যখন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে নায়িকা সঙ্কট চলছিল ঠিক সেই সময়ে আবির্ভাব ঘটে অভিনেত্রী মাহিয়া মাহির। জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত ‘ভালোবাসার রঙ’ ছবি দিয়ে অভিষেক হয় এই অভিনেত্রীর। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করেন তিনি। এরপর একের পর এক সুপার ডুপার ছবি উপহার দেন এই অভিনেত্রী। ক্যারিয়ারের সুবর্ণ সময়ে ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে ভালোবেসে বিয়ে করেন সিলেটের ব্যবসায়ী পারভেজ মাহমুদ অপুকে। বিয়ের পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর ওই বছরেই ১৩ সেপ্টেম্বর বিয়ে করেন রাকিব সরকারকে। সেই বিয়েও টেকেনি। দীর্ঘদিন বিরতি দিয়ে পুনরায় আবার মিডিয়ায় সরব হচ্ছেন এই অভিনেত্রী। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...
আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে কিছুতেই কাটছে না নায়িকা সঙ্কট। এই সঙ্কট কাটানোর জন্য প্রতিমুহূর্তে প্রযোজক নির্মাতারা চেষ্টা করছেন নতুনদের নিয়ে কাজ করার। করছেনও কিন্তু সফলতা তেমন পাচ্ছেন না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে যিনি নতুন আসছেন গ্রুমিং ছাড়াই ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি ভালো গল্পের অভাব। এর মধ্যে দিন দিন কমে যাচ্ছে সিনেমা হলের সংখ্যাও। বর্তমানে আমাদের দেশে যে সিনেমা হল রয়েছে সেখান থেকে বিগ বাজেটের একটি ছবির লগ্নি ফেরত আনাটাই কষ্টকর। তাই অনেকে বিগ বাজেটের ছবি মুক্তি দিতেও সাহস পাচ্ছেন না। আবার মুক্তি দিলেও সিনেমা হলগুলো দর্শক টানতে পারছে না।
আমাদের ইন্ডাস্ট্রির সবশেষ মাহি অভিনীত দর্শকপ্রিয় ছবি ছিল ‘ঢাকা অ্যাটাক’। ছবিটি শুধু দেশেই নয়, দেশ ছাপিয়ে বিদেশেও উল্লেখযোগ্য দর্শকপ্রিয়তা পায়। সেই ছবিতে অভিনয় করেন মাহিয়া মাহি। ঢাকা অ্যাটাকের পর তার অভিনীত আর কোনো ছবি তেমনভাবে আলোচনায় আসেনি। তবে শাকিব খান অভিনীত রাজকুমার ছবিতে শাকিব খানের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেও বেশ প্রশংসিত হন তিনি। এই পর্যন্ত মাহি অভিনীত প্রায় তিন ডজন ছবি মুক্তি পেয়েছে, ছবিগুলো হলো ‘ভালোবাসার রঙ’, ‘অগ্নি’, ‘কি দারুণ দেখতে’, ‘দবির সাহেবের সংসার’, ‘হানিমুন’, ‘অনেক সাধের ময়না’, ‘দেশা : দ্য লিডার’, ‘রোমিও বনাম জুলিয়েট’ [এই ছবির মাধ্যমে টালিউডে অভিষেক ঘটে তার], ‘অগ্নি-২’ প্রভৃতি। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে হুমায়ূন আহমেদের লেখা বিখ্যাত উপন্যাস কৃষ্ণপক্ষের ‘অরু’ চরিত্রে, এবং অন্ধ মেয়ের চরিত্রে ‘অনেক দামে কেনা’ ছবিতে অভিনয় করে প্রশংসিত হন। এরমধ্যে ব্যবসাসফল ছবি হচ্ছে ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘পোড়ামন’, ‘অন্যরকম ভালোবাসা’, ‘ভালোবাসা আজকাল’, ‘তবুও ভালোবাসি’, ‘হানিমুন’, ‘অনেক সাধের ময়না’, ‘দবির সাহেবের সংসার’, ‘দেশা : দ্য লিডার’, ‘অগ্নি’, ‘অগ্নি-২’, ‘জান্নাত’।
যখন মাহির বৃহস্পতি তুঙ্গে ঠিক সেই সময়ে অর্থাৎ ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে ভালোবেসে সিলেটের ব্যবসায়ী পারভেজ মাহমুদ অপুর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে তাদের সংসারে চির ধরে, সিদ্ধান্ত নেন বিবাহ বিচ্ছেদের। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে বিচ্ছেদ হয় তাদের, যে বছর বিচ্ছেদ হয় সেই বছরেই ১৩ সেপ্টেম্বর রাকিব সরকারকে বিয়ে করেন মাহি। শেষ পর্যন্ত সেই বিয়েও টেকেনি। বিবাহ বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে মাহি বলেন, আমাদের মধ্যে কিছু সমস্যা হচ্ছিল তাই দু’জন মিলেই এই সিদ্ধান্ত নিই। স্বামীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও করেননি তিনি ববং তার প্রশংসা করে বলেন, রাকিব খুব ভালো একজন মানুষ। আমি তাকে সম্মান করি।
