আমি যতটা প্রেমময়ী তারচেয়ে বেশি মমতাময়ী -শেঁউতি শাহগুফতা

24 Aug 2021, 01:07 PM রঙ্গশালা শেয়ার:
আমি যতটা প্রেমময়ী তারচেয়ে বেশি মমতাময়ী -শেঁউতি শাহগুফতা

শেঁউতি শাহগুফতা নম্রতা শিশুকাল থেকেই বেড়ে উঠেছেন শিল্পমণ্ডিত পরিবেশ। ২০১০ সাল থেকে তিনি নাটকের দল বটতলার সঙ্গে যুক্ত আছেন। পেশাগতভাবে তিনি একজন কণ্ঠশিল্পী, যুক্ত আছেন দুরন্ত টিভির একদম শুরু থেকে। এই টিভি চ্যানেলের ডাবিং টিমের সর্বপ্রথম সদস্য, কাজ করছেন কণ্ঠাভিনয় নির্দেশক হিসেবে। তার বিস্তারিত নিয়ে এবারের রঙ্গমঞ্চ।

প্রথমেই শিল্পের অঙ্গনে যুক্ত হওয়ার প্রসঙ্গে এলে শেঁউতি শাহগুফতা নম্রতা বলতে শুরু করেন, ‘নানা অগ্রণী শিল্পীগোষ্ঠীর সাথে ছিলেন। বাবা-মা একসঙ্গে থিয়েটার করতেন। এছাড়া মা, নানি, মায়ের খালা মামারা উদীচীর সাথে যুক্ত ছিলেন। ছেলেবেলা থেকে দেখেছি ফুপ্পিরা সকালবেলা উঠে গানের রেওয়াজ করছেন। অর্থাৎ ছেলেবেলা থেকেই একটা শিল্পমণ্ডিত পরিবেশ পেয়েছি। গানের প্রতি প্রচন্ড ভালোবাসা ছিল। আড়াই বা তিন বছর বয়সে লিলি ইসলাম, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, গীতা দত্ত, হৈমন্তী শুক্লা প্রমুখ শিল্পীর অনেক অনেক গান মুখস্থ ছিল। ৫-৬ বছর বয়সে সূর্যমুখী নামের এক সংগঠনের সাথে গান, আবৃত্তি, মঞ্চে নাটক করেছি। বাবা ও চাচা ছিলেন কারক নাট্য সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। 

এবার জানতে চাইলাম তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা নিয়ে। জবাবে শেঁউতি বললেন, ‘গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ, নওমহলে। জন্ম বড়ো হওয়া সব ঢাকায়। কিন্তু দাদা বাবা সব ঢাকায় সেটেলড হওয়ায় গ্রামের সাথে সম্পর্ক নেই বললেই চলে। বড়ো হয়েছি একান্নবর্তী পরিবারে। দাদা, দাদি, চাচা, তিন ফুপু, মা বাবার সাথে। দাদি আর ছোটো ফুপুর সাথে সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো।’

শাহগুফতা’র মায়ের অনেক শখ ছিল মেয়েকে ভিকারুননিসা স্কুলে পড়াবে। ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সেখানে পড়ার সুযোগও পেয়ে যান। পরবর্তীসময়ে স্কুল পাস করে ভর্তি হন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ রাইফেলস পাবলিক কলেজে। শাহগুফতা জানান, তিনি পড়াশোনায় মেধাবী ছিলেন ছেলেবেলা থেকেই। ছেলেবেলা থেকেই বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতে অসম্ভব দক্ষতা ছিল। নানার সাথে ইংরেজিতে কথা বলতেন। বাংলার মতোই ইংরেজিতে কথা বলা আগে শিখে পরে গ্রামার শিখেছেন। মাধ্যমিকের পর ইডেনে ভর্তি হয়েছিলেন পলিটিক্যাল সায়েন্সে। ইচ্ছা ছিল পরের বছর মাইগ্রেশন করে বদলি হবেন ইংরেজিতে অনার্স করার জন্য। কিন্তু ওইবার মাইগ্রেশন সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করতে আর ভালো লাগেনি। পরে একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে অনার্স করার জন্য। অনার্স ৩য় বর্ষে থাকাকালীন তার বাবা মারা যায়। বাবাকে তিনি বাপজি ডাকতেন। বাপজির সবচেয়ে কাছের সবচেয়ে আদরের ছিলেন তিনি। কিন্তু বাবা একমাত্র আয়ের উৎস হওয়াতে বাবা চলে যাওয়ার পর পরিবারের দায়িত্ব নিতে গিয়ে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীসময়ে চাকরি করে প্রাইভেটে ডিগ্রি পাশ করেন। 

