আন্তর্জাতিক নারীদিবস ও নারীর উন্নয়ন

01 Dec 2020, 01:25 PM অভোগ শেয়ার:
আন্তর্জাতিক নারীদিবস ও নারীর উন্নয়ন

বর্তমান যুগে নারী-পুরুষ সকলেই সমান অধিকার নিয়ে সমাজের সকল স্তরে কাজ করছে। আজকের পৃথিবীর গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে নারীরও রয়েছে বিশাল অবদান। নারী-পুরুষের যৌথ প্রচেষ্টার ফল আজকের এই পৃথিবী। কিন্তু নারীকে তার অবস্থান তৈরি করতে কঠোর পরিশ্রম ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তাই নারীর প্রতি সম্মান স্বরূপ বছরের একটি দিনকে নারীদিবস হিসেবে উদ্যাপন করা হয়। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারীদিবস। তবে এই দিনটিকেই কেন নারীদিবস হিসেবে পালন করা হয় তা হয়তো অনেকে জানেন না। নারীদিবসের ইতিহাস নিয়ে এবারের অঁ ভোগ আয়োজন। লিখেছেন ফাতেমা ইয়াসমিন...


বিশ^জুড়ে ৮ মার্চ দিনটি পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারীদিবস হিসেবে। দিনটির পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের গল্প। তাই অনেক দেশে দিনটি আন্তর্জাতিক নারী শ্রমিক দিবস হিসেবেও পালিত হয়। ১৮৫৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের রাস্তায় প্রতিবাদ জানাতে জড়ো হয় সুতা কারখানার লাখো নারী শ্রমিকেরা। মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কর্মস্থলের অমানবিক ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এই সব কিছুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও সমাধান আদায়ের লক্ষ্যে তারা এই প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু করেন। এই প্রতিবাদী নাীদের ওপর হামলা চালানো হয়।

১৯৮০ সালে নিউ ইয়র্কে আবারো বস্ত্রশিল্পের নারী শ্রমিকেরা একই দাবিতে আন্দোলন করে। এই বছরই জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরের বছর অর্থাৎ ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নারীদের সম্মানে জাতীয়ভাবে নারীদিবস পালন করা হয়। পরবর্তীসময়ে ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। এই সম্মেলনে অংশ নেয় ১৭ দেশের প্রায় ১০০ জন নারী প্রতিনিধি। এই সম্মেলনেই ক্লারা জেটকিন প্রতিবছর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারীদিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব দেন। নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে ১৯১১ সাল থেকে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারীদিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণায় আলোড়িত হয় গোটা বিশ্ব। ১৯১১ সালের ১৯ মার্চ প্রথমবারের মতো অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মান ও সুইজারল্যান্ডের এক মিলিয়নেরও বেশি নারী যোগদান করেন নারীদিবসের র‌্যালিতে। পুরুষরাও এগিয়ে আসে নারী অধিকার আন্দোলনের এই জোয়ারে। নারীদের ভোটদান ও সরকারি অফিসে কাজ করার অধিকার আদায়ের দাবি নিয়ে সোচ্চার হন তারা। এভাবেই মূলত সারাবিশ্ব ছড়িয়ে পড়ে নারী অধিকার বিষয়ক সচেতনতা। ১৯১৩ সাল থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যে রাশিয়া ফেব্রুয়ারি শেষ রবিবার পালন করে আন্তর্জাতিক নারীদিবস। ১৯১৪ সালের ৮ মার্চ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়ার দাবিতে ইউরোপে নারীরা র‌্যালি বের করেন। সে-বছরই বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে দিনটি নারীদিবস হিসেবে পালিত হয়।

১৯৭৫ সালে জাতিসঙ্ঘ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায় নারীদিবস। সেই থেকে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারীদিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

পৃথিবীর অনেক দেশে এই নারীদিবস সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। তার মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, বেলারুশ, কম্বোডিয়া, কিউবা, জর্জিয়া, গিনি, কাজাখস্তান, কিরগিজিস্তান, লাওস, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, তুর্বেমেনিস্তান, উগান্ডা, জাম্বিয়াসহ আরো কিছু দেশ। চিন, ম্যাসিডোনিয়া, মাদাগাস্কার, নেপালে শুধু নারীরা সরকারি ছুটি কাটান এই দিনটিতে।

ভারত ৮ মার্চ নারীদের তাদের কর্মস্থলের বড়ো বড়ো পদে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। আমাদের দেশেও নারীদিবস নানাভাবে উদ্যাপন করা হয়ে থাকে।