ঠোঁটের সৌন্দর্য বাড়াতে যা করবেন -ডা. তাওহীদা রহমান ইরিন

21 Aug 2023, 01:14 PM ত্বকের যত্ন শেয়ার:
ঠোঁটের সৌন্দর্য বাড়াতে যা করবেন  -ডা. তাওহীদা রহমান ইরিন

ঠোঁটের গুরুত্ব আসলে কী ?

সামগ্রিক সৌন্দর্যের অনেকাংশে নির্ভর করে মুখম-লের সৌন্দর্যের ওপর। এ জন্য মুখের মাংসপেশিকে বলা হয়, মাসেল অব ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন। আর এখানে যেহেতু অভিব্যক্তি, অনুভূতির বিষয়টি আসছে, সে ক্ষেত্রে ঠোঁটের ভূমিকা অপরিসীম। কারণ, ভালো লাগা, হাসি, বেদনা, মন খারাপ, এমনকি খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করি এই ঠোঁট। আর ঠোঁট কেন এত গুরুত্বপূর্ণ ? কেন এত নাজুক ? ঠোঁটের উপরিভাগের ত্বক থাকে খুবই পাতলা। আর আমাদের দেহের উপরের অংশে যে ত্বক আবৃত করে রাখে, সেখানে প্রচুর পরিমাণে হেয়ার ফলিকল থাকে। ঠোঁটে তা থাকে না। এই হেয়ার ফলিকল বা লোমের গোড়ায় থাকে সিবাসিয়াস গ্রন্থি। এর সেবাম আমাদের প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। এটিও ঠোঁটে অনুপস্থিত। এ কারণেই ঠোঁটে দেখা দেয়, নানাধরনের সমস্যা।

ঠোঁটের যত্নে কীভাবে করা যেতে পারে ? আর মুখের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ঠোঁট। এটা তো আর অজনা নয়। ঠোঁটের যতেœ ধাপগুলো আমরা রুলস অব সেভেন ফর্মুলাতে সাজাতে পারি। সেগুলো আসলে কী ?

প্রথমে আসে পরিচ্ছন্নতা। মুখের পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে সঙ্গে ঠোঁটের পরিচ্ছন্নতা আসে। এরপরে আসে কেয়ার। যতœ মানে ময়েশ্চারাইজেশন ও হাইড্রেশন। আর্দ্রতা রক্ষা করা। তিন নম্বরে আসে সুরক্ষা। আমরা সানস্ক্রিন ব্যবহার করি মুখে। ঠোঁটের জন্য কিছু আলাদা সানস্ক্রিন থাকে। চার নম্বর হলো, খাবার। পাঁচ নম্বর হলো, ঠোঁটের যত্নে যে পণ্যগুলো ব্যবহার করব, সেগুলো একটু চেক করব। ছয় নম্বর হলো, ঠোঁটে কোনোরকম সমস্যা হলে নিজে নিজে চিকিৎসা না করে, আমি একজন ত্বক বিশেষজ্ঞকে দেখাব। আর সাত নম্বরে আসছে, এসথেটিকস। ঠোঁটের সৌন্দর্যের জন্য আমরা নানাধরনের প্রাকৃতিক ও আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করি। আরেকটি, ঠোঁটের সমস্যা থাকলে বিশেষ কিছু পরীক্ষা।

ঠোঁটের পরিচ্ছন্নতা

ঠোঁটের চামড়া খুব পাতলা এবং নাজুক হওয়ার কারণে মৃত কোষ খুব তাড়াতাড়ি জমতে থাকে। আর এ কারণেই ঠোঁট ফাটে। যদি বেবি টুথব্রাশ হাতের কাছে না পাওয়া যায় তাহলে কফি, চিনি, মধু, নারকেল তেল এই উপাদানগুলো মিশিয়ে হাত দিয়েও সপ্তাহে ২ দিন ঠোঁট ঘষে পরিষ্কার করা যেতে পারে।



