গরমে আরামে থাকার উপায়

11 Mar 2021, 02:07 PM অভোগ শেয়ার:
গরমে আরামে থাকার উপায়

শীতের পর্ব শেষ, এবার গরমের পালা। আমাদের দেশে এমনিতেই গরমের সময় তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তবে আগেই হা-হুতাশ করার কোনো কারণ নেই। কয়েকটি দিকে একটু নজর দিলেই গরমেও বেশ আরাম নিয়েই থাকা যায়। গরমে কী খাবেন, কী পোশাক পরবেন ও শরীরের যত্ন কীভাবে নেবেন এগুলো জানা থাকলেই গরমকালও বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারে ! গরমের জীবনযাত্রা নিয়েই এবারের অঁ ভোগ আয়োজন। লিখেছেন ফাতেমা ইয়াসমিন...


পোশাক হবে স্বস্তিদায়ক

পোশাকের মাধ্যমে যেমন আপনি কতটা স্মার্ট তা প্রকাশ পায়, তেমনি আপনি কতটা স্বস্তিতে আছেন তাও বোঝা যায়। তাই গরমে স্বস্তি দিতে পারে এমন পোশাকই পরা উচিত। গরমের কথা মাথায় রেখে সবাই চান আরামদায়ক ও ফ্যাশনেবল পোশাক পরতে।

গরমে পাতলা সুতি কাপড়ের পোশাক পরলে একদিক থেকে যেমন গরম কম লাগবে, অন্যদিকে আরামও লাগবে। ফলে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করা যাবে। পাতলা তাঁত ও খাদি কাপড়ের পোশাক এসময় পরা যায়। গরম এলেই সুতি কাপড়ের প্রসঙ্গ চলে আসে। মেয়েদের উচিত পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে সুতি কাপড়কেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া। আর রং নির্বাচনেও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। গরমের পোশাকের ক্ষেত্রে সাদা, হালকা গোলাপি, হালকা বেগুনি, হালকা নীল, বাদামি, আকাশি, হালকা হলুদ, ধূসরসহ হালকা রঙের পোশাকগুলো প্রাধান্য পাবে। গরমে সাদা ও অন্যান্য হালকা রঙের পোশাক শুধু তাপ শোষণই করে না, সেই সঙ্গে চোখকে দেয় প্রশান্তি। তবে গরমকালে সাদা রঙের পোশাকের জয়জয়কার সব সময়ই। আবার পোশাকে খুব বেশি টাইট ফিটিংস হলেও সেটা কিন্তু খুব একটা স্বস্তিদায়ক হবে না। একটু ঢিলেঢালা হলেই বরং ভালো হয়। যারা হাইনেক পরেন তারা এই গরমে একটু কলার ছাড়া বড় গলা পরে দেখতে পারেন। আরাম পাবেন। আর হাতাও অবশ্যই ছোটো রাখতে হবে। গরমে ফুল ¯িøভ কিংবা থ্রি কোয়ার্টার আরামদায়ক নয়। গরমে খুব উজ্জ্বল আর গাঢ় রং মোটেও শোভন নয়। হালকা রঙের পোশাক পরলে আপনাকে যেমন দেখতে ভালো লাগবে তেমনি আপনি স্বস্তিতে চলাফেরা ও প্রয়োজনীয় কাজও করতে পারবেন। সুতি কাপড়ের সঙ্গে লিনেন, দুপিয়ান, ভয়েল, মসলিন, চিকেন ও তাঁতের কাপড় গরমের জন্য বেশ উপযোগী। উৎসবে পরতে পারেন কৃত্রিম মসলিন বা পাতলা চোষা কাতান। আমাদের দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলো বেশিরভাগই সুতি কাপড় দিয়ে তাদের পোশাক তৈরি করে থাকে।

গ্রীষ্মে ছেলেদের পোশাক কেমন হবে সেই সঙ্গে বাজারে কেমন কালেকশন রয়েছে সেসব বিষয় একটু জেনে নিন। গরমের উপযোগী পোশাক বলতে প্রথমেই আসে কটন বা সুতি কাপড়ের কথা। আজকাল ফ্যাশন হাউজগুলোতে ছেলেদের জন্য সুতি কাপড়ের বিভিন্ন ধরনের শার্ট পাওয়া যায়। এসময়ের ফ্যাশনে বাটিক, ভেজিটেবল ডাই, টাইডাই, সুবোরি, স্ক্রিনপ্রিন্ট, ব্লক ইত্যাদির মাধ্যমে ডিজাইন করা প্রচুর শার্ট পাওয়া যাচ্ছে। এসব শার্ট ক্যাজুয়াল হিসেবেও যেমন ব্যবহার করা যাবে, তেমনি ফর্মাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এ শার্টগুলো গরমে আরামের পাশাপাশি ফ্যাশন হিসেবেও চমৎকার। জিওম্যাট্রিক, ফ্লোরাল, লাইন, বিভিন্ন ফর্ম ব্যবহার করে এসব শার্টে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নানা ডিজাইন। সুতি ভয়েল কাপড়ের শার্ট এ মৌসুমে খুবই আরামদায়ক। আরেকটু আরামদায়ক হতে পারে হাফ হাতা শার্ট। রং হিসেবে গরমে বেছে নিতে পারেন নীল, ধূসর, সাদা, অফহোয়াইট, মেরুন ইত্যাদি। তবে হালকা রংই গরমে বেশি মানানসই। যেকোনো পার্টিতে বেছে নিতে পারেন সুতি পাঞ্জাবি। এছাড়া গরমের আরো একটি পোশাক টি-শার্ট। মূলত সুতি কাপড়ে তৈরি টি-শার্টের প্যাটার্ন, ডিজাইন রঙে যে কত ধরনের বৈচিত্র্য রয়েছে সে কথা বলে শেষ করা যাবে না। ক্যাজুয়াল পোশাক হিসেবে টি-শার্টও বেছে নিতে পারেন অনায়াসে।


গরমের খাবার

গরমের সময়টাতে খাদ্য তালিকায় গুরুত্বের সঙ্গে হালকা ও কম চর্বিযুক্ত খাবার রাখতে হবে, যা আমাদের শরীরের জন্য পুষ্টিবর্ধক। গরমে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো এসময় আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পানি চলে যায়। এটি পূরণ অত্যন্ত জরুরি। তাই অনেক বেশি পানি পান করতে হবে। খাদ্য তালিকার খাবারে আরো থাকবে সবজি ও প্রচুর ফল। গরমকালে ফলের প্রয়োজনীয়তা বেশি বলেই হয়ত এসময় হরেক পদের রসালো ফলে ছেয়ে যায় বাজার। তরল পানীয়ের পরিবর্তে বিভিন্ন ফলের ঠান্ডা রস ও লেবুর সরবতের বিকল্প নেই। কিন্তু বাইরে খোলা আকাশের নিচে বানানো বিভিন্ন সরবতের প্রতি দৃষ্টি না দেওয়াই ভালো। সেগুলো স্বাস্থ্যসম্মত কি না তা দেখতে হবে।

গরমে সকালের নাশতায় তেলে ভাজা পরোটা ও সবজি এড়িয়ে চলাই ভালো। নাশতা হতে হবে অবশ্যই পুষ্টিকর ও ফলযুক্ত। সারাদিনের খাদ্য তালিকা যাই হোক না কেন, সকালের খাবার হতে হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। শিশুদের ক্ষেত্রে খাদ্য তালিকায় যেন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বড়োদের ক্ষেত্রে খাবারে কমপক্ষে ৪০০ ক্যালোরির জোগান থাকা উচিত। সকালে বা রাতে যখনই হোক না কেন, দুধ থাকতে হবে। এই গরমে দুধ ঠান্ডা হলে আর তাতে কোনো ফ্লেভার নিয়ে খেলে সেটার তো কোনো তুলনাই নেই। নয়তো চলতে পারে হালকা রং-চা বা ভেষজ-চা।

দুপুরের খাবারে সবজি একটা জরুরি খাবার। সেটা তেলে না ভেজে গ্রিল বা বাষ্পে ভাপ দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। সবজি রান্না অল্প আঁচ হলে তার পুষ্টিগুণ অটুট থাকে। অন্যান্য খাদ্য তালিকার পাশাপাশি দই গরমকালে আমাদের শরীরের এক মহা আপনজন- সেটা টক দই বা মিষ্টি দই যাই হোক না কেন। বেশি কোলেস্টেরল খাবার পরিহার করার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সয়াবিন তেলের পাশাপাশি অলিভ তেলও ব্যবহার করা যেতে পারে। খাবার মান ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। খাবার পর ভিটামিন ‘সি’-যুক্ত বা যেকোনো ফল খাওয়ার অভ্যাস ভালো।

রাতে খাদ্য তালিকায় ভারি খাবার না রাখাই ভালো। অনেক রাত করে রাতের খাবার খাওয়া শরীরে চাপ সৃষ্টি করে। এতে পাকস্থলীর বিভিন্ন সমস্যা, বিশেষ করে ডায়রিয়া, বদহজম, বমি বমি ভাব হয়। তাই আগেই রাতের খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। রাতে ঘুমানোর আগে দুধ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে গরম দুধ না খাওয়াই ভালো।

