকে খেলার ছলে খাওয়ান। মনে রাখবেন, সব শিশুর পছন্দ ও চাহিদা সমান নয়। কখনো শিশুকে ভয় দেখিয়ে, বকা দিয়ে খাওয়াবেন না। পরিবেশ পরিস্থিতিভেদে একেক শিশুর খাবারের চাহিদা একেক রকম।