জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ

07 Jun 2021, 01:29 PM অভোগ শেয়ার:
জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ

জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান বিশ্বের জন্য একটি বেশ বড়ো চ্যালেঞ্জ। বিগত দেড়-দুইশ’ বছরে জলবায়ুর পরিবর্তন বেশ দ্রুত হচ্ছে, যা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে ধীরে ধীরে, যা বৈশি^ক উষ্ণতা নামে পরিচিত। বৈজ্ঞানিক ভাষায় যাকে আমরা গ্রিন হাউজ প্রভাব বলে থাকি। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেই মূলত বিভিন্ন রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছি আমরা। জলবায়ু কী, এর পরিবর্তন, প্রভাব, কারণসহ বৈশ্বিক এই সমস্যার আদ্যোপান্ত নিয়ে থাকছে এবারের অঁ ভোগ আয়োজন। লিখেছেন ফাতেমা ইয়াসমিন


জলবায়ু

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কথা বলতে হলে আমাদের আগে জানতে হবে জলবায়ু কী ? খুব সহজ করে যদি বলি, তাহলে এভাবে বলা যেতে পারে, গরমের সময় আমাদের গরম লাগে, শীতের সময় শীত। এভাবেই বছরের নানা সময়ে আমরা বিভিন্ন ধরনের জলবায়ুর মোকাবিলা করে থাকি। প্রাকৃতিক নিয়ম এটিই। মূলত ৩০-৩৫ বছর সময়কাল কোনো অঞ্চলের গড় আবহাওয়াই হলো জলবায়ু। মূলত সূর্যের আলো, বৃষ্টিপাত, বায়ু প্রবাহ, আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা দিয়ে কোনো অঞ্চলের জলবায়ু বিচার করা হয়ে থাকে।


জলবায়ুর পরিবর্তন

হঠাৎ যদি আবহাওয়ার পরিবর্তন হয় তাহলে তা আমরা সহজেই বুঝতে পারি। যেমন, টানা শীত চলতে চলতে যদি হঠাৎ একটু গরম অনুভূত হয় তাহলে আমরা বুঝতে পারি যে আজকের আবহাওয়া বেশ গরম। কখনো গরমের দিনে হঠাৎ কালবৈশাখি ঝড় শুরু হয়। এগুলো আবহাওয়ার পরিবর্তন। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন বেশ ধীর। পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকেই জলবায়ুর পরিবর্তন হয়েছে এবং মানুষসহ সকল প্রাণী তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। তবে বিগত শতাব্দী থেকে জলবায়ুর এই পরিবর্তন বেশ দ্রুত হচ্ছে। যার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, বন্যা, খরা, জলোচ্ছ¡াস, ঘুর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে। জলবায়ুর এই পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা, চায়ুচাপ, বাতাস ইত্যাদি পরিবর্তিত হচ্ছে। এর সঙ্গে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারছে না প্রাণিকুল। ফলে এক মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে সারাবিশ্বে।


জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ

জলবায়ুর পরিবর্তন হয়ে থাকে মূল পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে যা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নামে পরিচিত। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় বহুবিধ কারণে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রধান কারণগুলো হলো :

১. অতিমাত্রায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার

২. যানবাহনের অদগ্ধীভূত কার্বন যেমন : কার্বন মনো-অক্সাইড [CO], কার্বন ডাই-অক্সাইড [CO2], সালফার ডাই-অক্সাইড [SO], নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড [NO2], প্রভৃতি নির্গত হয়ে দূষণ সৃষ্টি

৩. তেজষ্ক্রিয়া দূষণ মেযন : ১৯৮৬ সালে রাশিয়ার চেরনোবিল পারমাণবিক দুর্ঘটনা

৪. শিল্পকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া ও বিষাক্ত বর্জ্য এবং শিল্পোন্নতা দেশগুলোর অতিমাত্রায়া শিল্পায়ন

৫. অপরিকল্পিতভাবে বনভূমি উজাড় অথবা বনভূমি এলাকায় বিস্তৃত দাবানল

৬. মানুষের বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য প্রস্তুতকৃত সামগ্রী [যেমন : এয়ার কন্ডিশনার, প্রসাধন সামগ্রী, প্লাস্টিক সামগ্রী]।

৭. জনসংখ্যার অতিরিক্ত বৃদ্ধি ও অসম বণ্টন

৮. ওজোন স্তর ক্ষয় হয়ে সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীর পৃষ্ঠে পৌঁছানো।

৯. কৃষিক্ষেত্রে অতিমাত্রায় সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পানি দূষিত হয়ে ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়া

১০. ফসলের অবশিষ্টাংশ পচন ও ধানক্ষেত থেকে উদ্ভূত মিথেন

১১. সূর্যের শক্তি উৎপাদনের হ্রাস-বৃদ্ধি [এ হ্রাস-বৃদ্ধি নির্ভর করে সৌরদীপ্তি চক্র বা Sunspot Cycle-এর উপর]

