একটি অন্যরকম গোরুর রচনা

30 Jun 2021, 05:03 PM অন্যান্য শেয়ার:
একটি অন্যরকম গোরুর রচনা

ছেলেবেলায় গোরুর রচনা মুখস্থ করেননি এবং পরীক্ষার খাতায় লেখেননি এমন বাঙালি খুব কমই আছেন। অনেকে তো কেবল গোরুর রচনা মুখস্থ করে পরীক্ষার হলে গিয়েছেন এই ভেবে যে গোরুর রচনা তো আসবেই। কিন্তু, হায় এলো নদীর রচনা। বাঙালির বুদ্ধি দড়। গোরুকে টেনে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে গেলেন নদীতীরে। তারপর লিখতে শুরু করলেন গোরু একটি গৃগপালিত পশু। তার দুই চোখ, দুটি কান ইত্যাদি ইত্যাদি। বিশে^র বহু দেশের মানুষের মতো বাংলাদেশের মানুষেরও প্রিয় খাবারের তালিকায় গোরুর মাংসের অবস্থান শীর্ষে। 

বাঙালির জীবনে গোরু এমন ওতপ্রতভাবে জড়িয়ে আছে যে এর বানান নিয়েও কম ঝগড়াঝাটি হয়নি ! ১৯৩৬ সালে কলকাতা বিশ^বিদ্যালয়ের নেতৃত্বে গঠিত বানান সংস্কার সমিতির সদস্যরা গোরু শব্দের বানানে ও-কার দেবেন কি দেবেন না তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যান। কী করবেন, বুঝতে না পেরে কলকাতা থেকে রেলযোগে বোলপুরে শান্তি নিকেতনে গিয়ে পৌঁছান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে সমাধান চাইতে। সমস্যা শুনে গুরুদেব কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শেষে বললেন, ও-কার দিলে যদি আমাদের দেশের শীর্ণকায় গোরুগুলো স্বাস্থ্যবান হয় তাহলে ও-কার দিতে কোনো অসুবিধা নেই- এমন গোছের কিছু একটা। অর্থাৎ তিনি ও-কার প্রযোগের পক্ষেই মত দিলেন। বাংলা অভিধানগুলোতে গোরু বানানে গ-য়ে ও-কার আছে। কিন্তু, বেশির ভাগ বাঙালি গোরু লেখেন ও-কার ছাড়া [গরু]। কেননা ও-কার দিই বা না দিই উচ্চারণ কিন্তু করি ‘গোরু’। তাই বাঙালি ধরে নিয়েছে উচ্চারণে যেহেতু কোনো সমস্যা নেই সেহেতু শুধু শুধু ও-কারের বোঝা বইবো কেন ? কিন্তু, তা বললেই তো আর হয় না- গোরূপ থেকে গোরু তাই গোরু বানানে অবধারিতভাবেই ও-কার প্রয়োগ করতে হবে। গোবর, গোমূত্র, গোচারণ ইত্যাদি সব শব্দের বানানেই তো গ-য়ে ও-কার প্রয়োগ করতে হয়, তবে গোরু বানানে ও-কার দিতে এত অলসেমি কেন ? সে যাকগে, ছাড়–ন বানানের কথা- প্রিয় পাঠক জীবনে অনেক গোরুর রচনা পড়েছেন, লিখেছেন, এবারে পড়ে দেখুন একটি অন্যরকম গোরুর রচনা...

গোরু অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি গৃহপালিত পশু। ভারতবর্ষে একসময় ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা নির্ধারিত হতো তার মালিকানাধীন গোরুর সংখ্যা দিয়ে। মজাদার খাবার হিসেবে সারাপৃথিবীতে বিফ বা গোরুর মাংসের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে সারাবছরই গোরুর মাংসের চাহিদা থাকে। তবে, কোরবানির ঈদে গোরুর চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক হাজার গুণ।  ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদশে গোরুর মাংসের চাহিদা ছিল ৭২ লক্ষ ৯৭ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদিত হয়েছে ৭৬ লক্ষ ৭৪ হাজার মেট্রিক টন। উদ্বৃত্ত ছিল প্রায় ৩ লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি। অপরদিকে, গোরুর দুধের চাহিদা ছিল এক কোটি ৫২ লক্ষ ২ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ৬ লক্ষ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। 

সরকারের নানা উদ্যোগে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে গোরু ও ছাগল উৎপাদনে। গত একবছরে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় তিন লাখ। দেশে সারাবছর মাংসের জোগান ও কুরবানির চাহিদা মেটানোর পর বিদেশেও রফতানি হচ্ছে গরু-ছাগলের মাংস। গবাদিপশু উৎপাদনে নীরব বিপ্লব ঘটেছে দেশে। অথচ পাঁচ বছর আগেও কুরবানির ঈদে বৈধ-অবৈধ পথে ভারত, নেপাল ও মিয়ানমার থেকে ২০ থেকে ২৫ লাখ গরু আমদানি করে দেশের চাহিদা পূরণ করতে হতো। সারাবছরে এই সংখ্যা ছাড়িয়ে যেত ৪০ লাখ।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের চলতি বছরের কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর তথ্য বিশ্নেষণে গোরু-ছাগলের এই সংখ্যা জানা গেছে। আসন্ন ঈদুল আজহায় এবারও কোরবানির গরুর চাহিদা মিটাবে দেশি গোরু।

এর জন্য এক কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। চোরাই পথে গোরু-ছাগল না এলে কোনো সংকট হবে না। এর মধ্যে গোরু-মহিষের সংখ্যা ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার এবং ছাগল-ভেড়ার সংখ্যা ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার। উট-দুম্বাসহ কোরবানির প্রাণী রয়েছে আরও ৪ হাজার ৭ শত ৬৫টি। গত বছর কোরবানিতে জবাই হয়েছিল ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫শ’টি পশু। এর মধ্যে ছাগল-ভেড়া ছিল ৭৩ লাখ। গোরু-মহিষের সংখ্যা ছিল ৪৫ লাখ ৩৮ হাজার।

দেশে গত বছরের চেয়ে গোরুর উৎপাদন বেড়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার আর ছাগল-ভেড়ার উৎপাদন বেড়েছে এক লাখ। এর আগে ২০১৯ সালে কুরবানিতে জবাই হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ ৫শ’টি পশু। ধারাবাহিকভাবে দেশে গোরু-ছাগলের উৎপাদন বাড়ছে। ২০১৮ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় মাংস উৎপাদনে বাংলাদেশের স্বয়ংসম্পূর্ণতা ঘোষণা দেয়।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার [এফএও] তথ্য অনুযায়ী, গবাদিপশু উৎপাদনে বিশ্বে দ্বাদশ স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এককভাবে ছাগল উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ। ছাগলের দুধ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়।

গবেষণায় গোরুর উন্নত জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। গরু মোটাতাজা করে লাভবান হচ্ছেন গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র খামারিরা। গোরু লালন-পালনে বিকশিত হচ্ছে দেশের দুগ্ধশিল্পও। দেশে ডেইরি শিল্প একটি উদীয়মান শিল্প। গরু লালন-পালনের মধ্য দিয়ে দেশের তরল দুধের ঘাটতি মিটানো সম্ভব।’

সীমান্ত পথে গোরু আসা বন্ধ হওয়ার পর আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত হয় গোরু-ছাগল উৎপাদনে বাংলাদেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর পরিকল্পনা গ্রহণ করে। দেশীয় গোরু উৎপাদনে কয়েকটি প্রকল্প ও টিম গঠন করা হয়। নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা হয় খামারিদের সঙ্গে, প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাদের। গ্রামে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। সারাবছরই খামারিরা ভালো দাম পাচ্ছেন। ফলে কোরবানির ঈদের বাজারের শেষ দিন অনেক গোরু ফেরত যাচ্ছে এখন। ভারত, মিয়ানমার এবং নেপাল থেকে গোরু আমদানি নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায়।’

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত খামারির সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। সারাদেশে ছোটো বড়ো মিলিয়ে গোরু-ছাগলের খামার গড়ে উঠেছে প্রায় ৭ লাখ। ফলে গোরু-ছাগলের উৎপাদন বাড়ছে।

কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সম্প্রতি সারাদেশে গোরু-ছাগলের চাষ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এতে একটা সাড়া পড়েছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে। দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে যেসব এনজিও কাজ করছে, তাদের অধিকাংশ এখন ঋণ দিচ্ছে গোরু পালনে। এ খাতে বিনিয়োগ করছে ব্যাংকগুলোও। এতে গোরু পালন বেড়েছে অনেক দ্রুত। চামড়াশিল্পেও রফতানি আয় বাড়ছে। বাণিজ্যিকভাবে গোরু উৎপাদন ছাড়াও কৃষকেরা গোরু লালন-পালন করে দুধ ও বছর শেষে গোরু বিক্রি করে চালাচ্ছেন সংসার। গোরু-ছাগল লালন-পালন এ অঞ্চলের মানুষের আদিম পেশা। শীর্ষে রয়েছে ভারত ও চীন। তিনি বলেন, শুধু উৎপাদন বাড়ানো নয়। জাতগত বৈশিষ্ট্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। বাংলাদেশের গোরুর মাংস সম্পূর্ণ হালাল। গ্রামীণ এলাকায় সামান্য আদরে বেড়ে ওঠা ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল বিশ্বের সেরা জাত।     

বিশ্বের সর্ববৃহৎ গোরুর মাংস রফতানিকারী হিসেবে ভারত এখনো শীর্ষে। আমেরিকান কৃষি দফতর প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী গোরুর মাংস রফতানিতে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলের সঙ্গে দূরত্ব বেশ খানিকটা বেড়েছে ভারতের। ভারত মূলত গোমাংস [বিফ] হিসেবে মহিষের মাংস রফতানি করে থাকে।

এই ডেটা অনুযায়ী ভারত বছরে মোট ২৪ লাখ টন গোমাংস রফতানি করে। ব্রাজিলের গোমাংস রফতানির পরিমাণ ২০ লাখ টন। এই লিস্টে তিন নম্বরে আছে অস্ট্রেলিয়া। রফতানির পরিমাণ ১৫ লক্ষ টন। এই তিন দেশ একযোগে গোটা পৃথিবীর ৫৮.৭% গোমাংস রফতানি করে থাকে। ভারত একই ২৩.৫% গোমাংস রফতানি করে। গত বছর এই পরিমাণটা ছিলো ২০.৮%।

সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি’র প্রকাশিত ডেটা অনুযায়ী ভারতের মহিষের মাংস প্রধানত এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সরবরাহ করা হয়। মোটামুটি ভারত থেকে রফতানি হওয়া গোমাংসের ৮০% এশিয়ায়, ১৫% আফ্রিকায় ও বাকি ৫% পৃথিবীর অন্যান্য বিভিন্ন দেশে সরবরাহ করা হয়।


গোরুর দিনলিপি

গোরু চব্বিশ ঘণ্টায় গড়ে চার ঘণ্টা ঘুমায়। তারা মিক্সড ডায়েট পছন্দ করে অর্থাৎ একই রকমের খাবার থেকে বেছে নেওয়ার সুযোগ দিলে তাদের ৭০ শতাংশ ক্লোভার বা এক ধরনের ছোটো গাছের পাতা খেতে পছন্দ করে, বিশেষত সকালবেলায়। আর বাদ বাকি ৩০ শতাংশ ঘাস খেতে পছন্দ করে। তবে সব জাতের গোরুই কমবেশি ক্লোভার ও ঘাসের মিক্সড ডায়েট পছন্দ করে।

গোরু, বিশেষত ষাড় সম্পর্কে একটি ভুল তথ্য আছে যে, তারা লাল রং দেখলে ক্ষেপে যায় বা উত্তেজিত হয়। বুলফাইট থেকে এই ধারণাটি শুরু হয়েছে। আসলে গোরু, বুলফাইটারের হাতে যে লাল কাপড় থাকে, যাকে বলা হয় কেইপ, সেটা দেখে নয়, কেইপ বা যেকোনো কাপড়ের অতিরিক্ত নাড়াচাড়ায় গোরু খুব বিরক্ত হয়। তখন তারা রেগে চার্জ করে। গোরু রঙের তফাৎ বুঝতে পারে। যেহেতু গোরু অন্য প্রাণী দ্বারা আক্রান্ত হয় সেহেতু, আক্রমণের সম্ভাবনা বিষয়ে গোরু সহজভাবে বুঝতে পারে এবং এ বিষয়ে তার চোখ সবচেয়ে বড়ো সহায়ক। গোরুর ঘ্রাণশক্তি প্রবল। তার একটি প্রমাণ হচ্ছে, গাভী শুধু তার নিজের গর্ভজাত বাছুরকেই নিজের ওলান থেকে দুধ খেতে দেয়। তাই সে আগে বাছুরের শরীর শুকে তার গন্ধ নেয়।  

