পর্দায় আমরা অ্যাকশনের দৃশ্য দেখে কখনো আনন্দ পাই, আবার কখনো কষ্টও পাই। তবে, এসব দৃশ্য এমনভাবে টেক করা হয়, যেন সত্যিকারের অ্যাকশন ফুটে ওঠে। দৃশ্যগুলো এমনভাবে সাবধানতার সাথে নেওয়া হয় যেন নায়ক কিংবা ভিলেন যেন আঘাত না পান। তারপরও কিছু দৃশ্য করতে গিয়ে আহত হন অনেক শিল্পী। এমনই এক ঘটনার স্মৃতিচারণ করেছেন অভিনেতা ওমর সানি। যিনি অভিনয় করতে গিয়ে সত্যিকারভাবে আহত হয়েছিলেন।
পর্দায় বিভিন্ন ছবিতে দেখা যায় অ্যাকশনের দৃশ্য। আর এই অ্যাকশনের দৃশ্যগুলো খুব সর্তকতার সঙ্গে নেওয়া হয়, যেন শিল্পী আহত না হয়েও দৃশ্যটি বিশ^াসযোগ্য হয়ে ওঠে। কখনো ভিলেন নায়ককে আঘাত করছে, আবার কখনো নায়ক ভিলেনকে আঘাত করছে, এছাড়াও কখনো নায়িকা নায়ককে মারছে! নায়ক নায়িকাকে মারছে! এসব দৃশ্য কখনো আমাদের কাঁদায় আবার কখনো হাসায়। যখন নায়ক ভিলেনকে মারে দর্শক এমনভাবে ছবিতে জড়িয়ে যায় বলতে শোনা যায়, মার রাজু, শয়তানটাকে মার। যখন নায়ক কিংবা নায়িকাকে আঘাত করে এই দৃশ্যগুলো আবার দর্শককে কাঁদায়ও।
এমনই একটি দৃশ্যের স্মৃতিচারণ করেছেন একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা ওমর সানি। তার অভিনীত তিনটি ছবিতে তিনি নায়িকার হাতে চাবুকের মার খেয়েছেন। এর মধ্যে একবার মৌসুমীর হাতে চাবুকের মার খাওয়ার ঘটনা তাঁর বিশেষভাবে মনে রয়েছে।
এই প্রসঙ্গে ওমর সানি বলেন, ‘প্রেমগীত’ ছবিতে প্রথম চাবুকের মার খাওয়ার দৃশ্যে অভিনয় করি। এরপর আরও দুটি ছবি ‘আত্ম অহংকার’ ও ‘লাট সাহেবের মেয়ে’তেও নায়িকার হাতে চাবুকের মার খান তিনি। এরমধ্যে ‘আত্ম অহংকার’ ছবির চাবুকের আঘাতের দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে সত্যিকারের আঘাতপ্রাপ্ত হন ওমর সানী।
সেই গল্পটা বললেন এভাবেই, ‘মৌসুমীও তখন “কেয়ামত থেকে কেয়ামত” ছবিতে অভিনয় করে বেশ জনপ্রিয়। আমাদের দু’জনের জুটি হয়ে প্রথম ছবি ‘আত্ম অহংকার’। আমরা গাজীপুরের ন্যাশনাল পার্কের একটা ডাক বাংলোয় শুটিং করি। সেই ছবিতে সম্ভবত তিনবার চাবুকের মার খাওয়ার দৃশ্য ছিল। প্রথম দিনের শুটিংয়ের চাবুকের মার খেয়েই আমার জ্বর ওঠে। মৌসুমী নতুন, আমি কয়েক বছর হয় কাজ করছি। নিজেদের প্রমাণ করার ব্যাপারও রয়েছে। চাবুকের মার খাওয়ার দৃশ্যটা একাধিকবারে টেক ওকে হয়। এদিকে দৃশ্যটি বাস্তবসম্মত করতে গিয়ে আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করেছি।
শুটিং চলাকালীন টের না পেলেও, রাতে বাসায় ফেরার পর মা দেখলেন, আমার পিঠ লাল হয়ে রয়েছে! এরপর তো হুলস্থুল লেগে গেল।
ওমর সানী তখন তাঁর পরিবারের সঙ্গে ঢাকার তেজতুরি বাজার এলাকায় থাকতেন। তিন ভাইবোনের মধ্যে ওমর সানী ছিলেন সবার ছোটো। গাজীপুর থেকে শুটিং শেষে বাসায় ফিরতে রাত হয়ে যায়। ছেলের পিঠে লাল দাগ দেখে মা তাঁর বোনদের ডেকে আনেন।
ওমর সানী বলেন, ‘শরীরের অবস্থা দেখে আমার সহকারীকে ডাকেন মা। চিৎকার করে বলতে থাকেন, কী হয়েছে আমার ছেলের ? এই ছবির পরিচালক কে ? তারে ডেকে নিয়ে আয়। আমার ছেলের এই অবস্থা কেন করেছে ? নায়িকাই-বা কে, কেন এভাবে আঘাত করেছে ? বোনেদের ডাকাডাকি করে তিনি অস্থির। তারপর মাকে বুঝিয়ে শান্ত করা হয়। পরে রাতে আমার গায়ে জ্বর চলে আসে। সেই জ্বর নিয়েই পরদিন আবার শুটিংয়ে যাই।
যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করেন, প্রায়ই মৌসুমীর হাতে ওমর সানীর চাবুকের মার খাওয়ার দৃশ্যটি ফেসবুকের রিলসের দৌলতে দেখে থাকেন। ফেসবুক ব্যবহারের কারণে এসব নজরে আসে ওমর সানীরও। তিনিও এসব দেখে নস্টালজিক হন।
আর হারিয়ে যান গত শতকের নয়ের দশকের সেই দিনগুলোতে।