নজরুলের গান গাইতে ভালো লাগে -ইয়াসমিন লাবণ্য

20 Sep 2021, 11:46 AM সারেগারে শেয়ার:
নজরুলের গান গাইতে ভালো লাগে -ইয়াসমিন লাবণ্য

‘আমার প্রেম আমার প্রিয়া’ ছবিতে প্লেব্যাকে ফিমেল সিঙ্গার হিসেবে ভারত-বাংলাদেশ ফিল্মস অ্যাওয়ার্ডে মনোনয়ন পাওয়া এই প্রজন্মের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ইয়াসমিন লাবণ্য। অসাধারণ গায়কি আর কণ্ঠশৈলীর জাদুতে অল্প সময়ের মধ্যেই জায়গা করে নিয়েছেন শ্রোতাদের হৃদয়ে। ইয়াসমিন লাবণ্যের সংগীতজীবনের কাহিনি নিয়ে বিস্তারিত থাকছে এবারের সারেগারে আয়োজনে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শহিদুল ইসলাম এমেল...

আনন্দভুবন : কেমন আছেন ?

ইয়াসমিন লাবণ্য : ভালো আছি। 

আনন্দভুবন : বর্তমানে আপনার ব্যস্ততা কী নিয়ে ?

ইয়াসমিন লাবণ্য : বর্তমানে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের স্টেজ শো নিয়ে ব্যস্ত আছি। নিজের দুটো গান রেডি আছে। গান দুটোর মিউজিক ভিডিওর প্ল্যান করছি। একক অ্যালবাম নিয়ে কাজ করছি। কিছু নাটকের গান করলাম এই আর কি। 

আনন্দভুবন : গানের প্রতি কীভাবে আগ্রহী হলেন, পরিবারের কেউ কি সংগীতের সঙ্গে জড়িত আছে ?

ইয়াসমিন লাবণ্য : আমার বড়ো ভাই গান করেন। আমার মা গান খুব পছন্দ করেন। মায়ের আগ্রহেই আমরা দুজনে ছেলেবেলা থেকেই গান শিখি। বড়ো ভাই যেহেতু গান করে তাই বড়ো ভাইয়ের কারণেই আমি সংগীতশিল্পী হতে আগ্রহী হয়ে উঠি।

আনন্দভুবন : সংগীতের শুরুটা আপনার কীভাবে হয়েছে ?

ইয়াসমিন লাবণ্য : গানের শুরুটা হয়েছে আমার বড়ো ভাইয়ের হাত ধরে। আমি যখন খুব ছোটো ছিলাম আমার বয়স যখন সাড়ে তিন বছর তখন থেকেই ওর কাছ থেকে আমি সা রে গা মা পা শিখি এবং গানের তালিম নিই। পাশাপাশি পান্না আহমেদ নামে আমার একজন সংগীত শিক্ষক ছিলেন তার কাছে আমি অনেক বছর শিখেছি। তারপর বুলবুল ললিতকলা থেকে সংগীতের ওপর পাঁচ বছরের কোর্স করি। এরপর সালাউদ্দিন আহমেদ, রশিদ-উন-নবী, তৃষ্ণা ম্যাডামসহ অনেকের কাছেই তালিম নিয়েছি। বর্তমানে আমি গান নিয়ে মাস্টার্স করছি ইউডাতে এবং অসিত দে’র কাছে গানের তালিম নিচ্ছি। 

আনন্দভুবন : কোন ধরনের গান গাইতে আপনি পছন্দ করেন ?

ইয়াসমিন লাবণ্য : মূলত আমার বেসিক হচ্ছে নজরুলসংগীত। নজরুলের গান গাইতে ভালো লাগে। নজরুলের বাইরে আধুনিক মেলোডিয়াস, শাস্ত্রীয়সংগীত, ক্লাসিকাল এগুলোও গাই।

আনন্দভুবন : বিভিন্ন চ্যানেলের স্টেজ শোগুলোতে ফোক গানও গাইতে দেখি আপনাকে।

ইয়াসমিন লাবণ্য : আসলে একজন শিল্পীকে সবধরনের গানই গাইতে হয়। স্টেজ শোতে মাঝে মাঝে ফোক গানও গাইতে হয়। একদমই নিজের জায়গা থেকে এবং ভালোবাসা থেকে চেষ্টা করি এই গানগুলো গাইতে।

আনন্দভুবন : শফিক তুহিনের সঙ্গে আপনার ‘সোনা জাদু’ নামে একটি গান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সে সম্পর্কে কিছু বলুন 

ইয়াসমিন লাবণ্য : হ্যাঁ, এই গানটা আমার ২০১৪ সালে করা। এই গানটা করে খুব ভালো রেসপন্স পেয়েছি। বলতে পারেন, এই গানটা দিয়ে অফিসিয়ালি আমার ক্যারিয়ার এবং মিডিয়ায় যাত্রা শুরু। তুহিন ভাইয়া আমার গানটা শুনে ওনার সঙ্গে আমাকে কাজ করার সুযোগ দেন। সেজন্য শফিক তুহিন ভাইয়ার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। ওই সময়ে গানটা এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল যে, বিশেষ করে শিশুরা গানটা খুবই পছন্দ করত এবং গাইত। তাছাড়া গানটির মিউজিক ভিডিও যখন করি তখনো খুব এনজয় করেছি। সবকিছু মিলিয়ে প্রথমদিকের কাজ হিসেবে গানটির প্রতি অন্যরকম একটা ভালোবাসা রয়েছে।

আনন্দভুবন : এখন পর্যন্ত কতগুলো একক এবং মিক্সড অ্যালবামে কাজ করেছেন ?

ইয়াসমিন লাবণ্য : এখন পর্যন্ত আমি ২০-২৫টি মিক্সড অ্যালবামে কাজ করেছি। বেশির ভাগ অ্যালবামেই আমি ডুয়েট গান করেছি, আবার কিছু অ্যালবামে সলো গান করেছি। একক গান আমার রেডি আছে। আগামী বছর ঈদে এবং ভ্যালেন্টাইন ডেতে বের করার প্ল্যান করছি। অফিস এবং পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ততার কারণে মাঝখানে সময় দিতে পারছিলাম না। তাছাড়া করোনার কারণেও কাজের ব্যাঘাত ঘটে। এখন আসলে পুরোটাই প্ল্যান করছি নিজের একক গান নিয়ে।

আনন্দভুবন : কতগুলো ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন ?

ইয়াসমিন লাবণ্য : আমি ‘অগ্নি’, ‘আমার প্রেম আমার প্রিয়া’, ‘রাগি’সহ বেশ কয়েকটি ছবিতে প্লেব্যাক করেছি।

আনন্দভুবন : সংগীতজীবনে বিশেষ কোনো স্মৃতি আছে কি ?

ইয়াসমিন লাবণ্য : বিশেষ স্মৃতি বলতে আমি বলবো প্লেব্যাকে কাজ করা। আমার মনে হয় প্রথম প্লেব্যাকে কাজ করার ইচ্ছা প্রত্যেক শিল্পীরই থাকে। একজন সংগীতশিল্পীর স্বপ্নের জায়গাটা হচ্ছে প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে কাজ করা। প্রথম যেদিন প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে কাজ করি, সেদিনটা আমার কাছে বিশেষ স্মৃতি হয়ে রয়েছে। 

আনন্দভুবন : গানের বাইরে আর কী করছেন ?

ইয়াসমিন লাবণ্য : গানের বাইরে আমি একজন নৃত্যশিল্পী। আমাকে নৃত্যশিল্পী হিসেবে সবাই চেনে। মাছরাঙা টেলিভিশনে ‘রাঙা সকাল’ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করছি পাঁচ বছর যাবৎ। পাশাপাশি শিল্পকলা একাডেমিতে চাকরি করছি। চাকরির বয়স ছয় বছর। 

আনন্দভুবন : মহামারি করোনা সংগীতজগতে কতটা প্রভাব ফেলেছে বলে আপনি মনে করেন ?

ইয়াসমিন লাবণ্য : অবশ্যই ক্ষতি করেছে। করোনার প্রথম বছর তো আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম কতটুকু সুস্থ থাকতে পারবো এটা নিয়ে। তারপর সবার মাঝে আস্তে আস্তে ভয়টা একটু কমতে শুরু করল এবং আমরা একসময় বুঝতে পারলাম, বসে না থেকে সাবধানতার সঙ্গে কাজগুলো করে যেতে হবে। আসলে শুধু সংগীত নয় কমবেশি সব সেক্টরেই করোনা ক্ষতি করেছে। এখন যেহেতু ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা হয়েছে তাই আমরা খুব তাড়াতাড়ি করোনাকে ওভারকাম করতে পারব। এবং মোটামুটি সবাই নিউ নরমাল লাইফ লিও করতে পারব এবং আশা করি, আগের মতো কাজ করতে পারব।

আনন্দভুবন : সংগীত নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী ?

ইয়াসমিন লাবণ্য : সংগীত নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা একটাই ভালো ভালো কাজ করতে চাই। আমি খুবই কম এবং সিলেক্টিভ কিছু কাজ করি। একটাই ইচ্ছা সেই কাজগুলো ভালোভাবে শিখে পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যেন গান করতে পারি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমার একটা ইচ্ছা, ভালো কিছু গান যেন শ্রোতাদের উপহার দিয়ে যেতে পারি। 

আনন্দভুবন : অবসরে কী করেন ?

ইয়াসমিন লাবণ্য : অবসরে ফ্যামিলিকে সময় দিতে পছন্দ করি। সুযোগ পেলে ঘুরতে যাই। বাসায় থাকলে মুভি দেখি, সিরিজ দেখি, গান শুনি, সাইকেল চালাই।

আনন্দভুবন : প্রিয় শিল্পী কে ?

ইয়াসমিন লাবণ্য : আমার প্রিয় শিল্পীর তালিকা অনেক বড়ো। বাংলাদেশের মধ্যে জানতে চাইলে বলব, সামিনা চৌধুরী। ওনার গান খুব পছন্দ করি। উনি আমার প্রিয় শিল্পীর তালিকায় একজন। তাছাড়া ছোটবেলায় আমি আমার মায়ের সঙ্গে একটা বিষয় শেয়ার করতাম। সেটা হলো আমার নামের সঙ্গে দুজন স্বনামধন্য শিল্পীর মিল আছে। তারা হলেন রুনা লায়লা এবং সাবিনা ইয়াসমীন। আমার পুরো নাম যেহেতু লায়লা ইয়াসমিন লাবণ্য। তাই এ বিষয়টি আমি খুব উপভোগ করি। আর দেশের বাইরে শ্রেয়া ঘোষাল, শুভমিতা ও এডেলের গান শোনা হয়।

আনন্দভুবন : আনন্দভুবনকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ইয়াসমিন লাবণ্য : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।