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গোরু আছে ভারতে, দ্বিতীয় ব্রাজিল এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে চায়না। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে  গোরু পালন এখন মালটি বিলিয়ন ডলার ইন্ডাস্ট্রির ভিত্তি। 

শুধু বিফ নয়- গোরুর দুধ থেকে উৎপাদিত পাউডার দুধ বা গুঁড়োদুধ, বাটার বা মাখন, চিজ বা পনির, ইয়োগোহার্ট বা দইয়ের এবং চকলেটের মালটি বিলিয়ন ডলার ডেয়ারি বিজনেস করছে বিশ্বের বহু দেশ। ইউরোপে উৎপাদিত দুধের পরিমাণ এত বেশি যে, সেখানে দুধের লেইক এবং মাখনের পাহাড় হয়ে আছে। ইউরোপ থেকে পাউডার মিল্ক বা গুঁড়োদুধ বাংলাদেশ এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে রফতানি হয়Ñ যদিও ইউরোপিয়ান দেশগুলো নিজেরা খুব কমই পাউডার মিল্ক খায়। এছাড়া গোরুর চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য, যেমন জুতা, বেল্ট, পোশাক, সোফা প্রভৃতি মিলিয়ন ডলার ব্যবসা করছে বিভিন্ন দেশ।

লেখা : ফাতেমা ইয়াসমিন, শহিদুল ইসলাম এমেল 


নানা বরন গোরু রে ভাই 

অন্য অনেক প্রাণীর মতো গোরুর জাতও বিভিন্ন প্রকারের আছে।  জাত হলো একই গোত্রের প্রাণী যাদের বৈশিষ্ট্য ও আচার আচরণে মিল থাকবে। গৃহপালিত প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হলো হোলস্টেইন ও জার্সি জাতের গোরু।

হোলস্টেইন গোরু

গৃহপালিত গোরুর জাতের মধ্যে সাদাকালো ছোপযুক্ত এই গোরুটি সবচেয়ে পরিচিত। এরা আকারে বড়ো হয়। প্রাপ্ত বয়সে এদের ওজন হয় ১,৫০০ পাউন্ড। এই জাতের গরুর আদি জন্মস্থান নেদারল্যান্ডস। প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয় ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে। দুটো গোরুর ছোপ দাগগুলো কখনো একরকম নয়।


জার্সি গোরু

বড়ো বড়ো চোখ আর বাদামি রঙের জন্য জার্সি গরুগুলো বিখ্যাত। এর দুধও ঘন ননিযুক্ত। এটি কয়েক রকমের হয়ে থাকে। কোনোটি হাল্কা বাদামি হয় কোনোটি আবার ধূসর থেকে কালো রঙেরও হয়ে থাকে।

এগুলো আকারে খুব বড়ো হয় না। প্রাপ্ত বয়সে ১,০০০ পাউন্ড হয়ে থাকে। বড়ো মুখে মাঝারি চোখ, দীর্ঘ চোখের পাপড়িযুক্ত জাতের গোরুগুলো সবার কাছেই প্রিয়। এদের আদিনিবাস জার্সির দ্বীপপুঞ্জে যা ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ নামে পরিচিত। মজার ব্যাপার হলো বোর্জেন কোম্পানি ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে এদের জার্সি নামে পরিচিত করান।


ব্রাউন সুইস

এটিই গৃহপালিত গোরুর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো জাত। এরা ধূসর বাদামি বর্ণের। আকারে বড়ো, প্রাপ্ত বয়সে ১৫০০ পাউন্ড হয়ে থাকে। এদের আদি নিবাস সুইজারল্যান্ড। ডেইরি গবেষকদের মতে দুধ দেওয়া প্রজাতির মধ্যে এই জাতটিই সবচেয়ে পুরনো। এদের ব্যাপারে মজার তথ্য হলো গ্রীষ্মের সময় এরা পাহাড়ের উঁচু দিকে চলে যেতে পারে। তাই এদের গলায় ঘণ্টা পরানো হয় যাতে কৃষকেরা তাদের খুঁজে পায়।


