গানের প্রতি ভালোবাসাই আমাকে ভেতর থেকে শক্তি জোগাত -ঐশী

11 Mar 2021, 01:55 PM সারেগারে শেয়ার:
গানের প্রতি ভালোবাসাই আমাকে ভেতর থেকে শক্তি জোগাত -ঐশী

নতুন কুঁড়িতে দলীয় সংগীতে অংশ নেওয়ার জন্য মায়ের হাত ধরে বিটিভিতে আসতেন সঙ্গীতের এক কুঁড়ি ফাতিমা তুজ জোহরা ঐশী। ধীরে ধীরে সেই কুঁড়িটি এখন পাপড়ি মেলেছে। ২০১৯ সালের চলচ্চিত্রের গানের জন্য চলচ্চিত্রের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ঐশী। তাকে নিয়ে এবারের সারেগারে আয়োজন। লিখেছেন নিথর মাহবুব...


চলচ্চিত্রে খুব বেশি গান গাওয়া হয়নি ঐশীর। অল্প কয়েকটি প্লেব্যাক করেই ২০১৯ সালে সেরা গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ১৭ জানুয়ারি মাননীয় প্রধামন্ত্রী গণভবনে থেকে ভার্চুয়াল মিডিয়ায় তাকে এ পুরস্কার প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদক ঐশীর হাতে তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ড. মাসুদ পথিক পরিচালিত ‘মায়া : দ্য লস্ট মাদার’ চলচ্চিত্রে ‘মায়ারে মায়ারে’ গান গেয়ে এ পুরস্কার জিতেছেন ঐশী। গানের গীতিকার মাসুদ পথিক এবং সুর ও সংগীত করেছেন ইমন চৌধুরী।

ঐশী মঞ্চ থেকে পদক নিয়ে এসেই তুলে দেন মায়ের হাতে। প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার আনন্দ ভাগ করে নেন মায়ের সঙ্গে। ছেলেবেলা থেকেই গানের প্রতি ঐশীর এবং তার পরিবারের প্রবল আগ্রহ তাকে আজ দেশের কোটি মানুষের প্রিয় শিল্পীতে পরিণত করেছে। জীবনে প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্তির বিষয়ে ঐশী বলেন, ‘পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর সময় কিংবা সুযোগ আসলে হয়েই ওঠে না। কিন্তু প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্তিতে আমি আমার পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমার বাবা মা এবং আমার ছোটো দুই ভাই ঈশিক এবং ইয়াশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কেননা, আমার জন্য আমার ছোটো দুই ভাই অনেক সেক্রিফাইজ করেছে। সেইসাথে আমি গভীর শ্রদ্ধা নিয়ে স্মরণ করছি আমার গানের শিক্ষক, মো: শরীফ স্যার, হাফিজ উদ্দিন বাহার স্যার, সুজিত মোস্তফা স্যার এবং আমার শিক্ষক প্রয়াত শহীদ স্যারকে। তাঁদের কাছে আমি ঋণী, তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। সবসময় যাঁরা আমাকে গান গাওয়ার ব্যাপারে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন, গান গাইয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। ধন্যবাদ সিনেমার পরিচালক ড. মাসুদ পথিক ভাইকে, আমাকে এই গানটি গাইবার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। আমি আমার পরিবার এবং আমার সকল শিক্ষককে আমার এই পুরস্কার মন থেকে উৎসর্গ করলাম। একটি পুরস্কার একজন শিল্পীর জন্যে যেমন অনুপ্রেরণার, ঠিক তেমনি অনেক ওজনদারও। দায়িত্বটা অনেক বেড়ে যায়। আর সেই জায়গায় সেটা যদি কোনো রাষ্ট্রীয় সম্মান হয়, তাহলে দায়িত্বের জায়গাটা আরো বড়ো হয়ে যায়। তবে সব সময়ই চেষ্টা করেছি মন দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে কাজ করতে। ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার সকলকে কৃতজ্ঞতা আমার পথ চলার শুরু থেকে আপনাদের পাশে পেয়েছি। সবশেষ অবশ্যই শ্রোতা দর্শকের প্রতিও আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা- যারা আমার পথচলার শুরু থেকে উৎসাহ দিয়ে ভালোবাসা দিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। সবাই দোয়া করবেন আমার জন্য। আমি যেন এই ভার বহন করে সামনে এগিয়ে যেতে পারি।’

এদিকে ১২ জানুয়ারি ২০২১ ঐশী ফজলুল কবির তুহিন পরিচালিত ‘গাঙকুমারী’ সিনেমার ইশতিয়াক আহমেদ রূপুর লেখা একটি গানে কন্ঠ দিয়েছেন, এছাড়া ইফতেখার চৌধুরীর ‘মুক্তি’ নামক নতুন আরেকটি সিনেমায় এবং আজাদ আবুল কালামের একটি সিনেমায় নতুন দুটি গান গেয়েছেন। নতুন গানগুলো নিয়েও তার প্রবল প্রত্যাশা। এছাড়াও তিনি স¤প্রতি আহমেদ রব্বানীর লেখা ও সুরে ‘মানবগাড়ি’ শিরোনামের একটি দারুণ ফোক গানও গেয়েছেন। আরো বেশ কিছু গানের কাজ চলছে।

বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে নোয়াখালীর মাইজদিতে ঐশীর জন্ম। কিন্তু বেড়ে ওঠেন রংপুরে। যদিও সাত বছর বয়সে আবার নোয়াখালিতে ফেরেন। বাবা-মায়ের গানের প্রতি ভালোবাসার তীব্রতা গানের বীজ বুনে দেয় ঐশীর মনে। তার কথায়, “বাবা-মা শিখিয়েছেন কীভাবে দরদের সঙ্গে গাইতে হয়। ছেলেবলাতেই গানের তালিম নেই মোহাম্মদ শরীফ স্যারের কাছে এবং পরে হাফিজউদ্দিন বাহার স্যারের কাছে তালিম নিই ক্লাসিক্যালে ও নজরুলসংগীতে। এখনো সুজিত মোস্তফা স্যারের কাছে শিখছি। আসলে গান আমার রক্তে, শিরায়-উপশিরায় মিশে আছে। প্রচুর গান শুনি। সুযোগ পেলেই আপন মনে গাই। দেশি শিল্পীদের মধ্যে রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, শাহনাজ রহমতুল্লাহ, কনকচাঁপা, সামিনা চৌধুরীর গান ভালো লাগে। আর বিদেশিদের মধ্যে প্রিয় লতা মঙ্গেশকর, শ্রেয়া ঘোষাল, টেলর সুইফট এবং অ্যাডেলের গান। তবে রুনা লায়লা ম্যাডাম আমার অনুপ্রেরণার নাম। তার অসাধারণ গায়কি আমাকে দর্শকের সামনে পারফর্ম করার শক্তি জোগায়।”

প্রতিভাবান এ শিল্পী এনটিভিতে প্রচারিত ‘শাপলা কুঁড়ি’ অনুষ্ঠানে অংশ নেন ২০০৬ সালে। সেখানে তিনি দ্বিতীয় রানার আপ হন। পরবর্তীসময়ে, ২০১৫ সালে ভালোবাসাদিবস উপলক্ষে রবিউল ইসলাম জীবনের কথায় ইমরান মাহমুদুলের সুর ও সংগীতায়োজনে তার প্রথম অ্যালবাম ‘ঐশী এক্সপ্রেস’ প্রকাশ পায় লেজারভিশন থেকে, যা ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়। ‘তোমার দিল কি দয়া হয় না’ এবং ‘তুমি চোখ মেলে তাকালে’ ঐশীর প্রথমদিকের অন্যতম সফল গান।

ফেলে আসা দিনগুলোর কথা স্মরণ করে ঐশী বলেন, “ঐশী এক্সপ্রেস অ্যালবামের কাজে প্রায়ই ঢাকা আসতে হতো নোয়াখালি থেকে। রেকর্ডিং শেষে আবার নোয়াখালি ফিরে যেতাম। সেই সময়ের প্রতিটি দিনই যেন একেকটি লড়াইয়ের গল্প। তবে কখনো ক্লান্তি কিংবা বিরক্তি কিছুই ছুঁয়ে যেত না আমাকে। গানের প্রতি ভালোবাসাই আমাকে ভেতর থেকে শক্তি জোগাত।”

২০১৫ সালে পবন দাস বাউলের ‘দিল কি দয়া হয় না’ গানটি নতুন করে গেয়েই বদলে গেল ঐশীর ভুবন। ঐশী নিজেও মানেন, এই গানটিই তার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। এটি, তার প্রথম অ্যালবাম ‘ঐশী এক্সপ্রেস’-এরই গান। এই অ্যালবামের জনপ্রিয়তার কারণেই ২০১৯ সালে প্রকাশ হয় তার ‘ঐশী এক্সপ্রেস-২’ অ্যালবাম। একে একে এই শিল্পী গেয়ে ফেলেছেন অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় মৌলিক গান। যার মধ্যে আছে ‘নিজামউদ্দিন আউলিয়া’, ‘তুমি চোখ মেলে তাকালে’, ‘মায়া’, ‘প্রেমে পড়েছি’, ‘দিনে দিনে’, ‘অচিন টান’, ‘মুঠো মুঠো ভালোবাসা’, ‘কাজল ভ্রমরা’ কিংবা ‘পিরিতের ফল’- সব গানেই ঐশী শ্রোতাদের ভালোবাসা কুড়িয়েছেন। দিন দিন তার গানের তালিকা বড়ো হচ্ছে।

লোকগান কিংবা প্রেমের গান যেকোনো গানেই ঐশীর কণ্ঠে থাকে অন্যরকম দরদ ও মায়া। যে-কারণে তার গানগুলোর গ্রহণযোগ্যতা যেন শ্রোতাদের কাছে দিনে দিনে বেড়েই চলছে। একক কিংবা প্লেব্যাক সবখানেই বেড়ে চলেছে শিশুশিল্পী থেকে বেড়ে ওঠা ঐশীর চাহিদা। আর নিজের গানের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন গান। চলচ্চিত্রে এর আগে ‘চিটাংগাইয়া পোলা নোয়াখাইল্যা মাইয়া’ চলচ্চিত্রের গানের জন্য দেশের বাইরে পুরস্কৃত হয়েছিলেন ঐশী। এ-রকম আরও অনেক পুরস্কার, এখন শোভা পাচ্ছে তার গলায়।

যদিও গানই ঐশীর ধ্যানজ্ঞান ; তবুও চিকিৎসক হতে চলেছেন। আগামী মার্চ মাসে এই গায়িকা সমরিতা মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল থেকে এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেবেন। তাই বর্তমানে গানের পাশাপাশি পড়াশোনা নিয়েও খুব ব্যস্ত আছেন। তারপরেও পড়াশোনা এবং গান- দুটোই তিনি সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন।