দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন এই সময়ের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী ইমতু রাতিশ ও সামান্তা পারভেজ। ইতোমধ্যে সাবলীল অভিনয় করে তারা দু’জন জায়গা করে নিয়েছেন হাজারো ভক্তহৃদয়ে। তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন আনন্দভুবনের সঙ্গে। বিস্তারিত লিখেছেন শহিদুল ইসলাম এমেল...
মডেল-উপস্থাপক-অভিনেতা ইমতু রাতিশ নিজেকে একজন অভিনেতা হিসেবেই পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এরই মধ্যে তিনি সাবলীল অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। দর্শক তার অভিনয় ভালোবাসেন বলেই তার অভিনয়ের প্রশংসা করেন। একজন অভিনেতার এর থেকে বড়ো প্রাপ্তি আর কী হতে পারে ! ইমতুর জন্ম ২৬ ফেব্রুয়ারি। মিডিয়ায় প্রথম সবার নজরে আসেন একজন উপস্থাপক হিসেবে। টানা আঠারো বছর তিনি একুশে টিভিতে প্রচারিত ‘সিনে হিটস’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেছেন। মাঝখানে দেড় বছরের বিরতি ছিল। এখন নিয়মিত এই অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করছেন তিনি।
ইমতু রাতিশ অভিনীত প্রথম নাটক পারভেজ আমিনের ‘টমের চিঠি’। নাটকটিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন মোনালিসা। এরপর বহু সিঙ্গেল নাটক এবং সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন তিনি। ইমতু বেশ কয়েকটি সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন। তার প্রথম সিনেমা নারগিস আক্তারের ‘যৈবতী কইন্যার মন’। তবে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম সিনেমা অনন্য মামুনের ‘আবার বসন্ত’। ইমতু অভিনীত আলোচিত সিনেমা হিমেল আশরাফের ‘প্রিয়তমা’। এই সিনেমায় তিনি শাকিব খানের বন্ধু চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন।
ইমতু অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা অনন্য মামুন পরিচালিত ‘দরদ’। এতে তিনি জন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এছাড়া রুকাইয়া জাহান চমক পরিচালিত সিনেমা ‘মব স্টার’-এও অভিনয় করেছেন ইমতু।
বর্তমানে ইমতু অভিনীত তিনটি ধারাবাহিক নাটক টিভিতে প্রচারিত হচ্ছে। কায়সার আহমেদের ‘গোলমাল’ প্রচারিত হচ্ছে আর টিভিতে। মুরাদ পারভেজের ‘স্মৃতির আলপনা আঁকি’ ও মাইনুল হাসান খোকনের ‘মায়ার সংসার’ প্রচারিত হচ্ছে এটিএন বাংলায়। এছাড়া ভালোবাসা দিবসে জিনাত হাকিমের রচনা ও আজিজুল হাকিমের পরিচালনায় ‘আমি তুমি ও সে’ নাটকে অভিনয় করেছেন।
ইমতু এই সময়ের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী সামান্তা পারভেজের সঙ্গে বেশ কয়েকটি নাটক ও মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছেন। কো-আর্টিস্ট হিসেবে সামান্তা কেমন জানতে চাইলে বলেন, ‘খুবই কেয়ারিং একজন মানুষ। কাজের ব্যাপারে অনেক সিরিয়াস, সিনসিয়ার এবং অভিনয়ে সে খুব পারদর্শী। যার কারণে আমাদের সঙ্গে কাজগুলো খুব সুন্দরভাবে আমরা সম্পাদন করতে পারি। বন্ধু হিসেবেও খুব চমৎকার। ওর সঙ্গে একটা সিরিয়াল, কয়েকটি সিঙ্গেল নাটক ও একটি মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছি। সম্প্রতি সামান্তার বোন সংগীতশিল্পী সাথী খানের একটি মিউজিক ভিডিও ‘বেয়াই’-এ আমরা একসাথে কাজ করেছি।’
.......................................
