মায়ের পরামর্শে গান বেছে নিলেও সমান টান অনুভব করি নাচের প্রতি -বেলী আফরোজ

28 Jan 2021, 03:48 PM সারেগারে শেয়ার:
মায়ের পরামর্শে গান বেছে নিলেও সমান টান অনুভব করি নাচের প্রতি -বেলী আফরোজ

বেলী আফরোজ। আকর্ষণীয় গড়নের আবেদনময়ী কণ্ঠশিল্পী। তবে এ পরিচয়ের বাইরে তার আরেকটি পরিচয়, তিনি খুব ভালো মডার্ন ডান্স করেন। সেগুলোর সাথে দর্শক ইতোমধ্যে পরিচিত হয়েছেন। তবে, শেষতক মায়ের পরামর্শে থিতু হয়েছেন গানে। ইতোমধ্যে গান দিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। করোনাকালে স্টেজ শো না হওয়ায় বেলী ব্যস্ত এখন টিভি পর্দায় গানের বিভিন্ন আসরে। এর পাশাপাশি একটি ফ্যাশন হাউজের জন্য মডেল হয়েছেন এই সুদর্শনা। এমন আরো কিছু ব্যস্ততা নিয়ে আনন্দভুবনের মুখোমুখি হয়েছেন পাওয়ার ভয়েসখ্যাত সুন্দরী বেলী আফরোজ।

তিনি বলেন, এখন কারোনাকালে কারো হাতেই খুব বেশি কাজ নেই। আমিও ব্যতিক্রম নই। তবে বসে আছি সেটাও ভাবা যাবে না, কাজ করছি। যেমন এখন কাজ করছি আমাদের সবার প্রিয় গৌতম সাহার কোরিওগ্রাফিতে স¤প্রতি একটি ফটোশুট করেছি। দর্শক আমাকে ভিন্ন রূপে ভিন্ন আবেদনে দেখতে পাবেন এখানে। যদিও এটা আমার প্রথম মডেল হওয়া নয়, তারপরও এটা স্পেশাল ওয়ান। কারণ, দীর্ঘদিন যে শারীরিক গড়নের দর্শক-ভক্তরা আমাকে দেখেছেন এই ফটোশুটে সেই দর্শক-ভক্তরাই ভিন্ন লুক আর আবেদনে দেখতে পাবেন। ওজন কমিয়ে ফেলেছি। হুট করেই কেউ আমাকে দেখলে আগের বেলী আফরোজের সঙ্গে হিসেব মেলাতে পারেন না- বলতেই হাসিতে ফেটে পড়েন। 

তো হঠাৎ এই পরিবর্তন কীভাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে গৌড় বর্ণের অধিকারী বেলী বলেন, করোনার শুরু থেকেই যেহেতু ঘরবন্দি তাই এ সময়টাকে বাসায় বসে কাজে লাগিয়েছি। নিয়ম করে ইয়োগা করি। ফলে নিজেকে এখন খুব সতেজ আর ফুরফুরে মনে হয়। অন্তত ঘনিষ্ঠজনেরা সে-কথাই কানের কাছে এসে বলে যায়। আমি নিয়মিত দিনের নির্দিষ্ট একটা সময় ইয়োগা করি। শিল্পা শেঠির ইয়োগা করার ব্যাপারটা আমি খুব উপভোগ করি। 

ফটোশুট করতে গিয়ে পোশাক না অভিব্যক্তি কোনটাকে প্রধান্য দিয়েছেন ? 

বেলী বলেন, অবশ্যই অভিব্যক্তি। এই শুটে আমি ক্রপটপ স্কার্ট, ককটেল গাউন গায়ে চড়িয়েছি সেগুলো খুবই মার্জিত আর রুচিবোধের, তবে অভিব্যক্তি না থাকলে শুধু পোশাকের কি খুব দাম ? অভিব্যক্তির পরিষ্ফুটন ঘটানো পোশাক, আনজারার ফ্যাশন হাউজের এই পোশাক অন্তত সে-কথাই বলছে। নিজেকে নিজের কাছে অচেনা লাগে। মনে হয়, এটা আমার আরো আগে করা উচিত ছিল।

নাচ এল কী করে ? জবাবে বেলী বলেন- মায়ের পরামর্শে গান বেছে নিলেও সমান টান অনুভব করি নাচের প্রতি। তাছাড়া মিউজিক ভিডিওর যুগে গানের সঙ্গে কোরিওগ্রাফি খুব দরকার যদি আপনার শরীর আপনাকে সাপোর্ট করে। এটা তখন বাড়তি সুবিধা দেবে, শ্রোতার পাশাপাশি দর্শকেরাও তখন আপনাকে আগ্রহভরে গ্রহণ করবে।বর্হিবিশ্বে ম্যাডোনা থেকে লোপেজ, শাকিরা- তাবৎ দুনিয়া কিন্তু তাদের পুরোপুরি গ্রহণ করেছে। এসব ভেবেই নাচের দিকে ঝোঁকা। মিউজিক ভিডিওগুলোতে আমার গানের দৃশ্যে এ-কারণেই মডেল হই। দর্শকও গ্রহণ করছে। এ পর্যন্ত আমার কণ্ঠ ও লিপে বেশকিছু মিউজিক্যাল গানের মডেল আমি নিজেই হয়েছি, শ্রোতা-দর্শকের সাড়াও পেয়েছি।