ঠোঁটের যত্নে

ঠোঁটের যতেœ এরপর আসে ময়েশ্চারাইজেশন। আমরা মোটামুটি এর সাথে পরিচিত। যেমন পেট্রোলিয়াম জেলি, লিপ বাম, লিপ জেল। এগুলো কিন্তু সহজেই পাওয়া যায় বাজারে। শীত এলেই ঠোঁটে কিন্তু একটু ফাটা বা শুষ্কতার সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত পেট্রোলিয়াম জেলি সব ধরনের ঠোঁটের জন্য অনুকূল। মুখের ত্বক যেমন একেক জনের একেক রকম হয়। যাদের ত্বক শুষ্ক থাকে তাদের ঠোঁট একটু বেশিই শুষ্ক হয়ে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে ব্যবহার একটু বাড়িয়ে দিতে হয়। এছাড়া গ্রামের দিকে যারা পেট্রোলিয়াম জেলি পাচ্ছেন না, তারা কিন্তু একদম খাঁটি নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। আর শহরে যারা আছেন, দেশের বাইরে যারা আছেন তারা বিওয়েক্স বা লিনোলেইনযুক্ত কোনো পণ্য ব্যবহার করতে পারেন। শীতকালে কিন্তু ঠোঁট অনেকটা কালো হয়ে যায়। কারণ, অক্সিজেনেশনের অভাব, এরপরও আবার ঠোঁটের চামড়া উঠে যায়। ছেলেদের ক্ষেত্রে এ সমস্যাগুলো বেশি হয়। কেননা, মেয়েরা যাই হোক, কিছু একটা ব্যবহার করছে। ঠোঁটের ময়েশ্চারাইজার কিন্তু কিছুটা হলেও বজায় থাকে। ছেলেদের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে না। ঠোঁটে ছেলেদের লিপ বাম ব্যবহার করতে হবে। বারবার ব্যবহার করতে হবে। ঠোঁট কোনোভাবে শুষ্ক রাখা যাবে না। ঠোঁট ফেটে গিয়ে যদি রক্ত বের হয় সেক্ষেত্রে হাইড্রেশনের জন্য মেডিকেটেড কিছু লিপ বাম, জেল বা অয়েন্টমেন্ট দেওয়া যেতে পারে।


ঠোঁটের সুরক্ষা

সানস্ক্রিনের ধারণা আমাদের মধ্যে বেশ ভালোই চলে এসেছে। আমরা মুখের ক্ষেত্রে জানি, শরীরের ক্ষেত্রে জানি কিন্তু ঠোঁটের ক্ষেত্রে জানি না। সেক্ষেত্রে আমরা মুখে যে সানস্ক্রিন ব্যবহার করবো সেটি ঠোঁটে একটু বুলিয়ে নেব। বাইরে বের হওয়ার সময় বা ঠোঁট যদি শুকিয়ে যায়, দিনেরবেলা এসপিএফযুক্ত কোনো লিপবাম বা চ্যাপস্টিক ব্যবহার করবো। এখন এসপিএফ ১৫, ৩০ এবং ৫০ যুক্ত লিপ বাম, চ্যাপস্টিক বা জেল পাওয়া যাচ্ছে। কিছু কিছু লিপস্টিকও আছে এসপিএফ যুক্ত। আর যখন আমরা ১০টা থেকে ৫টার মধ্যে বাইরে যাব, এসপিএফ ১৫ যুক্ত কোনো লিপ বাম বা চ্যাপস্টিক বা লিপস্টিক ব্যবহার করব।


সঠিক খাদ্যাভ্যাস

স্কিন ব্রাইটেনিং যে ফুডগুলো আছে সেগুলো ঠোঁটের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেও কাজ করে। গাজর, যাতে আছে বিটা ক্যারোটিন, পেঁপে, যাতে আছে পাপাইন, ডালিম, যাতে আছে এল-সিস্টিন। এল-সিস্টিন একধরনের এন্টি-অক্সিডেন্ট যা শরীরের ত্বক উজ্জ্বলকারী উপাদান গ্লুটাথায়নের প্রোডাকশন বাড়ায় বা এবজরপশনে সাহায্য করে।


সঠিক পণ্যের ব্যবহার

আমরা যখন কোনো উপকরণ ঠোঁটে ব্যবহার করবো, তখন যেন এর উপাদানগুলো কী আছে তা দেখে নিই। লিপস্টিক ব্যবহারের আগে দেখে নিতে হবে তা যেন লেড এবং ক্যাডমিয়াম ফ্রি হয়। দেখা গেছে যে, অনেকে লিপস্টিকের শেলফ টাইম বা মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখের পরেও ব্যবহার করছেন। এর ফলে ঠোঁট কালো হয়ে যাচ্ছে। এরপর দেখা যায় অ্যালার্জিক কনটাক্ট ডার্মাটাইটিস। লিপস্টিকের কোনো একটি উপাদান তার ঠোঁটে স্যুট করছে না, অ্যালার্জি তৈরি করছে, সেখান থেকেও ঠোঁট কালো হতে পারে। আর লিপ ডার্কেনিং অর্থাৎ ঠোঁট কালো হওয়ার আরো অনেক কারণ রয়েছে। লিপস্টিক যারা ব্যবহার করে, তাদের জন্য পরামর্শ হলো সুন্দর একটি রং দেখে, এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ঠোঁট রাঙিয়ে নিলাম সেটি ঠিক হবে না। ভালো পণ্য ব্যবহার করতে হবে।


