ফল বিক্রেতা থেকে নায়ক দিলীপ কুমার

08 Jul 2021, 02:58 PM বলিউড শেয়ার:
ফল বিক্রেতা থেকে নায়ক দিলীপ কুমার

প্রয়াত হলেন নায়ক দিলীপ কুমার। ৭ জুলাই ২০২১ সকালে মুম্বাইয়ের পিডি হিন্দুগা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বরেণ্য এই অভিনয়শিল্পী সেখানেই দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। একজন সামান্য পেশোয়ারী বালক থেকে বলিউডের কিং হয়ে ওঠা দিলিপ কুমারকে নিয়ে

বর্তমানে বলিউড শাসন করছে যেমন তিন খান মানে আমির, সালমান, শাহরুখ গত শতকের পাঁচ ও ছয়ের দশকে তেমনি রাজত্ব ছিল তিন সুদর্শন নায়কের দিলীপ কুমার, দেব আনন্দ এবং রাজ কাপুর।
১৯২২ সালের ১১ ডিসেম্বর পাকিস্তানের পেশোয়ারে এক পাঠান মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন হিন্দি সিনেমা জগতের বিখ্যাত নায়ক দিলীপ কুমার, যার প্রকৃত নাম ইউসুফ খান।

তার পিতা লালা গোলাম সারওয়ার ছিলেন মূলত একজন ফল ব্যবসায়ী। মায়ের নাম আয়েশা বেগম। তিনি নাসিকের কাছে দেউলিয়ার বারনর্স স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শেষ করেন। দিলীপ কুমারের বাবা ব্যবসায়ের কাজে হরহামেশাই বোম্বে [মুম্বাই ] আসতেন। ফ্রন্টিয়ার মেল নামে এক ট্রেন সরাসরি যাতায়াত করত পেশোয়ার থেকে বোম্বে। সেই ট্রেনে চেপে তিনি প্রথম আসেন বোম্বে শহরে। ১৯৩০ সালের দিকে দিলীপ কুমারের পুরো পরিবার পাড়ি জমান মুম্বাইয়ে। দিলীপ কুমার ১৯৩৭ সালের দিকে বোম্বের আঞ্জুমান ইসলাম হাই স্কুলে ভর্তি হন। এর কিছুদিন পর পুনেতে চলে যান। কয়েক বছর পর আবারও বোম্বে ফিরে আসেন। এসে ভর্তি হন বোম্বের খান শাহ কলেজে। এখানেই তার পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয় নায়ক রাজ কাপুরের সঙ্গে। দিলীপ কুমার পড়তে পছন্দ করতেন যদিও তিনি ছাত্র ভালো ছিলেন না। ইংরেজি ও উর্দু-সাহিত্য পছন্দ করতেন তিনি। তার বাবা চাইতেন তার ছেলে যেন ব্রিটিশ চাকুরে হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে পিতার ফলের ব্যবসায় ধস নামে। পারিবারিক কলহে পিতার সঙ্গে ঝগড়া করে পালিয়ে পুনে চলে যান দিলীপ কুমার। বেশ একটা অ্যাডভেঞ্চারে কাটছিল নিয়ে দিনগুলো। এক রেস্টুরেন্টে কাজ করে ভালোই আয় করছিলেন তিনি। কিন্তু যুদ্ধের কারণে এখানেও প্রভাব পড়তে শুরু করে। অবশেষে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত। পিতা-পুত্রের অভিমানের পর্ব শেষ হলো আলিঙ্গনের মাধ্যমে। ছেলেকে দিলেন ফলের দোকানের দায়িত্ব। তবে ভাগ্যের পরিকল্পনা ছিল অন্য। মূলত তিনি আসেন বোম্বে টকিজের দরজায়। বোম্বে টকিজ তৎকালীন হিন্দি চলচ্চিত্র প্রযোজনার এক নম্বর প্রতিষ্ঠান। এর দায়িত্বে ছিলেন মিস দেবিকা রানি। তখন পর্যন্ত ইউসুফ খান তেমন কোনো সিনেমা দেখেননি। এক পরিচিতের সঙ্গে তিনি আসেন মিস দেবিকা রানির কাছে, প্রথম দেখাতেই সুদর্শন ইউসুফকে পছন্দ করে ফেলেন দেবিকা রানি। মসিক ১২৫০ টাকা বেতনে তিনি অভিনেতা হিসাবে নির্বাচিত করেন ইউসুফ খানকে, সেটা ১৯৪২ সালের কথা। তখন সিনেমায় প্রকৃত নাম গোপনের একটা প্রচলন ছিল।
দেবিকা রানির ইচ্ছেতে ইউসুফ খান থেকে তিনি হয়ে গেলেন দিলীপ কুমার। দিলীপ কুমারের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার নাম ‘জোয়ার ভাটা’। পরের সিনেমা ‘প্রতিমা’ মুক্তি পায় ১৯৪৫-এ এবং ‘মিলন’ মুক্তি পায় ১৯৪৭ সালে। তবে দিলীপ কুমারকে সফল নায়ক করে তোলে ‘জুগ্নু’ ছবিটি যেটি মুক্তি পায় ১৯৪৭ সালে। অভিনেত্রী কামিনী কুশনের সঙ্গে পর্দায় বেশ সফল জুটি গোড়ে ওঠে ওই সময়। আশক কুমারের পর তিনি হয়ে ওঠেন হিন্দি সিনেমার সফল নায়ক। এ-সময় পুরো পরিবারসহ অভিজাত এলাকা বান্দ্রায় বসবাস করতে শুরু করেন দিলিপ কুমার।
১৯৫৫ সালে ‘দেবদাস’ সিনেমায় অভিনয় করে তিনি ট্রাজেডি কিং উপাধি পান।

