বর্ষায় অন্দরমহল ভালো রাখবেন যেভাবে

13 Jul 2021, 12:19 PM অভোগ শেয়ার:
বর্ষায় অন্দরমহল ভালো রাখবেন যেভাবে

বাংলার প্রকৃতিতে এখন বর্ষাকাল! আর বর্ষা মানেই তো এক পশলা বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া মনের কোণ! হৃদয়ের দক্ষিণ দুয়ার খুলে দিয়ে দমকা হাওয়ার আলিঙ্গন! বর্ষার আগমনে আপনার মন ঠিক এমনি করে ভালো হয়ে গেলেও, ভালো থাকছে কি আপনার ঘরদোর, আসবাপত্র, জামাকাপড় ? বর্ষায় অন্দরমহল ও জামাকাপড়ের কিছুটা বাড়তি যত্ন-আত্তির প্রয়োজন পড়ে। বর্ষাকালে

জামাকাপড় ভালো রাখা, বাড়িঘর পোকামাকড় মুক্ত রাখা এবং আসবাবপত্রের যত্ন নিয়ে

কিছু পরামর্শ থাকছে এবারের অঁভোগ আয়োজনে

যত্নে থাকুক জামাকাপড়

বৃষ্টিতে জামাকাপড় নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে অনেক বেশি। তাই বর্ষাকালে কাপড় নিয়ে সচেতন থাকতে হবে ; নিতে হবে বিশেষ যত্ন,,,

*     বৃষ্টির সময় পোশাকে কাদা লেগে গেলে প্রথম ডিটারজেন্ট ব্যবহার না করে কাদা লাগা স্থানগুলো পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এরপর পুরো কাপড় আলাদাভাবে ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে পুরো কাপড়ে দাগ ছড়াবে না।

*     বৃষ্টির দিনে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে। ফলে কাপড় শুকাতে বেশি সময় লাগে। যদি কাপড় ভালোভাবে না শুকায় তবে ইস্ত্রি করে নিন। এতে ভ্যাপসা ভাব কেটে যাবে।

*     আলমারিতে রাখার সময় কাপড়ের ফাঁকে ন্যাপথলিন রেখে দিন। এতে ছত্রাক থেকে কাপড় সুরক্ষিত থাকবে।

    চেষ্টা করুন ঘরের ভেতর কাপড় না শুকাতে। রোদ বা বাইরের আলো ছাড়া কাপড় শুকাতে দিলে কাপড়ের জীবাণু সহজে দূর হয় না। জমে থাকা জীবাণু থেকে ত্বকে নানারকম সমস্যা হতে পারে।

*     বারান্দায় যেখানে বৃষ্টির পানির ছাঁট আসে না, সেখানে কাপড় রাখুন। রোদ উঠলে রোদে দিন।

*     কাপড় দু-তিন দিন ভেজা থাকলে ব্যাকটেরিয়ার কারণে বাজে গন্ধ বের হয়। ডিটারজেন্ট ও অ্যান্টিসেপ্টিক লিকুইড দিয়ে কাপড়টা আবার ধুয়ে নিলে গন্ধ দূর হয়ে যায়।

*     রোদ উঠলে ভেজা কাপড় শুকাতে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘরের আলমারি, ওয়্যারড্রপ, দরজা-জানালা সব খুলে দিন। তাহলে গুমোট ভাব দূর হয়ে যাবে। ঘরে রোদ না এলে আলমারির কাপড় বিছানায় মেলে দিয়ে ফ্যান ছেড়ে দিন।

    আর্দ্রতা টেনে নেওয়ার জন্য আলমারির ভেতর খবরের কাগজ রাখতে পারেন।

*    কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে চন্দন কাঠ বা গায়ে মাখার সাবান, পারফিউমের বোতল রাখলে কাপড় সুগন্ধযুক্ত থাকবে।

বর্ষায় ঘরবাড়ি থাকুক পোকামাকড় মুক্ত

বর্ষায় ঘরে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় যেমন, পিঁপড়া, তেলাপোকা, কেঁচো, মশা, মাছি ছাড়াও নাম না জানা অনেক পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যায়। তাই বাড়িঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে উদ্যোগ নিন। এতে আপনার বাড়ি হবে পোকামাকড় মুক্ত এবং আপনি থাকবেন রোগবালাই মুক্ত...


* তেলাপোকা ও পিঁপড়া : তেলাপোকা ও পিঁপড়ার উপদ্রব এ-সময় বেড়ে যায়। তাই সবসময় ঘর পরিষ্কার রাখুন। বেসিনের সিঙ্কে যাতে খাবার জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন। প্রতিদিনের ময়লা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে আসুন। রান্নাঘর স্যাভলন ও ভিনেগার দিয়ে মুছে নিন। পিঁপড়ার উপদ্রব কমাতে জানালায় ও দরজায় বরিক পাউডার ঢেলে রাখুন।

* পোকামাকড় : বর্ষার সময় রান্নাঘরের সিঙ্ক ও বাথরুমের বেসিন বা কমোড দিয়ে বিভিন্ন পোকামাকড় উঠে আসে। এর থেকে রক্ষা পেতে গরম পানিতে স্যাভলন মিশিয়ে কয়েক দিন পরপর কমোড, বেসিন ও রান্নাঘরের সিঙ্কে ঢালুন।

বিশেষ করে, যেদিন বৃষ্টি পড়বে সেদিন। তবে ঢালার সময় এমনভাবে ঢালুন যাতে সরাসরি পাইপে পড়ে। না হলে কমোড কিংবা বেসিনে চিড় ধরতে পারে।

* মশা-মাছি : মশা-মাছির উপদ্রব থেকে বাঁচতে কয়েক টুকরো কর্পূর আধকাপ পানিতে মিশিয়ে ঘরের এক কোণে রেখে দিন। রান্নাঘরে ঢাকনা দেওয়া ডাস্টবিন ব্যবহার করুন। এ ছাড়া শুকনা চা-পাতা পোড়ানো ধোঁয়া ছড়িয়ে দিন পুরো বাড়িতে। এতে মশা-মাছির উপদ্রব কমে যাবে।

* এ ছাড়া অন্যান্য পোকামাকড় থেকে রক্ষা পেতে রান্নাঘরের কেবিনেট, বুক সেলফ, আলমারিসহ ঘরের বিভিন্ন জায়গায় নিমপাতা ও কালিজিরা কাপড়ে মুড়ে বেঁধে রাখুন। এছাড়া এক কাপ নারিকেল তেলের সঙ্গে কর্পূরের গুঁড়ো মিশিয়ে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ছিটিয়ে দিন। ঘরের কোণায় কীটনাশক স্প্রে করতে পারেন। পোকামাকড়ের আনাগোনা কমাতে বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। এর বদলে প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করুন।


কাঠের আসবাবের যত্ন

বর্ষার স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় ঘরের আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ, বর্ষায় বাতাসে মিশে থাকা জলীয়বাষ্প প্রভাব ফেলে কাঠের আসবাবে। আসবাবপত্র ফেঁপে যাওয়ার বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায় এ-সময়ে। তাই তো বর্ষাকালে কাঠের আসবাবের প্রয়োজন একটু বাড়তি যত্ন ; একটু বাড়তি সতর্কতা। তহলেই কেবল শীত, গ্রীষ্ম বা বসন্তে নয়, বর্ষাতেও সুন্দর থাকবে আপনার অন্দরমহলের আসবাবপত্র...

* ন্যাপথালিনের ব্যবহার : আদ্রতা শোষণের কার্যকর একটি উপাদান হলো কর্পূর বা ন্যাপথালিন। ন্যাপথালিন ব্যবহারে কাঠের আসবাবে গুছিয়ে রাখা কাপড় ভালো থাকে। কেবল কাপড়ই নয়, কাঠের ওয়্যারড্রোব বা আলমারিও পোকামাকড়সহ অন্যান্য কীট থেকে রক্ষা করে। তাই, বর্ষা আসার আগেই এ-ধরনের আসবাবের কোণায় কোণায় কিংবা ড্রয়ারে ন্যাপথালিন দিয়ে রাখুন। কেবল বর্ষাই নয়, স্যাঁতসেঁতে গন্ধ এড়াতে, সারাবছরই প্রয়োজনীয় আসবাবে ন্যাপথালিন ব্যবহার করতে পারবেন।

* আর্দ্রতা থেকে দূরে রাখুন : বর্ষাকালে আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে ঘরের দেয়ালের আর্দ্রতা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। আর এই দেয়াল থেকে আদ্রতা টানার একটা প্রবণতা থাকে কাঠের আসবাবের। যার ফলে আসবাবে ছত্রাক পড়ে চকচকে ভাব নষ্ট হতে পারে। তাই, আসবাবপত্রকে ছত্রাক থেকে বাঁচাতে দেয়াল থেকে কমপক্ষে ছয় ইঞ্চি দূরে আসবাবপত্র রাখুন। বৃষ্টির সময় চেষ্টা করুন ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে, যাতে করে বৃষ্টির পানি আপনার আসবাবপত্র পর্যন্ত পৌঁছাতে না পারে। আর বৃষ্টি থেমে গেলেই জানালা খুলে দিন। এতে ঘরে আলোবাতাস ঢুকবে এবং ঘর আর্র্দ্রতামুক্ত থাকবে। প্রয়োজনে আসবাব জানালা-দরজার কাছ থেকে সরিয়ে রাখতে পারেন। যেন বৃষ্টির পানি এসবের গায়ে না লাগে।