১২. আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণ


বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

বিশেষ কোনো দেশ বা জনগোষ্ঠী নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের মুখে পড়েছে সারাবিশ্বের মানুষ। বিশেষত, গত ২০ বছরে এই প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা থেকে অ্যামেরিকা মহাদেশেও। বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচক [সিআরআই]-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হন্ডুরাস, তারপরেই আছে মিয়ানমারের নাম। গেল ২০ বছরে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের নানা কুফলে মারা যায় ৫ লাখ ২৮ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং ৩ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার [পিপিপি-তে] ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আর এর সরাসরি ফলাফল হিসেবে আবহাওয়া বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে ১১ হাজারটি। ‘ইউএনইপি অ্যাডাপ্টেশন গ্যাপ’-এর ২০১৩ সালের রিপোর্টে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল যে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বা ফলাফলের কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক খরচের পরিমাণ এখনকার চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ বেড়ে যাবে। আর বর্তমানে যা ধারণা করা হচ্ছে, তার চেয়ে চার থেকে পাঁচ গুণ বাড়বে ২০৫০ সাল নাগাদ। অন্যদিকে ওই রিপোর্টটিতে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়ার সীমা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এতে করে একদিকে যেমন মানুষের দুর্ভোগ কমবে অন্যদিকে নামতে থাকবে খরচের হারও। ১৯৯৬ থেকে ২০১৫ সাল, এই ২০ বছরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে পর্যায়ক্রমে হন্ডুরাস, মিয়ানমার ও হাইতি। চতুর্থ অবস্থানে আছে নিকারাগুয়া, পঞ্চম ফিলিপাইন ও ষষ্ঠ অবস্থানে বাংলাদেশ। মিয়ানমারে ২০০৮ সালের ‘ঘূর্ণিঝড় নার্গিস’-এর কারণে যে পরিমাণ মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে, তা গত দুই দশকের অন্যান্য ঘটনার চেয়ে ৯৫ ভাগ বেশি। একইভাবে হন্ডুরাসে, ১৯৯৮ সালের ‘হ্যারিকেন মিচ’-এর কারণে ৮০ ভাগের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় ১০তম অবস্থানে থাকা থাইল্যান্ডে ২০১১ সালের বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। ২০১২ সালের ‘হ্যারিকেন প্যাট্রিসিয়া’র ক্ষয়ক্ষতি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলে। এই সময়ে সাইক্লোনের ঘটনা ঘটেছে ২৭টি। গত কয়েক বছর ধরে বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরে প্রায় প্রতিবছর প্রবল সাইক্লোনের সৃষ্টি হচ্ছে। তাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ফনী, বুলবুল, ইয়াস ইত্যদি সাইক্লোন উপক‚লীয় জনগোষ্ঠীগুলোকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। ফলে আবারো বলা দরকার যে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বেশি ঝুঁকিতে আছে স্বল্পোন্নত ও ছোটো দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো।

জলবায়ু পরিবর্তন এবং চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার সংযোগ

জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ঝুঁকিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো দাবদাহ, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও উপকূলীয় এলাকায় বন্যা, যা এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন দেশের সরকারের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির ২০১৪ সালের মূল্যায়নে এই বিষয়গুলো উঠে আসে। ইউরোপ, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বড়ো অংশে দাবদাহ ক্রমাগত বাড়ছে। একইভাবে, উত্তর অ্যামেরিকা ও ইউরোপে ভারি বৃষ্টিপাতের তীব্রতা বেড়েছে এবং কিছুদিন পরপরই বিশ্বের নানা জায়গায় একই উদাহরণ সৃষ্টি হচ্ছে।


বাংলাদেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় যেসব প্রভাব পড়ছে বলে আমরা উল্লেখ করেছি, এর সবগুলো ঘটতে শুরু করেছে বাংলাদেশেও। আশঙ্কার কথা হলো, দিন দিন বাড়ছে এগুলো। বছরের প্রায় দশ মাস গরম থাকা, শুধু গরম বললে ভুল হবে। তীব্র গরম। এসব ঘটনাকে গবেষকেরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হিসেবে দেখছেন। এসবের ফলে দেশে খাদ্য উৎপাদন কমছে, বাড়ছে নিত্য-নতুন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অসুখ-বিসুখ। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঘরহারা মানুষের সংখ্যা। ফলাফল হিসেবে শহরাঞ্চলে বস্তিবাসীর সংখ্যাও বাড়ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক জাতিসঙ্ঘের আন্তঃসরকার প্যানেল [আইপিসিসি] তাদের চতুর্থ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে আশঙ্কা জানিয়েছে যে, এই শতাব্দীর মধ্যে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা ডুবে যেতে পারে। দেশের ১৯টি জেলার প্রায় ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে। এ কারণে ঘর হারাবে প্রায় দুই কোটি মানুষ।