পড়ালেখার কথা শেষ করতেই এই শিল্পীকে আবার প্রশ্ন করলাম, থিয়েটারে কীভাবে এলেন ? আবার বলতে শুরু করলেন শাহগুফতা, ‘ভার্সিটির একটা অনুষ্ঠানে নাটকে অভিনয় করে চোখে পড়ি এক সিনিয়রের। তিনি আমাকে বটতলায় নিয়ে আসেন। ২০১০ সাল থেকে বটতলার সাথে যুক্ত আছি। বটতলার হয়ে খনা, দ্য ট্রায়াল অব মাল্লাম ইলিয়া, মধু শিকারি, সুন্দরবন গাঁথা, আর নয় চুপ থাকা, জতুগৃহ, তুমিই বাংলাদেশ, বন্যথেরিয়াম নাটকগুলোতে অভিনয় করেছি।

অভিনীত এই নাটকগুলোর মধ্যে এই অভিনয়শিল্পী সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন- ‘মধু শিকারি’ নাটকের গোলাপজান চরিত্রটি। পালা ফর্মে করা নাটকটিতে গাইতে গাইতে অভিনয় করা খুব উপভোগ করেন তিনি। জানালেন, তার আরও ভালো লাগে সামিনা লুৎফা নিত্রা রচিত ও মোহাম্মদ আলী হায়দার নির্দেশিত ‘খনা’ নাটকে রানি সুমিত্রার চরিত্রে অভিনয় করতে। খনার মিউজিকের কাজও করেন তিনি। বললেন, ‘যখন মিউজিক করতে বসি তখন বুকে একটা আরাম অনুভব করি।’

নিজের কাজের জায়গা সম্পর্কে তিনি বলেন, পেশাগতভাবে আমি একজন কণ্ঠশিল্পী, যুক্ত আছি দুরন্ত টিভির একদম শুরু থেকে। ডাবিং টিমের সর্বপ্রথম সদস্য, কাজ করছি কণ্ঠাভিনয় নির্দেশক হিসেবে। দুরন্ত টিভি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে আরামের জায়গা, কাজের ক্ষেত্রে বন্ধুবৎসল একটা পরিবেশ পেয়েছি। এছাড়া বিভিন্ন টিভিসি, ওভিসি, আরডিসি, আইভিআর, প্রামাণ্যচিত্রে ভয়েস দিই। আমি চাই একদিন বাংলাদেশের যেকোন চ্যানেল খুললেই যেন আমার ভয়েস পাওয়া যায়।’ 

আলাপের শেষে এসে এ নাট্যকর্মী বললেন, ‘মায়ের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক আমার, মা আমার বন্ধু, আমার মেয়ে, আমার মা, সব। আমি মানুষকে ভালোবাসতে, যত্ন নিতে খুব ভালোবাসি। আমার আশে পাশে মানুষ কখনোই মন খারাপ করে থাকতে পারে না। এটাই আমার সবচেয়ে বড়ো অর্জন। অনেক অনেক মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। ‘খনা’ নাটকের একটা সংলাপ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি ‘এত সব মানুষের ভালোবাসার পাথেয় নিয়েও তো বেঁচে থাকা যায় অযুত বছর’। বাপজি বলেছিল, আমি যতটা প্রেমময়ী তারচেয়ে বেশি মমতাময়ী। বাপজির মতো ব্যক্তিত্ব ও মা’র মতো মানুষ হতে চাই ? 

লেখা : নিথর মাহবুব