২০২০ সালের মার্চ থেকে দেশে করোনা শুরু হলে প্রায় বন্ধ হয়ে যায় শোবিজের কাজ। অনেক অভিনয়শিল্পীর মতো তমা মির্জাও শুটিং বন্ধ রাখেন। লকডাউনের পরই পুরোদমে শুটিং শুরু করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী অভিনেত্রী তমা মির্জা। আগস্ট মাসে ফ্রুটিকার একটি বিজ্ঞাপনচিত্র দিয়ে কাজে ফেরেন তিনি। দীর্ঘদিন পর কাজে ফিরতে পেরে আনন্দিত তমা। লকডাউন তুলে নেওয়া হলে শুটিং করেন, আবার লকডাউন দেওয়া হলে শুটিং বন্ধ রাখেন। এভাবেই চলছিল তমার দিনলিপি। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...
করোনা মহামারি সবার জীবনেই কমবেশি প্রভাব ফেলছে। অভিনয়শিল্পী তমা মির্জাও এর বাইরে নন। করোনার কারণে প্রায় দুই বছর ধরে সিনেমার কোনো শুটিং থেকে বিরত থাকতে হয়েছে তাকেও। তাই তো তাকে হাঁটতে হয়েছে ভিন্নপথে। এমনকি পরকিল্পনাতেও নানান পরিবর্তন আনতে হয়েছে। পর্দার বদলে কাজ করেছেন ওয়েব প্ল্যাটফর্মে।
রায়হান রাফির ‘দ্য ডার্ক সাইড অব ঢাকা’তে দেখা গেছে তাকে। সেখানে তার অভিনয় দর্শকদের মনে দাগ কেটেছে। অভাবনীয় সেই সাড়ায় তমাও বেশ খুশি। তবে মিস করছেন বড়ো পর্দায় নিজেকে। তমা আরো জানান, প্রেক্ষাগৃহের প্রতি তার একটি আলাদা মায়া কাজ করে। ওয়েবে কাজ করলেও সিনেমার শুটিং করার জন্য তিনি ব্যাকুল হয়েছিলেন। অভিনয়ে ফিরেই স্বস্তি প্রকাশ করলেন তিনি।
লকডাউন তুলে নেওয়ার পরপরই অভিনয়ে নিয়মিত হয়েছেন তমা মির্জা। সম্প্রতি রংপুরে একটানা ১২ দিন একটি ছবির শুটিং করেন তিনি। সিনেমার নাম কিংবা অন্যান্য তথ্য প্রকাশে বারণ থাকায় আপাতত এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি এই অভিনেত্রী। এই প্রসঙ্গে তমা বলেন, ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সময়ই পরিচালক জানিয়েছিলেন ছবিটির কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কোনো তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। সঙ্গত কারণেই আপাতত কিছু জানাতে পারছি না। তবে সিনেমাটি দর্শকের ভালো লাগবে। কারণ, দর্শকদের বিনোদিত করার মতো অনেক কিছুই রয়েছে। এই ছবির আগে মাহমুদ হাসান শিকদারের পরিচালনায় ‘আনন্দী’ নামের একটি ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেন তমা মির্জা। ওয়েব সিরিজটি শিগ্গিরই ডিজিটাল প্লাটফর্মে প্রকাশ পাবে বলে তিনি জানান। এছাড়াও তমা কিছুদিন আগে একটি টিভি বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হন।
বর্তমানে তমা মির্জা শাহনেওয়াজ কাকলীর পরিচালনায় ‘ফ্রম বাংলাদেশ’ ছবির শুটিং সম্পন্ন করেছেন। এছাড়া শাহরিয়ার নাজিম জয়ের পরিচালনায় ‘পাপকাহিনী’ ও আরিফুজ্জামান আরিফের পরিচালনায় ‘কাঠগড়ায় শরৎচন্দ্র’ ছবি দু’টির শুটিংয়ের কাজ প্রায় শেষের দিকে।
তমা মির্জার জন্ম বাগেরহাটের কচুয়ায়, সেখানেই তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে। সেখান থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। পরবর্তীসময়ে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে এবং বর্তমানে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করছেন।
ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ করে তমা মির্জা বলেন, ছোটবেলায় আমার ছবি আঁকার শখ ছিল। প্রচুর ছবি আঁকতাম। আব্বু সরকারি চাকরি করতেন। আমাদের বাসা থেকে আব্বুর অফিসে যেতে ২ মিনিট সময় লাগত। আমি ছবি এঁকেই দৌড়ে আব্বুর কাছে চলে যেতাম। সব ব্যস্ততা ফেলে আব্বু আমার আঁকা ছবি দেখতেন। আব্বু হাত খরচ দিতেন দুই টাকা। সেই টাকা দিয়ে মোয়া খেতাম, বিস্কুট খেতাম। আবার কোনোদিন বন্ধুদের খাওয়াতাম। ছেলেবেলায় ভ্যানে করে স্কুলে যেতাম। আগে টং দোকানে পায়ে পা রেখে চা পান করতাম, এখন সেটা করতে পারি না।
তমা মির্জা খুব সাধারণ জীবনযাপন করেছেন। এই সাধারণ জীবনকে অসাধারণ করে দিয়েছেন তার বাবা-মা। পড়াশোনার পাশাপাশি নাচ শেখানোসহ বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করতেন বাবা-মা। তাদের সহযোগিতার কারণেই তিনি শোবিজে কাজ করতে পারছেন বলে জানান।
তিনি আরো বলেন, পরিশ্রম করে আজকে এ অবস্থানে এসেছি। পরিশ্রম করার কারণে বিনয়ী হতে পেরেছি। এক লাফে এতদূর আসিনি। এখন অনেকের মধ্যে বিনয় জিনিসটা নেই। এখন অনেকে তাড়াহুড়ো করেন। এসেছি, আমাকে স্টার হতে হবে। স্টার কে সেটাই আমরা বুঝি না, সুপারস্টার তো অনেক বড়ো কথা, সুপারস্টার অনেক বড়ো তকমা।
হঠাৎ করেই কাজের প্যাটার্ন বদলে ফেলেছেন তমা মির্জা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, আমার ট্রান্সফরমেশনের গল্পটা এখনো বলা হয়নি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার পর বুঝলাম, ভালো কাজের মূল্যায়ন হয়। ভালো কাজ, মন্দ কাজ বুঝতে পেরেছি। সে অনুযায়ী কাজ বাছাই করতে পারছি। এজন্য এখন নেগেটিভ মন্তব্য কম পাই। শুরুর দিকে প্রচুর নেগেটিভ কথা শুনতে হয়েছে।
‘দ্য ডার্ক সাইট অব ঢাকা’ ওয়েব ফিল্মে অভিনয় করে বেশ প্রশংসা কুড়ান তমা মির্জা। দর্শক তার অভিনয় নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলেননি। তমার উপলব্ধি, দর্শক কাজ দেখতে চান।
নায়িকাদের গসিপ প্রসঙ্গেও বলেন, অনেক সময় দেখি আপনারা জাজমেন্টাল হয়ে যান। দয়া করে এটা করবেন না। কারো একজনের লাইফের নেগেটিভ কোনো জিনিস প্রকাশ্যে এলেই গণহারে আপনারা সবাইকে একরকম মনে করেন। আসলে সবাই একরকম নয় কেউ অল্পতে খুশি, আর কেউ অনেক পেয়েও খুশি নয়। নেট দুনিয়ায় অ্যাবিউজ না করে সমর্থন করেন। ভালো না লাগলে এড়িয়ে যান।
একনজরে তমা মির্জা
তমা মির্জার বড়োপর্দায় অভিষেক হয় শাহিন সুমনের ‘মনে বড়ো কষ্ট’ ছবির মাধ্যমে। প্রথম ছবিতে পার্শ্ব নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ভালো অভিনয়ের কারণে আরো কয়েকটি ছবিতে পার্শ্ব নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এরপর অনন্ত হীরার ‘ও আমার দেশের মাটি’ ছবিতে একক নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একের পর এক ভালোমানের চলচ্চিত্রে অভিনয় করে নিজের অবস্থান শক্ত করেন। শুধু তাই নয়, অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে ‘নদীজন’ ছবিতে অভিনয় করে অর্জন করেন ২০১৫ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
প্রথম দিকে অভিনীত ছবিগুলো খুব একটা সফলতার মুখ না দেখলেও ধীরে ধীরে তমা মির্জা নিজের অবস্থানকে শক্ত করে নিয়েছেন। এই অঙ্গনে কাজ করা প্রসঙ্গে তমা বলেন, শুরুতে চাইতাম নায়িকা হব, নাচ গান করব, এখন বুঝলাম নায়িকা নয়, আমাকে অভিনয়শিল্পী হতে হবে। এই ইচ্ছে নিয়েই এখন পথ চলছি।