এদিকে সামান্তা দেশীয় শোবিজের তরুণ প্রজন্মের মডেল ও অভিনয়শিল্পী। কাজ করছেন বিজ্ঞাপনচিত্রে, মিউজিক ভিডিও ও নাটকে। সামান্তা নরসিংদী শিল্পকলা একাডেমি থেকে নাচের তালিম নিয়েছেন। তার শোবিজে পথচলা শুরু ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে এয়ারটেলের একটি বিজ্ঞাপনের মধ্যে দিয়ে। এরপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এ পর্যন্ত সামান্তা প্রায় শতাধিক মিউজিক ভিডিও এবং একডজনেরও বেশি বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হয়েছেন।
হঠাৎ করে শখেরবশে মিডিয়ায় আগমন সামান্তার। শখ এখন পরিগণিত হয়েছে পেশায়। শুরুতে তেমন সিরিয়াস না থাকলেও এখন অভিনয়ই ধ্যান-জ্ঞান মনে করেন সামান্তা। অভিনয়কেই নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চান তিনি।
সামান্তা নাটকের কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এছাড়া কিছু ব্র্যান্ডের ফটোশুট, ওভিসি, টিভিসি’র কাজ করছেন মাঝে মাঝে। বর্তমানে একটা সিরিয়ালের কাজ চলছে তার। তার কো-আর্টিস্ট শামীম হাসান সরকার। নাম ‘মুসিবত আনলিমিটেড’। একটা স্পেশাল কাজ আসছে জাহের আলভীর সঙ্গে। এটার শুটিং হয়েছে বান্দরবানে। নাটকের পরিচালক আদিব হাসান। নাম ‘ভালোবাসার প্রতিশোধ’। বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকার ব্যতিক্রমী একটা গল্প। ভালোবাসলে ভালোবাসার মানুষের জন্য কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করতে পারে একজন মানুষ, সেটাই দেখা যাবে নাটকে। একটা মেয়ের জীবনে বড়ো একটা ইন্সিডেন্ট ঘটে যায়। তারপরও ছেলেটা মেয়েটাকে এতটাই ভালোবাসে যে, পরিবার, সমাজের কথা চিন্তা না-করে ভালোবাসার মানুষকে গ্রহণ করে নিচ্ছে। এ ধরনের একটা গল্প। গল্পে একটা সোশ্যাল মেসেজেও আছে।
ভালোবাসা দিবসে প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছেন ? ‘ছোটোবেলায় পেয়েছি। এখন তো কেউ প্রেমের প্রস্তাব দিতে চায় না। এখন ভাবি প্রেমের প্রস্তাব দিলে আমি তাকে গুলি করে মেরে ফেলবো। ছোটোবেলায় ভালোবাসা দিবসে মনে হতো আজকে কেউ ফুল দিলে ভালোই লাগত। আমি ছোটো থেকে একটু দুষ্টু ছিলাম। ছোটোবেলায় একাধিক ফুল পেলেও ভালো লাগত। বান্ধবীরা মিলে ওটা নিয়ে মজা করতাম। কেমন একটা ফ্যান্টাসি কাজ করত তখন।’
ছোটোবেলায় কেউ কি প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই দিয়েছে। আমি তখন স্কুলে পড়ি। আমি জানতাম যে একটা ছেলে আমাকে পছন্দ করে। আমাদের স্কুলের পাশেই কলেজ ছিল, ওই কলেজের একটা ছেলে। আমি অনেকদিনই নোটিশ করেছি যে, ওই ছেলে আমার পেছন পেছন ঘুরছে। তো আজকে ভ্যালেন্টাইন ডে, আমি মোটামুটি প্রিপেয়ার যে ছেলেটা অন্তত আজকে আমাকে একটা ফুল তো দেবেই। আমি সারাদিনই মোটামুটি স্কুলে ছিলাম। আমাদের স্পোর্টস চলছিল স্কুলে। সারাদিন খেলার মাঠে এদিক-ওদিক যাচ্ছি। আর ছেলেও গোলাপ হাতে নিয়ে ঘুরছে। আমাকে যে দেবে সেই সুযোগ পাচ্ছে না। পরে আমার এক বান্ধবীকে দিয়ে পাঠালো বিকেলবেলায়। এরকম অনেক ঘটনা আছে।’
তার সাথে এখন যোগাযোগ আছে ? ‘আসলে বলতে গেলে সে এখন আমার ফ্রেন্ডের মতো হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে কথা হয়। বলে, তুমি তো এখন বড়ো স্টার হয়ে গেছ এই টাইপের কথাবার্তা আর কি। আমি তো মিডিয়ায় আছি সে অন্য প্রফেশনে।’
ইমতু রাতিশ-এর সঙ্গে তো কয়েকটি কাজ করেছেন। ইমতু কো-আর্টিস্ট হিসেবে কেমন ? ‘ইমতু ভাই কো-আর্টিস্ট হিসেবে অনেক কুল, অনেক হেল্পফুল। সত্যি বলতে উনি তো অনেক সিনিয়র আর্টিস্ট। তার মধ্যে খুব ভালো একটা কো-অপারেটিভ ব্যাপার আছে। যার কারণে শুধু আমি না যেকোনো নতুন মেয়ে এসে উনার সঙ্গে কাজ করতে কমফোর্ট ফিল করবে। কারণ সবাই তো একটা সময় নতুন থাকে, তাই সাপোর্টিং হওয়ার ব্যাপারটি ইম্পর্টেন্ট।’
সামান্তা ভালোবাসা বলতে বোঝেন কষ্ট, বেদনা আর চিট করা। এখন যেগুলো হয় আর কি। তার মতে. এখনকার যুগে ভালোবাসা নেই। তার কাছে মনে হয়, ভালোবাসি না বলে ভালোবাসাটা বলা উচিত। ইতোমধ্যে সিনেমায় বেশ কয়েকটা অফার পেয়েছেন তিনি। কথাবার্তা চলছে, ভাবছেন কি করা যায় !
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে বলেন, ‘কাজ করছি। আরো ভালো কাজ করতে চাই। আরো ভালো ভালো গল্পে কাজ করতে চাই। কার সাথে কাজ করব কোন পরিচালকের সাথে কাজ করব সেটা বিষয় নয়। কোন সিনেমায় কাজ করবো কোন নাটকে কাজ করব সেটাও বিষয় নয়। আমি যে ব্যক্তি সামান্তা সে ব্যক্তি সামান্তা থেকে বের হয়ে বিভিন্ন ক্যারেক্টার প্লে করতে চাই। আর নিজের অভিনয়দক্ষতা আরো বেশি বাড়াতে চাই।’