* পরিষ্কার করতে শুকনো কাপড়ের ব্যবহার : কাঠের আসবাব যখন পরিষ্কার করবেন তখন অবশ্যই শুকনো কাপড় বা ব্রাশের সাহায্যে পরিষ্কার করুন। নিয়মিত পরিষ্কার করলে বর্ষায় কাঠের আসবাবে ময়লা আটকানোর প্রবণতা কমবে। ভুল করেও ভেজা কাপড় লাগাবেন না, এতে আসবাবপত্রে ছত্রাক পড়তে পারে। এবং আর্দ্রতার কারণে ফাটলও ধরতে পারে। যেকোনো আসবাবই সব সময় পানি থেকে দূরে রাখুন। এমনকি হাতে পানি লেগে থাকা অবস্থায় কোনো আসবাব হাত দিয়ে স্পর্শ করবেন না। যত্ন যখন নিতেই হবে, ঠিক উপায়ে যত্ন নিন। এতে করে বর্ষাকালেও যত্নে থাকবে কাঠের আসবাবপত্র।

* বাসার মেঝে শুকনো রাখুন : অনেক ক্ষেত্রে, বাইরের আবহাওয়ার আর্দ্রতা প্রভাব ফেলে মেঝেতে। ফলে, ঘরের মেঝে ভেজা ও স্যাঁতসেঁতে হয়ে থাকে। কিন্তু, বহুদিন ধরে এই অবস্থা চলতে থাকলে, কাঠের আসবাবের ক্ষতি হতে পারে দ্রুত। তাই বাসার মেঝে, সব ঋতুতেই শুকিয়ে রাখার চেষ্টা করুন। ভেজাভাব শুকিয়ে ফেলার জন্য শুকনা কাপড় দিয়ে মেঝে মুছে নিন এবং সিলিং ফ্যান চালু করে রাখুন। এতে মেঝে দ্রুত শুকিয়ে যাবে ও আপনার আসবাবপত্র সুরক্ষিত থাকবে।

* চায়ের লিকার ব্যবহার : সবরকম সতর্কতার পরেও যদি কোনো কারণে ফাঙ্গাস জমে, তাহলে কড়া করে চায়ের লিকার তৈরি করে নিন। এবার তার মধ্যে সামান্য ভিনিগার মিশিয়ে সেই মিশ্রণ দিয়ে আসবাবপত্রের ফাঙ্গাস লাগা অংশ পরিষ্কার করুন।

* নিমপাতা বা নিমের তেল ব্যবহার : বর্ষাকালে কাঠের আসবাবে পোকা বা ঘুন ধরার প্রবণতা বাড়ে। নিমপাতা, নিমের তেল, কর্পূর ও রাবিং অ্যালকোহল বা স্পিরিট একসঙ্গে মিশিয়ে একটা স্প্রে বোতলে ভরে রেখে দিন এবং যেখানে ঘুন ধরেছে সেখানে স্প্রে করে দিন। এই মিশ্রণ আপনার সাধের আসবাবকে পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচাবে।

বার্নিশ ব্যবহার : কাঠের আসবাব ভালো রাখতে বছরে দু-একবার বার্নিশ বা লিকারের প্রলেপ দিতে পারেন। এতে কাঠের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যাবে। যার ফলে এর ফোলাভাব দূর হয়ে কাঠ ভালো থাকবে।

* হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন : পছন্দের আসবাব মানেই এর সাথে মিশে থাকে অনেক স্মৃতি। কখনো কখনো তো, একটু একটু করে সঞ্চয় করা টাকা খরচ করে কেনা হয় শখের কোনো আসবাব! তাই তো, ঘরের আঙিনায় প্রতিটি আসবাবের মূল্যই যেন একটু বেশি। আর সে কারণেই, মূল্যবান এই আসবাবগুলো ভালো রাখতে কিছু টাকা খরচ করে কিনে নিতে পারেন হিউমিডিফায়ার। এটা একইসাথে আপনার ঘরের তাপমাত্রা ঠিক রাখবে ও স্যাঁতসেঁতে ভাব দূর করবে। আর, ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকা মানেই, আপনার আসবাবের স্থায়িত্ব বেড়ে যাবে কয়েক গুণ।   

 গ্রন্থনা : শ্যামল কায়া