১৯৬০ সালে মুক্তি পায় তার বিখ্যাত সিনেমা মোঘল-ই-আজম। সিনেমায় দিলিপ-মধুবালার রসায়ন মুগ্ধ করে দর্শকদের। অবশ্য আগে থেকেই বাস্তবজীবনে তাদের সম্পর্কের কথা ভক্তদের ভালোই জানা ছিল।

দিলীপ-মধুবালার সম্পর্কে একসময় ভাঙনের সুর বেজে ওঠে। এই ভাঙনের পর দিলীপ অবশ্য অনেক দিন অবিবাহিত ছিলেন। ৪৪ বছর বয়সে ২২ বছরের সায়রা বানু-কে বিয়ে করেন তিনি। ১৯৮১ সালের দিকে আসমা সাহিবা-কে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু তা বছর দুয়েকের মধ্যেই ভেঙে যায়। পরে তিনি আবার সায়রার সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। নবাগত অমিতাভ, শশি কাপুরদের যুগেও সমান জনপ্রিয়তা নিয়ে অভিনয় করে গেছেন। ১৯৯৮ সালে উমেশ মেহরার ছবি ‘কিলা’-তে দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেন। এটিই তার অভিনীত শেষ সিনেমা।

দিলীপ কুমার তার বর্ণাঢ্য অভিনয় জীবনে পেয়েছেন বহু পুরস্কার। তিনি আকমাত্র ভারতীয় অভিনেতা যিনি সর্রবচ্চো সংখ্যক বিজয়ী হবার জন্য গিনেজ বুকে নাম উঠিয়েছেন। আটবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতাসহ ১৯ বার ফিল্ম ফেয়ার মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। ১৯৯৩ সালে আজীবন সম্মাননা পান। ২০১৫ সালে ভারত সরকার তাকে পদ্মভূষণ ঘোষণা করে। ১৯৯৪ সালে পান দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার। এত বর্ণাঢ্য জীবনের অবসান ঘটল ৯৮ বছর বয়সে। শ্বাস জনিত কারণে অনেকদিন ধরেই তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।

লেখা : ফাতেমা ইয়াসমিন



দিলীপ কুমার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমা

জোয়ার ভাটা [১৯৪৪]

প্রতিমা [১৯৪৫]

মিলন [১৯৪৭]

জুগ্নু [১৯৪৭ ]

শবনম [১৯৪৯]

জোগান [১৯৫০]

তারানা [১৯৫১]

সাঙ্গদিল [১৯৫২]

অমর [১৯৫৪]

নয়া ডর [১৯৫৭]

মুসাফির [১৯৫৭]

ইহুদী [১৯৫৮]

কোহিনুর [১৯৬০]

গঙ্গা যমুনা [১৯৬১]

দিল দিয়া দার্দ লিয়া [১৯৬৬]

রাম অর শ্যাম [১৯৬৭]

সংঘর্ষ [১৯৬৮]

দাস্তান [১৯৭২]

সাগিনা [১৯৭৪]

বৈরাগ [১৯৭৬]

ক্রান্তি [১৯৮১]

বিধাতা [১৯৮২]

দুনিয়া [১৯৮৪]

ধরম [১৯৮৬]

কানুন আপনা আপনা [১৯৮৯]

ইজ্জতদার [১৯৯০]

সওদাগর [১৯৯১]

কিলা [১৯৯৮]