ত্বকের যেকোনো সমস্যায় ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন

ঠোঁটে যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয়, ঠোঁটে কোনো দানা বা র‌্যাশ হলে, কালো হয়ে গেলে, ব্যথা হলে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। উনি দেখে বুঝতে পারবেন এর কারণ কী, কেন হচ্ছে, সে অনুযায়ী সমাধান দিতে পারবেন।

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, জিংক এগুলোর অভাবে ঠোঁট কালো, শুষ্ক ও পানিশূন্য হয়ে যায় এবং অন্যান্য নানাধরনের সমস্যা দেখা দেয়। বছরে যদি একবার স্ক্রিনিং টেস্ট করা হয় তাহলেই এর কারণগুলো বের করা সম্ভব।


ঠোঁটের সৌন্দর্য

ঠোঁটে দুটো ভাগ আছে। সাধারণত ভিতরের অংশকে আমরা বলি ভার্মিলিয়ন এবং ঠোঁটের বর্ডারকে বলা হয় কিউপিড বো। এই বর্ডারটিকে ধনুকের বর্ডার বলা হয়। অনেকে এই ধনুকের আকৃতিকে বদলাতে চায়। আবার কেউ হয়ত তার যেরকম ঠোঁট আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। কেউ পাতলা ঠোঁট একটু পুরু করতে চায় বা ভলিউম বাড়াতে চায়। কেননা, বয়সের সাথে সাথে কিন্তু ভলিউম কমে যায়, ঠোঁট শুষ্ক হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে আমরা ফ্যাট ফিলার করে থাকি। এটি লিপ অ্যাস্থেটিকের একটি নতুন সংযোজন এবং একেবারেই ন্যাচারাল।

এখানে শরীর থেকে ফ্যাট নিয়ে ঠোঁটে যে যে অংশগুলোতে মনে হচ্ছে যে একটু ভলিউম কমে গেছে, একটু পাতলা বা একটু ফোলাতে চায় সেখানে আমরা এটি ইনজেক্ট করে থাকি। এটি একেবারেই ন্যাচারাল, নিরাপদ এবং কোনোরকম পার্শ্বপ্রিতিক্রিয়া নেই। এরপর পেশেন্ট যেরকম আকার চায় ঠোঁটের, সেরকম কাক্সিক্ষত একটি আকার দিতে পারি আমরা। কাক্সিক্ষত ফলাফল কখনো কখনো সঙ্গে সঙ্গেই সম্ভব। অনেক ক্ষেত্রে একটু প্রদাহ হতে পারে। সেক্ষেত্রে সাতদিন পরেই আমরা কাক্সিক্ষত ফল দিতে পারি। আনন্দের বিষয় হচ্ছে, শুধু ঠোঁটের ভলিউম বা পুরুত্বই বাড়ছে না, সুন্দর শেপের সাথে তার কিন্তু শেডিংও হচ্ছে। এর মানে হচ্ছে ঠোঁটে যদি একটু ডার্ক কালার থাকে এবং কেউ যদি একটু গোলাপি ভাব আনতে চায় সেটিও কিন্তু আস্তে আস্তে আসতে থাকে। কেননা, ন্যাচারাল ফ্যাটের নিজস্ব একটি রং থাকে। এই ফ্যাটটিই ঠোঁটের গোলাপি ভাব ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।

পাঠকদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, বিশ্বমানের চিকিৎসাগুলো কি বাংলাদেশে সহজলভ্য হবে ? পাঠকদের আমি সেই সুখবরই জানাতে এসেছি যে, আমরা এই চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে এসেছি এবং সফলতার সাথে আমরা করছি। রিজেনারেটিভ মেডিসিন যেটি আমরা বাংলাদেশে প্রথম নিয়ে এসেছি। এই ফ্যাট ফিলারটি রিজেনারেটিভ মেডিসিনের একটি নতুন সংযোজন। 

লেখক : চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