খাবার দীর্ঘ সময় পর বেশি করে না খেয়ে, কম সময় পরপর [চার ঘণ্টা কমপক্ষে] বারবার খাওয়ার অভ্যাস ভালো। তবে পরিমাণ অবশ্যই কম হবে। খাওয়ার সময়টা ঠিকভাবে মেনে চলা উচিত। সময় মেনে খাবার অভ্যাস শরীরের জন্য সহায়ক।

দৈনিক কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পান করা উচিত হলেও এই গরমে পানি পান করার অভ্যাস বাড়িয়ে দিতে হবে। সঙ্গে দুধ, ফলের রসসহ যেকোনো পুষ্টিকর পানীয় খাওয়া যেতে পারে। আর আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, লিচু, তাল, তরমুজ, জামসহ বিভিন্ন রসালো ফল তো আছেই।

গরমে ঘামের সাথে দেহ থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি এবং খনিজ লবণ বের হয়ে যায়। এ কারণে শরীরে পানিশূন্যতা এবং সোডিয়াম, পটাশিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে মানুষ নানারকম শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হয় ; যেমন- অস্থির লাগা, দুর্বল লাগা, বুক ধড়ফড় করা, মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরানো, মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।


এই গরমে ত্বকের যত্ন

এই গরমে ত্বকের বেশি ক্ষতি করে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি। এ কারণে যেকারো ত্বক বুড়িয়ে যাওয়া, বিবর্ণ হওয়া, এমনকি ত্বকের ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। এর প্রভাবে ত্বকের কোষগুলো মরে গিয়ে ত্বক হারিয়ে ফেলে তার স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য। তাই ত্বকের যৌবন ধরে রাখতে এই উত্তপ্ত দিনগুলোয় একটু সতর্ক থাকতে হবে।

এড়িয়ে চলুন অতিবেগুনি রশ্মি : ত্বককে সুন্দর, তরতাজা আর উজ্জ্বল রাখতে অতিবেগুনি রশ্মি এড়িয়ে চলতে হবে। তা না হলে ত্বক বুড়িয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে একটি ছাতা বা টোকাজাতীয় টুপি ব্যবহার করা যেতে পারে। ত্বকের রং বিবেচনায় একটি উৎকৃষ্ট সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। বাজারে অনেক রকমের সানস্ক্রিন আছে এবং তাতে সান প্রটেকশন ফ্যাক্টর যেমন সান ১৫, ৩০, ৪৫, ৬০ ইত্যাদি আছে।

ঘাম ও ঘামাচি থেকে বাঁচুন : ঘর্মগ্রন্থির রোগ ঘামাচি, যা অতিরিক্ত আর্দ্রতা ও গরমে লোমকূপ বন্ধ হয়ে ঘাম সৃষ্টি করে। গরমকালে দেহ থেকে প্রচুর ঘাম নিঃসরণ হয়, যা ঘর্মগ্রন্থির ছিদ্রপথে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়। ফলে ওই নিঃসরণ ঘর্মগ্রন্থিকে ছিদ্র করে ত্বকের নিচে এসে জমা হতে থাকে এবং সেই স্থান ফুলে ওঠে। সেই সঙ্গে প্রচণ্ড চুলকানি ও সামান্য জ্বালাপোড়া ভাব থাকে। এ জন্য গরম আবহাওয়া এড়িয়ে ঠান্ডা পরিবেশে অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ত্বকের সংস্পর্শে বাতাস খেলতে পারে। 


আরো কিছু পরামর্শ


* গরমকালে দিনে দু’বার কম ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করা উচিত। সে ক্ষেত্রে ভালো কোনো বেবিসোপ বা গ্লিসারিন সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে। একেবারেই সাবান ব্যবহার না করা আবার ঠিক নয়, এতে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে।

* ত্বক শুষ্ক হলে কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তাই ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এজন্য প্রতিদিন অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।

* অতিরিক্ত অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা ঠিক নয়। এতে ত্বক মোটা ও খসখসে হয়ে যায়।

* গরমে ঘামে পোশাক ভিজে গেলেই তা বদলে শুষ্ক ও পাতলা কাপড় পরে নিতে হবে।

* গোসলের পর দেহের ভাঁজগুলোতে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা, দেহের ভাঁজের স্যাঁতসেঁতে স্থানগুলোই ছত্রাক জন্মানোর উর্বর ক্ষেত্র।

* গরমকালে তেল ব্যবহার না করাই ভালো।

* পাউডারের সঙ্গে ঘাম মিশে স্যাঁতসেঁতে অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে বলে দেহের ভাঁজযুক্ত স্থানগুলোতে পাউডার ব্যবহার না করাই ভালো।