গুইরনসে [Guernsey]

বাদামি শরীরে সাদা ছোপ ছোপ দাগের এই গোরুগুলো বিভিন্ন আকারের হয়ে থাকে। বেশিরভাগই মাঝারি আকারের হয়। প্রাপ্ত বয়সে ১২০০ পাউন্ড হয়। এটি ইংলিশ চ্যানেলের গুইরনসে দ্বীপপুঞ্জের আদি অধিবাসী। গোল্ডেন গুইরনসে ট্রেডমার্ক মিল্ক ১৯৫০ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বিক্রি হয়।


আইরসিরে

সাদা শরীরে লালচে বাদামি ছোপের এই গোরুগুলো আকারে মাঝারি, ওজন প্রাপ্ত বয়সে ১২০০ পাউন্ড। স্কটল্যান্ডের আইর দ্বীপপুঞ্জে তাদের আদি জন্মস্থান। এদের শিংয়ের জন্য এরা বিখ্যাত। এরা লম্বায় অনেক সময় কয়েক ফুট হতে পারে।


রেড অ্যান্ড হোয়াইট হোলস্টেইন

১৯৬৪ সালে এই জাতের গোরুগুলো পরিচিতি পায়। সাদা ও লাল গোরুগুলো সাদা ও লাল দাগে ভরপুর থাকে। এরা আকারে বড়ো হয়। প্রায় ১৪০০ পাউন্ড হয় প্রাপ্ত বয়সে। 


মিল্কিং শর্টহর্ন

১৭৮০ সালের দিকে এই জাত প্রবেশ করে যুক্তরাষ্ট্রে। এটি লাল, সাদা হয়ে থাকে। আকারে মূলত মাঝারি হয়। ওজন ১১০০ পাউন্ড। ইংল্যান্ডের উত্তর-পূর্ব দিকের টিস নদীর অববাহিকা এর জন্মস্থান। এটির সঙ্গে মিল আছে সুইডিস রেড  গোরু, ইলাওরা গোরুর যা অস্ট্রেলিয়ার।


দুনিয়াজোড়া খ্যাতি যাদের

* আমেরিকার ডেইরি কৃষকদের কাছ থেকে ডেইরি পণ্য কিনে আনে বড়ডেন কোম্পানি। এলিসি জাতের গোরুকে তারা তাদের কোম্পানির লগো বা মসকট হিসেবে ব্যবহার করে। 

* ক্যারাবেলা হলো ডিজনি স্টুডিওর তৈরি কার্টুন চরিত্র যা মিনি মাউসের প্রিয় বন্ধু। 

* ফার্ম জার্নলের একটি জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্র আদা দ্য আইরসরে।

মিসেস ও, লরির গোরু ; ১৮৭১ সালের শিকাগোর বিখ্যাত আগুন লাগার ঘটনাতে নাকি এর প্রভাব রয়েছে।

* চিজের গায়ে যে মসকট আছে তাতে গোরুকে হাসতে দেখা যায়।

* লানি মো : ১৯২১ সালে গোল্ডেন মেজে ডেইরির মসকট এই গরু।

* পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত গতিতে দৌড়ানো গরুর নাম লিটিল উইচ।

* বিলি ক্রিমটাল মুভিতে বাছুর ও পরবর্তী সিরিজে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে অভিনয়কারী গোরুর নাম নরম্যান।

* প্রেসিডেন্ট টাফ’স [ঞধভঃ]-এর গরুর নাম ছিল পাউলিন। যেটি হোয়াইট হাউজে পালিত হয়েছে।

* মিনি মো : মিকি মাউসের অবয়ব এর মতো দাগ যুক্ত গোরুটি হোলস্টেইন জাতের।

* চেটি বেলি : তাকে বলা হয় টকিং কাউ।

* পেনি দ্য কাউ : তাকে বলা হয় শিক্ষিত গোরু।

* তুর্কি হিল এর মসকটে আছে তুর্কি হিল কাউ।

লেখা : ফাতেমা ইয়াসমিন