অতিবন্যা

পরপর তিনটি বন্যায় দেশের বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়। বিশেষ করে উত্তর ও মধ্যাঞ্চল দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়ার সময় দেশের প্রায় ৮০ লাখ মানুষের বড়ো ক্ষতি হয়ে গেছে। ব্যাপক ক্ষতি হয় ফসলের, যার খেসারত দিতে হয় বা হবে সব মানুষকেই। এছাড়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে বেশি বেশি ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ১০/১২টি প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হয়। বিগত বছরগুলোতে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, মহাসেন, রোয়ানু ও মোরা, বুলবুল, ইয়াস প্রভৃতি। এ ধরনের আঘাতের সংখ্যা যে আরও বাড়বে তা বলা চলে নির্দ্বিধায়।


বজ্রপাত

চলতি মে মাসে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রেক্ষাপট বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দেশে সরাবছর ধরে যে পরিমাণে দুর্যোগ হয় তার মধ্যে মে মাসে হয় সবচেয়ে বেশি। তবে বজ্রপাত অন্যান্য সব দুর্যোগকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। সম্প্রতি বজ্রপাতে ১৭জন মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। এটি একদিনের হিসেব।

বাংলাদেশে বছরে ৮০ থেকে ১২০ দিন বজ্রপাত হয়। একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে প্রতিবছর মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪০টি বজ্রপাত হয়। ২০১৯-২০২০ সালের মধ্যে বজ্রপাত হয়েছে ৩১ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি। এর ২৬ শতাংশ তৈরি হয় মে মাসে।


বজ্রপাতের ঝুঁকি থেকে বাঁচার জন্য সচেতনতা বা সতর্কতা অত্যাবশ্যক। যদি ঘরের ভেতরে থাকেন, তবে নিম্নোক্ত সতর্কতা জরুরি-

ক. ফোন, কম্পিউটার এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকুন।

খ. প্লাম্বিং যেমন বাথটাব, রান্নাঘরের ধাতব পদার্থ থেকে দূরে থাকুন।

গ. বজ্রঝড়ের সময় জানালা, দরজা বা যেকোনো প্রবেশদ্বার থেকে দূরে থাকতে হবে।

ঘ. বজ্রপাতের সময় কোনো অবস্থাতেই কংক্রিটের ওপর শোবেন না বা দেয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়ে থাকবেন না।


বজ্রপাত বা বজ্রঝড়ের সময় যদি বাইরে থাকেন, তবে ঝুঁকি এড়াতে নিচের বিষয়গুলো পালন করা বাধ্যতামূলক

ঙ. উঁচু স্থান অবশ্যই এড়াতে হবে বা নদী, পুকুর, খাল-বিল ইত্যাদির আশপাশে থাকা যাবে না।

চ. কোনো অবস্থাতেই ভূমিতে শোবেন না বা বিচ্ছিন্ন কোনো বড়ো গাছের নিচে দাঁড়াবেন না।

ছ. বৈদ্যুতিক তারের বেড়া, ধাতব পদার্থ বা সংশ্লিষ্ট বস্তু [টাওয়ার] থেকে দূরে থাকুন। কেননা, ধাতব পদার্থের মাধ্যমে বজ্রপাত অনেক দূর পর্যন্ত চলাচল করতে পারে।

জ. পুকুুর, নদী-নালা বা হ্রদে মাছ ধরা বা নৌকা ভ্রমণ যেকোনো উপায়ে পরিহার করতে হবে।

ঝ. অনেক মানুষ একসঙ্গে থাকলে [যেমন খেলার মাঠে] ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যেতে হবে। বজ্রঝড়ের সময় মানুষ জড়ো অবস্থায় থাকলে অনেকজনের একসঙ্গে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে।


উপকূলীয় অঞ্চলে ঝড়ের তাণ্ডব

সাগর উপকূলের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বঙ্গোপসাগরে বারবার আঘাত হানছে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস। গত দুইশো বছরে প্রবল ঘুর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে বঙ্গোপসাগরে। প্রাণ হারিয়েছে লাখো মানুষ। তথ্যমতে পৃথিবীর পাঁচটি প্রাণঘাতি ঘুর্ণিঝড়ের ৩টিই আঘাত হেনেছে বাংলাদেশে। পৃথিবীর ভয়ঙ্কর ৩৮টি ঘুর্ণিঝড়ের ২৮টিই বঙ্গোপসাগর উপকূলে আঘাত হেনেছে। গত ২০০ বছরে মোট ঘুর্ণিঝড়েরর ৪২ শতাংশ বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে। বঙ্গোপসাগর সবচেয়ে বেশি উষ্ণ, সেইসঙ্গে এর ফানেল আকৃতি ও এর তলদেশের বৈশিষ্ট্য ঘুর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য আদর্শ। প্রাকৃতিক পরিবেশের পাশাপাশি জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে সাইক্লোন, ঘুর্ণিঝড়ের মতো ঘটনা।


আমাদের করণীয়

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা করতে হলে বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস লাগবেই লাগবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে মানুষকে সজাগ ও সচেতন করতে হবে। কলকারখানায় কালো ধোঁয়া নির্গমন কমিয়ে আনতে হবে। সিএফসি নির্গত হয়- এমন যন্ত্রপাতির ব্যবহার কমাতে হবে।