বিচ্ছেদের পর শুরু হয় তার নতুন অধ্যায়। নানা প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে এখন কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চান তিনি। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সরব মাহি। অপেক্ষায় আছেন ভালো কিছুর জন্য।
মাহিয়া মাহি রাজশাহীর মেয়ে। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে ‘ভালোবাসার রঙ’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্র অঙ্গনে যাত্রা শুরু করেন। এই অঙ্গনে আসার আগে চিকিৎসক হতে চেয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি মডেলিং করার ইচ্ছে ছিল। উত্তরা মডেল হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন মাহি। উচ্চশিক্ষার জন্য শান্তা-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজিতে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। মাহি যখন চলচ্চিত্র অঙ্গনে আসেন সেই সময়ে চলচ্চিত্রে চলছিল শিল্পী সঙ্কট। বেশিরভাগ ছবিও নির্মাণ হতো কম বাজেটের। ভালো ছবির অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল প্রেক্ষাগৃহগুলো। ঠিক সেই সময়ে মাহির এই অঙ্গনে আগমন। মাহিকে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে জাজ মাল্টিমিডিয়া ‘ভালোবাসার রঙ’ ছবিতে কাস্ট করে। নায়িকা হওয়ার জন্য যা প্রয়োজন সবই ছিল মাহির ভেতরে। তাই অল্প সময়ে নিজের জাত চেনাতে সক্ষম হন মাহি। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করেন। এরপর ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চারটি ছবিতে অভিনয় করেন। ছবিগুলো হচ্ছে ‘অন্যরকম ভালোবাসা’, ‘পোড়ামন’, ‘ভালোবাসা আজকাল’, এবং ‘তবুও ভালোবাসা’। প্রতিটি ছবিই কমবেশি দর্শকপ্রিয়তা পায়। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে ‘অগ্নি’ এবং ‘দেশা-দা লিডার’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে আরো পরিচিতি পান মাহি। এরপর আর মাহিকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এদেশের চলচ্চিত্র ছাড়াও অভিনয় করেন যৌথ প্রযোজনার কয়েকটি ছবিতে।
মাহির প্রথম সিনেমার ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন সবাই। প্রযোজক-পরিবেশকেরা স্বপ্ন দেখছিলেন মাহিকে নিয়ে, ভবিষ্যতে তিনি সেরা নায়িকা হবেন। সেই প্রশংসা ও স্বপ্নের প্রতি কি সুবিচার করেছেন মাহি ? প্রায়ই আলোচনা শোনা যায় ফিল্মের আড্ডাগুলোতে। কেউ কেউ বলছেন, মাহি আসলে তার গন্তব্যে পৌঁছতে গিয়ে ভুল পথে হেঁটেছেন। আবার কেউ বলছেন, অভিনয়ে মনোযোগী হলে আবারও ভালো ভালো সিনেমা উপহার দিতে পারবেন তিনি।
একসময় অনেক কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন মাহি। কিন্তু এখন ? এখনকার ব্যস্ততা সম্পর্কে জানতে চাইলে মাহি বলেন, ‘বেশ কয়েকটা কাজ নিয়ে কথা চলছে। কোনোটাই চূড়ান্ত হয়নি। দেশের যে অবস্থা ছিল, তা একটু একটু করে উত্তরণের দিকে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে সব কিছু স্থিতিশীল হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত কাজ শুরু করতে পারব।’