সংগীতে থিতু হওয়ার আগে শুনেছিলাম ড্রাম বাদক ছিলেন সে গল্পটা একটু বলুন। এ ব্যাপারে বেলী বেশ সপ্রতিভ ভঙ্গিতে বলেন, গল্পটা ২০০৬ সালের। তখন আমরা কয়েকজন মেয়ে মিলে চট্টগ্রামে একটি গানের দল গড়ি। নাম দিই ‘ব্লু বার্ড’। ওটাতে আমি ড্রাম বাজাতাম। পাশাপাশি ভোকালও দিতাম। পাওয়ার ভয়েসে আসার আগ পর্যন্ত অর্থাৎ ২০১৩ সালে শেষ ড্রাম বাজিয়েছি, এরপর আর বাজানো হয়ে ওঠেনি। তবে নিজের দলটাকে খুব মিস করি। আর গানে হাতেখড়ি বড়ো ভাই মিউজিশিয়ান সুমনের কাছে।

প্লেব্যাকের ব্যস্ততা নিয়ে বেলী বলেন- এখন পর্যন্ত আশিটির মতো ছবিতে গেয়েছি। শ্রোতারা গ্রহণ করেছেন বলতে পারি। নইলে বেলী আফরোজকে ভুলে যেত।

ব্যস্ততা বা প্রচারে সমসাময়িকদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছেন কি না জানতে চাইলে বেলী বলেন, মাঝে দুটো বছর পরিবারকে সময় দিয়েছি। ওটা করতে গিয়ে ফোকাস থেকে দূরে ছিলাম, সেভাবে নিজেই আসিনি, এখন থেকে নিয়মিত পাবেন।

নিজের একটা ইউটিউব চ্যানেল ওপেন করেছেন সে ব্যাপারে কিছু বলুন। স্মিত হেসে বলেন, সেখানে বেশকিছু গানও ইতোমধ্যে আপলোড হয়েছে। খুব বেশিদিন হয়নি। আরো কিছু গান, মিউজিক ভিডিও করে আপলোড করা হবে। সবই নিজের কনটেন্ট। শিগগিরই নবষষুধভৎড়ুুড়ঁঃঁনব থেকে মার্শালের সুর ও কম্পোজিশনে সালেহীন শিকদারের গীতে ‘একলা চলা বন্ধু’ শিরোনামে আরো একটি গান মুক্তি পাবে।

গড়ন, বলন, চলনে নায়িকাদের মতো অভিনয়ের প্রস্তাব এসেছে এখনো ? সলাজে জানিয়ে দিলেন, খুব শিগ্গিরই একটি নাটকে তাকে দেখা যাবে অভিনয়ে। অর্থাৎ, গান, নাচ এবার যোগ হচ্ছে অভিনয় এই তিনের সমন্বয়ে বেলীর সুবাস পাবেন শ্রোতা-দর্শক। এর বাইরে একটি চলচ্চিত্রে ওপার বাংলায় কুমার সানুর সঙ্গে একটি গানে গাইব। এটা আমার জন্য বড়ো বিষয়। কারণ, আমি তাঁর খুব ভক্ত। গানটির সংগীতায়োজন করছেন অশোক চৌধুরী। গৌতম সাহার পোশাক পরিকল্পনা নিয়ে বলতে গিয়ে বেলী বলেন, ডিজাইনার ‘ওয়্যার উইথ কাটস অ্যান্ড ফ্লাইয়ার্স’, ‘ককটেল গাউন’ এবং ‘ক্রপটপ স্ক্রিট’ নামের তিনটি ভিন্ন পোশাকে ফটোশুট করেছি। দাদার কথা কী আর বলব, তিনি ইতোমধ্যে দেশের সেরা সব তারকাদের নিয়ে কাজ করেছেন। তার পোশাক পরিকল্পনা আমি মনে করি যে-কাউকে অবাক করবে। তার বিশেষ একটা দিক তিনি, ফটোশুটের আগে জহুরীর চোখে সব দেখে কোনটা কার গায়ে মানাবে সেভাবেই পরিকল্পনা সাজান। এক্ষেত্রে এমন কিছু চাপিয়ে দেন না যা অস্বস্তিকর। সে জায়গা থেকেই পোশাকের যে ডিগনিটি থাকে সেটা বের করে আনেন। এই ফটোশুটেও তাই হয়েছে।

এ ব্যাপারে গৌতম সাহা বলেন, ‘বেলীর সুবিধা হচ্ছে পোশাক পরিকল্পনার সঙ্গে ওকে মানিয়ে যায়। ফটোশুটে যে অভিব্যক্তি দরকার ফ্ল্যাশ করার সঙ্গে সঙ্গে ও সেই ডেলিভারিটা দিতে পারে। এই শুটে আমি সেটাই দেখেছি। এর পাশাপাশি ওর শারীরিক গড়নটাও বেশ চমৎকার। হুট করেই সবার গায়ে সব পোশাক জড়ানো যায় না এই ফটোশুটে বেলীকে মডেল করে সেটাই বোঝানো হয়েছে। ওর সঙ্গে নবাগত নূরকেও এই ফটোশুটে পার্টনার করেছি।’ 

লেখা : আহমেদ তেপান্তর